সিডনী মঙ্গলবার, ২৩শে এপ্রিল ২০২৪, ১০ই বৈশাখ ১৪৩১

এ তথ্য মনে জাগায় ভয় : শিবব্রত গুহ


প্রকাশিত:
১৫ অক্টোবর ২০২০ ২১:০৭

আপডেট:
২৩ এপ্রিল ২০২৪ ১২:০৩

 

ভারতবর্ষ এক বহু ভাষাভাষীর নানা ধর্মের বিভিন্ন বর্ণের মানুষের দেশ। এই দেশ আজ উন্নতির চরম শিখরে ধীরে ধীরে উঠতে চলেছে। কিন্তু, এই অতি আধুনিক যুগে দাঁড়িয়েও, এই দেশে এখনো মান্ধাতা আমলের এক ভয়ানক প্রথা বহাল তবিয়তে বজায় রয়েছে। এখন প্রশ্ন উঠতে পারে, যে, কি সেই প্রথা? সে কি এমনবা ভয়ানক? ভারতের জনজাতি ও সমাজের ওপরে এর কুপ্রভাবই বা কি?
আজ আমি আপনাদের সামনে এই সব বিষয় নিয়ে কিছু আলোকপাত করবো। আমরা সবাই জানি, যে, মানুষের প্রধান পরিচয় হল, যে, সে মানুষ। আমরা সবাই একই দেশের অধিবাসী। আমাদের প্রধান পরিচয় হল, যে, আমরা সবাই হলাম ভারতবাসী। এখানে কেউ ছোট - বড় নয়। এখানে জাতপাতের প্রশ্ন আসছে কেন?
কিন্তু, এটা আমাদের সকলেরই কম বেশি জানা আছে, যে, এই জাতপাতের প্রচলন আজ থেকে ছিল না, এর সূত্রপাত হয়েছিল ভারতে অনেক অনেক দিন আগে থেকে। আমরা যদি ভারতবর্ষের ইতিহাস পর্যালোচনা, করি, তাহলে, দেখতে পাবো যে, ভারতের ইতিহাসে অনেক জায়গাতেই জাতপাতের উদাহরণ রয়েছে।
অতীতে, এই দেশে, উঁচু জাতের মানুষেরা নীচু জাতের মানুষদের হাতে জল খেত না।


উঁচু জাতের মানুষেরা নানা রকমভাবে নীচু জাতের মানুষদের ওপরে বিভিন্ন রকমভাবে অন্যায় অত্যাচার করে যেত। এখন সময় বদলেছে, ভারত অনেক এগিয়েছে। কিন্তু, এদেশ থেকে এখনো জাতপাত দূর হয়নি।
আজও ভারতের নীচু বা দলিত জাতের মানুষদের নানাভাবে শোষণ করে চলেছে সমাজের উঁচু জাতের মানুষেরা।
ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ড ব্যুরোর ( এনসিআরবি) এক রিপোর্ট সম্প্রতি হয়েছে প্রকাশিত। তাতে কি বলা হয়েছে জানেন? শুনলে আপনারা আঁতকে উঠবেন। তাতে বলা হয়েছে, যে, গত এক দশকে, ভারতে দলিত নারীদের ওপরে নির্যাতনের হার বেড়ে গেছে একধাক্কায় ৩৭ শতাংশ। এইসব জঘন্য অপরাধে শাস্তির হার বেড়েছে মাত্র ২.৫ শতাংশ। ভাবা যায়! এযে এক ভয়ংকর তথ্য!
সাধারণ ভাবে, সারা ভারতে নারীদের সাথে অপরাধ বৃদ্ধি পেয়েছে ৮৬ শতাংশ, গত দশ বছরে, ( ২০০৯ থেকে ২০১৯) । এর মধ্যে ধর্ষণের হার একই সময়ে বেড়ে গেছে ৫০ শতাংশ। শুধু গত ২০০৯ সালে, সারাদেশে দলিতদের বিরুদ্ধে ৩৩,৫৯৪ টি, অপরাধের মামলা দায়ের করা হয়েছিল। সেই সংখ্যাটা বেড়ে দাঁড়ায় গত ২০১৯ সালে, ৪৫,৯৩৫ - এ। অথচ অপরাধের অনুপাতে, শাস্তি দেওয়ার সংখ্যা কিন্তু বাড়েনি।
দলিতদের বিরুদ্ধে অপরাধের মামলায়, দশবছর আগে, যেখানে, চার্জশিট জমা পড়েছিল ৮৮.৫ শতাংশ। সেখানে, গত ২০১৯ সালে, চার্জশিট দায়ের করার হার দাঁড়িয়েছে ৭৮.৫ শতাংশ। কি অবস্থা! এ কোন দেশে বাস করছি আমরা? এই ব্যাপারে, খারাপ রেকর্ড ছিল, রাজস্থানের। এ তথ্য কিন্তু জাগিয়ে তুলছে আমাদের মনে এক প্রবল ভয়।
গত ২০১৭ ও ২০১৮ সালে, দলিত নারী নির্যাতনের ক্ষেত্রে, সবার আগে ছিল ভারতের সবচেয়ে বড় রাজ্য উত্তরপ্রদেশ। এনসিআরবির এক পরিসংখ্যানে কি দেখানো হয়েছে জানেন? উত্তরপ্রদেশে, প্রতি ১ লাখ দলিতদের মধ্যে মহিলা আক্রান্তের সংখ্যা ২৮.৬ শতাংশ। বড় কষ্ট লাগে এসব শুনলে। এযে এক অসহ্যকর ব্যাপার!
এবার, কিছু প্রশ্ন উঠে আসছে, এই ব্যাপার নিয়ে। আমি একে একে এই সব প্রশ্ন আপনাদের সামনে
তুলে ধরার চেষ্টা করছিঃ


১. ভারতের মহান আদর্শের সাথে এই জাতপাত খাপ খায় কি?
২. জাতপাত বারেবারে মানবিকতাকে লঙ্ঘন করে না কি?
৩. জাতপাত কি ভারতের কলঙ্ক নয়?
৪. জাতপাত বারংবার কি ভারতের মহান আদর্শকে কলুষিত করছে না?
৫. জাতপাত কি মানুষের মধ্যে বিদ্বেষের সৃষ্টি করছে না?
৬. জাতপাত কি মানুষকে মানুষের থেকে দূরে সরিয়ে রাখছে না?
৭. জাতপাতের দোহাই দিয়ে কেন দলিত বা নীচু জাতের মানুষদের দিনের পর দিন উঁচু জাতের মানুষেরা করবে শোষণ? কেন? কেন?
৮. এক্ষেত্রে, তাঁদের অপরাধ কি?

৯. নীচু বা দলিত জাতের মানুষদের কি সমাজে মাথা উঁচু করে বাঁচার অধিকার নেই?
১০. এক্ষেত্রে, তাঁদের অপরাধ কি?
১১. নীচু বা দলিত জাতের মানুষেরা কেন হয়ে চলেছে অত্যাচারিত?
১২. তাঁদের সামাজিক মর্যাদা ক্ষুন্ন করার অধিকার কি আছে উঁচু জাতের মানুষদের? আছে কি?
১৩. সমাজে দলিত বা নীচু জাতের নারীরা কেন বারে বারে হয় ধর্ষিতা, নির্যাতিতা? কেন? কেন?
১৪. এর পেছনে আসল অভিপ্রায় কি?
১৫. এক্ষেত্রে, পুলিশ ও প্রশাসনের ভূমিকা কি?
১৬.এ ভয়ংকর প্রবণতা সমাজের বুক থেকে চিরকালের মতো বন্ধ করার জন্য, পুলিশ ও প্রশাসনের গৃহীত পদক্ষেপ কি যথেষ্ট?
১৭. আমাদের এই সভ্য সমাজে, দলিত ও নীচু জাতের নারীদের কি কোন মান - সন্মান নেই?
১৮. তাঁদের মান - সন্মান কেন দিনের পর দিন হয়ে চলেছে ভুলুন্ঠিত? কেন? কেন?
১৯. পুলিশ ও প্রশাসন কেন পারছে না তাঁদের ঠিকমতো নিরাপত্তা দিতে?
২০. এতে কি ভারতের মান - সন্মান কলঙ্কিত হচ্ছে না?


ছবিঃ ইন্টারনেট থেকে


শিবব্রত গুহ
কলকাতা

 

এই লেখকের অন্যান্য লেখা



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Developed with by
Top