সিডনী শুক্রবার, ২৯শে মার্চ ২০২৪, ১৪ই চৈত্র ১৪৩০


গুজরাট বাংলা চালাবে না বলে হুঁশিয়ারি মমতার, পাল্টা কথা বিজেপির


প্রকাশিত:
২৩ জুলাই ২০২০ ২২:৫৫

আপডেট:
২৯ মার্চ ২০২৪ ০১:২৮

 

প্রভাত ফেরী:  ২০২১–এর ভোটে বদলা হবে। এ কথা তৃণমূল দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। মঙ্গলবার চলতি তৃণমূল সরকারের শেষ শহিদ দিবসে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রীতিমতো তোপ দাগলেন বিজেপি এবং কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে। বাংলায় বিজেপিকে বহিরাগত বলেও উল্লেখ করেন তিনি। আর এ ভাবেই তিনি ২০২১ সালের বিধানসভা ভোটের দামামা বাজিয়ে দিলেন এদিনের ভার্চুয়াল সভা থেকেই।

করোনা পরিস্থিতিতে এবার ২১ জুলাই যে ধর্মতলার ভিক্টোরিয়া হাউসে সমাবেশ করা যাবে না, তা পরিষ্কারই ছিল। তৃণমূলের তরফে দলনেত্রী মমতাও জানিয়ে দেন, এবার শহিদ দিবস পালন করা হবে রাজ্য জুড়ে প্রতিটি ব্লকে। আর দুপুরে ভার্চুয়াল সভায় বক্তব্য পেশ করবেন তিনি। কিন্তু এদিন মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য শুরুর আগেই বিতর্ক বাড়িয়ে দেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ। তিনি জানান, এ বছরই ২১ জুলাই মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শেষ বক্তব্য পেশ করবেন মমতা। তার মানে আগামী বছর বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি যে তৃণমূল কংগ্রেসকে বাংলার ক্ষমতা থেকে সরাবেই, সেই ইঙ্গিতই তিনি দিয়ে দেন। দিলীপ ঘোষের এমন কটাক্ষ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় শুনেছিলেন কিনা, জানা যায়নি। তবে এদিনের সভায় বিজেপির বিরুদ্ধে মমতা আগাগোড়াই ছিলেন আক্রমণাত্মক।

এদিন কালীঘাট থেকে ভার্চুয়াল সভায় মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘করোনা পরিস্থিতি এবং আমফান বিপর্যয়ের মধ্যেও বাংলাকে অপমানিত করেছে বাম এবং বিজেপি। ২০২১ সালের ভোটে আমরা এর বদলা নেব। আর সেই বদলা হবে মানবিকতার জয় দিয়েই।’ বিজেপিকে আক্রমণ করে তিনি বলেন, ‘একটা ভোটে ১৮ আসন পেয়ে এরা যা খুশি তা–ই বলছে। তা–ই করছে। গোটা দেশে একদলীয় শাসন ব্যবস্থা চালু করতে চাইছে। কিন্তু, একটা কথা পরিষ্কার বলে দিই, গুজরাট বাংলাকে শাসন করবে না। বাংলাকে শাসন করবে বাংলার মানুষই। কেন্দ্রের ক্ষমতায় আছে বলে গায়ের জোর দেখাচ্ছে। এই দলটা সবসময় সর্বনাশের কথা বলে। দাঙ্গা, আগুন লাগানোর কথা বলে। উন্নয়নের কথা তাদের মুখে নেই।’ মমতা দাবি করেন, ‘২০২১ সালে বিধানসভা ভোটে জয়ী হয়ে ফের সরকার গড়বে তৃণমূলই। আর ওই ভোটের পর ভারতকে পথ দেখাবে বাংলাই।’ তিনি আরও বলেন, ‘‌সে–ই নেতা হয়, যে সবাইকে নিয়ে চলে। যে এজেন্সি দিয়ে দেশ চালায়, সে কখনও দেশের নেতা হতে পারে না।’ তবে বিজেপির সমালোচনা করলেও মমতা এদিন সরাসরি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নাম উল্লেখ করে আক্রমণ করেননি।

মমতার বক্তব্য শেষ হতেই বিষয়টি নিয়ে মুখ খোলে রাজ্য বিজেপি। কলকাতায় রাজ্যের সদর দফতর থেকে দলের নেতা রাহুল সিনহা সাংবাদিকদের বলেন, ‘কালীঘাট থেকে তৃণমূল শুরু হয়েছিল। আজ এই কালীঘাটেই তৃণমূলের শেষ হল। মমতা বুঝেই গিয়েছেন, তাঁর পক্ষে আর ক্ষমতায় ফেরা সম্ভব হবে না। তাই পুরো সভাতেই শুধু বিলাপ করে গিয়েছেন।’ তাঁর দাবি, ‘তৃণমূলকে বাংলার মানুষ আর চায় না। সেটা তাঁর দলের নেতা–কর্মীরাও বুঝে গিয়েছেন। তাই দলের মধ্যে থেকেই তাঁরা এখন দলের সমালোচনা করছেন।’ গত দশ বছরে রাজ্যে কেন একটিও শিল্প এলো না, সেই প্রশ্নও এদিন তোলেন রাহুল সিনহা। এদিকে, এদিনই তৃণমূল কংগ্রেসকে ভালোই চমকে দিল বিজেপি। ফুটবলার মেহতাব হোসেন এদিন বিজেপিতে যোগ দেন। মেহতাব ছাড়াও সঙ্গীতশিল্পী ঋদ্ধি বন্দ্যোপাধ্যায়, শিক্ষাবিদ দীপশিখা আদিত্য, দমদম পুরসভার বিরোধী দলনেতা শিশির বলের হাতে বিজেপির পতাকা তুলে দেন দিলীপ ঘোষ।

এর পরই মুখ খোলেন দিলীপ ঘোষ। শহিদ দিবসের সভায় মুখ্যমন্ত্রী প্রশ্ন তোলেন, ‘বিজেপির জন্ম কোথায়?’ জবাবে শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের নাম উল্লেখ না করেও দিলীপ ঘোষ বলেন, ‘আমাদের জন্ম ঠিক আছে। আমাদের জন্মদাতা শহিদ হয়েছেন। আমাদের জন্মদাতাই পশ্চিবঙ্গের জন্মদাতা। শুধু তিনিই ইতিহাসটা ভুলে যান। আমি জানি না তাঁর জন্ম কোথায়? কার জন্মের ঠিক আছে, না আছে, তা বলার দায় আমাদের নেই।’ এদিন মমতা বলেন, ‘২০২১ সালে তৃণমূল ক্ষমতায় ফিরলে আজীবন বিনামূল্যে রেশন দেবে।’ সেই প্রসঙ্গে দিলীপ ঘোষ বলেন, ‘রেশন যদি বিনামূল্যে দেওয়া যায়, তা হলে তিনি এতদিন দেননি কেন? তিনি পশ্চিমবাংলার মানুষকে গরিব আর ভিখিরি করে রেখেছেন। তাই লক্ষ লক্ষ ছেলে প্রতি বছর কাজের খোঁজে ভিনরাজ্যে চলে যাচ্ছেন।’

২০২১ সালে তৃণমূলই ক্ষমতায় ফিরবে বলে যে দাবি মমতা করেছেন, সেই প্রসঙ্গে দিলীপ বলেন, ‘আগামী বছর মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে তিনি ভাষণ দিতে পারবেন না। কারণ, বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূল হারবেই। ক্ষমতা থেকেও চলে যাবে। কারণ, ভোট হবে এপ্রিল–মে–তে। আর ফল বের হবে মে মাসের মাঝামাঝি। আর তাতেই শেষ হয়ে যাবে মমতা জমানার। আমরাই সরকার গড়ব। আগামী বছর ২১ জুলাইয়ের সভা করার জন্য আমাদের কাছে অনুমতি চাইতে হবে মমতাকে। অবশ্য এজন্য তাঁকে কোর্টে যেতে হবে না। আমরা এমনিতেই অনুমতি দেব।’ পাশাপাশি তিনি এ কথাও বলেন, ‘তবে তিনি তো আর বড় সভা করার সুযোগ পাবেন না। করবেন পথসভা। কারণ ২১ জন লোকও তিনি পাবেন না নিজের ভাষণ শোনানোর জন্য।’

অন্যদিকে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্যের বিরুদ্ধে মুখ খুলেছে সিপিএম এবং কংগ্রেসও। ভার্চুয়াল সভায় সিপিএম–সহ বাম দলগুলিরও তীব্র সমালোচনা করেন মমতা। জবাবে সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তী পরিষ্কার বলেছেন, ‘তিনি ঠিক কথা বলছেন না। ঠিক বললে দশ বছরে সিপিএমের বিরুদ্ধে কিছুই প্রমাণ করতে পারলেন না কেন?’ কংগ্রেস নেতা আবদুল মান্নান বলেন, ‘বাম, কংগ্রেস কেন, কেউই আর তাঁকে বাঁচাতে পারবে না। তৃণমূল দলটাই উঠে যাবে। আগামী জানুয়ারি মাসেই তৃণমূল ছাড়বেন ১০০ বিধায়ক আর ২০ জন মন্ত্রী।’ রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের ধারণা, এ ভাবেই পরস্পরের বিরুদ্ধে আক্রমণ শানিয়ে তৃণমূল এবং বিজেপি, পাশাপাশি সিপিএম ও কংগ্রেস আগামী বিধানসভা ভোটের দামামাই বাজিয়ে দিল। করোনা পরিস্থিতিতেও তাই আক্রমণ আর পাল্টা আক্রমণে বেশ সরগরম হয়ে উঠবে রাজ্যের রাজনীতি।


বিষয়:


আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Developed with by
Top