সিডনী শুক্রবার, ২৬শে এপ্রিল ২০২৪, ১২ই বৈশাখ ১৪৩১

নিঃস্ব হয়ে পুঁজিবাজার ছেড়েছেন সাড়ে ৬ লাখ বিনিয়োগকারী


প্রকাশিত:
২২ ডিসেম্বর ২০১৯ ০৬:১৬

আপডেট:
২২ ডিসেম্বর ২০১৯ ০৬:১৬

ফাইল ছবি

প্রভাত ফেরী ডেস্ক: এখন পুঁজিবাজার থেকে প্রতিদিনই গায়েব হয়ে যাচ্ছে হাজার হাজার কোটি টাকার মূলধন। যেমন ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) বাজার মূলধন কমে গেছে প্রায় ৮৩ হাজার কোটি টাকা। ফলে বেশিরভাগ বিনিয়োগকারী পুঁজি হারিয়ে পথে বসেছেন। পতনের হাত থেকে রেহাই পাচ্ছে না এই বাজার। গত মঙ্গলবারও (১০ ডিসেম্বর) দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) এবং অন্য শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) সবক’টি মূল্যসূচকের পতন হয়।

কেউ সারাজীবনের চাকরির পেনশনের টাকা বিনিয়োগ করেছেন, আবার কেউ বাড়ি বিক্রি করেও এসেছেন পুঁজিবাজারে ব্যবসা করতে। দীর্ঘদিনের মন্দায় এসব ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারী একেবারে নিঃস্ব হয়ে গেছেন। ফলস্বরূপ, ক্রমেই পুঁজিবাজার থেকে হারিয়ে যাচ্ছেন ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা। যেমন গত পাঁচ বছরে দেশের পুঁজিবাজার থেকে হারিয়ে গেছেন ৬ লাখ ৫০ হাজার বিনিয়োগকারী।

এমন টানা দরপতনে ৪২ মাস আগের অবস্থানে ফিরে যায় ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক। ওইদিনের লেনদেন শেষে ডিএসইর প্রধান মূল্য সূচক ডিএসইএক্স আগের দিনের তুলনায় ২৬ পয়েন্ট কমে ৪ হাজার ৫০৬ পয়েন্টে দাঁড়ায়। এমন টানা বড় পতনের কারণে ডিএসইর প্রধান সূচক ২০১৬ সালের ১১ জুলাই অর্থাৎ ৪২ মাস পর সর্বনিম্ন অবস্থানে নেমে গেছে। এর আগে ২০১৬ সালের ১১ জুলাই ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ছিল ৪ হাজার ৫০৫ পয়েন্টে।

পুঁজিবাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, বিনিয়োগকারীদের পুঁজিবাজার ছাড়ার প্রধান কারণ আস্থাহীনতা। ১৯৯৬ সালে এবং ২০১০ সালে যারা পুঁজিবাজার লুটপাট করেছিল এবং এখনও যারা লুটে খাচ্ছে পুঁজিবাজার তাদের বিচার কখনও হয়নি। উল্টো পুঁজি হারিয়ে নিঃস্ব হওয়া বিনিয়োগকারীরা রাজপথে নামলে তাদের ওপরই লাঠিপেটা করা হয়েছে।

এমনটিই জানালেন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম। তিনি বলেন, পুঁজিবাজারের চলমান সঙ্কট দূর করার জন্য সবার আগে বাংলাদেশ সিকিউরিটি অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) পুনর্গঠন করতে হবে। কারণ এই নিয়ন্ত্রক সংস্থার প্রতি মানুষের বিশ্বাসযোগ্যতা কমে যাওয়ার কারণেই বাজারে বিপর্যয় ঘটছে। তাই বিএসইসিকে ভেঙে নতুন করে ঢেলে সাজালে চাঙ্গা হতে পারে দেশের পুঁজিবাজার।

সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি বাংলাদেশ লিমিটেডের (সিডিবিএল) তথ্য মতে, গত পাঁচ বছরে দেশের পুঁজিবাজার থেকে হারিয়ে গেছে ৬ লাখ ৫০ হাজার বিনিয়োগকারী।

সিডিবিএলের তথ্য অনুযায়ী, বুধবার পর্যন্ত গত অর্থবছরে নবায়ন না হওয়া প্রায় ১ লাখ ৩৩ হাজার বেনিফিশিয়ারি ওনার্স বা বিও হিসাব বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। ২০১৫ সালে বিও হিসাবধারীর সংখ্যা ছিল ৩১ লাখ ৯৫ হাজার। ২০১৬ সালে ছিল ৩১ লাখ ৫৫ হাজার, ২০১৭ সালে ছিল ২৯ লাখ ২৮ হাজার, ২০১৮ সালে ছিল ২৭ লাখ ৬৬ হাজার। আর গতকাল পর্যন্ত বিও হিসাবধারীর সংখ্যা দাঁড়ায় ২৫ লাখ ৪৫ হাজার। সুতরাং ২০১৫ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত পুঁজিবাজার থেকে বিও হিসাবধারী বা বিনিয়োগকারীর সংখ্যা কমেছে ৬ লাখ ৫০ হাজার।

বিনিয়োগকারী কমার পাশাপাশি প্রতিদিনই গায়েব হয়ে যাচ্ছে হাজার হাজার কোটি টাকার বাজার মূলধন। চলতি বছরের ২৪ জানুয়ারি থেকে শুরু হওয়া দরপতন এখন ভয়াবহ ধসে রূপ নিয়েছে। গত ১৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত বিনিয়োগকারীদের পুঁজি উধাও হয়েছে ৮৩ হাজার ৩২৩ কোটি ৯ লাখ টাকা। একইভাবে সিএসইর বিনিয়োগকারীদেরও পুঁজি কমেছে ৮৩ হাজার কোটি টাকা। সিডিবিএলের তথ্য মতে, ২৫ লাখ ৭৮ হাজার বিনিয়োগকারী রয়েছে।

বাজার থেকে এভাবে টাকা গায়েব হওয়ার ঘটনা মাঝেমধ্যেই ঘটছে। যেমন চলতি বছরের জুলাই মাসেও মাত্র ১৫ দিনে শেয়ারবাজার থেকে ২৭ হাজার কোটি টাকা উধাও হয়। সে সময় শেয়ারের মূল্যমান কমে যাওয়ায় প্রায় ৪ লাখ কোটি টাকা থেকে ডিএসইর বাজার মূলধন নেমে এসেছিল ৩ লাখ ৭৩ হাজার কোটি টাকায়। এর মধ্যে একদিনেই ডিএসইতে লেনদেন হওয়া কোম্পানিগুলোর শেয়ারের মূল্যমান ৪ হাজার ৩৫৮ কোটি টাকা কমে বাজার মূলধন নেমে আসে ৩ লাখ ৭২ হাজার ৯৫৭ কোটি টাকায়। বাজার মূলধন হারানোর পরিস্থিতি থেকে এখনও বের হওয়া যায়নি।



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Developed with by
Top