সিডনী শনিবার, ২০শে এপ্রিল ২০২৪, ৭ই বৈশাখ ১৪৩১


মধু: রোগের শিফা : মুন্সি আব্দুল কাদির


প্রকাশিত:
২০ আগস্ট ২০২০ ২৩:১১

আপডেট:
২০ এপ্রিল ২০২৪ ১০:৪১

 

মহান প্রভুর হাজার হাজার নেয়ামত আমাদের বেষ্টন করে আছে। প্রতিনিয়ত তাঁর নেয়ামতের তাঁর দানের উপরই আমরা বেঁচে আছি। তাঁর দেয়া নেয়ামত ছাড়া ক্ষনিকের তরে বেঁচে থাকার আশা করা যায় না। কল্পনা করা যায় না। তাঁর দেয়া খাদ্য, তাঁর দেয়া পানীয়, তাঁর দেয়া ব্যবহার্য বস্তু ছাড়া সামান্যও চলতে পারি না। তাঁর দেয়া পানীয় এর মধ্যে মধু এক আশ্চর্য, সর্বোতকৃষ্ট, সর্বশ্রেষ্ঠ নেয়ামত। স্বাদে, রোগ সারাতে, গুনাগুনে, দেহ গঠনে, রোগ প্রতিরোধে এর জুড়ি নেই।
মধু নিয়ে কোরআনের কথা:
আল্লাহ তায়ালা সুরা নাহলে বলেন, আর তোমার প্রভু মৌমাছিকে ওহি পাঠালেন, বাসা তৈরি কর পাহাড়ের মাঝে ও গাছের মধ্যে, আর তারা যে ঘর তৈরি করে তাতে। তারপর প্রত্যেক ফল ফলাদি থেকে খাও, তারপর তোমার প্রভুর রাস্তা অনুসরণ কর অবনত চিত্তে । তাদের পেট থেকে বেরিয়ে আসে একটি পানীয়, বিচিত্র যার বর্ণ, যাতে রয়েছে মানুষের জন্য রোগমুক্তি। নিঃসন্দেহ এতে নিশ্চিত নিদর্শন রয়েছে সেই লোকদের জন্য যারা চিন্তা করে। সুরা নাহল ৬৮-৬৯।
মধু নিয়ে হাদিসের ভাষ্য:
আয়িশা রাঃ থেকে বর্ণিত তিনি বলেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হালওয়া (মিষ্টি দ্রব্য) ও মধু অধিক ভালবাসতেন।
আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তাঁর পরিবারের কোন ব্যক্তি মারা গেলে মহিলারা এসে জড়ো হলো। তারপর তাঁর আত্মীয়রা ও বিশেষ ঘনিষ্ঠ মহিলারা ব্যতীত বাকী সবাই চলে গেলে, তিনি ডেগে ‘তালবীনা’ (আটা, মধু ইত্যাদি দিয়ে তৈরী খাবার) পাক করতে বললেন। তা পাকানো হলো। এরপর ‘সারীদ’ (গোশতের মধ্যে রুটির টুকরো দিয়ে তৈরী খাবার) প্রস্তুত করা হলো এবং তাতে তালবীনা ঢালা হলো। তিনি বললেন, তোমরা এ থেকে খাও। কারণ, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে বলতে শুনেছি যে, ‘তালবীনা’ রুগ্ন ব্যক্তির হৃদয়ে প্রশান্তি আনে এবং শোক দুঃখ কিছুটা দূর করে। সহিহ বুখারী, মুসলিম, আহমাদ।
আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তিনটি জিনিসের মধ্যে রোগমুক্তি আছে। মধু পানে, শিঙ্গা লাগানোতে এবং আগুন দিয়ে দাগ লাগানোতে। আমার উম্মাতকে আগুন দিয়ে দাগ দিতে নিষেধ করছি।
আবূ সা‘ঈদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, এক ব্যক্তি নবী রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট এসে বলল, আমার ভাইয়ের পেটে অসুখ হয়েছে। তখন নবী রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন তাকে মধু পান করাও। এরপর লোকটি দ্বিতীয়বার আসলে তিনি বললেন, তাকে মধু পান করাও। অতঃপর তৃতীয়বার আসলে তিনি বললেন তাকে মধু পান করাও। এরপর লোকটি এসে বলল, আমি অনুরূপই করেছি। তখন নবী রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আল্লাহ্ সত্য বলেছেন, কিন্তু তোমার ভাইয়ের পেট মিথ্যা বলছে। তাকে মধু পান করাও। অতঃপর সে তাকে পান করাল। এবার সে রোগমুক্ত হল। সহিহ বুখারী, মুসলিম, আহমাদ।
আসিম ইবনু উমার ইবনু কাতাদাহ্ (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) আমাদের পরিবারে এলেন, তখন জনৈক লোক খুজলী-পাঁচড়ায় অথবা (বর্ণনা সংশয়) তিনি বললেন, আঘাতে অসুস্থ হয়েছিল। তিনি বললেন, তুমি কি অসুস্থতাবোধ করছো? সে বলল আমার খুজলি-পাঁচড়া আমাকে ভয়স্কর অবস্থায় ফেলে দিয়েছে। তিনি তখন (খাদিমকে) বললেন, হে যুবক! আমার নিকট একজন শিঙ্গা প্রয়োগকারী (বৈদ্য) নিয়ে আসো। তখন তিনি তাকে বললেন, বৈদ্যকে দিয়ে আপনি কি করবেন, হে আবূ আবদুল্লাহ? তিনি বললেন, আমি তাতে একটা শিঙ্গার নল ঝুলাতে চাই। সে বলল, আল্লাহর শপথ! মাছি আমার শরীরে বসলে কিংবা কাপড়ের ছোঁয়া আমার শরীরে লাগলে তা ই আমাকে বেদনা দেয় এবং আমার জন্য কঠিন হয়ে পড়ে (তাহলে শিঙ্গার বেদনা কি করে সহ্য করবো)? তারপরে তিনি যখন ঐ ব্যাপারে তার ধৈর্যহারা লক্ষ্য করলেন তখন বললেন, আমি রসূলুল্লাহ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি যে, তোমাদের ব্যবস্থাপত্রের কোন কিছুতে যদি কল্যাণ থেকে থাকে তাহলে তা শিঙ্গার নল অথবা মধুর শরবত পান অথবা আগুনের সেঁকে রয়েছে। রসুলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরও বলেছেন (নিতান্ত প্রয়োজন না পড়লে আমি গরম লোহার সেঁক লাগিয়ে চিকিৎসা করা অপছন্দ করি। বর্ণনাকারী বলেন, সে একজন শিঙ্গাবিদ (বৈদ্য) নিয়ে এলো, সে তার শিঙ্গা লাগাল। ফলে ব্যথানুভুতি বিদুরিত হয়ে গেল। সহিহ মুসলিম।
আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাঃ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমরা দুটি শেফাদানকারী বস্তুকে নিজেদের জন্য অত্যাবশ্যকীয় করে নাও, একটি মধু (আহারের মধ্যে) এবং অন্যটি কোরআনুল কারীম (কিতাব সমূহের মধ্যে)। মিশকাত।
নাফে রাহঃ থেকে বর্ণিত, আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রাঃ এর যখন কোন ফোঁড়া, পাঁচড়া অথবা শরীরে অন্য কোন কিছু বের হত তখন তিনি তার উপর মধু লাগিয়ে কোরআনুল কারীমের মধু সম্পর্কিত আয়াতটি তেলাওয়াত করতেন। “তাদের পেট থেকে বেরিয়ে আসে একটি পানীয়, বিচিত্র যার বর্ণ, যাতে রয়েছে মানুষের জন্য রোগমুক্তি”।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মধুর সাথে অল্প পানি মিশিয়ে হালকা করে আঙ্গুল দিয়ে চেটে খেতেন। আবু হুরায়রা রাঃ থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি প্রতি মাসে ন্যুনতম তিন সকালে মধু চেটে খাবে তাকে বড় কোন রোগ পাকড়াও করবে না। ইবনে মাজাহ।
মধুর উপকারিতা:
মৌমাছি হাজারো ফুল ফলের রস সংগ্রহ করে। এই রস তার পেটে পক্রিয়াজাত হয়ে মধু হিসাবে বের করে, তার বাসায় সংরক্ষণ করে। আমরা বিজ্ঞানের চরম উৎকর্ষের যুগে বাস করছি। পৃথিবীর কোন বিজ্ঞানী এই ছোট্ট একটি পোকার আমাদের খেদমতে যেভাবে নিয়োজিত তার কি কোন কুল কিনারা করতে পেরেছেন? মৌমাছি একটি বিষাক্ত পোকা। তার আক্রমন থেকে আমরা বাঁচতে চাই। সে হুল ফুঁটিয়ে দিলে ব্যথায় কাতরাতে থাকি। অথচ তার আহরিত মধু খেতে আমরা কতই না ভালবাসি! “আল্লাহ তায়ালা তাকে ওহি পাঠিয়েছেন (পথ বলে দিয়েছেন) যাও, তুমি পাহাড়ে, গাছে, মানুষ যেখানে ঘর তৈরী করে ঘরের ছাদে তোমাদের বাসা নির্মাণ করো। তারপর প্রত্যেক ফল ফলাদি থেকে খাও, তারপর তোমার প্রভুর রাস্তা অনুসরণ কর অবনত চিত্তে । তাদের পেট থেকে বেরিয়ে আসে একটি পানীয়, বিচিত্র যার বর্ণ, যাতে রয়েছে মানুষের জন্য রোগমুক্তি। নিঃসন্দেহ এতে নিশ্চিত নিদর্শন রয়েছে সেই লোকদের জন্য যারা চিন্তা করে।” দেখুন না কত সুন্দর করে আমার মাওলা মৌমাছি আর মধুর কথা তুলে ধরেছেন। তার উপকারীতা বর্ণনা করেছেন। আপনি যদি কখনো কোন মৌচাকের নিচে যান। মাঝে মধ্যে মৌচাকের নিচে মরা মৌমাছি দেখতে পাবেন। আমি একজন মৌ পালকের সাথে এ নিয়ে কথা বলেছিলাম। তিনি আমাকে এই তথ্যটি এভাবে বুঝালেন, যে প্রত্যেকটি মৌচাকে মৌমাছিদের বিভিন্ন কাজে ভাগ করা থাকে। এখানে রাণী থাকে মৌচাকের প্রধান। রাণী অন্যান্য মৌমাছি থেকে একটু আকারে বড়ই হয়। তিনি আমাকে চাষের মৌচাকের রাণী ধরে দেখিয়েছেন। বেশীর ভাগ কর্মী মৌমাছি, আর থাকে সৈনিক মৌমাছি, পুরুষ মৌমাছি। সৈনিক মৌমাছি মৌচাক পাহারা দেয়। পাহারার প্রধান কাজ হলো, কোন মৌমাছি যেন ভুলেও কোন ময়লা নিয়ে মৌচাকে প্রবেশ করতে না পারে। কোন মৌমাছি যদি কোন আবর্জনা নিয়ে মৌচাকে প্রবেশ করতে চায়। তাকে সৈনিক মৌমাছি মেরে ফেলে। সুবহানাল্লাহ। আল্লাহ তায়ালার কি অপরিসীম কুদরত। ছোট একটা মৌমাছি। যে আমার সুমিষ্ট পানীয় যোগায় তাকে ভাল রাখার জন্য কী সুন্দর ব্যবস্থাপনা।
সব ধরনের রোগ নিরাময়ে মধুর ব্যবহার সেই প্রাচীন কাল থেকে চলে আসছে। আধুনিক বিজ্ঞান মধুকে সর্ব রোগের ঔষধ হিসাবে গ্রহন করেছে। প্রতিনিয়ত মধুর গুনাগুন সম্পর্কে নতুন নতুন তত্ত্ব তথ্য দিয়ে যাচ্ছে। মধু সম্পর্কে বিজ্ঞানের এখনো জানা শেষ হয়নি। আল্লাহ তায়ালা কোরআনুল কারীমে মধুকে শিফা হিসাবে ঘোষনা দিয়েছেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মধু কে শিফা হিসাবে ব্যবহার করেছেন, করিয়েছেন, করতে বলেছেন। ব্যবহারিক দিক থেকে তিনটি নির্দেশের পদ্ধতি এই মধুর বেলায় কার্যকর।
মধুর উপাদান:
মানুষের শারিরিক রোগ হয় সাধারণত শরীরে কোন উপাদানের ঘাটতির কারনে অথবা কোন ব্যাকটেরিয়া, ছত্রাক, ভাইরাসের আক্রমনের কারনে। আল্লাহ তায়ালা মধুর মধ্যে মানুষের শরীরের প্রেেয়াজনীয় সব উপাদান রেখে দিয়েছেন। এমন কি মধু ব্যাকটেরিয়া, ছত্রাক, ভাইরাস ধ্বংসকারীও বটে। মধু একটি উত্তম খাবার, উত্তম পানীয় এবং একটি উত্তম ঔষধ। আমাদের শরীরে বিভিন্ন সময় খনিজ পদার্থ, ভিটামিন অন্যান্য পুষ্টি উপাদানের ঘাটতি দেখা দেয়। মধু ব্যবহারে সব ঘাটতি পূরণ হয়ে যায়। মধুর মধ্যে রয়েছে এই পর্যন্ত আবিস্কার হওয়া ৪৫ টির ও বেশী খাদ্যাগুন। এতে রয়েছে ২২ ধরনের শর্করা। অন্যান্য শর্করা মানুষের ডায়াবেটিস, হাই প্রেসার রোগ বাড়ালে মধুর মধ্যে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা এমন ভাবে শর্করা মিশিয়ে দিয়েছেন তা এই রোগগুলো কমায়। মধুতে শর্করার পরিমাণ প্রায় ৮২ শতাংশ, পানি ১৭.২০ শতাংশ। তাছাড়াও রয়েছে ভিটামিন সমূহ থায়ামিন, রিবোফ্লাবিন,নিয়াসিন, প্যানটোথেনিক এসিড, পাইরিডক্সিন, এসকরবিক এসিড ইত্যাদি। তাছাড়া খনিজ লবণের মধ্যে রয়েছে ক্যালসিয়াম, কপার, আয়রন, ম্যাগনেসিয়াম, ফসফরাস, ম্যাঙ্গানিজ, পটাশিয়াম, ক্লোরিন, সোডিয়াম জিংক। মধুর মধ্যে বেশ এসিড রয়েছে এর মধ্যে গ্লোকোনিক প্রধান তাছাড়াও ফরমিক এসিড, এসিটিক এসিড, বিউটাইরিক এসিড, ল্যাকটিক এসিড, অক্সালিক এসিড, সাকসিনিক এসিড, টাইটারিক এসিড, ম্যালেইক এসিড, পাইরোভিক, পাইরোগ্লোটামিক, এ-কিটোগ্লোটারিক, গ্লাইকোলিক, সাইট্রিক, ফসফোগ্লাইসেরিক, গ্লাইসেরোফসফেট, গ্লুকোজ-৬ ফসফেট ইত্যাদি। এমাইনো এসিড গুলোর মধ্যে রয়েছে প্রোলিন, এলানিন, ফিনাইল এলানিন, টাইরোসিন, গ্লুটামিন, লিউসিন, আইসোলিউসিন ইত্যাদি। মধুতে এনজাইমের উপস্থিতি এর অনন্য বৈশিষ্টের অধিকারী। মধুতে থাকা এনজাইম গুলো হল ইনভারটেজ, ডায়াষ্টেজ, গ্লুকোজ অক্সিডেজ।
মধুতে ব্যাকটেরিয়া ও অন্যান্য জীবানু ধ্বংসকারী উপাদান গবেষনার মাধ্যমে সনাক্ত করা েেগছে এগুলো হল পিনোসেম্ব্রিন, তারপিনস, বেনজাইল এলকোহল, ডাইমিথক্সি-৪, হাইড্রোক্সিবেনজোয়িক এসিড, মিথাইল, ডাইমিথক্সি, মিথাইল সাইরিনজেট, ট্রাইমেথক্সিবেনজোয়িক এসিড, হাইড্রোক্সি-৩, ফিনাইল প্রোপায়োনিক এসিড ইত্যাদি। আশ্চর্যের বিষয় এগুলো খুব অল্প পরিমানে মিশ্রণ থাকলেও জীবানুনাশক হিসেবে খুবই কার্যকর। আরো আশ্চর্য হতে হয় যে ৫০০ মিলি মধু তৈরী করতে হলে মৌমাছিকে কমপক্ষে ২০ লক্ষ ফুলের কাছে যেতে হয়।
রোগ সারাতে:
মধু যেসব রোগে কার্যকর: ১. হৃদরোগ প্রতিরোধ করে। রক্তনালি প্রসারণের মাধ্যমে রক্ত সঞ্চালনে সহায়তা করে এবং হৃদপেশির কার্যক্রম বৃদ্ধি করে ২. রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে ৩. দাঁতকে পরিষ্কার ও শক্তিশালী করে ৪. দৃষ্টিশক্তি ও স্মরণশক্তি বৃদ্ধি করে ৫. মধুর রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ক্ষমতা, যা দেহকে নানা ঘাত-প্রতিঘাতের হাত থেকে রক্ষা করে ৬. অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ক্যান্সার প্রতিরোধ করে ও কোষকে ফ্রি রেডিকেলের ক্ষতি থেকে রক্ষা করে ৭. বার্ধক্য অনেক দেরিতে আসে ৮. মধুর ক্যালরি রক্তের হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ বাড়ায়, ফলে রক্তবর্ধক হয় ৯. যারা রক্ত স্বল্পতায় বেশি ভোগে বিশেষ করে মহিলারা, তাদের জন্য নিয়মিত মধু সেবন অত্যন্ত ফলদায়ক ১০. গ্লাইকোজেনের লেভেল সুনিয়ন্ত্রিত করে ১১. আন্ত্রিক রোগে উপকারী। মধুকে এককভাবে ব্যবহার করলে পাকস্থলীর বিভিন্ন রোগের উপকার পাওয়া যায় ১২. আলসাার ও গ্যাস্ট্রিক রোগের জন্য উপকারী ১৩. দুর্বল শিশুদের মুখের ভেতর পচনশীল ঘায়ের জন্য খুবই উপকারী ১৪. শরীরের বিভিন্ন ধরনের নিঃসরণ নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে এবং উষ্ণতা বৃদ্ধি করে ১৫. ভিটামিন-বি কমপ্লেক্স এবং ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ মধু স্নায়ু এবং মস্তিষ্কের কলা সুদৃঢ় করে ১৬. মধুতে স্টার্চ ডাইজেস্টি এনজাইমস এবং মিনারেলস থাকায় চুল ও ত্বক ঠিক রাখতে অনন্য ভূমিকা পালন করে ১৭. মধু কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে ১৮. ক্ষুধা, হজমশক্তি ও রুচি বৃদ্ধি করে ১৯. রক্ত পরিশোধন করে ২০. শরীর ও ফুসফুসকে শক্তিশালী করে ২১. জিহ্বার জড়তা দূর করে ২২. মধু মুখের দুর্গন্ধ দূর করে ২৩. বাতের ব্যথা উপশম করে ২৪. মাথা ব্যথা দূর করে ২৫. শিশুদের দৈহিক গড়ন ও ওজন বৃদ্ধি করে ২৬. গলা ব্যথা, কাশি-হাঁপানি এবং ঠাণ্ডাজনিত রোগে বিশেষ উপকার করে ২৭. শিশুদের প্রতিদিন অল্প পরিমাণ মধু খাওয়ার অভ্যাস করলে তার ঠাণ্ডা, সর্দি-কাশি, জ্বর ইত্যাদি সহজে হয় না ২৮. শারীরিক দুর্বলতা দূর করে এবং শক্তি-সামর্থ্য দীর্ঘস্থায়ী করে ২৯. ব্যায়ামকারীদের শক্তি বাড়ায় ৩০. মধু খাওয়ার সাথে সাথে শরীরের তাপমাত্রা বৃদ্ধি করে, ফলে শরীর হয়ে উঠে সুস্থ, সতেজ এবং কর্মক্ষম। তথ্য সূত্র- ড. কে এম খালেকুজ্জামান, ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা (উদ্ভিদ রোগতত্ত্ব), মসলা গবেষণা কেন্দ্র, বিএআরআই, শিবগঞ্জ, বগুড়া।
ফসল উৎপাদনের মৌমাছির ভূমিকা:
মোমাছি শুধু আামাদের মধুই দেয় না। তার নেচে নেচে মধু সংগ্রহের মাধ্যমে আমাদের অন্যান্য রিজিকও বেড়ে যায়। তার নেচে নেচে এক ফুল থেকে আরেক ফুলে যাওয়ার সময় সে তার পায়ে এবং বুকে করে পরাগরেনু বয়ে বেড়ায় এক ফুল থেকে আরেক ফুলে এই পরাগরেনু নিয়ে পরাগায়ন ঘটে ফলে ফসল উৎপাদন বেড়ে যায়। গবেষনায় দেখা গেছে মৌমাছির এই পরাগায়ন দ্বারা আমাদের ফসল উৎপাদন ১০-১৫% বেড়ে যায়। আলহামদুলিল্লাহ। মহান প্রতিপালকের কি এক অপার কৌশল।
বিভিন্ন রোগে মধুর ব্যবহার:
১. হজমে সহায়তা: এতে যে শর্করা থাকে, তা সহজেই হজম হয়। কারণ, এতে যে ডেক্সট্রিন থাকে, তা সরাসরি রক্তে প্রবেশ করে এবং তাৎক্ষণিকভাবে ক্রিয়া করে। ২ টেবিল চামচ মধুতে দারুচিনি গুঁড়া মিশিয়ে খাবারের আগে সেবন করলে এসিডিটিসহ খাবার হজমের সমস্যা ভাল হয়ে যায়।
২. কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে: মধুতে রয়েছে ভিটামিন বি-কমপ্লেক্স। এটি ডায়রিয়া ও কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে। ১ চা চামচ খাঁটি মধু ভোরবেলা পান করলে কোষ্ঠবদ্ধতা এবং অম্লত্ব দূর হয়। তাছাড়া ঠান্ডা এক পেয়ালা দুধের সাথে এক চামচ মধু মিশিয়ে সকাল বিকাল পান করলে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হয়ে যায়। এক গ্লাস হালকা গরম পানিতে এক চামচ লেবুর রস ও এক চামচ আদার রস এবং দু'চামচ মধু মিশিয়ে খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য প্রশমিত হয়।
৩. হৃদরোগ: প্রতি দিন সকালের নাস্তায় জ্যাম জেলি না খেয়ে মধু ও দারুচিনির গুঁড়া ব্যবহার করুন। আপনার আর্টারীতে কোলেস্টেরল কমিয়ে আপনার হার্টকে রাখবে সুস্থ সবল। হার্ট এ্যাটাকের কোন ঝুঁকি থাকবে না। এক চামচ মৌরি গুঁড়ার সঙ্গে এক বা দুই চামচ মধুর মিশ্রণ হৃদরোগের টনিক হিসেবে কাজ করে। এটা হৃৎপেশিকে সবল করে এবং এর কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
৪. রক্তশূন্যতায়: মধু রক্তের হিমোগ্লোবিন গঠনে সহায়তা করে বলে এটি রক্তশূন্যতায় বেশ ফলদায়ক। কারণ, এতে থাকে খুব বেশি পরিমাণে কপার, লৌহ ও ম্যাঙ্গানিজ।
৫. অনিদ্রায়: মধু অনিদ্রার ভালো ওষুধ। রাতে শোয়ার আগে এক গ্লাস পানির সঙ্গে দুই চা চামচ মধু মিশিয়ে খেলে এটি গভীর ঘুম ও সম্মোহনের কাজ করে। তাছাড়া এক কাপ গরম দুধের সাথে এক চামচ মধু মিশিয়ে নিন এবং ঘুমানোর এক ঘন্টা পূর্বে পান করুন। আপনর গভীর ঘুম চলে আসবে।
৬. যৌন দুর্বলতায়: পুরুষদের মধ্যে যাঁদের যৌন দুর্বলতা রয়েছে, তাঁরা যদি প্রতিদিন মধু ও ছোলা মিশিয়ে খান, তাহলে বেশ উপকার পাবেন।
৭. অবসাদ, ক্লান্তিতে প্রশান্তিদায়ক: হালকা গরম দুধের সঙ্গে মধু মিশিয়ে পান করলে প্রশান্তি এনে দেয়। তাছাড়া সম পরিমাণ মধু ও দারুচিনির গুঁড়া মিশিয়ে খেলে শরীর সুস্থ, সজীব রাখতে সহায়তা করে। শরীরের অবসাদ ক্লান্তি দূর হয়ে শরীর ফুরফুরে আমেজ চলে আসে।
৮. পাকস্থলীর সুস্থতায়: মধু পাকস্থলীর কাজকে জোরালো করে এবং হজমের গোলমাল দূর করে। এর ব্যবহার হাইড্রোক্রলিক অ্যাসিড ক্ষরণ কমিয়ে দেয় বলে অরুচি, বমিভাব, বুকজ্বালা এগুলো দূর হয়ে যায়। মধু ও দারুচিনির ব্যবহার পেট ব্যথা ও আলসার সারিয়ে তোলে।
৯. চোখের রোগে ও দৃষ্টিশক্তি বাড়াতে: মধু চোখের জন্য ভালো। গাজরের রসের সঙ্গে মধু মিশিয়ে খেলে দৃষ্টিশক্তি বাড়ে। সর্ব প্রকার চোখের রোগে সকাল বিকাল দুই বার ঊভয় চোখে মধু লাগাতে হবে। প্রত্যেক বার বাহ্যিক ব্যবহারের সাথে সাথে এক চামচ করে মধু খেতেও হবে।
১০. আথ্রাইটিস: প্রতিদিন রাতে ও সকালে দুই চামচ মধু ও এক চামচ দারুচিনির গুঁড়া গরম পানিতে মিশিয়ে খেলে দীর্ঘ দিনের আথ্রাইটিসও ভাল হয়ে যায়।
১১. ডায়রিয়া: আবূ সা‘ঈদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, এক ব্যক্তি নবী রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট এসে বলল, আমার ভাইয়ের পেটে অসুখ হয়েছে। তখন নবী রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন তাকে মধু পান করাও। এরপর লোকটি দ্বিতীয়বার আসলে তিনি বললেন, তাকে মধু পান করাও। অতঃপর তৃতীয়বার আসলে তিনি বললেন তাকে মধু পান করাও। এরপর লোকটি এসে বলল, আমি অনুরূপই করেছি। তখন নবী রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আল্লাহ্ সত্য বলেছেন, কিন্তু তোমার ভাইয়ের পেট মিথ্যা বলছে। তাকে মধু পান করাও। অতঃপর সে তাকে পান করাল। এবার সে রোগমুক্ত হল।
ডায়রিয়া হলে এক লিটার পানিতে ৫০ মিলিলিটার মধু মিশিয়ে খেলে দেহে পানিশূন্যতা রোধ হয় এবং ডায়রিয়া ভাল হয়ে যায়।
১২. ক্যান্সার: যাদের পাকস্থলী ও হাড়ের ক্যান্সার রয়েছে তারা প্রতিদিন তিন বার এক চামচ মধু ও একচামচ দারুচিনির গুঁড়া মিশিয়ে ১ মাস খেলে ক্যান্সারে উপকার পাবেন।
১২. ক্ষত সারাতে: ক্ষত বা আঘাতের ক্ষরণ বন্ধ ও তা জীবানু মুক্ত রাখতে মধু অত্যন্ত কার্যকর। ক্ষত শুকাতে মধুর প্রলেপ উপকারী। হাড় ভাঙ্গা বা মচকানোতে মধুর প্রলেপ উপকারী।
১৩. ওজন কমাতে: সকালে নাস্তার আধা ঘন্টা আগে খালি পেটে এবং রাতে ঘুমানোর আধা ঘন্টা আগে মধু ও দারুচিনি গুঁড়া পানিতে ফুটিয়ে পান করে তবে মোটা ব্যক্তি খুব সহজে ওজন কমাতে পারবেন।
১৪. ইনফ্লুয়েঞ্জা: মধুতে প্রাকৃতিক ভাবে ইনফ্লুয়েঞ্জা বিরোধী উপাদান আছে। তাই মধু সেবনে ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাল হয়ে যায়। রাতে ঘুমানোর আগে মধূ ও পেঁয়াজ কুঁচি একটি ছোট পাত্রে পানি সহ জ¦াল দিন এবং নাক দিয়ে ধোঁয়া টানুন ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাল হয়ে যাবে। সাথে প্রতি বেলা খাবারের পর এক চামচ মধু খান।
১৫. পোকার কামড়: মৌমাছির হুলে বিষ থাকে। আল্লাহ তায়ালা এই মধুর মধ্যেও হুল ফুটানো বিষ এবং অন্যান্য পোকা কামড়ের বিষের চিকিৎসা রেখে দিয়েছেন। পোকা কামড়ের বিষ তাড়াতে এক ভাগ মধু ২ ভাগ কুসুম গরম পানিতে মিশিয়ে ছোট চা চামচ দারুচিনির গুঁড়া মিশিয়ে খুব আস্তে আস্তে ম্যাসেজ করুন। দু এক মিনিটের মধ্যে ব্যথা চলে যাবে।
১৬. এলার্জি : এক চামচ মধুর সাথে গোলাপজল মিশিয়ে সকাল সন্ধায় এলার্জি আক্রান্ত স্থানে মালিশ করতে হবে এবং প্রতিদিন এক চামচ মধু খেতে হবে। ইনশাল্লাহ এলার্জি ভাল হয়ে যাবে।
১৭. মৃগী রোগ: প্রতিদিন সকালে এক চামচ মধু মুখে দিয়ে কতক্ষণ রেখে লালামিশ্রিত করে পান করতে হবে। রাতে এক পেয়ালা গরম দুধের সাথে এক চামচ মধু মিশিয়ে পান করতে হবে। এভাবে যথানিয়মে এক সপ্তাহ নিয়ম পালন করুন। দেখবেন আল্লাহর রহমতে মুগী রোগ ভাল হেয়ে গেছে।
১৮. ফুসফুসের যাবতীয় রোগ ও শ্বাসকষ্ট নিরাময়ে: বলা হয়, ফুসফুসের যাবতীয় রোগে মধু উপকারী। যদি একজন অ্যাজমা (শ্বাসকষ্ট) রোগীর নাকের কাছে মধু ধরে শ্বাস টেনে নেওয়া হয়, তাহলে সে স্বাভাবিক এবং গভীরভাবে শ্বাস টেনে নিতে পারবে। অনেকে মনে করে, এক বছরের পুরোনো মধু শ্বাসকষ্টের রোগীদের জন্য বেশ ভালো। অন্য উপায় পরিমিত গোলাপ জল এবং সমপরিমাণ মধু এক সাথে মিশিয়ে নিতে হবে। সকাল বিকাল এক চামচ করে পান করতে হবে। ঘুমানোর আগে যাইতুনের তেলের সাথে মধু মিশিয়ে বুকে এবং ঘাড়ে মালিশ করতে হবে। কয়েকদিনের মধ্যে আপনার ফুসফুস সুস্থ হয়ে যাবে এবং শ^াসকষ্ট ভাল হয়ে যাবে।
১৯. চুল পড়ায়: গোসলের আগে এক চামচ মধু এক চামচ গরম অলিভ অয়েলের সাথে মিশিয়ে মাথায় দিন। ১৫ মিনিট পর গোসল করুন। চুল পড়া বন্ধ হয়ে যাবে।
২০. মূত্রথলির ইনফেকশন: এক চামচ দারুচিনির গুঁড়ার সাথে এক চামচ মধু নিয়ে এক গ্লাস কুসুম গরম পানির সাথে মিশিয়ে পান করলে মূত্রথলিতে বিদ্যমান জীবাণু ধ্বংস হয়ে ইনফেকশন ভাল হয়ে যায়।
২১. মুখের ও দাঁতের চিকিৎসা: পৃথিবীর খাদ্য জাতীয় সব নেয়ামত মুখ আর দাঁতের সাথে সম্পর্কিত। মুখ আর দাঁতে সমস্যা থাকলে যদিও বেঁচে থাকার জন্য খেতে হয়। কিন্তু আরাম আর স্বাদ মিলে না। মুখের স্বাস্থ্য রক্ষায় মধু ব্যবহৃত হয়। এটা দাঁতের ওপর ব্যবহার করলে দাঁতের ক্ষয়রোধ করে। দাঁতে পাথর জমাট বাঁধা রোধ করে এবং দাঁত পড়ে যাওয়াকে বিলম্বিত করে। মধু রক্তনালিকে সম্প্রসারিত করে দাঁতের মাড়ির স্বাস্থ্য রক্ষা করে। যদি মুখের ঘায়ের জন্য গর্ত হয়, এটি সেই গর্ত ভরাট করতে সাহায্য করে এবং সেখানে পুঁজ জমতে দেয় না। মধু মিশ্রিত পানি দিয়ে গড়গড়া করলে মাড়ির প্রদাহ দূর হয়। অন্য উপায়ে মধু ও সিরকা মিশিয়ে কুলি করলে মেসওয়াকে মধু লাগিয়ে দাঁত ব্রাশ করলে দাঁতের সব রোগ ভাল হয়ে যায়। দাঁত হয় ঝকঝকে।
২২. গলার স্বর: মধু গলার স্বর সুন্দর ও মধুর করে। তাছাড়া স্বর ভঙ্গে একটি পাত্রে প্রয়োজন মত পানি নিতে হবে। তাতে দুই চামচ মধু মিশিয়ে আগুন দিয়ে জ¦াল দিতে হবে। পাত্রের ঢাকনা একদিকে ফাঁক রেখে ঐ দিক দিয়ে ধোঁয়া গলায় টানতে হবে। এভাবে কয়েকবার করতে হবে এবং এই জ¦াল দেওয়া পানিতে লবন মিশিয়ে তা দিয়ে কুলি করতে হবে। এভাবে ৩ দিন করলে স্বর ভঙ্গ রোগ ভাল হয়ে যাবে।
২৩. কানে কম শোনা: সকাল বিকাল মধুর সাথে দারুচিনি গুঁড়া মিশিয়ে খেলে কানে কম শোনা রোগ ভাল হয়।
২৪. হাঁপানি রোধে: আধা গ্রাম গুঁড়ো করা গোলমরিচের সঙ্গে সমপরিমাণ মধু এবং আদা মেশান। দিনে অন্তত তিনবার এই মিশ্রণ খান। এটা হাঁপানি রোধে সহায়তা করে।
২৫. উচ্চ রক্তচাপ কমায়: দুই চামচ মধুর সঙ্গে এক চামচ রসুনের রস মেশান। সকাল সন্ধ্যা দুইবার এই মিশ্রণ খান। প্রতিনিয়ত এটার ব্যবহার উচ্চ রক্তচাপ কমায়। প্রতিদিন সকালে খাওয়ার এক ঘণ্টা আগে খাওয়া উচিত। দু'চামচ মধুতে এক চামচ লেবুর রস মিশিয়ে প্রতিদিন সকালে ও রাতে সেবন করলে রক্তচাপ স্বাভাবিক হয়ে যায়।
২৬. রক্ত পরিষ্কারক: এক গ্লাস গরম পানির সঙ্গে এক বা দুই চামচ মধু ও এক চামচ লেবুর রস মেশান। পেট খালি করার আগে প্রতিদিন এই মিশ্রণ খান। এটা রক্ত পরিষ্কার করতে সাহায্য করে। তা ছাড়া রক্তনালিগুলোও পরিষ্কার করে।
২৭. রক্ত উৎপাদনে সহায়তা: রক্ত উৎপাদনকারী উপকরণ আয়রন রয়েছে মধুতে। আয়রন রক্তের উপাদানকে অধিক কার্যকর ও শক্তিশালী করে।
২৮. রোগ প্রতিরোধশক্তি বাড়াতে: মধু শরীরের রোগ প্রতিরোধশক্তি বাড়ায় এবং শরীরের ভেতরে এবং বাইরে যেকোনো ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণ প্রতিহত করার ক্ষমতাও জোগান দেয়। মধুতে আছে একধরনের ব্যাকটেরিয়া প্রতিরোধকারী উপাদান, যা অনাকাংক্ষিত সংক্রমণ থেকে দেহকে রক্ষা করে।
২৯. ত্বকের লাবণ্যে: তারুণ্য বজায় রাখতে মধুর ভূমিকা অপরিহার্য। এটি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, যা ত্বকের রং ও ত্বক সুন্দর করে। ত্বকের ভাঁজ পড়া ও বুড়িয়ে যাওয়া রোধ করে। শরীরের সামগ্রিক শক্তি ও তারুণ্য উদ্দীপ্ত করে।
৩০. নিঃশ^াসে দুর্গন্ধ: গরম পানিতে এক চামচ মধু ও দারুচিনির গুঁড়া মিশিয়ে গর্গল করুন। এতে সারাদিনে আপনার মুখে দুর্গন্ধ হবে। নিঃশ^াস সজীব থাকবে।
৩১. বন্ধাত্ব নিরসনে: প্রতিদিন ঘুমাবার আগে ২ চা চামচ মধু খেলে বীর্ষ শক্তিশালী হয় সন্তান উৎপাদনে সক্ষম করে তোলে। মহিলাদের মধু ও দারুচিনি গুঁড়া সেবন জরায়ুর শক্তি বৃদ্ধি করে গর্ভধারনে সাহায্য করে।
৩২. দাঁত ব্যথা: এক চা চামচ দারুচিনি ৫ চা চামচ মধুতে মিশিয়ে দিনে ৩ বার যন্ত্রণাময় দাঁতে লাগালে উপকার পাওয়া যায়। হঠাৎ যদি দাঁতে ব্যথা অনুভব হয় তাহলে মধুতে তুলা ভিজিয়ে ব্যথার স্থানে রাখলে ব্যথা কমে যাবে।
৩৩. ঠান্ডা জনিত সমস্যায়: যাদের সব সময় ঠান্ডা লেগেই থাকে, তাদের এক চামচ কুসুম গরম মধুর সাথে এক চামচের ৪ ভাগের এক ভাগ দারুচিনির গুঁড়া মিশিয়ে খেলে উপকার পাওয়া যাবে। ঠান্ডা লাগলে বা সর্দি হলে নাক দিয়ে পানি পড়লে বা ভেতরে জমে থাকা কফ বের করতে হলে মধু, মিছরি ও মেহেদী পাতার রস পরপর ৮-১০ দিন নিয়মিত সেবন করলে সর্দি কমে যায়।
৩৪. ব্রণ, একজিমা: ব্রণের ক্ষেত্রে তিন টেবিল চামচ মধুতে এক চা চামচ দারুচিনির গুঁড়া মিশিয়ে পেস্ট তৈরী করতে হবে। রাতে ঘুমাবার আগে ব্রণে লাগিয়ে সকালে গরম পানি দিয়ে ধৌত করলে দুই সপ্তাহের মধ্যে ব্রণ মূলসহ দূরীভূত হয়। একজিমাতে এভাবে ব্যবহার করলে ভাল হয়ো যায়।
৩৫. বক্ষব্যাধি: এক মাঝারি ধরনের মুলা নিতে হবে। এটা নিংড়িয়ে রস বের করতে হবে। তার সাথে এক চামচ মধু মিশিয়ে এক কাপ গরম পানিতে ছেড়ে দিন। প্রতিদিন সকাল বিকাল এভাবে পান করুন। বক্ষ পরিচ্ছন্ন হয়ে যাবে, বক্ষব্যাধির সব জটিলতা দূর হয়ে যাবে।
৩৬. কুষ্ঠ বা ধবল রোগে: নিশাদলের সাথে মধু মিশিয়ে প্রতিদিন মালিশ করুন। ইনশাআল্লাহ কুষ্ঠ রোগ সেরে যাবে।
৩৭. ত্বকের সজীবতায়: যাইতুনের তেলের সাথে মধু মিশিয়ে ত্বকে মালিশ করলে ত্বকের মৃত কোষগুলো সজীবতা ফিরে পাবে।
৩৮. যৌন উপকারীতা: যৌন শক্তি বাড়াতে প্রতি সপ্তাহে অন্তত ৩/৪ দিন ১ গ্লাস গরম পানিতে ১ চামচ খাঁটি মধু মিশিয়ে পান করতে হবে।
৩৯. অনিয়মিত ঋতুস্রাব: অনিয়মিত ঋতুস্রাব হতে থাকলে ছোট চামচে এক চামচ তুলসীর রস, সমপরিমাণে মধু ও এক চিমটি বা একাটি গোলমরিচের গুঁড়ো এক সঙ্গে মিশিয়ে দিনে দুবার করে দুমাস নিয়মিত সেবন করলে উপকার পাওয়া যায়।
৪০. আগুনে পুড়া: শরীরে কোথাও পুড়ে গেলে সামান্য মধু মেহেদী পাতার সঙ্গে বেটে লাগালে এতে পোড়াজনিত জ্বালা ও কষ্ট লাঘব হয়।
৪১. চর্মরোগ: প্রতিদিন সকালে ২০ গ্রাম মধু ঠান্ডা পানিতে মিশিয়ে ৪-৫ মাস খেলে চুলকানি, ফুসকুড়ি ইত্যাদি চর্মরোগ সেরে যায়।
৪২. কাশি: আদা, পান, তুলসীর রসের সঙ্গে মধু মিশিয়ে দিনে দু'তিনবার খেলে কাশি কমে যায়।
৪৩. তাপ উৎপাদনে: শীতের ঠান্ডায় মধু শরীরকে গরম রাখে। এক অথবা দুই চা চামচ মধু এক কাপ গরম পানির সঙ্গে খেলে শরীর ঝরঝরে ও সতেজ থাকে।
খাটি মধু চিনার উপায়:
১. মধুর স্বাদ হবে মিষ্টি, এতে কোনও ঝাঁঝালো ভাব থাকবে না।
২. মধুতে কখনও কটু গন্ধ থাকবে না। খাঁটি মধুর গন্ধ হবে মিষ্টি ও আকর্ষণীয়।
৩. এক টুকরো ব্লটিং পেপার নিয়ে, তাতে কয়েক ফোঁটা মধু দিন। কাগজ তা সম্পূর্ণ শুষে নেবে না, যদি কাগজ সম্পূর্ণ শুষে নেয়, বুঝবেন মধুটি খাঁটি নয়।
৪. শীতের দিনে বা ঠান্ডায় খাঁটি মধু দানা বেঁধে যেতে পারে।
৫. একটি মোমবাতি নিয়ে সেটির সলতেটি ভালভাবে মধুতে ডুবিয়ে নিন। এ বার আগুন দিয়ে জ্বালানোর চেষ্টা করুন। যদি জ্বলে ওঠে, তাহলে বুঝবেন যে মধু খাঁটি। আর যদি না জ্বলে, বুঝবেন যে মধুতে পানি মেশানো আছে।
৬. বেশ কিছুদিন ঘরে রেখে দিলে মধুতে চিনি জমতেই পারে। তকে চিনি হবে দানাদার। কিন্তু যদি মধুর পাত্র গরম পানিতে কিছুক্ষণ রেখে দেখুন। এই চিনি গলে মধু আবার স্বাভাবিক হয়ে আসবে। কিন্তু নকল মধুর ক্ষেত্রে এটা হবে না।
৭. এক টুকরো সাদা কাপড়ে মধু মাখান। আধ ঘণ্টা রাখুন। তারপর পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। যদি দাগ থেকে যায়, বুঝবেন মধুটি খাঁটি নয়।
৮. গ্লাসে বা বাটিতে খানিকটা পানি নিতে হবে তার মধ্যে এক চামচ মধু দিন। যদি মধু পানির সাথে অনায়াসে মিশে যায় তাহলে বুঝবেন যে এটা অবশ্যই নকল। আসল মধুর ঘনত্ব পানির চাইতে অনেক বেশী, তাই তা সহজে মিশবে না। এমনকি নাড়া না দিলে মধু পানির সাথে মিশবে না।
মৌ পালকের সাথে আলাপ করে যতটুকু জানতে পেরেছি চাষের মধু এবং গাছের মধু দুটাতে পার্থক্য আছে। চাষের মধুতে সাধারণত এক জাতীয় ফুলের মধু থাকে। আর গাছের মধু তো হাজারো জাতের ফুলের মধু থাকে। সাধারণত চাষের মধু প্রতি সপ্তাহে উঠানো হয়। আর গাছের মৌচাকের মধু কমপক্ষে একমাস পর উঠানো হয়। চাষের মধুতে পানির পরিমাণ বেশী থাকে। কারন ফুলের মধুর সংগ্রহ করে তার পেটে প্রক্রিয়া করে যখন আবার বের করে তার বাসায় রাখে সাথে সামান্য পানিও চলে আসে। এক সপ্তাহে এটা শুকায় না। ফলে চাষের মধু আবার আগুনের উত্তাপে শোধন করতে হয়। তাপ যত বেশী দিবে মধু তত গাড় হবে, চিনি ঘনত্ব বাড়বে, তত মধু বেশী দিন থাকবে আর গাছের মধু এমনিতেই খুব গাড় হয়। তবে বেশী তাপে মধুর গুনাগুন কমে যায়। মধু আদ্রতা শোষন করে ফলে আপনি যদি বার বার ছিপি খুলেন এবং লাগান তাহলে চাষের মধু তাড়াতাড়ি নষ্ট হয়ে যাবে। তাই যখন চাষের মধু খাবেন তখন ছোট বোতলে আলাদা করে বড় বোতল খুব ভাল করে লাগিয়ে রাখবেন। আমাদের বাজারে যে সমস্ত মধু পাওয়া এদের মধুও চাষের। এর মধ্যে কেউ কেউ হয়তো ভেজালও করতে পারে। কেননা আমার আমরা ভেজালের সয়লাবে বেঁচে আছি। অন্যকে মেরে হলেও বেশি লাভ, বেশি টাকার প্রয়োজন। এরা মধুকে বেশী তাপ দিয়ে বেশী গাড় করে ফলে এদের মধু তাড়াতাড়ি নষ্ট হয় না। যারা সচরাচর চাষ করে তারা এত তাপ দেয় না বা দিতে পারে না। ফলে এদের মধু খুব তাড়াতাড়ি নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এদের মধু বসে যায়।
এ কথাটি ভালভাবে বুঝে আসতে হবে বসে গেলেই মধু ভেজার নয়। বসায় পরের অবস্থা হলো ভেজাল বুঝার বিষয়। যদি কোনো মধুতে গ্লুকোজের পরিমাণ ফ্রুক্টোজের চেয়ে বেশি থাকে তখন সে মধু অতি দ্রুত দানাদার হয়। যেমন- সরিষা ফুলের মধু। আবার মধুতে পর্যাপ্ত পোলেন, ধুলাবালু ও বুদবুদ থাকলে সে মধু সহজে দানাদার হয়। সাধারণত ১১ থেকে ১৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় মধু জমতে পারে। পানির পরিমাণ বেশি থাকলে মধুকে দানাদার হতে ত্বরান্বিত করবে। চাষের মধুতে গাছের মধু থেকে পানি বেশি থাকে।
মধু চাষে সে সমস্ত মৌমাছি পালন করা হয়। আমাদের দেশে সাধারণত মেলিফেরা ও সেরেনা এই দুই জাতের মৌমাছি দিয়ে মৌ চাষ করা হয়। চাষের মৌমাছি সাধারণত ৩ কিলোমিটার পর্যন্ত মধু আহরনের জন্য ভ্রমন করে। অন্য দিকে গাছে , ছাদে যে সমস্ত মৌমাছি বাসা তৈরী করে এরা ১০ কিলোমিটার পর্যন্ত ভ্রমন করে থাকে। তাইতো যখন ফুল কমে যায়। যেমন চাষের মৌমাছির ক্ষেত্রে যখন সরিষা, বরই, লিচু, ধনিয়া, কালজিরা ইত্যাদি ফুল যখন থাকে না। তখন মৌমাছিকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য মৌ চাষিরা তাদেরকে চিনি, ঘমের ভুষি ইত্যাদি মিশ্রিত পানি দিয়ে থাকেন। কিন্তু যারা প্রাকৃতিক ভাবেই এসে বাসা বাধে তাদের জন্য কিছুই দিতে হয় না। তারা দূরদূরান্ত থেকে ঠিকই ঘুরে ঘুরে মধু আহরন করে।
তথ্য সূত্র: ১. আল কোরআনুল কারীম
২. আল হাদিস এ্যাপস
৩. মধু ও কালজিরার ঔষধী গুণ- মুফতী ওযীরুল ইসলাম মাসউদ অনুদিত
৪. ভেষজ উদ্ভিদের লোকজ ব্যবহার- ডাঃ আলমগীর মতি
৫. উইকিপিডিয়া অনলাইন
৬. কৃষি তথ্য সার্ভিস ওয়েব সাইট
৭. পত্র পত্রিকার অনলাইন ভার্সন

 

এই লেখকের অন্যান্য লেখা



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Developed with by
Top