সিডনী বৃহঃস্পতিবার, ২৮শে মার্চ ২০২৪, ১৪ই চৈত্র ১৪৩০


বহুমাত্রিক প্রতিভায় উজ্জ্বল জাতির এক পথিকৃৎ-খান আতাউর রহমান : অশ্রু বড়ুয়া


প্রকাশিত:
৭ ডিসেম্বর ২০২০ ২২:৩৮

আপডেট:
২৮ মার্চ ২০২৪ ১৮:১৫

ছবিঃ খান আতাউর রহমান

 

গত ডিসেম্বর ছিল কালোর্ত্তীণ, নন্দিত এই সংস্কৃতিজনের ২৩তম প্রয়াণবার্ষিকী

এক সময় পকেটে মাত্র ৬০ টাকা নিয়েই চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যান তিনি। কিন্তু সে যাত্রায় ফুলবাড়িয়া রেলওয়ে ষ্টেশনে এক দুলাভাই-এর চোখে পড়ে যাওয়ায় বাধ্য হয়েই ফিরতে হয়েছে বাড়ি।

ইংরেজি ১৯৪৯ সাল। আবারও বাড়ি ছেড়ে পালানোর প্রচেষ্টা। অবশ্য প্রথম প্রচেষ্টা ব্যর্থ হলেও এবার তিনি হলেন সফল। এবার সত্যি সত্যিই বাড়ি ছেড়ে পালিয়েছেন। স্বদেশ ছেড়ে পাড়ি জমান মুম্বাই। ওখানে গিয়ে ঘুরে বেড়ান রাস্তায়- রাস্তায়। এভাবে ঘুরতে ঘুরতে কখনো স্টুডিও'র শিক্ষানবিশ ক্যামেরা ম্যান কখনো রেডিও'র সংবাদ পাঠক কখনো প্রখ্যাত সঙ্গীতজ্ঞ'র কাছে উচাঙ্গ সঙ্গীতে নিয়েছেন তালিম কখনোবা সরোদ বাদকের শিষ্যত্বগ্রহন। কখনো করেছেন শিক্ষকতা কখনো সখনো সাংবাদিকতা। কখনো এদেশ কখনো ওদেশ। এভাবে বোহেমিয়ান স্বভাবের কারণে ঘুরে বেড়িয়েছেন যত্রতত্র।

সেদিন বাড়ি ছেড়ে পালানো সে-ই ছেলেটা জীবনে শুরুতেই নানা চড়াই-উৎরাই পেরুলেও এতটুকুও কমেনি চলচ্চিত্র কিংবা চলচ্চিত্রে অভিনয়ের আগ্রহ-উৎসাহ। যার ফলশ্রুতিতে প্রায়ই ছুটে যেতেন লাহোরে।

ইংরেজি ১৯৫৬ সাল। দীর্ঘ সাত বছর পর ফিরলেন স্বদেশে। ঢাকায় ফিরে ওই বছরই এ জে কারদার'র 'জাগো গুয়া সাভেয়া' চলচ্চিত্রের সঙ্গে যুক্ত হলেন।

শেষতক ভারতের প্রখ্যাত অভিনেত্রী তৃপ্তি মিত্র'র বিপরীতে করলেন অভিনয়। তা-ও আবার প্রধান চরিত্রে। ধীরে ধীরে হয়ে উঠলেন-বাংলা চলচ্চিত্রের কিংবদন্তীতুল্য অভিনেতা, গীতিকার, সুরকার, গায়ক, সঙ্গীত পরিচালক, চলচ্চিত্র নির্মাতা, চিত্র- নাট্যকার, কাহিনীকার প্রয়োজক এবং বেতার- টেলিভিশনের জনপ্রিয় উপস্থাপক।

এত্তসব বাহারি কর্মের যিনি এদেশের সংস্কৃতির ভূবনকে রাঙিয়ে গেছেন তিনি আর কেউ-ই নন-খান আতা। পুরো নাম-খান আতাউর রহমান।

বহুমাত্রিক প্রতিভায় উজ্জ্বল এদেশের একজন পথিকৃৎ -খান আতাউর রহমান। আজ ১ ডিসেম্বর কালোর্ত্তীণ, নন্দিত এই সংস্কৃতিজনের ২৩তম প্রয়াণবার্ষিকী।

আজকের এদিনে সমাজ, সংস্কৃতি এবং দেশের মুক্তিযুদ্ধের এই অগ্রনায়কের প্রতি রইল এক হৃদয়ের অতল শ্রদ্ধা ও নিরন্তর ভালোবাসা।

 

ইংরেজি ১৯২৮ সাল ১১ ডিসেম্বর। মানিকগঞ্জ জেলার সিংগাইর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন খান আতা। তাঁর বাবার নাম জিয়ারত হোসেন খান, মা-যোহরা খাতুন। ছোটবেলা থেকেই সংস্কৃতি অঙ্গনের প্রতি তাঁর মনে জন্ম নেয় আগ্রহ। আর বড় হয়ে ওঠার সাথে সাথে সেই আগ্রহটিই পরিণত হয় স্বপ্ন আর ইচ্ছায়।

 

ইংরেজি ১৯৩৭ সাল। তিনি তখন তৃতীয় শ্রেণীর ছাত্র। ঢাকা জেলা সংগীত প্রতিযোগিতায় খান আতা প্রথম স্থান দখল করে নেন।

ইরেজি ১৯৪৩ সাল। ঢাকা কলেজিয়েট স্কুল থেকে মেট্রিকুলেশন পরীক্ষা পাস করেন। ইন্টারমিডিয়েট পরীক্ষা দেন ঢাকা কলেজ থেকে ১৯৪৫ সালে।

 

এরপর ১৯৪৬ সালে তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজে ভর্তি হন। কিন্তু অল্প কিছুদিন পরই মেডিকেল কলেজ ছেড়ে চলে যান এবং ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। এবারও তাঁর বোহেমিয়ান স্বভাবের কারণে সেখানে তিনি থাকলেন না। এ বছরই তিনি লন্ডনে ফটোগ্রাফি বিষয়ক একটি বৃত্তি লাভ করেন।

 

ইংরেজি ১৯৪৯ সাল। বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে তিনি প্রথমে মুম্বাই যান। মুম্বাই গিয়ে তিনি ঘুরেছেন রাস্তায় রাস্তায়। ছুটেছেন চলচ্চিত্র জগতের আনাচে কানাচে। এ সময় তিনি জ্যোতি স্টুডিও'তে ক্যামেরাম্যান জাল ইরানির শিক্ষানবিশ হিসেবে কিছুদিন কাজ করেন।

 

ইংরেজি ১৯৫০ সাল। জানুয়ারিতে করাচি গিয়ে খান আতা যোগ দেন রেডিও পাকিস্তানে সংবাদ পাঠক হিসেবে। এসময় খ্যাতনামা উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতজ্ঞ ওস্তাদ জহুরী খানের সংস্পর্শে এসে খান আতা সঙ্গীতে তালিম গ্রহণ করেন। এখানেই আরেকজন বাঙালি মিডিয়া ব্যক্তিত্ব ফতেহ লোহানী'র সাথে তাঁর সখ্য গড়ে উঠে। চলচ্চিত্রের ব্যাপারে তখনো তাঁর উৎসাহ-আগ্রহ কমেনি এতটুকুও। যার ফলে তিনি প্রায়ই ছুটে যেতেন লাহোর।

ওইসময় তিনি সারঙ্গী বাদক জওহারি খান'র কাছ থেকেও তালিম নেয়া শুরু করেন।

 

ইংরেজি ১৯৫২ সাল। এদিকে ফতেহ্‌ লোহানী লন্ডন চলে গেলে খান আতাও একটি পোল্যান্ডীয় জাহাজে করে লন্ডন পাড়ি জমান। সেখানে অনেক বাঙালি অনুষ্ঠানে তিনি গায়ক এবং অভিনেতা হিসেবে অংশ- গ্রহণ করেন। লন্ডনে এস এম সুলতানের সাথে তাঁর সাক্ষাত হয়। এসএম সুলতানের চিত্রকর্মের উপকরণ যোগানে সাহায্য করেন তিনি। খান আতা এবং তাঁর সাথীরা এসএম সুলতানের চিত্রকর্মের প্রদর্শনী এবং বিক্রয়ের ব্যবস্থা করেন।

 

ইংরেজি ১৯৫৩ সাল। খান আতাউর রহমান এবার ভর্তি হন সিটি লিটারারি ইন্সটিটিউটের নাট্যকলা বিভাগে। একই বছর তিনি পাকিস্তান স্টুডেন্টস ফেডারেশনের সভাপতি নির্বাচিত হন।

 

ইংরেজি ১৯৫৫ সাল। খান আতা ইউনেস্কো বৃত্তি নিয়ে নেদারল্যান্ডে চলে যান। পরবর্তীতে পুনরায় লন্ডন প্রত্যাবর্তন করে তিনি একটি কলেজে অঙ্ক ও ইংরেজির শিক্ষক নিযুক্ত হন। এসময় তিনি কিছুদিন বিবিসি’র সাথেও কাজ করেন। শিক্ষকতার পাশাপাশি খান আতা বিভিন্ন থিয়েটার কোম্পানিতে প্রায় দু'বছর কাজ করেছেন।

 

ইংরেজি ১৯৫৬ সাল। দীর্ঘ সাত বছর পর তিনি ঢাকায় প্রত্যাবর্তন করেন। ওই বছরই এ.জে কারদার'র ‘জাগো হুয়া সাভেরা’ ছবির সঙ্গে যুক্ত হয়ে ভারতের বিখ্যাত অভিনেত্রী তৃপ্তি মিত্র'র বিপরীতে অভিনয় করেন। আনিস নামে নায়ক হিসেবে এটিই ছিল তাঁর প্রথম অভিনয়। একই নামে ১৯৫৯ সালে এহতেশামের ‘এ দেশ তোমার আমার’ ছবিতেও অভিনয় করেন তিনি। এরপর বেশকিছু ছবিতে তাঁর অভিনয়শৈলী মুগ্ধ করে চলচ্চিত্রপ্রেমীদের। তবে জহির রায়হানের ‘জীবন থেকে নেয়া’ ছবিতে শোষিত মানুষের প্রতীক চরিত্রে তাঁর অভিনয় ছিল অনবদ্য। এহতেশামের ‘এ দেশ তোমার আমার’ এই চলচ্চিত্রে তিনি সঙ্গীত পরিচালক হিসেবেও কাজ করেন।

 

ইংরেজি ১৯৬০ সাল। জহির রায়হানের সাথে গড়ে তোলেন লিটল সিনে সার্কেল। এরপরের বছরগুলোতে বেড়ে যায় তাঁর জনপ্রিয়তা। অভিনেতা এবং সঙ্গীত পরিচালক হিসেবে তিনি কাজ করেছেন 'কখনো আসেনি', 'যে নদী মরুপথে', 'সোনার কাজল'-এর মতো সফল চলচ্চিত্রে।

 

ইংরেজি ১৯৬৩ সাল। খান আতা পরিচালক হিসেবে নাম লেখান ‘অনেক দিনের চেনা’ চলচ্চিত্র দিয়ে। এরপর মুক্তিযুদ্ধ-পরবর্তী বাস্তবতা নিয়ে তৈরি করেন ‘আবার তোরা মানুষ হ’। ১৯৭৩ সালে মুক্তি পাওয়া এ ছবিটি ঢাকাই চলচ্চিত্রের ইতিহাসে কালজয়ী হয়ে আছে।

 

ইংরেজি ১৯৬৫ সাল। চলচ্চিত্রে বিশেষ অবদানের জন্য খান আতাউর রহমান নয়টি পুরস্কার লাভ করেন। 'সূর্যস্নান’ ছবির গীতিকার হিসেবে এবং ‘কাঁচের দেয়াল’ ছবির সংগীত পরিচালক হিসেবে পাকিস্তান ফিল্ম ফেস্টিভালে তিনি শ্রেষ্ঠ পুরস্কার লাভ করেন। এছাড়া জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার ও চলচ্চিত্র সাংবাদিক সমিতি (বাচসাস) পুরস্কারসহ অসংখ্য পুরস্কার পান খান আতাউর রহমান। তন্মধ্যে-পাকিস্তান চলচ্চিত্র উৎসব পুরস্কার, নিগার পুরস্কার, মস্কো ও তাসখন্দ আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব পুরস্কার, বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সাংবাদিক সমিতি পুরস্কার ও জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার উল্লেখযোগ্য।

খান আতা পরিচালিত অন্যান্য ছবির মধ্যে রয়েছে- রাজা সন্ন্যাসী, নবাব সিরাজউদ্দৌলা(১৯৬৭) সাত ভাই চম্পা(১৯৬৮) অরুণ বরুণ কিরণমালা(১৯৬৮) জোয়ার ভাটা(১৯৬৯) মনের মত বউ(১৯৬৯) সুজন সখী(১৯৭৫) দিন যায় কথা থাকে, আরশীনগর ও পরশ পাথর। এছাড়া তিনি ‘কবি জসীম উদ্দীনের জীবনী’, ‘গঙ্গা আমার গঙ্গা’ ও ‘গানের পাখি আব্বাস উদ্দিন’ নামে ৩টি তথ্যচিত্রও নির্মাণ করেন।

 

ব্যক্তিগত জীবনে খান আতাউর রহমান লন্ডনে থাকাকালীন শার্লি নামে এক ইংরেজ মেয়ের সাথে পরিচিত হন এবং তাকে বিয়ে করেন। বাংলাদেশে আসার পর তাদের একটি সন্তান হওয়ার পরে খান আতা এবং শার্লির মধ্যে ছাড়াছাড়ি হয়ে যায়। পরে শার্লি সন্তান নিয়ে লন্ডনে ফিরে যান।

এরপর খান আতা মাহবুবা হাসনাত-কে বিয়ে করেন। ওই দম্পতির একটি মেয়ে রয়েছে। মেয়ের নাম রুমানা ইসলাম। তিনি বাংলাদেশের একজন শীর্ষস্থানীয় সঙ্গীত শিল্পী।

 

ইংরেজি ১৯৬৮ সাল। খান আতা বাংলাদেশের প্রখ্যাত কণ্ঠশিল্পী নিলুফার ইয়াসমিনকে বিয়ে করেন। খান-আতা এবং নিলুফারের ছেলে আগুন দেশের একজন নামকরা সঙ্গীতশিল্পী।

ছবিঃ আবার তোরা মানুষ হ

১৯৭০ সাল। সুর তৈরি এবং গান লেখার প্রতিও তাঁর ছিল নিমগ্ন ধ্যান। জহির রায়হান পরিচালিত 'জীবন থেকে নেয়া' চলচ্চিত্রে তিনি 'এ খাঁচা ভাঙবো আমি কেমন করে' শীর্ষক গানের কথা লিখেন এবং নিজেই কণ্ঠ দেন। এই চলচ্চিত্রের সংগীত পরিচালকও ছিলেন খান আতাউর রহমান। তিনি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘আমার সোনার বাংলা’ গানটিকে আধুনিক যন্ত্রপাতির মাধ্যমে কম্পোজিশন করলেন। এই গানটির মাধ্যমে উপ-মহাদেশে প্রথমবারের মতো রবীন্দ্র সঙ্গীতে আধুনিক যন্ত্রপাতি ব্যবহৃত হয়। স্বাধীনতার আগে এটিই ছিল এই গানের প্রথম আনুষ্ঠানিক ব্যবহার।

কাজী নজরুল ইসলামের ‘কারার ঐ লৌহকপাট’ এবং ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো’ প্রায় সবগুলো গানেই তিনি ব্যবহার করেন আধুনিক বাদ্যযন্ত্রের কম্পোজিশন। আজ আমরা ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো’ শিরোনামে যে গানটি শুনি এটি ‘জীবন থেকে নেয়া’ চলচ্চিত্রে খান আতা'র দেয়া সেই কম্পোজিশন- টাই। গানটি এর আগে একই সুরে গাওয়া হলেও খান আতা সিনেমার জন্য এতে হামিংসহ আরও কিছু আবেগমাখা শ্রুতিমধুরতা যুক্ত করেন।

চলচ্চিত্র, আধুনিক ও দেশাত্মবোধক মিলিয়ে তিনি প্রায় ৫০০ গানের রচিয়তা। গীতিকার, সুরকার ও সংগীত পরিচালক হিসেবে ১৯৬২ সালে ‘সূর্যস্নান’ ছবিতে কলিম শরাফীর কণ্ঠে তিনি উপহার দেন ‘পথে পথে দিলাম ছড়াইয়া রে’। ১৯৬৩ সালে জহির রায়হানের ‘কাঁচের দেয়াল’ ছবিতে ‘শ্যামল বরণ মেয়েটি’ শীর্ষক গানটি খুবই জনপ্রিয়তা পায়।

'৭০ ও ৮০ এর দশকে উপহার দেন কিংবদন্তী শিল্পী সাবিনা ইয়াসমীনের কণ্ঠে ‘এ কি সোনার আলোয়’ এবং শাহনাজ রহমতুল্লাহ'র কণ্ঠে ‘এক নদী রক্ত পেরিয়ে’-এর মতো গান। এছাড়া তাঁর চলচ্চিত্র এবং গানে দেশ ও মানবতার কথা উঠে এসেছে বারংবার।

ব্যতিক্রমী ও বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী মানুষটির দেশের প্রতিও ছিল অগাধ ভালবাসা। মুক্তিযুদ্ধেও তাঁর রয়েছে উল্লেখযোগ্য অবদান। মুক্তিযুদ্ধে দেশাত্মবোধক গান লিখেন এবং মুক্তিযোদ্ধাদের খাদ্য ও চিকিৎসা সামগ্রী সরবরাহ করে সাহায্য করেন খান আতাউর রহমান।

 

১৯৭১ সালের ৩ মার্চ। অসহযোগ আন্দোলনের শুরু থেকেই প্রতিদিন সন্ধ্যার পর শহীদ মিনার চত্বরে মানুষকে স্বাধীনতার প্রতি উজ্জীবিত করার লক্ষ্যে ‘বিক্ষুব্ধ শিল্পী সমাজ’র ব্যানারে নাটক, গান, আবৃত্তি চর্চা করা হত । অসহযোগ আন্দোলনের শেষ দিকে বঙ্গবন্ধু এবং ইয়াহিয়া খানের আলোচনা ফলপ্রসূ না হওয়ার সংবাদে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান চলচ্চিত্র প্রযোজক সমিতির সভাপতি খান আতা ২৫ মার্চ রাত ৯টায় কাকরাইলে তাঁর অফিস সেভেন আর্টস ইউনাইটেডে প্রযোজকদের জরুরী সভা ডেকে পূর্ব পাকিস্তান চলচ্চিত্র প্রযোজক সমিতির নাম পরিবর্তন করে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র প্রযোজক সমিতি রাখেন।

মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি বিভিন্ন হাসপাতাল থেকে ঔষধ সংগ্রহ করে মুক্তিযোদ্ধা শিবিরে পৌঁছে দিতেন। শীত আসার আগে শীতের কাপড় এবং আনুষঙ্গিক জিনিসপত্রও মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে পৌঁছানোর ব্যবস্থা করেছিলেন তিনি। নিজে সরাসরি মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ না করলেও ঔষধ, কাপড়, টাকা এবং আশ্রয় দিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের

সাহায্য করেছেন।

মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময় এমন কোন দিন নেই যেদিন খান আতার গান স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে প্রচার করা হয়নি। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল-এদেশ তোমার আমার চলচ্চিত্রের ‘এই দেশ এই মাটি’ এবং সুখ-দুঃখ চলচ্চিত্রের ‘এইবার জীবনের জয় হবে’ ও ‘আমাদের বন্দী করে যদি ওরা ভাবে’ গানগুলি। এছাড়া খান আতা আরও অনেক গান রেকর্ড করে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে সরবরাহ করেছিলেন।

 

ইংরেজি ১৯৯৪ সাল। মুক্তিযুদ্ধের ওপর ‘এখনো অনেক রাত’ নামের একটি ছবি তৈরি শুরু করেন। ১৯৯৭ সালে ছবির কাজ শেষ হয়। এটিই ছিল তাঁর নির্মিত শেষ ছবি।

 

ইংরেজি ১৯৯৭ সাল। ডিসেম্বর মাসের তারিখ এক। কীর্তিমান সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব খান আতাউর রহমান মস্তিস্কে রক্তক্ষরণের ফলে মৃত্যুবরণ করেন। শেষতক সব ছেড়ে তিনি পাড়ি জমান অন্যলোকে।

সমাজ, সংস্কৃতি ও দেশের মুক্তিযুদ্ধের এই অগ্রনায়ক তাঁর সৃষ্টির মাঝেই বেঁচে থাকবেন অনন্তকাল।

 

অশ্রু বড়ুয়া
গীতিকবি, সুরকার সঙ্গীত পরিচালক
বাংলাদেশ টেলিভিশন

 

এই লেখকের অন্যান্য লেখা



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Developed with by
Top