সিডনী বৃহঃস্পতিবার, ২৫শে এপ্রিল ২০২৪, ১২ই বৈশাখ ১৪৩১

চমক : শাহিদা ইসলাম


প্রকাশিত:
৩০ জুলাই ২০২০ ২২:০৮

আপডেট:
৩১ আগস্ট ২০২০ ২১:১৩

ছবিঃ শাহিদা ইসলাম

 

অনেক রিক্সা স্ট্যান্ডে আছে, কিন্তু কাসেমের রিক্সার সাথে কার রিক্সার তুলনা হয় না। সব সময় ফিটফাট। নিজে হাতে সাজায়। রিক্সা তো নয় যেন ময়ুর।

নিজের জন্য কোন জামা প্যান্ট কেনার তাগাদা নাই, নতুন বউ বাড়িতে, বউ সব সময় বলে একই জামা কাপড় আর কত পরবেন, আপনি একদিন তো নতুন পোষাক  পইরা চমক  দিতে পারেন। বউরে সাত পাচ বোঝায়।

রিক্সায় সিট কভার চেঞ্জ করবে, গানের একটা ছোট্ট সাউন্ড সিস্টেম করেছে, মোবাইল দিয়ে। বলে প্যাসেঞ্জার বসে খুশি মনে বাড়িতে যায়, আমিও খুশি থাকি।

বউ আজ কড়া ভাষায় বলে দিচ্ছে, আইজ যদি নতুন পোষাক না পিন্দা আইছেন, তয় আপনার একদিন কি আমার একদিন।জোড়া তালি আর কয়দিন দিয়া চলবেন।

কাসেম কইল, শোন বউ আমি করিম মোল্লার ব্যাটা, যা কই সত্য কই। একদিন নতুন জামা পিন্দা তোমারে চমক দিমুই দিমু। বউ বিনু কইল হ, আমি মরলে কিন্না পিন্দেন, কাসেম মুখে হাত চাপা দিয়া কইল, ছি ছি এমন অলক্ষণে কথা কইতে নাই, আমি থাকিতে তুমি মরবা না, তোমার অসুখ হইলে  ডাক্তার দেখামু তার পর ভালা হইয়া যাইবা।

দাও খাওন দাও, বিনু খাবার দিল।

কাসেম ঝিংগা পোস্ত মুখে নিয়ে বলল,ওহ বউ কি রান্না করছ, এক্কেরে মাক্ষনের মত লাগতাছে। আমার জীবন ডা ধন্য হইয়া গেল রে বউ। বিনু কাসেমের প্রশংসা শুনে গলে গেল, হাছাই খুশি হইছেন, আপনার মুখে সুয়াদ  মানে আমার আত্মাটা ভইরা গেল।

বিনু কইল এই প্রর্থম আমি ঝিংগে পোস্ত রানছি,তয় এই রান্না কই খাইছ্বন। 

আরে আমি কি ধনী, আমার রিক্সায় যে সব প্যাসেঞ্জার উঠে তারা নানান ধরনের খাবার গল্প করে, আমি ঝিংগে পোসতোর গল্প শুইনা মনে হইলো কি সুয়াদ খাইয়া দেখমু, তাই কিন্না আনলাম, আহ তুমি ফাইভ স্টারের মত রানছো। তুমি যদি এই রান্না কইরা বিক্রি কর, তাইলে কত বিক্রি হইব জানো?

কত?  দুই টাকা?

আরে পাগল, এত কমে কি ফাইভ স্টারে খাওন যায়?

যাকগে আমরা গরীব মানুষ, বাজে খরচ করার অবস্থা নাই। তয় এখন একখান কথা কই, আপনার লুংগি কয়খান, আর ফতুয়া কয়খান কন?

এত হিসাব আমার নাই, তুমি রাখো।

হ আমার তো হিসাব রাখতেই হয়, লুংগি চার খান, তালি একেক লুংগিতে ১৬ খান, ফতুয়া  চার খানা, তালি ২৪ খানা । আমি কইলাম আর তালি দিতে  পারতাম না, এবার আমি খাওন বন্ধ কইরা দিমু।  

 

কাসেম সকালে উঠে বিনুরে রান্নার জন্য ডাকে না, রাতের ভাতে পানি দিয়ে ঘুমায়, সেই ভাত খেয়ে কাসেম বিসমিল্লাহ বলে বের হয়। আতর লোবান জ্বালিয়ে গোলাপ পানি ছিটিয়ে রিক্সা নিয়ে বের হয়।

বের হয়েই রাস্তার মোড়ে এসে দাঁড়ায়। বড় বাড়ির বড়বাবু হেলে দুলে বলে আরে তোমার রিক্সায় অনেক দিন চড়ি নাই। রিক্সায় উঠে গান শুরু করেছে, হাওয়ামে উড়তা যায়ে, ওও ফুরফুরে মেজাজে। বাবুর বাড়ির সামনে  রিক্সা এসে থামে। বাবু নেমে ভাড়া মিটিয়ে গেটের ভিতর ডুকতে যাবে, এমন সময়

কাসেম বাবু ও বড় বাবু একটা কথা,

কিরে ভাড়া বেড়েছে?

নাহ তা না;

তাহলে   কি বল?

বাবু আমি আপনার সার্ট প্যান্ট জুতার মত যদি কিনতে চাই, কোথায় পাব?

আরে এটা তো এই দেশ থেকে কিনি নাই, সিংগাপুর থেকে এনেছি।

 

কাসেমের মন খারাপ হয়ে গেল, স্যার এই দেশে পাব না?

পাবে নকল জিনিসটের পাবে না,

স্যার কই পাব?

পাবে গুলশান, এক দামের দোকানে  কিনবে, ঠকবে না, দাম পড়বে পাচ শো টাকা ।

 

কাসেম মনে মনে খুশি হল, আমি অনেক কষ্টে একটা নোট জমিয়ে রেখছি। যাক বউ বিনু কে খুশি করতে পারবো, কাল সকালে রিক্সা নিয়ে বের হমু না, আগে মার্কেটে যামু।

 

ঘুম ভেংগে ভোরে মনে হল, রিক্সা না নিলে  বিনু সন্দেহ করবে, নাহ রিক্সা নিয়েই যামু  রিক্সা নিয়ে বের হয়ে মার্কেটের দিকে রওনা দিল। যতই রিক্সার প্যাডেলে পা চালিয়ে ছুটছে আর ভাবছে, আর কত দূর, মাঠের শেষ মাথায় মার্কেট, নাম বাবু বলেই দিয়েছে।

 

দোকান পেয়ে গেল। দোকানে ঢুকে সব চাহিদা মত জিনিস কিনে রিক্সার সিটের নিচে রেখে আবার রিক্সার প্যাডেল চালিয়ে মাঠ পেরিয়ে রাস্তা ধরে এগুচ্ছে আর ভাবছে, একটা পুষ্করিণী যদি পাইতাম নাইম্মা  গোসল করে নতুন পোশাক  পইরা বিনুর সামনে  যাইতাম।

সত্যি তাই হল, একটা পুকুর পাওয়া গেল। বিরাট ঘাট বাধানো পুকুর, বিশাল সিঁড়ি।  চার দিকে তাকিয়ে দেখন কেউ আছে কিনা, দূরে কড়ই গাছের নিচে একটা ছেলে বসে আছে, বয়স ৭/৮ হবে। কাসেম হাত ইশারা করে ছেলে টাকে ডাকল, ছেলেটা ঝড়ের বেগে হাজির হল।

রিক্সার সিট খুলে কাপড়ের ব্যাগটা হাতে দিয়ে বলল, আমি গোসল করে উঠে আসলে আমার হাতে দিবি আর ছেলেটার হাতে এক টাকাও দিল, বাদাম ওয়ালা এলে যেন বাদাম কিনে খায়।

কাসেম পুকুরে নেমে, ভাল করে ঘষে মেজে শরীর পরিস্কার করল। ডুব দিতে গিয়ে পানির নিচে মনে হল স্বর্গ, আবার ডুব দেয়, এমন করে দশ বারোটা ডুব দিল, জামা লুংগি, তালি দেয়া জিনিস পানিতে ভাসিয়ে দিল, এবার গামছা দিয়ে গা মুছে, সেই গামছা  পরে উপরে উঠল। মাটের  কোনে গাছের নিচে রিক্সা বাধা, ছেলেটি কই? হায় হায়, এতো দেখছি, চোর না মহা ডাকাত, দিনে দুপুরে চুরি? এখন কি উপায়, মাথা চক্কর দিতে লাগল।

কাসেম মনে মনে কিছু একটা চিন্তা করে রিক্সা চালিয়ে বাড়ির দিকে ছুটলো। রিক্সা থামিয়ে সামনে তাকাতেই বিনু দেখে চমকে গেল, হায় হায় এই কি আপনার চমক? আপনার কুনু কথার দাম নাই, কাসেম বলল, বউ আমি তোমারে চমক দিতে চাইছিলাম, হেই চমক দিলাম, আমার কথা আমি ঠিকই রাখছি। আমি করিম মোল্লার ছেলে আমার এক জবান। চমক দেবার চাইছিলাম দিছি।।

 

এই লেখকের অন্যান্য লেখা



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Developed with by
Top