সিডনী বৃহঃস্পতিবার, ২৫শে এপ্রিল ২০২৪, ১২ই বৈশাখ ১৪৩১

পিঁপড়ে পারে সারারাত নির্ঘুম রাখতে! : আফরোজা পারভীন


প্রকাশিত:
১৮ জুন ২০২০ ২৩:১৭

আপডেট:
১৯ জুন ২০২০ ০০:০৮

আফরোজা পারভীন

 

দিন তারিখ ভুলে গেছি এখন আমরা সবাই। জানি না কোনটা খোলা দিন, কোনটা ছুটির দিন। মেয়ে আর বৌমার অফিস যাবার তাড়া নেই। ছেলের স্যুটিং নেই। বাড়ির অভিভাবক আমারও চিন্তা নেই, ওরা কি খেয়ে যাবে। ফিরতে দেরি হলে উৎকণ্ঠা নিয়ে অপেক্ষা নেই। তবে তার চেয়ে অনেক বড় উৎকণ্ঠা নিয়ে আছি আমরা, যার নাম করোনা।
কোরিয়ায় আশিজন করোনাক্রান্ত রোগিকে দাঁড় করিয়ে গুলি করেছে। মানুষ এত নিষ্ঠুর হয় কী করে! ওদের চিকিৎসা না করেই মেরে ফেলার বিষয়টা মানতে পারিনি কিছুতেই। ওরা তো অসুখকে আহ্বান করেনি। কোনো পাগল করে না। কে চায় এমন মৃত্যু!
একটা ভিডিওতে দেখলাম, একটা বাচ্চার করোনা হয়েছে। সে ঘরের ভিতরে বসে চিৎকার করে কাঁদছে । বাবা মা দূরে দাঁড়িয়ে চোখে জল নিয়ে বলছে, দরুদ পড়ো, দরুদ পড়ো। আপাতদৃষ্টিতে ওই বাবা মাকে খুবই নিষ্ঠুর মনে হচ্ছে। কিন্তু এছাড়া তো উপায় নেই। ছোঁয়া মানে নিশ্চিত সংক্রমণ। তবে এসব ক্ষেত্রে ফেলে না রেখে চেষ্টা করা উচিত যত দ্রুত সম্ভব চিকিৎসার আওতায় নেয়া।
করোনাক্রান্ত রোগিকে ব্যাগে ভরে রাস্তায় ফেলে যাবার মতো ঘটনাও ঘটছে। হ্যাঁ আমরা মানুষের এই নিষ্ঠুরতা নিয়ে কথা বলতেই পারি। আপনজনের কাছ থেকে এটা কাম্য নয় মোটেও। কিন্তু কেন এমন হচ্ছে সেটাও ভেবে দেখার বিষয়। মানুষ মাত্রই বাঁচতে চায়, এটা সহজাত প্রবৃত্তি। আর সেই বাঁচার তাগিদেই মানুষ এটা করছে। এই কাজটা কোরিয়ানদের গুলি করে মারার চেয়ে কম নৃশংস নয় কোনোক্রমেই।
সুজাতা আর রতন চৌধুরী আমেরিকা গিয়েছিলেন উন্নত জীবনযাপনের আশায়। ভালোই ছিলেন তারা। একদিন নিজের অজান্তেই কাজের জায়গা থেকে করোনা ভাইরাস নিয়ে ঘরে ফিরলেন সুজাতা। একে একে সংক্রমিত হলো স্বামীসহ দু’সন্তান। চিকিৎসার পর্যাপ্ত ব্যবস্থা না থাকায় ঘরেই চিকিৎসা নিতে বলা হলো তাদের। স্বামী মারা গেছেন। অমেরিকার মতো উন্নত দেশ মর্গ নিয়ে আর লাশ সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে। তারা রতনের মৃতদেহ নিয়ে যেতে পারেনি। বাড়িরই একটা ঘরে ব্যাগ বন্দি করে ঘরে তালা দিয়ে রেখে গেছে। কিছু লাশ মাটি চাপা দেয়া হলে লাশ নিয়ে যাবে বলে গেছে। ভাবা যায় কত মর্মান্তিক বিষয়! পাশের ঘরে মৃত স্বামী আর পিতাকে নিয়ে দিন কাটাচ্ছেন সুজাতা আর বাচ্চারা। সত্যি কাঁদতেও ভুলে গেছি।
একটা খবর নিয়ে খুব হাসহাসি হয়েছে । ইতালি থেকে স্বামী দেশে আসার খবরে স্ত্রী বাড়ি ছেড়ে পালিয়েছে। আমি এই স্ত্রীকে সালাম দিই। পরে কি হবে, সংসার টিকবে কি টিকবে না এই চিন্তার যাননি তিনি। প্রবাসীরা অনেকেই কোয়ারেন্টাইন মানছেন না। আর ইতালি তো এখন একটা এটম বোমার নাম। স্ত্রীর এ ছাড়া আর তো কিছু করার ছিল না। ওই মহিলা যদি বেঁচে থাকেন ওনার সংসারে ফেরা কষ্ট হবে। আর ফিরতে পারলেও জীবনভোর অনেক কথা শুনতে হবে আমি নিশ্চিত। কিন্তু জীবনের চেয়ে মূল্যবান তো আর কিছু নেই। সে জীবন বাঁচানো ফরজ।
আর এর মাঝে সর্বকালের স্মরণীয় আর ন্যাক্কারজনক ঘটনা ঘটিয়েছেন পোশাক খাত নেতা রুবানা হক আর তার দোসররা। রুবানা স্মার্ট সুন্দরী চৌকস । চমৎকার মোটিভিশনাল স্পিস দেন। তার বক্তৃতা মোহিত হয়ে শুনি। ভাবি আহ্ কী ভালো মহিলা! আমাদের সন্তানদের মনে দেশাত্মবোধ জাগাচ্ছেন, তাদের মনে উদ্বোধন করছেন আত্মশক্তির। মনে পড়লেও ভুলে যেতে চেষ্টা করি এরশাদ বিরোধী আন্দোলনে তার ন্যাক্কারজনক ভূমিকার কথা। ভাবি, ম্যান ইজ মরটাল, মানুষ মাত্রই ভুল করে। শুধরে গেছে তাই সমালোচনা করতে নেই। ভালো কাজ করছে, প্রশংসা করি।
কিন্তু কয়লা ধুলে ময়লা যায় না এটা উনি আরেকবার প্রমাণ করলেন। ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে ওনারা দরিদ্র শ্রমিকদের হাঁটিয়ে নিয়ে এলেন ঢাকায় দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে। আমার প্রশ্ন করোনা কি পোশাক শ্রমিকদের ত্যাজ্য করেছে। করোনা যদি পোশাক শ্রমিকদের ত্যাজ্য করে থাকে, ছোঁবে না বলে থাকে তাহলে কোনোই সমস্যা নেই। দলে দলে আসুক গায়ে গা লাগিয়ে, হাঁচি কাশি থুতু গায়ে মেখে, ছিটিয়ে। আসুক হেঁটে গড়িয়ে হেঁচড়ে পেচড়ে ছেঁচড়ে। আসুক ট্রাকে, ফেরিতে, বাসের হাতল ধরে। আসুক অন্তঃসত্তা মহিলা, অসুস্থ পুরুষ, ভীত যুবক, কম্পিত নারী। আসুক খুলনা বরিশাল ময়মনসিংহ থেকে। ওরা আসুক দলে দলে কাতারে কাতারে। করোনা ওদের ছোঁবে না, ত্যাজ্য করেছে যে!
ব্যাপারটা যদি তেমন হতো আমরাও নিশ্চিন্ত হতাম। যদি জানতাম সারা পৃথিবীতে এত এত মানুষ যে করোনায় আক্রান্ত হলো, মারা গেলো, ধুঁকছে তাদের মধ্যে একজনও পোশাক শ্রমিক নেই। আপনাদের জানা আছে কি কোনো পোশাক শ্রমিক নেই?
করোনা ওদের ত্যাজ্য করার কোনো কারণও অবশ্য নেই। মানবদেহ যেসব উপাদানে তৈরি রক্ত মাংস হাড় ওদেরও তাই। ওদেরও ফুসফুস আছে, গলা আছে । সেখানে করোনার স্থান নেয়ার জায়গা আছে, ওদেরও দুটো করে হাত আছে। সে হাতে ওরাও হাত মিলায় । সে হাত করোনার অপছন্দ করার কোনো কারণ নেই। ওরাও হাঁচি কাশি দেয়, থুতু ছিটায়। তাহলে ওদের করোনা হবে না বা ওরা করোনা ছড়াবে না এই ধারণা হলো কি করে? নাকি করোনা হলে হবে, গরিব মরবে, টাকাতো আয় হবে এই ভাবনা! প্রণোদনা পেয়েছি এবার চাই ডাবল লাভ। ওদের জীবনের কী এমন দাম! ভারিতো এক একজন শ্রমিক!
ওরা সাধারণ ছুটির আওতায় পড়ল না। ছুটি ঘোষণার পর ঢাকায় থাকার জায়গা না থাকায় ওরা গ্রামে ছুটল। যাওয়ার সময় ওদের হাতে বেতনের টাকাটা দেয়া হলো না। আমরা দেশবাসী জানলাম পোশাক কারখানার মালিকরা বড় দয়ালু। ওরা ছুটি পেয়েছে, বেতন পেয়েছে। আর পাবে নাই বা কেন! আর কেউ কিছু পাক বা না পাক দুর্যোগের শুরুতেই রপ্তানী খাতসহ পোশাক শিল্পের ক্ষতি কাটিয়ে ওঠার জন্য সরকার ৫০০০ কোটি টাকার প্রণোদনা দিয়েছে। প্রণোদনার অন্যতম শর্ত ছিল শ্রমিকদের বেতন দিতে হবে। কাজেই আমরা নিশ্চিন্ত। ছুটি বাড়লে ওদেরও বাড়বে । এক দেশেরই তো মানুষ ওরা। কিন্তু আমরা অর্বাচীন দেশবাসী অনেকেই জানতাম না, ভেতরে অন্য কথা আছে। এক প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, পিপিই, গ্লাভস, স্বাস্থ্যবিধি এসব ব্যবহার করে গার্মেন্টস চলতে পারে। বাংলাদেশের কোন গার্মেন্টস কবে তাদের প্রকৃত অবস্থা স্বীকার করেছে। ‘আপনার কি পিপিই আছে?’ বললে ওরা সমস্বরে আওয়াজ তুলে বলবে, ‘আছে আছে ।’ সব আছে, স্বয়ংসম্পূর্ণ। দেখতে যাচ্ছে কে! কতটা স্বয়ংসম্পূর্ণ তাতো চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে রানা প্লাজা দুর্ঘটনা। তারপরও আমাদের বোধোদয় হলো না।
শ্রমিকরা বলছে, ‘করোনায় ধরলে বাঁচলেও বাইচ্চা থাকতে পারি। চাকরি না থাকলে খামু কি?’ কথা সত্যি। না ফিরলে চাকরি যাবে। কাজেই ওদের ফিরতেই হবে। সে মরুক আর বাঁচুক। মুখে আমরা বলি পোশাক শ্রমিকরাই আমাদের সম্পদ, প্রবাসীরা সম্পদ। ওরা রেমিটেন্স আনে। আর তাদের প্রতি এই আমাদের ব্যবহার। আর প্রণোদনা কেন নিলেন? তাহলে তো আমরা এখন বলতেই পারি ওই প্যাকেজ ফিরিয়ে নিন। সে টাকায় শ্রমিকদের ভাত ডাল কিনে দিই আমরা।
জনরোষের মুখে রাত দশটায় এগারো তারিখ পর্যন্ত গার্মেটস বন্ধ রাখতে মালিকদের অনুরোধ করলেন রুবানা। এই অনুরোধ উনি আগে করলেন না কেন? কেন যাবার আগে তাদের হাতে মার্চ মাসের বেতন দেয়া হলো না? সরকার যে প্রণোদনা দিয়েছে তাতে তো আরো দু এক মাসের বেতন ওই গরিব মানুষগুলোর হাতে দেয়া যেত। তখন তো দিলোই না, এখনও সবাইকে দিয়েছে বলে মনে হয় না। এই প্রযুক্তির যুগে বেতন পৌঁছে দেয়া কোনো কঠিন কাজ ছিল না। বিকাশের মাধ্যমেই বেতন পেমেন্ট করা যেত।
সরকারের তরফ থেকে অব্যাহতভাবে বলা হচ্ছে সোস্যাল ডিসট্যান্স মানার জন্য, ঘরে থাকার জন্য, স্বাস্থ্যবিধি মানার জন্য। আইন না মানার প্রবণতা বাঙালির মজ্জাগত। গলির চা দোকানগুলোতে আগের মতোই জমায়েত হচ্ছে গুলতানি চলছে, একজনের মুখের সিগারেট আরেকজন খাচ্ছে, ধোঁয়ায় বাতাস ভরছে। এ গলিগুলোতে অবিলম্বে সেনাবাহিনি পুলিশের উপস্থিতি দরকার। দরকার গণপিটুনি।
রবীন্দ্রনাথ জমিদার নন্দন হয়েও গরীবের কথা ভেবেছিলেন। মুক্তধারা রথেররশি রক্তকরবী তার জ্বলন্ত উদাহরণ। নজরুল তো সারাটাজীবনই কাটিয়ে দিলেন মানুষ আর সাম্যবাদের কথা বলে। সুকান্ত রানারের দুঃখে কাঁদতে কাঁদতে, অন্যায় অবিচার সহ্য করতে না পেরে চলেই গেলেন। বঙ্গবন্ধু সারাজীবন কৃষক শ্রমিকের কথা ভাবলেন। তাদের জন্য জীবনপাত করলেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী পিতার মতোই গরিবের দুঃখে কাঁদেন। তাঁর চেষ্টার কমতি নেই। এদেশ সাধু সন্ত অলি আউলিয়া ফকির দরবেশের। অহিংসা আর মানবধর্মে বিশ্বাসী এই দেশে কি করে এত শ্রেণি বিভাজনের উন্মেষ হলো, একের পর এক উঠল বিভেদের দেয়াল ভাবলে কষ্ট হয়। বিভাজন সৃষ্টি করল ওই মহিলার মতো মালিক শ্রেণি। অথচ ওরা জানে না পরিবেশ পেলে এক একজন গার্মেন্টস কর্মী যেতে পারত ওই মহিলার চেয়ে বড় পদে । অবশ্য মানুষ হিসেবে ওরা এখনই অনেক বড়।
এর মধ্যে চুরি হচ্ছে ত্রাণ। যখনই দেশে কোনো দুর্যোগ হয়, দুর্ভিক্ষ ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস, মহামারি তখনই চোররা হাত পাকায়। অপেক্ষা করে ত্রাণের। যাদের জন্য ত্রাণ পাঠানো হয় তারা পায় কমই। লুটপাট করে নেয় এই চোররা।
করোনার ভয়ে পৃথিবী ছেয়ে আছে মৃত্যুভীতিতে। প্রতিদিন মারা যাচ্ছে চেনা অচেনা অসংখ্য মানুষ। আক্রান্ত হচ্ছে অসংখ্য মানুষ। করোনা আক্রান্ত দেশে দেদার চাল গম তেল মাস্ক গ্লাভস চুরি হচ্ছে। হতদরিদ্র মানুষেরা সামান্য কিছু ত্রাণের আশায় দিনভোর রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকে, এখানে ওখানে দৌড়ায়। করোনার ভয় তাদের ভীত করে না, সোস্যাল ডিসট্যান্স মাস্ক গ্লাভস কিছুই তাদের মনে থাকে না। তারা দৌড়ায় পেটের ক্ষুধায়। যতক্ষণ জীবন আছে ততক্ষণ ক্ষুধা আছে। আর এই চোরগুলো বঙ্খাটে তেল লুকায়, মাটির নিচে চালের বস্তা লুকিয়ে রাখে। কত উৎকৃষ্ট এদের ব্রেন। পাক্কা চোর না হলে বঙ্খাটে তেল লুকানোর কথা কারো মাথায় আসে! চাঁদপুরের এক মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান চাল চুরি করেছেন। তার ধা চকচকে চেহারা দেখলে মনে হয় না তিনি চুরি করতে পারেন। সোস্যাল মিডিয়ায় মহিলার যে ছবি ভেসে বেড়াচ্ছে তা দেখে মনে করা শক্ত এই মহিলা চোর। তার কি পেটে ভাত নেই, তার ঘরে কি চাল নেই? আমি জানি দুটো প্রশ্নেরই উত্তর, আছে। তাহলে কেন এই গরিবের চাল চুরি! উনি নাকি বলছেন সরলমনে রেখেছে। এ চাল কি রাখার জন্য? এ চাল বিতরণের জন্য। গরিবের ঘরে ঘরে পৌঁছে দেবার জন্য। আর চাল থাকবে গোডাউনে, নিজ বাড়িতে কেন?
সরকারের অতীব গুরুত্বপূর্ণ পদধারী কতিপয় ব্যক্তির নামে নিম্নমানের গ্লাভস বাজারজাতকরণের অভিযোগ উঠেছে। তাদের পক্ষে একজন সাফাই দিয়ে বলেছেন, ভুলক্রমে এটা হয়েছে। এ ব্যাখ্যা কি গ্রহণযোগ্য! ভুলত্রমে উচ্চমানের গ্লাভস দিলে মানতে পারতাম। কিন্তু যখনই নিম্নমানের জিনিস দেয়া হয় তখনই চুরির আভাস পাওয়া যায়। এটা কিন্তু চাল তেল চুরির চেয়েও মারাত্মক। পয়সা কামানোর জন্য মানুষকে নিশ্চিত মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়ার পন্থা।
এই চোররা দেশব্যাপী বিস্তৃত। সকল জেলা, উপজেলা, সকল ইউনিয়নে এরা সদর্পে আছেন। ত্রাণের চাল, টিসিবির ১০ টাকা কেজির চাল, তেল সবই এরা দুহাতে লুটছেন। ইতোমধ্যে অনেকের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে, জরিমানা হয়েছে, জেল খেটেছেন, ডিলারশিপ বাতিল হয়েছে। চুরি করলে ভবিষ্যতে নির্বাচনে দাঁড়াতে পারবেন না এমন ঘোষণাও দেয়া হয়েছে। কিন্তু ‘চোরা না শোনে ধর্মের কাহিনি’। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ত্রাণ নিয়ে অনিয়মের বিরুদ্ধে কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন। সারাদেশে ভিডিও কনফারেন্সে তিনি বার বার হূঁশিয়ারি উচ্চারণ করছেন। বলেছেন প্রয়োজনে মোবাইল কোর্ট বসাবেন। কিন্তু ওদের যা করার তা করছে। জাতির জনক দুঃখ করে বলেছিলেন, পাকিস্তানিরা সব নিয়ে গেছে, রেখে গেছে চোরদের। সেই চোররা বংশবিস্তার করে ডাল পালা ছড়িয়ে দেশ ভরে ফেলেছে।
কাল একটা পিঁপড়ে বিছানায় ঢুকেছিল। ওই এক পিঁপড়ে কখনও উঠেছিল গলায় কখনও পেটে কখনও পিঠে। সারাটা রাত ছটফট করেছি। হাজারো চেষ্টা করে ধরতে পারিনি পিঁপড়েকে, মারতে পারিনি। একটা পিঁপড়ের ক্ষমতা আছে একজন বড় সড় মানুষকে নির্ঘুম রাখার। তাকে জাগিয়ে রাখার। হতাশ করে ফেলার। পোশাক শ্রমিকরা সংখ্যায় অনেক, ওরা কাজ জানে, চালায় অর্থনীতির চাকা । ওরা যদি একবার পিঁপড়ে হয়ে যায় পোশাক মালিকরা, পদধারীরা সামলাতে পারবেন না, পারবেন না। বাঙালি বড় শক্তিশালী। করোনার চেয়ে শক্তিশালী কিনা সে পরীক্ষা হয়নি, করোনা অদম্য অদৃশ্য। কিন্তু অন্যায়কারীর চেয়ে শক্তিশালী এ পরীক্ষা হয়েছে বারবার। কাজেই ওদের উপর নির্যাতন করার আগে দুবার ভাববেন পোশাক মালিকরা। এটাও ভাববেন, ওদের কারণে দেশের মানুষের যে স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়লো তার হিস্যা আপনাদের গুনতে হবে, আজ অথবা কাল।


আফরোজা পারভীন
কথাশিল্পী, কলামলেখক
অবসরপ্রাপ্ত যুগ্মসচিব

 

এই লেখকের অন্যান্য লেখা



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Developed with by
Top