সিডনী বুধবার, ২৪শে এপ্রিল ২০২৪, ১০ই বৈশাখ ১৪৩১

বাজার স্থিতিশীল রাখতে কমছে চালের আমদানি শুল্ক


প্রকাশিত:
৩ মার্চ ২০২১ ১৯:০৮

আপডেট:
২৪ এপ্রিল ২০২৪ ০২:৩৬

 

প্রভাত ফেরী: বাড়ছে চালের দাম। সরকারি হিসাবেই রাজধানীতে চিকন চালের দাম বেড়েছে কেজিতে দুই টাকা।

এমন পরিস্থিতিতে চালের সরবরাহ বাড়াতে ও বাজার স্থিতিশীল রাখতে চালের আমদানি শুল্ক আরও ১০ শতাংশ কমানোর প্রস্তাব দিয়েছে খাদ্য মন্ত্রণালয়। ইতোমধ্যে এ সংক্রান্ত প্রস্তাব জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) পাঠানো হয়েছে। অর্থ বিভাগসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরের সম্মতিসাপেক্ষে শিগগির প্রজ্ঞাপন জারি করবে তারা। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের।

চলতি বছর দেশে বোরো ও আমনের বাম্পার ফলনের পরও চালের দাম বাড়তে থাকে অস্বাভাবিক হারে। চালের বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখতে বেসরকারি খাতে আমদানির সুযোগ উন্মুক্ত করে সরকার। গত ২৭ ডিসেম্বর বেসরকারিভাবে চালের আমদানি শুল্ক আগের ৬২.৫০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২৫ শতাংশ নির্ধারণ করে সরকার। এতে বেসরকারিভাবে চাল আমদানিতে শুল্ক কমানো হয় ৩৭.৫ শতাংশ। আমদানি শুল্ক কমানোর পর চাল আনার হিড়িক পড়ে ব্যবসায়ীদের মধ্যে। বেসরকারিভাবে ১০ লাখ টন চাল আনার টার্গেট থাকলেও এ পর্যন্ত দেশে চাল প্রবেশ করেছে দুই থেকে আড়াই লাখ টনের মতো। ফলে চালের দাম কমেনি কাক্সিক্ষত হারে বরং দিনদিনই বাড়ছে চালের দাম। রাজধানীতে গত সপ্তাহের চেয়ে এ সপ্তাহে নাজিরশাইল ও মিনিকেটের দাম বেড়েছে। যে চালের দাম ছিল ৬৪ টাকা কেজি, বর্তমানে সেই চাল বিক্রি হচ্ছে ৬৬ টাকা। গত সপ্তাহের তুলনায় চিকন চালের দাম বেড়েছে কেজিতে দুই টাকা। এ ছাড়া গত সপ্তাহে যে চালের দাম ছিল ৫৮ টাকা কেজি। রোববার সেই চাল বিক্রি হয় ৬০ টাকা কেজি। ব্যবসায়ীরা বলছেন, বাজারে সরবরাহ স্বাভাবিক হলে তবেই চালের দাম কমবে।

খাদ্য মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে দেওয়া তথ্যানুযায়ী, সরকারি গুদামে ২৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ছয় লাখ ৪৭ হাজার ১০ টন খাদ্যশস্য মজুত আছে। এর মধ্যে চাল পাঁচ লাখ ৩৮ হাজার ৫৯ টন এবং গম এক লাখ আট হাজার টন। গত বছর এই সময় মজুত ছিল ১৮ লাখ ২৭ হাজার ৯৮ টন। এর মধ্যে চাল ১৪ লাখ ৬৬ হাজার ৯৮ টন এবং গম তিন লাখ ৬১ হাজার টন। অর্থাৎ, চালের মজুতের পরিমাণ গত বছরের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ কম।

সরকারি বিপণন সংস্থা টিসিবির হিসাবে গত বছরের এ সময়ে যে চাল ৫০ টাকা কেজিতে পাওয়া যেত এখন সেই চালের কেজি ৬০ টাকা। টিসিবির তথ্যানুযায়ী, গত এক বছরে চিকন চালের দাম বেড়েছে ১৩ শতাংশ। এক বছরের ব্যবধানে মাঝারি চালের দাম বেড়েছে ১৭ শতাংশ এবং মোটা চালের দাম বেড়েছে ৩৭ শতাংশ। ব্যবসায়ীরা বলছেন, মোটা চালের দাম এখন ৪৮-৫০ টাকা কেজি। মাঝারি ধরনের চালের দাম ৫৮-৬০ টাকা কেজি এবং চিকন চালের দাম প্রতি কেজি ৬৫-৬৬ টাকা।

বিদ্যমান পরিস্থিতিতে গত সপ্তাহে চাল ব্যবসায়ী, আমদানিকারক, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়সহ স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে ভার্চুয়ালি বৈঠক করছে খাদ্য মন্ত্রণালয়। ওই বৈঠকে চালের বাজার পরিস্থিতি তুলে ধরে চালের দাম কেন বাড়ছে, সে বিষয়ে চাল ব্যবসায়ীদের কাছে জানতে চাওয়া হয়। জানতে চাওয়া হয় আমদানিকারকরা কেন এলসি খুলেও চাল আনতে দেরি করছেন? জবাবে ভারত সীমান্তে ট্রাকে হয়রানি, কাস্টমস ও এলসি খোলাসহ বিভিন্ন জটিলতা তুলে ধরেন তারা। বৈঠকের পর চালের সরবরাহ বাড়াতে আমদানি শুল্ক আরও কমানোর সিদ্ধান্ত হয়। গত সপ্তাহে আমদানি শুল্ক আরও ১০ শতাংশ কমানোর প্রস্তাব করে সারসংক্ষেপ তৈরি করে খাদ্য অধিদপ্তর। ইতোমধ্যে এ সংক্রান্ত প্রস্তাবটি এনবিআরে পাঠানো হয়েছে বলে জানা গেছে।

খাদ্য মন্ত্রণালয়ের একাধিক কর্মকর্তা প্রায় অভিন্ন ভাষায় জানান, চালের আমদানি শুল্ক ২৫ শতাংশসহ অন্যান্য খরচ দিয়ে পড়ে প্রায় ২৭ শতাংশ। এ থেকে ১০ শতাংশ কমানো হলে চালের সরবরাহ বাড়বে। চালের দাম না কমলেও তা স্থিতিশীল হবে। এ কারণেই চালের আমদানি শুল্ক কমানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। এখন এনবিআর অর্থ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলাপ করে কমানোর বিষয়টি বিবেচনা করে জিও জারি করবে।

চাল আমদানি কার্যক্রম তদারকিতে সেল: সরকারিভাবে চাল আমদানি কার্যক্রম তদারকির জন্য অস্থায়ীভাবে একটি মনিটরিং সেল গঠন করা হয়েছে। সোমবার এই সেল গঠন করে খাদ্য অধিদপ্তর থেকে অফিস আদেশ জারি করা হয়েছে। তিন সদস্যের এই সেলের প্রধান করা হয়েছে খাদ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক মো. মনিরুজ্জামানকে। এ ছাড়া সহযোগী প্রধান হিসাবে আছেন সহকারী উপ-পরিচালক মুহাম্মদ আব্দুল মালেক খন্দকার এবং সহযোগী হিসাবে উচ্চমান সহকারী মো. বায়জিদ খান।

অফিস আদেশে বলা হয়, চাল আমদানির জন্য চুক্তিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগ করে চুক্তির আওতায় জাহাজ/বার্জের নামসহ জাহাজীকরণ করা ও জাহাজীকরণের অবশিষ্ট চালের পরিমাণ সংগ্রহ করবে এই সেল। এ ছাড়া চট্টগ্রাম ও মোংলার চলাচল এবং সংরক্ষণ নিয়ন্ত্রকের সঙ্গে যোগাযোগ করে সরবরাহকারীভিত্তিক চালের আগমন, খালাস ও ভাসমান পরিমাণের তথ্যও সংগ্রহ করবে। এসব বিষয়ে ছক অনুযায়ী খাদ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের কাছে এই সেল প্রতিদিন প্রতিবেদন দেবে বলেও আদেশে উল্লেখ করা হয়েছে।

 



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Developed with by
Top