সিডনী মঙ্গলবার, ১৯শে মার্চ ২০২৪, ৫ই চৈত্র ১৪৩০

সে (মালদ্বীপের গল্প) : শরীফ আলী


প্রকাশিত:
১০ আগস্ট ২০২০ ২১:৪২

আপডেট:
১৯ মার্চ ২০২৪ ১০:১৬

ছবিঃ মডেল

 

জনাকীর্ণ মালে শহরে এক মেয়ে বাস করতো যার মধ্যে স্বভাবসুলভ  মেয়েলিপণা থাকলেও অন্য দশজন মেয়ের চেয়ে কিছুটা আলাদা ছিল সে। তার আকিকার নাম ছিল শীজা কিন্তু সে এটা পছন্দ করতো না। বাবা মাকে সে ঘৃণা করত এই নামে ডাকার কারণে। কারণ সে মনে করতো তার মতো সুন্দর মেয়ের জন্য এ ধরণের বেখাপ্পা নাম বেমানান।  আসলে সে বুঝতে পারে না  নামটা তার মামার দেয়া। ছেলেমেয়েদের নাম খোঁজাখুঁজি বাবা-মায়ের জন্য এক অন্যরকম অভিজ্ঞতা,  তবে বেশি খোঁজাখুঁজি ও ঘাটাঘাটি কর‍তে গিয়ে অনেক সময় অপেক্ষাকৃত  কম সুন্দর একটা নাম জুটে যায় নবাগত শিশুর কপালে। হ্যাঁ,  বেশি বেশি অপশনের কারণে অনেক সময় ভুলটা বাছাই হয়ে যায়। শীজা খুশি হতো যখন তাকে শিজু, শে, শিজি, বা 'যা' ব'লে ডাকা হতো। সে এই নামগুলোকে নিজের সঙ্গে মানানসই মনে করতো। কিন্তু সে এটা বুঝতে পারতো না যে  ডাকনামগুলোর উৎপত্তি সেই  বেখাপ্পা মূল নামটা থেকেই।

শীজা দেখতে খুবই সুন্দর ছিল। পুরুষ মানুষকে বশ মানানোর সকল প্রকার যোগ্যতা তার ছিল। লম্বাচওড়া গড়ন, লম্বা কোঁকড়াচুল এবং দেখতে বেশ সুন্দর একটা শারিরীক অবয়ব ছিল তার।  দিনের পর দিন আয়নার সামনে  দাঁড়িয়ে নাচতো সে। তার চোখজোড়া কাজলকালো, কিন্তু সে মনে করতো সবুজ বা বেগুনি অথবা হলদে রংয়ের হলে ভালো হতো। নতুন কিছু, যা আর কারো নেই। কিন্তু, সে  ভাবলো বেগুনি বা হলদে কল্পনার  বাইরে। অন্তত এটুকু বুঝার ক্ষমতা তার আছে। যখনই সে তাদের চারতলা চাকচিক্যময় বাড়ি থেকে বের হতো আদ্যপ্রান্ত মেকাপ নিতে ভুল করতো না। এমনকি গ্রীষ্মের তপ্ত দুপুরেও। ভালো কথা, সে চোখের সামনে  দুর্ঘটনা ঘটতে দেখেছিল।  হ্যাঁ, চোখের সামনে   সে অনেক দুর্ঘটনা ঘটতে দেখেছিল। মোটর বাইকের সাথে মোটর বাইকের, কারের সাথে সাইকেলের,ও মালগাড়ির সাথে পথচারীদের।  একবার এক ভদ্রলোককে দেখেছিল তাঁর  সাড়ে সাত বছর ও দেড় বছরের বাচ্চা দুটোকে শিশুদের গাড়িতে ক'রে নিয়ে যাওয়ার সময় ল্যাম্পপোস্টের সাথে  ধাক্কা খেতে। কি আশ্চর্য! লোকটা বাবা হয়েছেন অথচ আক্কেল জ্ঞান আজো হলো না। ঘটনাটা আরো মজার হতো ভদ্রলোকের স্ত্রী যদি সাথে থাকতেন। তাঁর কপাল ভালো বলা যায়। শীজা বিরক্তিতে গজর গজর করছিল এ ধরণের বিদঘুটে দৃশ্য দেখতে হয়েছিল ব'লে । পুরুষ!  সে এটা বুঝতে পারে না যে সব পুরুষ এরকম নয়, ব্যতিক্রমও আছে।

ষোল বছর বয়সের পর থেকে পুরুষ মানুষের ব্যাপারে খুব বিরক্ত শীজা। মানুষ যাকে বলে সুইট সিক্সটিন। আশ্চর্য ব্যাপার হলো এইসব পনের, সতের বা একুশের মানে কি। ত্যক্ত? কঠিন? সুখকর তবে কিছুটা যন্ত্রণাময়?  নাকি সুখ- যাতনায় মাখামাখি?  ষোল কেন? ঈশ্বর জানেন।  আসলেই,  আমরা জানতে চাই না। আসলে কিছু কিছু ব্যাপারে রহস্য থাকা ভালো।  অন্যথায় দুনিয়াটা একটা বিরক্তিকর জায়গায় পরিণত হবে যেখানে টম, ডিম এবং হ্যারিরা সবকিছুই জানবে। সে যাহোক, ষোল বছর বয়সে সে প্রথম  প্রেমের দেখা পেয়েছিল কিন্তু তারও আগে সে সুখের সন্ধান বা স্বাদ পেয়েছিল। সব ধরণের মানুষ তার কাছে ভিড়ার চেষ্টা করেছিল। লম্বা, শ্যামলবর্ণ ও সুন্দর, লম্বা, শুভ্রবর্ণ ও সুন্দর,  লম্বা, শ্যামলবর্ণ ও মিশুক,  বেটে, শুভ্রবর্ণ ও সুন্দর, তালিকা দীর্ঘতর......।  সে তার এই সুপ্রসন্ন ভাগ্যের জন্য গর্ববোধ করতো। সে জানতো না তারা আদতে কেমন মানুষ, শুধু জানতো তারা দেখতে কেমন।  এটা বুঝতো না যে, 'জাতের মেয়ে কালো ভালো,  নদীর পানি গোলা ভালো। '

দুঃখের ব্যাপার হলো তার বাবার আবার একটু নিয়ন্ত্রণমূলক দৃষ্টিভঙ্গি ছিল। তিনি তার চুলে বিলি কাটতে কাটতে বলতেন,  ছেলেদের সাথে মেশার জন্য সারাজীবন পড়ে আছে, আগে  ও- লেভেলটা পাস করে নে। টেকো লোকটা স্বভাবে খুবই গাট্টাগোট্টা ও বদমেজাজী ছিলেন। তুই যদি আরেকবার  আমার মেয়ের সাথে আর মিশতে আসিস তবে তোর নুনু সেকে সকালের নাস্তা বানাবো,  তিনি চিৎকার ক'রে এভাবে  হুমকি দিয়েছিলেন তার মেয়ের পেছনে ঘুরতে আসা এক ছেলেকে। অবশ্যই, হুবহু এভাবে না হলেও  ঠিক এরকম শক্তভাবে তিনি হুমকি দিয়েছিলেন।

শীজা মাধ্যমিক শেষ করার প্রথম এলো আহমেদ। আধুনিক যুগের আমেদে। কেউ কেউ তাকে মদেই বলেও ডাকতো। 'ডি ই ওয়াই' অনুসর্গটি সাধারণত মেয়েদের নামের শেষে ব্যবহার করা হয় ডাক নাম হিসেবে। তার মতে শীজা সুন্দরী।  এতে সে খুব একটা খুশি হতে পারে নি। সে আরো গভীর প্রশংসা চেয়েছিল। আহমেদ দেখতে অন্য দশটা ছেলের মতো, চমৎকার ও কিছুটা অমিশুক প্রকৃতির ছিল।  শীজার অভিযোগ আহমেদ তার প্রতি যথেষ্ট আন্তরিক নয়। অবশ্যই সে প্রতিদিন শীজাকে দেখতে আসতো না, ঘন্টায় ঘন্টায় কল করতো না এবং প্রতিদিন ফুল ও উপহার নিয়ে আসতো না।  নিজেকে সস্তায় বিকিয়ে দেওয়ার মতো বোকা ছিল না সে। সে বিশ্বাস করতো যুবক- যুবতীর সম্পর্কে কিছুটা দুরত্ব রাখা চাই যাতে নিজের ওজন ঠিক রাখা যায়। শীজা সিদ্ধান্ত নিয়েছিল জীবনের মতো তার সাথে দুরত্ব বজায় রাখাবে। বলার অপেক্ষা রাখে না যে সে জানতো আরো যোগ্যতম ছেলে পেতে তাকে বেশিদিন অপেক্ষা করতে হবে না। তার সবচেয়ে কাছের বান্ধবী গুম্রীশা পরামর্শ দিয়েছিল এদিকসেদিক ঘুরাঘুরি না করে এমন একটা জায়গায় যেতে যেখানে তারা ছেলেদের সাথে স্বচ্ছন্দে সময় কাটাতে পারে। গুম দেখতে খুব বনেদি ছিল এবং তার  চেয়ে তিনগুণ মোটা ও  উচ্চতায় অর্ধেক একটা বয়ফ্রেন্ড নিয়ে ঘুরতো।

আহমেদেয়কে ছেড়ে হাসানকে খুঁজে পেতে শীজার খুব একটা কাঠখড় পোড়াতে হয় নি। হাসান - ইওয়াই। দেখতে শুনতে বেশ চমৎকার ছেলে,  খুবই আন্তরিক ছিল। তবে তার আর্থিক স্বচ্ছলতা ছিলো না। সে শীজাকে কিউট বলে প্রশংসা ক'রেছিল। শীজা মনে করেছিল এটা তাকে 'সুন্দরী' না বলার একটা অজুহাত মাত্র। হাসান প্রথমবার দেখা করতে এসেছিল হেঁটে। হাসানকে দেখে রাগে গর্জে ওঠেছিল শীজা। তুমি কি আমাকে সারাটা পথ চ'রিয়ে নিয়ে যাবে নাকি। সে এটা বুঝতে চায় নি যে তাদের  প্রেম করবার জায়গাটা কয়েক পা দূরে -- সম্ভবত একশো ঊনত্রিশ পা বা কদম দূরে। পরেরবার দেখা করতে যাবার সময় হাসান  একটা মোটরবাইক ধার ক'রে এনেছিল। কিন্তু, বিধিবাম! তাকে মাঝপথে সেটা ফিরিয়ে দিতে হয়েছিল। শীজা তাকে কিছু বলেনি সেদিন, খালি মুখটাকে বাংলার পাঁচের মতো ক'রে একবার  দৃষ্টি বিনিময় করেছিল। হাসান  এমন এক কাঁচুমাচু ভঙ্গিতে তার দিকে তাকিয়েছিল যেন শীজা যা যা বলতে চেয়েছিল তার সবটুকুই সে শুনেছে ফেলেছিল আগে। শীজা তাকে তাড়িয়ে দিয়েছিল। সত্য কথাটা হলো হাসানের বাইক থাকা না থাকা নিয়ে খুব একটা চিন্তাভাবনা করতে হয় নি শীজাকে। এরই মধ্যে শীজার সামনে হাজির হলো আরেক প্রেমিক। এবারের প্রেমিক নিয়াজ।

নিয়াজ। 'নিয়া' পরিবর্তিত নাম। সে দেখতে শুনতে পরিশীলিত, আঁটোসাটো শার্ট প'রে এবং কিছুটা ..... মেয়েলিপনা আছে তার। সে খুব আদুরে, যত্নবান  এবং ঘনিষ্ঠমুহূর্তে সে খুব অদ্ভুত আচরণ করতো। এ নিয়ে শীজা সংকটে পড়ে গেল। অবশ্যই ছেলেটা  স্বীকার করে নিয়েছিল যে শীজার সাথে প্রেম হওয়ার আগে  সমকামিতায় জড়িত ছিল। সে আরো বলেছিল যে এই প্রথম সে কোন নারীর প্রতি আসক্ত হয়েছিল। ছেলেটা চাটুকারিতায় পারদর্শী ছিল এবং শীজাকে ভালোই মগ্ন রেখেছিল অতিরিক্ত প্রশংসার মাধ্যমে। শীজা তার চাটুকারিতা উপভোগ করলেও বাইরের মানুষের তীর্যক মন্তব্য সহ্য করতে পারছিল না। একবার এক ছোকরা তাকে দেখে বলেছিল, 'সুন্দরী ও সমকামী'। শীজার ইচ্ছে করেছিল ছেলেটার মুখে থুথু ছুঁড়ে মারবে, অবশ্যই পরক্ষণে এটাসেটা ভেবে সে নিজেকে নিবৃত্ত করেছিল। সে জানতো ঐ ছেলেটার স্বভাবচরিত্র ' ন্যাংটার নেই বাটপারের ভয়' রকমের। সে যাহোক, সম্পর্কটা এতই বিব্রতকর ছিল যে শীজা শেষমেশ এটার ইতি টানলো। নিয়া বেচারা অসহায়।  সে তার অতীত ভুলে নতুন ক'রে শুরু করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছিল। ঐটাই ছিল তার জীবনের প্রথম ও শেষ নারীসঙ্গ যা তাকে কাঁদিয়েছিল। সে জীবনে আর কোন মেয়ের দিকে না তাকানোর শপথ করেছিল।

এবার নাজিম এলো। 'জোয়াদেই'। কি সুন্দর ছেলে ।  প্রেমে পড়ার সাথে সাথে ডাকনাম পেয়ে যাওয়াটা কত  যে সৌভাগ্যের ব্যাপার ? সেটা চিন্তা ক'রে সময় নষ্ট না ক'রে চলুন সামনের দিকে এগোই। জোয়াদেই প্রতিদিন শীজাকে ফোন করতো এবং প'টিয়ে নিয়েছিল শীঘ্রই। এভাবে একদিন তাদের প্রথম দেখার দিনক্ষণ  এলো। কিন্তু তখন সে আর্থিকভাবে অনেকটা দেউলিয়া অবস্থার মধ্য দিয়ে যাচ্ছিল।  এদিকসেদিক ঋণের চেষ্টা করেও সেই ব্যর্থ হল। মাসও শেষের দিকে। রেস্তোরাঁয় বসে সে 'খিদে নেই' অজুহাতে খাওয়াদাওয়া এড়িয়ে যেতে চাইল। শুধুমাত্র একটা পানীয় অর্ডার করল। কিন্তু মেয়েটা বুঝতে পেরেছিল  আসল কারণ কি। সে ক্ষুদ্ধ স্বরে বললো,  দেখ আমার এমন একজনকে দরকার যে আমার দায়িত্ব নিবে, যত্ন করবে। ছেলেটা ভবিষ্যতে এরকম আর ঘটবে না ব'লে কথা দিয়েছিল  কিন্তু শীজা সিদ্ধান্ত নিল তার সাথে আর দেখা করবে না। সে আশা করেছিল অন্তত প্রথম দেখাতে হলেও এরা( হতচ্ছাড়ারা) একটু ভালো কিছু করে দেখাতে পারতো!

কিন্তু সেটা ছিল হামিদকে পাওয়ার অজুহাত মাত্র।হ্যামিতেই, শহরের উঠতি গিটার তারকা। দেখতে শুনতে লম্বাচওড়া,  লিকলিকে  এবং তার লম্বা চুল দেখে শীজা মনে করেছিল ছেলেটা খুবই যৌন আবেদনময়ী হবে। সীজার তন্দ্রাভাব না আসা পর্যন্ত সে বেস গীটার বাজিয়ে যেত। সে ভাবলো হামিদের ধ্যনজ্ঞান এটাই। সে চাইছিল এমন কাউকে যার কাছের তার ইচ্ছেগুলো প্রাধান্য পাবে এবং সবসময় তার ইচ্ছেমতো কাজ করবে। হামিতদেই শীজার প্রেমে গভীরভাবে মগ্ন হয়ে গিয়েছিল  কিন্তু  বাধ সেঁ্ধেছিল তার পেশা।  গীটার বাজানোতে তার অন্যরকম পারদর্শীতা ছিলো এবং কোনভাবেই সে শীজার জন্য গীটার বাজানো ছাড়তে রাজি ছিলো না। শীজা তাকেও ছেড়ে দিল কারণ হামিদকে নিজের জন্য যথেষ্ট মনে হয় নি তার। সে এটা বুঝতে ব্যর্থ হয়েছিল যে আসলে সে কারো উপযুক্ত ছিল না।

হ্যাঁ,  এই মেয়েটাকে সন্তুষ্ট করা আসলেই কঠিন ছিল। সে শুধুমাত্র তার সৌন্দর্যে সন্তুষ্ট ছিল। সে নিজের রূপকে পণ্যের ন্যায় চড়াদামে ব্যবহার ক'রে তার শুভাকাঙ্ক্ষী প্রেমিককুলের সর্বস্ব কেড়ে নিতে চেয়েছিল। পনেরদিনের বেশি কোন সম্পর্কে স্থিতিশীল ছিলো না সে এবং দ্রুতই আরেকটা নতুন সম্পর্কে জড়িয়ে পড়তে সময় নিতো না। কিছুটা  আবেগি হলেও শীঘ্রই সেটা ঝেড়ে উৎসাহী ছেলেদেরকে সে ছুঁড়ে ফেলতো নিঃসংকোচে।

প্রেমিকদের মধ্যে একমাত্র নাজিমের জন্য তাঁর কিছুটা আবেগ ছিল। "বগি" ছিল তার ডাকনাম। এমন পুরুষ যে দুর্গন্ধ  ছড়ায়। যার জন্য সে সবসময় অপেক্ষা করে এসেছিল তাকেই সে পেয়েছিল। যোগ্যতম মানুষটি। সৎ ও মুগ্ধকর। একের ভিতর দুই। সে ছিল অসম্ভব সুন্দর,  স্বচ্ছল, আন্তরিক ও অনুরক্ত। স্বপ্নের রাজপুত্র   ঘুম ভেঙ্গে তার বাস্তব জীবনে এসেছিল যেন। অফুরন্ত সুখ ও অপরিসীম ভালোবাসার বন্ধনে কেটেছিল কিছুদিন। স্বর্গের সকল দ্বার উন্মুক্ত হয়েছিল যেন। সে তাকে 'সুন্দর' ব'লে প্রশংসা করেছিল এবং  তাকে কানে কানে আবেগভরা কথা বলতো। সে প্রতিজ্ঞা করেছিল চিরদিনই তার পাশে থাকবে, এবং প্রতিরাতে ফুল ও দামী উপহার এনে দিতো। এক মাস স্থায়ী সম্পর্কে তার ঘর ভ'রে উঠেছিল উপহারে উপহারে। সে তার প্রতি আবেগী ছিল,ব্যক্তিগত গাড়িতে ক'রে তাকে এদিক সেদিক ঘুরিয়ে আনতো। আসলে সে যেন তাকে চাঁদে নিয়ে যেত, আর ফিরিয়ে আনতো। শীজাও নাজিমকে অন্তর দিয়ে ভালোবাসতো।  এক অন্যরকম অনুভূতি ছিল তার জন্য।  প্রথমবারের মতো সে কোন পুরুষে মজে ছিল। প্রথমবারের মতো সে প্রেমে পড়েছিল। সে সম্ভবত তাকে হারাতে চায় নি।

নাজিমের কোমল হাসিতে বিশ্বাসঘাতকতার গন্ধ পাওয়ার আগ পর্যন্ত শীজা ছিল সবচেয়ে সুখী মেয়ে। একদিন সে নাজিমের ঘরে গিয়ে দেখলো সে একটা মেয়ের বাহুবন্ধনে জড়িয়ে ছিল। কেয়ামত ঘনিয়ে এসেছিল যেন শীজার উপর। চোখের জল শুকানো পর্যন্ত  কেঁদেছিল সে। তার জন্য এটা ছিল প্রথমবারের মতো কোন পুরুষের হাতে ধোঁকা খাওয়া এবং কান্না করা । জীবনে প্রথমবার সে প্রতারিত হয়েছিল। প্রথমবারের মতো সে বুঝতে পেরেছিল যে সে হেরে গেছিল। প্রথমবারের মতো সে হীনমন্যতায় ভুগেছিল।  প্রথমবারের মতো সে বুঝতে পেরেছিল ভালোবাসা কোন খেলা নয়। প্রথমবারের মতো সে বুঝতে পেরেছিল সে যথেষ্ট সুন্দরী নয়। প্রথমবারের মতো সে বুঝতে পেরেছিল সত্যিকারের ভালোবাসা কি। প্রথমবারের মতো সে বুঝতে পেরেছিল আম্মাদে, হাসানে, হামিত্ত্যে, জোয়াদে এবং নিয়াকে কি পরিমাণ কষ্ট পেয়েছিল।

দুনিয়ার সবচেয়ে ক্ষমতাধর অনুভূতির নাম ভালোবাসা। ভালোবাসা হত্যা করে, বাঁচতে শেখায়, উজ্জীবিত ক'রে, মিলিয়ে দেয়, সুখী ক'রে, হাসায়, কাঁদায়, কষ্ট দেয়, সুস্থ ক'রে তোলে, পূর্ণতা এনে দেয়, শুন্য ক'রে দেয়, একতাবদ্ধ ক'রে,  বিচ্ছেদ ঘটায়, এগিয়ে নিয়ে যায়, হার মানতে বাধ্য ক'রে মাঝেমধ্যে জীবনে। শীজা সত্যিকারের ভালোবাসার সন্ধান পেয়েছিল বগিকে পেয়ে। এর আগ পর্যন্ত সে ছিল 'খাও, দাও, ফূর্তি করো' নীতিতে বিশ্বাসী। অন্যদের সে ঠকিয়েছিল । আসলে সে বিশ্বাসঘাতকতা করেছিল নিজের সাথেও।

[মালদ্বীপের বিখ্যাত পত্রিকা হাভিরু ডেইলিতে গল্পটি প্রথম প্রকাশিত হয় ২০০২ সালের ডিসেম্বরের দুই তারিখে।]

 

অনুবাদঃ আলমগীর মোহাম্মদ
শিক্ষক, প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Developed with by
Top