সিডনী শুক্রবার, ২৯শে মার্চ ২০২৪, ১৫ই চৈত্র ১৪৩০

কাজী জাকির হাসান: স্বাধীনতা পদক প্রাপ্ত এক নির্ভীক মুক্তিযোদ্ধা


প্রকাশিত:
১ এপ্রিল ২০২০ ০৬:১৩

আপডেট:
৯ এপ্রিল ২০২০ ২১:৫৪

কাজী জাকির হাসান

প্রভাত ফেরী ডেস্কঃ কাজী জাকির হাসান ১৯৫৪ সালের ২ মার্চ কুড়িগ্রাম জেলায় জন্মগ্রহন করেন। জাতির পিতা বংগবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের ঐতিহাসিক ৭ই মার্চ ভাষন দেশের স্বাধীনতার বিষয়ে তাঁকে প্রবলভাবে উদ্ধুদ্ধ করে। এপ্রিল মাসের প্রথম দিকে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহনের জন্য তিনি সীমান্ত অতিক্রম করে ভারতে চলে যান।

অতঃপর শিলিগুড়িতে মুজিব ক্যাম্পে প্রশিক্ষন গ্রহন সমাপনান্তে তিনি মুক্তিযুদ্ধের ৬ নম্বর সেক্টরের লালমনিরহাট সাবসেক্টরে যোগদান করেন। কাজী জাকির হাসান পয়তাল্লিশ জন মুক্তিযোদ্ধা নিয়ে গঠিত একটি কোমাপানির কমান্ডারের দায়িত্বে ছিলেন। ঐ সময় তিনি বেশ কয়েকটি সম্মুখযুদ্ধে অংশগ্রহন করেন।

১৯৭১ সালের ২ জুলাই ফুলবাড়িয়ার মোগলহাটের গোরপমন্ডল গ্রামে তাঁর নেতৃত্বে একটি বড় ধরনের অভিযান পরিচালিত হয়। কাজী জাকির হাসান এবং সহযোদ্ধাদের বীরত্বে এ যুদ্ধে দশজন পাকিস্তানি সেনা নিহত হয়। কিন্তু যুদ্ধের এক পর্যায়ে পাকিস্তানি সেনাদের পেতে রাখা মাইন বিস্ফোরণে তিনি মারাত্মকভাবে আহত হলে তাঁকে কোচবিহারের জি এন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে অপারেশন করে তাঁর ডান পা হাঁটুর নিচ থেকে কেটে ফেলা হয়। এই যুধাহত মুক্তিযোদ্ধা দেশের সাংস্কৃতিক পুর্ণগঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন।

জনাব হাসান ১৯৭২ সালে বাংলাদেশ বেতার, ঢাকা কেন্দ্রে নাটক বিভাগে যোগদান করে আমৃত্যু সেখানে চিফ স্ক্রিপ্ট রাইটার পদে কর্মরত ছিলেন। তিনি ১৯৭৩-১৯৮০ মেয়াদে বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদের বেতার ইউনিট কমান্ডের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ও কমান্ডার এবং ১৯৮১-১৯৮৭ মেয়াদে কেন্দ্রীয় মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিলের সম্পাদকমন্ডলীর সদসয় ছিলেন।

কাজী জাকির হাসান একজন সফল নাট্যকার। বাংলাদেশ বেতারে প্রচারিত তাঁর লেখা মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক, অন্যান্য মৌলিক নাটক ও রূপান্তর নাটকের সংখ্যা তিনশতাধিক। ‘মুক্তিযুদ্ধের দিনগুলি’, ‘যুদ্ধের গল্প’, ‘মুক্তিযুদ্ধ ও তাঁর পরের গল্প’ ইত্যাদি তাঁর লেখা

মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ। কাজী জাকিরের প্রযোজিত নাটকের সংখ্যা প্রায় চারশতাধিক। এছাড়া তাঁর লেখা বেশ কিছু গবেষণাগ্রন্থ দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যতত্ত্ব বিভাগে রেফারেন্স বই হিসাবে পঠিত হয়। কাজী জাকির হাসান লাইব্রেরি অব কংগ্রেস-এর মাধ্যমে ১৯৭৯ সালে নাট্যকার হিসাবে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি লাভ করেন। এছাড়া তিনি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে পুরস্কার ও সম্মাননা লাভ করেছেন।

তন্মধ্যে ‘শহিদ বুদ্ধিজীবি সম্মাননা-২০০৫’ বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। এই অসীম সাহসী মুক্তিযোদ্ধা ও গুণী নাট্যকার ২০১৬ সালের ৩ জানুয়ারী পরলোকগমন করেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধে অসামান্য অবদানের জন্য মরহুম কাজী জাকির হাসানকে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় সম্মান স্বাধীনতা পদক ২০১৮ (মরণোত্তর) এ ভুষিত করা হয়।

সূত্রঃ মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, স্বাধীনতা পুরস্কার ২০১৮, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার।



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Developed with by
Top