সিডনী বুধবার, ২৪শে এপ্রিল ২০২৪, ১০ই বৈশাখ ১৪৩১


ডারউইনে আদালতের রায়ে

হত্যার দায়ে কারাভোগ থেকে মুক্ত বাংলাদেশী ড্রাইভার শাহনেওয়াজ


প্রকাশিত:
১৭ ডিসেম্বর ২০২০ ২১:৫৩

আপডেট:
১৮ ডিসেম্বর ২০২০ ০০:১৮

ছবিঃ শাহনেওয়াজ

 

গতকাল নর্দান টেরিটরির সুপ্রিম কোর্টের এক রায়ে সতেরো-টনি ট্রাক চালানোর সময় সড়ক দুর্ঘটনায় একান্ন বছর বয়সী বৃদ্ধা প্যাট্রিশিয়া এনি-বারলেট নিহত হওয়ার ঘটনায় হত্যার দায়ে কারাগারে যাওয়া থেকে বেঁচে গিয়েছেন বাংলাদেশী ড্রাইভার শাহনেওয়াজ। মাননীয় বিচারক স্টিফেন সাউথউড শাহনেওয়াজের পূর্বাপর সমস্ত ইতিহাস বিবেচনায় দীর্ঘ শুনানীর পর এ রায় দিয়েছেন। তথাপি নিহত বারলেটের পরিবারের সদস্যরা এ রায় প্রসঙ্গে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।

গত বছরের জুলাই মাসে অস্ট্রেলিয়ার নর্দান টেরিটরির রাজধানী ডারউইন শহরের দক্ষিণে নাকি লেগুন এলাকার ম্যাকমিলান রোডে ক্লিনওয়ে কোম্পানীর বিশাল গার্বেজ ট্রাক চালিয়ে যাচ্ছিলেন শাহনেওয়াজ। সতেরো টনি ওজনের এসব ট্রাককে বলা হয় গার্বেজ কম্পেক্টর। বিভিন্ন জায়গা থেকে সংগৃহীত ময়লা-আবর্জনা একসাথে বহন করে রিসাইকেল প্ল্যান্টে যাচ্ছিলেন বত্রিশ বছর বয়সী বাংলাদেশী ড্রাইভার শাহনেওয়াজ। এদিন বিকেল পাঁচটায় ম্যাকমিলান রোডে ট্রাফিক জ্যামের কারণে বেশ কিছু গাড়ি থেমে ছিলো। আদালতে শাহনেওয়াজের আইনজীবি জানান, এ সময় শাহনেওয়াজ রাস্তার ট্রাফিকের পরিবর্তে তার ঠিক সামনে থাকা গাড়িটির দিকে খেয়াল রাখছিলেন। সামনের গাড়িটি যখন হঠাৎ থেমে যায় তখন তার পক্ষে ভারী ট্রাকটি যথাসময়ে থামানো সম্ভব হয়নি।

দুর্ঘটনার পর তাক্ষণিক মাদক ও এলকোহল পরীক্ষায় শাহনেওয়াজ নেগেটিভ প্রমাণিত হন। কোন ধরণের মাদক বা এলকোহল ছাড়াই তিনি যথাযথ নিয়ম মেনে গাড়ি চালাচ্ছিলেন। বিশেষজ্ঞদের মত অনুযায়ী ঘন্টায় একাশি কিলোমিটার বেগে যাওয়ার সময় রাস্তার পরিবেশ, দৃষ্টিসীমা ও ট্রাফিকের অবস্থা সব কিছু মিলে তার হাতে ঠিক নয় সেকেন্ড সময় ছিলো ব্রেক করার জন্য। কিন্তু এ সময়ের মধ্যে ব্রেক না করে বরং সেই নয় সেকেন্ড সময় পেরুনোর পর ব্রেক করাতে তার ট্রাকটি সামনে দুটি গাড়িকে ধাক্কা দেয়। এ সময় শাহনেওয়াজ গাড়ি থামানোর ও দুর্ঘটনা এড়ানোর জন্য প্রাণপণ চেষ্টা করতে থাকলে তার ট্রাকটি রাস্তার ডিভাইডার পেরিয়ে অন্য পাশের বিপরীতমুখী রাস্তায় অপর পাশ থেকে আসা ছোট হ্যাচব্যাক কারের সাথে মুখোমুখি সংঘর্ষ ঘটায়। এর ফলে হ্যাচব্যাক কারটির চালকের আসনে বসা প্যাট্রিশিয়া ঘটনাস্থলেই নিহত হন।

প্রায় দেড় বছর সময়কাল মামলা চলার পর আদালতের রায়ে শাহনেওয়াজকে ‘সাসপেন্ডেড সেন্টেন্স’ প্রদান করা হয়। অস্ট্রেলিয়ার আইন অনুযায়ী সাসপেন্ডেড সেন্টেন্স বা স্থগিত শাস্তির অর্থ হলো অভিযুক্তকে কোন কারাভোগ করতে হয়না। মামলা চলাকালে শাহনেওয়াজ নিজের অপরাধ স্বীকার করে নেয়ার পর মাননীয় বিচারক মানবিক বিবেচনায় এ রায় প্রদান করেছেন। তিনি বলেন, অভিযুক্ত নিজেও এ দুর্ঘটনার পর থেকে বিপুল মানসিক অনুশোচনা এবং অনুতাপের ভেতর দিয়ে গিয়েছে বলেই তা কাছে প্রতীয়মান হয়েছে। তাছাড়া অভিযুক্ত শাহনেওয়াজ পুর্বে কখনো কোন ধরণের অপরাধ বা দুর্ঘটনার সাথে জড়িত ছিলো না সুতরাং তাকে কারাবন্দী করার প্রয়োজন নেই।

আদালতের এ রায়ের পর নিহত প্যাট্রিশিয়ার পরিবারের সদস্যরা এক বিবৃতিতে বলেন, কোন শাস্তিই আমাদের প্রিয় মানুষ এবং আমাদের পরিবারের মধ্যমণি ট্রিশকে ফিরিয়ে দেবে না। কিন্তু দোষী মানুষটির কারাগারে বন্দী না হওয়ার রায় তার স্মৃতির জন্য এবং তার পরিবারের সবার জন্য বেদনাদায়ক ও অবমাননাকর।

ছবিঃ ইন্টারনেট থেকে


বিষয়:


আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Developed with by
Top