সিডনী বুধবার, ১৭ই এপ্রিল ২০২৪, ৩রা বৈশাখ ১৪৩১

বাংলাদেশকে সহযোগিতা করতে আইওএমকে ২০ লাখ ইউরো দিয়েছে জার্মানি


প্রকাশিত:
১২ সেপ্টেম্বর ২০২০ ০০:৪৯

আপডেট:
১৭ এপ্রিল ২০২৪ ০৫:৫৩

 

প্রভাত ফেরী: ঢাকা-জার্মান ফেডারেল পররাষ্ট্র দপ্তরের সহায়তায় রোহিঙ্গা শরণার্থী এবং বিপদাপন্ন স্থানীয়দের প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রমকে আরো প্রসারিত করবে আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম)। পাশাপাশি কক্সবাজারে অসুস্থ ভ্রমণকারীদের চিহ্নিতকরণ, পরীক্ষা এবং অন্য কোথাও নিয়ে যেতে প্রবেশপথের (পিওই) সক্ষমতা বৃদ্ধিতে বাংলাদেশ সরকারকে সহায়তা করবে জাতিসংঘের অভিবাসন বিষয়ক এই সংস্থা। 

এই উদার অর্থায়নের মাধ্যমে আইওএম তিনটি পৃথকীকরণ ও চিকিৎসাকেন্দ্র নির্মাণ করবে, ১০০টি মধ্যবর্তীকালীন আশ্রয়কেন্দ্রকে নতুন করে স্বল্প ঝুঁকিসম্পন্ন কেসের জন্য কোয়ারেন্টিন এবং পৃথকীকরণ কেন্দ্রে পরিণত করবে, ক্যাম্পে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারদের সুবিধার্থে কাজের বিনিময়ে অর্থ (ক্যাশ ফর ওয়ার্ক) প্রকল্পকে সহায়তা জোরদার করবে। এছাড়াও তিনটি অ্যাম্বুলেন্স জীবাণুমুক্তকরণ স্থান তৈরি, অ্যাম্বুলেন্স প্রেরণ সমন্বয়, শরণার্থী এবং স্থানীয়দের মধ্যে কন্টাক্ট ট্রেসিংয়ে কাজ করা স্থানীয় স্বাস্থ্যকর্মীদের ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জাম প্রদানেও কাজ করবে আইওএম।

এছাড়া, এই অর্থায়ন দেশের প্রবেশপথসমূহে বাংলাদেশ সরকারের কার্যক্রমকেও শক্তিশালী করবে যার মধ্যে রয়েছে- অসুস্থ ভ্রমণকারীদের ব্যবস্থাপনায় নিয়োজিত পিওই কর্মীদের প্রশিক্ষণ, কক্সবাজার বিমানবন্দরে স্ক্রিনিং এবং পৃথকীকরণ সুবিধা স্থাপন, পিওই’র সম্মুখসারীর কর্মীদের জন্য প্রয়োজনীয় সুরক্ষা সরঞ্জাম ও পর্যাপ্ত স্বাস্থ্যব্যবস্থা নিশ্চিতে প্রয়োজনীয় উপাদান প্রদান, এবং পিওই কর্তৃপক্ষদের নিয়ে পাবলিক হেলথ ইমার্জেন্সিস অব ইন্টারন্যাশনাল কনসার্ন (পিএইচইআইসিস) বিষয়ক দেশব্যাপী সম্মেলন আয়োজনে সহায়তা প্রদান।

 ঢাকায় নিযুক্ত জার্মান রাষ্ট্রদূত পিটার ফারেনহোল্টজ বলেন, বাংলাদেশে আইওএম'র কভিড-১৯ এর সাড়াপ্রদান কার্যক্রমকে সহায়তা করতে পেরে আমরা আনন্দিত। করোনাভাইরাস সম্প্রসারণ প্রতিরোধ এবং এই রোগ সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শরণার্থী ও স্থানীয় বিপদাপন্ন জনগোষ্ঠীদের জন্য স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম আরো প্রসারিত করা জরুরি। আইওএম বাংলাদেশের মিশন প্রধান গিওরগি গিগাওরি বলেন, আমরা জার্মান সরকারের প্রতি এই সহায়তার জন্য কৃতজ্ঞ। তাদের এই সহায়তার ফলে আমরা বিপদাপন্ন জনগোষ্ঠী, বিশেষ করে কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শরণার্থীদের, যারা পুরোপুরি মানবিক সহায়তার ওপর নির্ভরশীল, তাদের জরুরি স্বাস্থ্য সহায়তা প্রদানে কাজ করে যেতে সক্ষম হবো।

তিনি আরো বলেন, এই আর্থিক সহায়তার মাধ্যমে আমরা প্রবেশপথসমূহে সক্ষমতা বৃদ্ধিতে বাংলাদেশ সরকারকে সহায়তা প্রদান কার্যক্রম চলমান রাখতে পারবো, যাতে করে কর্মকর্তারা অসুস্থ ভ্রমণকারীদের মাধ্যমে ভাইরাস যাতে ছড়িয়ে যেতে না পারে সেজন্য যথাযত উদ্যোগ নিতে পারে। বিশ্বের অন্যতম ঘনবসতিপূর্ণ দেশ বাংলাদেশের জন্য সংবরণ পদ্ধতি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

 সাম্প্রতিক মাসগুলোতে আইওএম এবং অংশীদারিরা স্থানীয় ব্যক্তিবর্গ এবং ধর্মীয় নেতাদের চিকিৎসা এবং পৃথকীকরণ কেন্দ্র সুবিধায় আস্থা তৈরি করতে ‘চলুন এবং দেখুন’ সফরে অংশ নিতে আমন্ত্রণ জানায়। স্থানীয় ব্যক্তিদের চিন্তাভাবনা স্বাস্থ্যসেবা ধারণাকে প্রভাবিত করে এবং সংকটকালীন হস্তক্ষেপের সাফল্য নির্ধারণ করে। মার্চ থেকে আইওএম কভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের জন্য সর্বমোট ২১৫ শয্যা বিশিষ্ট তিনটি গুরুতর তীব্র শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণ (এসএআরআই) পৃথকীকরণ এবং চিকিৎসাকেন্দ্র নির্মাণ করে। এছাড়াও আইওএম ১৩টি অতিরিক্ত স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা উন্নত করে, অ্যাম্বুলেন্স এবং লাইভ-বেড রেফারেলের জন্য জরুরি ডিসপ্যাচ অ্যান্ড রেফারেল ইউনিট (ডিআরইউ) ত্বরান্বিত করে এবং আইওএম পরিচালিত প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রসমূহে ও স্বাস্থ্য পোস্টগুলোতে রোহিঙ্গা ও স্থানীয় জনগোষ্ঠীদের ২ লাখের বেশি স্বাস্থ্য পরামর্শ প্রদান করে। জীবন রক্ষায় জীবাণুর সংক্রমণ ও বিস্তার প্রতিরোধ ও বন্ধ করতে প্রয়োজন যথাযথ এবং বিশ্বাসযোগ্য তথ্যের প্রচার। মার্চ থেকেই আইওএম'র দলসমূহ এবং স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবকগণ ১৯ লাখের বেশি সচেতনতা বৃদ্ধিমূলক বৈঠকের আয়োজন করেছে। প্রদত্ত সচেতনতামূলক বার্তার মধ্যে রয়েছে সুরক্ষা, প্রতিরোধ, চিকিৎসা, এবং কোয়ারেন্টাইন সংক্রান্ত তথ্য।

করোনা সংকটের শুরুর দিকে, যখন পৃথিবীর সকল সরকার সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিতে জোর দেয়, এটা স্পষ্ট ছিলো যে, কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্পের মত ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় তা কার্যকর নাও হতে পারে। আইওএম এবং অংশীদাররা চিকিৎসা এবং পৃথকীকরণ কেন্দ্র তৈরির জন্য তহবিল সংগ্রহ করছে যাতে সম্প্রদায়ের অসুস্থ সদস্যরা তাদের প্রয়োজনীয় চিকিৎসা গ্রহণ করতে পারেন এবং ভাইরাসের বিস্তার রোধে নিশ্চিত সংক্রমিত ব্যক্তির সংস্পর্শে আসা সম্ভাব্য ব্যক্তির জন্য কোয়ারেন্টিন সুবিধা নির্মাণ অথবা পুনর্গঠন করতে পারে।

বাংলাদেশ মানবিক প্রয়োজনের মুখোমুখি এবং কভিড-১৯ সৃষ্ট মন্দার ফলে চাকরি হারিয়ে হাজার হাজার অভিবাসী কর্মীর প্রত্যাবর্তনের ফলে করোনা সংকট আরো বৃদ্ধি পেয়েছে। অভিবাসী কর্মীদের স্বল্প সময়ে বৃহৎ সংখ্যায় প্রত্যাবর্তনের ফলে ইতোমধ্যে চাপে থাকা স্বাস্থ্যসেবা এবং সামাজিক সহায়তা ব্যবস্থায় অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি হচ্ছে।


বিষয়:


আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Developed with by
Top