সিডনী শুক্রবার, ২৯শে মার্চ ২০২৪, ১৫ই চৈত্র ১৪৩০


নিজ দেশের নাগরিকদের দণ্ড ঘোষণায় সমালোচনার মুখে অস্ট্রেলিয়া


প্রকাশিত:
৪ মে ২০২১ ১৯:৫২

আপডেট:
২৯ মার্চ ২০২৪ ১৭:৪৬

 

প্রভাত ফেরী: এ ধরনের সিদ্ধান্ত ‘বর্ণবাদী’ ও ‘মানবাধিকারের লঙ্ঘন’, বলছেন সমালোচকরা। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে ভারত থেকে ফিরতে চাওয়া নিজ দেশের নাগরিকদের জেল ও জরিমানার ঘোষণা করায় এমন সমালোচনার মুখে পড়েছে অস্ট্রেলিয়া।

শুক্রবার এক বিবৃতিতে দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রলায়, সোমবার থেকে দুই সপ্তাহের মধ্যে ভারতে বসবাসকারী কোনো অস্ট্রেলীয় নাগরিক দেশে ফিরে আসলে তার পাঁচ বছরের কারাদণ্ডের পাশাপাশি জরিমানার গুণতে হবে বলে ঘোষণা দেয়। 

বিবিসি জানিয়েছে, রাজধানী ক্যানবেরা থেকে বৈশ্বিক সংক্রমণের কেন্দ্র হয়ে ওঠা ভারতের সব ফ্লাইট বন্ধ করে ১৫ মে পর্যন্ত নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার পরই এই ঘোষণা আসে।

দেশটির প্রেসিডেন্ট স্কট মরিস অবশ্য বর্ণবাদের অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছেন।

সিডনি রেডিও স্টেশন টুজিবিকে তিনি বলেন, “এক বছর আগে চীনের সঙ্গে সীমান্ত বন্ধ করার পরও সরকারের বিরুদ্ধে একই অভিযোগ আনা হয়েছিল।

“মহামারীতে কোনো রাজনীতি কিংবা আদর্শ নেই, রাজনীতি দিয়ে এখানে কিছু করার নেই, এটা একটা ভাইরাস।”

স্থানীয় সংবাদ মাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়, এই প্রথমবারের মতো নিজ দেশের নাগরিকদের দেশে ফেরাকে অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হচ্ছে।

বিশ্বের দ্বিতীয় সবচেয়ে জনবহুল দেশ ভারতে নয় হাজার অস্ট্রেলীয় নাগরিকের বসবাস, যার মধ্যে ছয়শজনকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেব চিহ্নিত করা হয়েছে।

অস্ট্রেলিয়ার সরকার জানায়, দেশের মানুষকে রক্ষার জন্যই স্বাস্থ্য খাতের পরামর্শ নিয়ে শনিবারের ঘোষণাটি দেওয়া হয়েছে।

করোনাভাইরাস মহামারীর প্রাণঘাতী দ্বিতীয় ঢেউয়ে বেসামাল ভারতে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা এখন দুই কোটি ছুঁইছুঁই করছে। টানা ১২তম দিনের মতো দেশটিতে দৈনিক তিন লাখেরও বেশি রোগী শনাক্ত হয়েছে।

মহামারী শুরু হওয়ার পর থেকে রোববার দেশটিতে একদিনে সর্বোচ্চ ৩৬৮৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর দুই দিন আগেই এক দিনে চার লাখ রোগী শনাক্তের বিশ্বরেকর্ড দেখতে হয়েছে ভারতকে।

অস্ট্রেলীয় কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, গত দুই সপ্তাহে ভারতীয়দের মাধ্যমে সংক্রমণ ছড়ানোয় উদ্বেগ দেখা দিয়েছে।

সীমান্তে কড়াকড়ি আরোপ এবং বাধ্যতামূলক কোয়ারেন্টাইনের মাধ্যমে কোভিড- ১৯ এর সংক্রমণ ছড়িয় পড়া ঠেকিয়ে রেখেছে আস্ট্রলিয়া। দেশটিতে এপর্যন্ত করোনাভাইরাসে ৯১০ জনের মৃত্যু হয়েছে, যা অন্যান্য দেশের তুলনায় অনেক কম।

অস্ট্রেলিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ম্যারিস পাইন জানিয়েছেন, কোয়ারেন্টাইনে থাকা রোগীর ৫৭ শতাংশই ভারত থেকে আসা লোকজন। এই সংখ্যা গত মার্চ থেকে ১০ শতাংশ বেশি।

তিনি বলেন, “স্বাস্থ্য এবং চিকিৎসা সেবার ওপর এটা খুবই বড় বোঝা।”

যদিও স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ এবং আইনজীবীদের সংগঠনসহ সমালোচকরা বলছেন, ভারতীয়দের আগমনকে অপরাধ গণ্য করা একটি চরম সিদ্ধান্ত এবং স্বাস্থ্য ঝুঁকির বিবেচনায় অসামঞ্জস্যপূর্ণ।

অস্ট্রেলিয়ার গ্রিন দলের ফেডারেল সিনেটর মেহরিন ফারুকি এক টুইটে এই পদক্ষেপকে ‘অত্যন্ত ভয়ঙ্কর ও বর্ণবাদী’ বলে বর্ণনা করেছেন।

গণমাধ্যমে রক্ষণশীলদের প্রধান ভাষ্যকার অ্যান্ড্রিউ বোল্ট এ বিষয়ে বলেন, “এই নীতি এতোটাই হীন এবং অযৌক্তিক যে আমিও এটাকে বর্ণবাদী হিসেবে তিরস্কার জানাচ্ছি।”

“আমার মনে হয় না আমরা সাদা বর্ণের অস্ট্রেলীয়দের, ধরা যাক, তাদের ইংল্যান্ড থেকে পালিয়ে আসার ওপর এমন ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা দিতে পারি।”

জাতি বৈষম্য নিয়ে কাজ করা অস্ট্রেলিয়ার সাবেক রেইস ডিসক্রিমিনেশন কমিশনার টিম সাউটফোমাসেইন এই ঘোষণাকে সরকারি নীতির অসঙ্গতি বলে উল্লেখ করেছেন। কোভিড- ১৯ সংক্রমণের সর্বোচ্চ অবস্থায়ও অস্ট্রেলীয় নাগরিকদের দেশে ফেরার ওপর নিষেধাজ্ঞা কিংবা জরিমানা আরোপ করা হয়নি বলে উল্লেখ করেছেন তিনি।

সিডনি মর্নিং হেরাল্ড পত্রিকাকে তিনি বলেন, “আমরা দেখিনি জাতিগত বৈশিষ্ট্য বিবেচনা করে যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র এবং কোনো ইউরোপীয় দেশের ক্ষেত্রে এমনটা করা হয়েছে। যদিও একসময় সংক্রমণের হার সেসব দেশে অনেক বেশি ছিল এবং সেখান থেকে কারও আগমন ছিল অত্যন্ত বিপজ্জনক।

“বিশ্বের কোন প্রান্ত থেকে আপনি আসছেন তার ওপর ভিত্তি করে এখানে ভিন্ন ভিন্ন মানদণ্ড করা হচ্ছে।”

প্রায় দুই দশমিক ছয় শতাংশ ভারতীয়-অস্ট্রেলীয় জনসংখ্যার লোকজন হঠাৎ এমন নিষেধাজ্ঞায় ক্ষোভ জানিয়েছেন। বিবিসিকে কেউ কেউ বলেছেন, তারা এমন বোধ করছেন যে, বিপদ থেকে বাঁচতে চাওয়ায় তাদেরকে অপরাধী এবং ‘দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিক’ হিসেবে গণ্য করা হচ্ছে।

আইন বিশেষজ্ঞরাও এই নিষেধাজ্ঞার মাধ্যমে আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করা হয়েছে জানিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকার বিষয়ক আন্তর্জাতিক চুক্তি ‘ইন্টারন্যাশনাল কনভেন্যান্ট অন সিভিল অ্যান্ড পলিটিকাল রাইটস’ এ স্বাক্ষরকারী দেশ অস্ট্রলিয়া। যেখানে বলা আছে, নাগরিকদের নিজ দেশে ফেরার অধিকার থেকে বেআইনিভাবে বঞ্চিত করা যাবে না।

অস্ট্রেলিয়ার মানবাধিকার কমিশন এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, “সরকারকে অবশ্যই এটা দেখাতে হবে যে, জনস্বাস্থ্যের ঝুঁকি মোকাবিলায় এটাই একমাত্র উপযুক্ত উপায় এবং এই পদক্ষেপ বৈষম্যমূলক নয়।”

 


বিষয়:


আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Developed with by
Top