সিডনী মঙ্গলবার, ২৩শে এপ্রিল ২০২৪, ১০ই বৈশাখ ১৪৩১


প্রজেক্ট আরোহী: ‘পিরিয়ড পভার্টি’ নিয়ে এক অনন্য উদ্যোগ


প্রকাশিত:
১৫ সেপ্টেম্বর ২০২১ ২০:৩১

আপডেট:
২৩ এপ্রিল ২০২৪ ১৬:৪৬

 

মাসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষা দিবস ২০২১ উপলক্ষে SCORA, বাংলাদেশ মেডিকেল স্টুডেন্টস সোসাইটি ও ঋতুর যৌথ উদ্যোগে অনুদান সংগ্ৰহের মাধ্যমে মাসিক স্বাস্থ্য সচেতনতা তৈরির লক্ষে আয়োজিত হয়েছে মাসব্যাপী ‘প্রজেক্ট আরোহী'।

পিরিয়ড, মাসিক বা ঋতুস্রাব প্রত্যেক নারীর স্বাভাবিক জীবনচক্রের অবিচ্ছেদ্য অংশ।বিষয়টি স্বাভাবিক হলেও এটি নিয়ে মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি এখনো স্বাভাবিক নয়।যদিও দিন দিন মানুষের মধ্যে ট্যাবু ভাঙছে, সচেতনতা বাড়ছে। তবুও খুব একটা লাভ হয়নি, কারণ ‘কেনার’ সামর্থ্য নেই। সবার জন্য মানসম্মত স্যানিটারি প্যাড তাই মাসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষার প্রধান অন্তরায়।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস), ইউনিসেফ বাংলাদেশ ও ওয়াটারএইডের যৌথ উদ্যোগে পরিচালিত ‘ন্যাশনাল হাইজিন সার্ভে ২০১৮’ অনুযায়ী, দেশে মাসিকের সময় ৪৩ শতাংশ কিশোরী ডিসপোজিবল প্যাড, ৫০ শতাংশ পুরোনো কাপড় এবং বাকিরা নতুন কাপড় ও তুলা ব্যবহার করে। ভালো মানের প্যাড ব্যবহারে একজন কিশোরীর মাসে আড়াই’শ টাকার মতো লাগে। নিম্ন আয়ের পরিবারের জন্য মানসম্মত স্যানিটারি প্যাড অনেকটায় দুষ্প্রাপ্য।

তার উপর রয়েছে মহামারীর কড়াল গ্ৰাস। আন্তর্জাতিক সংস্থা ইউএনউইমেনের এক গবেষণায় দেখা গেছে, ৫১ দশমিক ৭ শতাংশ নারী মহামারীর সময়টাতে তাঁদের স্বাস্থ্য পরিচর্যা সামগ্রীর অপ্রতুলতার কথা বলেছেন। মাসিক স্বাস্থ্য পরিচর্যা সামগ্রীর অপ্রতুলতায় স্বাস্থ্যসম্মত প্যাডের বদলে পুরোনো কাপড় ব্যবহারে নারীদের নানা স্বাস্থ্য সমস্যা হতে পারে।

SCORA, BMSS Bangladesh ও ঋতুর অনুদান সংগ্ৰহের তাই এই যৌথ উদ্যোগ। পুরো জুন মাসব্যাপী মাসিক স্বাস্থ্য সচেতনতা তৈরির লক্ষে আয়োজিত হয়েছে ওয়েবিনার, ক্যাম্পেইন, মিমস প্রতিযোগিতা সহ নানামুখী আয়োজন। প্রজেক্ট আরোহীর মূল লক্ষ্য ছিল সুবিধাবঞ্চিত কিশোরীদের কাছে পুরো এক বছরের জন্য পুনর্ব্যবহারযোগ্য স্যানিটারি ন্যাপকিন পৌছে দেওয়া।

মাসব্যাপী এই আয়োজন শেষে অনুদানের সম্পূর্ণ অর্থ নিয়ে 'আরোহী' পৌঁছে গিয়েছে তার টার্গেট পূরণে- ২৭ জন কিশোরীকে পিরিয়ড দারিদ্রতা থেকে সম্পূর্ণরূপে বের করে আনা। গত ২৮শে আগস্ট স্কোরা বিএমএসএস এর পক্ষ থেকে লোকাল অফিসারদের একটি টিম ময়মনসিংহের নান্দাইলের আল আজহার প্রাথমিক বিদ্যালয়ে স্যানিটারী ন্যাপকিন বিতরণ করে। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ছাড়াও অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ সুইসাইড প্রটেক্টিং স্কোয়াড ও ঋতুর প্রতিনিধিবৃন্দ।

পুরো প্রোগ্রামটিকে সাজানো হয়েছিল তিনটি পর্বে। অনুষ্ঠানের সূচনালগ্নে, একটি ছোট আলোচনাপর্বের আয়োজন করা হয় যেখানে লোকাল অফিসাররা মাসিক স্বাস্থ্য ও সুরক্ষা সম্পর্কে সচেতনতামূলক বক্তব্য রাখেন।এছাড়াও স্যানিটারী ন্যাপকিন ব্যাবহারের প্রয়োজনীয়তা এবং সঠিক ব্যবহার সম্পর্কেও বক্তারা উপস্থিত গ্রাম্য কিশোরীদের অবহিত করেন।

এরপর পালা আসে প্রশ্নোত্তর পর্বের। উপস্থিত কিশোরীরা মাসিক স্বাস্থ্য নিয়ে তাদের জিজ্ঞাসা এবং বিভিন্ন সমস্যার কথা তুলে ধরেন। লোকাল অফিসাররা অত্যন্ত আন্তরিকতার সাথে তাদের সকল প্রশ্ন এবং সমস্যার সমাধান করেন।

সবশেষে,২৭ জন সুবিধাবঞ্চিত কিশোরীদের প্রদান করা হয় পুনরায় ব্যবহারযোগ্য স্যানিটারী ন্যাপকিন। এ স্যানিটারী ন্যাপকিনগুলো আগামী এক বছর ব্যবহার উপযোগী থাকবে এবং সুবিধাবঞ্চিত এসব কিশোরীর মাসিক স্বাস্থ্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। মাসিক দারিদ্রতা দূরীকরণে সামনের পদক্ষেপগুলোতে 'প্রজেক্ট আরোহী' এক অনবদ্য উদাহরণ হিসেবে থেকে যাবে।

 

রিপোর্টঃ ইফতেখার আহমেদ সাকিব
৩য় বর্ষ, শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ, ঢাকা
জেনারেল অ্যাসিস্ট্যান্ট, স্কোরা, বাংলাদেশ মেডিকেল স্টুডেন্টস সোসাইটি 


বিষয়:


আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Developed with by
Top