সিডনী মঙ্গলবার, ১৯শে মার্চ ২০২৪, ৫ই চৈত্র ১৪৩০

আস্তিক্যবাদ ভিত্তিক সমাজ ও রাষ্ট্রকলা : সাজিব চৌধুরী


প্রকাশিত:
১১ আগস্ট ২০২০ ২৩:০১

আপডেট:
১৯ মার্চ ২০২৪ ১১:২৮

সাজিব চৌধুরী

 

ধর্ম আমাদেরকে কী দিতে পারলো বা  না পারলো তা নিয়ে আমাদের জল্পনা কল্পনার শেষ নেই। ধর্মকে নিয়ে অনেক বিজ্ঞজন লিখেছেন নানান কিছু। পৃথিবীর সব উপদানের নিজস্ব ধর্ম বা বৈশিষ্ট্য আছে। পৃথিবীর প্রত্যেকটি পদার্থ নিজস্ব বৈশিষ্ট্য নিয়ে এই জগতে নিজের অস্তিত্বকে ধরে রেখেছে। প্রতিটি পদার্থ নিজের বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী নির্দিষ্ট নিয়মের মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছে। মানুষও পৃথিবীর সৃষ্টি জগতের একটি বৈশিষ্ট্যপূর্ণ প্রাণী। মানুষের সাথে পৃথিবীর অন্য উপদানগুলোর পার্থক্য হলো,  মানুষ আত্মসচেতন, বিবেক ও মস্তিষ্ক দ্বারা পরিচালিত। পৃথিবীর সৃষ্টিসমূহ লক্ষ্য করলে বুঝা যায়, পৃথিবীতে মানুষ একমাত্র প্রাণী (এই পর্যন্ত আবিষ্কৃত) যারা নিজের বুদ্ধি বিবেচনা দিয়ে পৃথিবীকে অনেকটা নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হয়েছে। মানুষের মধ্যে বুদ্ধির প্রয়োগ ও বিবেচনা করার শক্তি আছে বলেই, মানুষের মধ্যে ভাল ও মন্দ দুটি দিক লক্ষ করা যায়।

মানুষের মধ্যে বিদ্যমান এই দুটি দিক তার ধর্ম বা বৈশিষ্ট্যের পরিচায়ক। মানুষের এই মন্দ বৈশিষ্ট্য যেমনটি তার নিজের জন্য বিপদজনক তেমনটি দেশ ও সমাজের জন্যেও ক্ষতিকারক।  মানুষের এই মন্দ বৈশিষ্ট্য থেকে নিজেকে বাঁচাতে প্রাচীন কাল থেকে জ্ঞানী ও সমাজ সংস্কারকগণ তার উপর আরোপ করে আসছে কিছু নিয়মকানুন। প্রকৃত অর্থে, একজন মানুষকে দুই ধরণের ধর্মের অধিকারী হতে হয়। একটি হলো জন্মগত ধর্ম বা বৈশিষ্ট্য, আরেকটি হলো সমাজ কর্তৃক জ্ঞানীগুণী দ্বারা নির্ধারিত ধর্ম বা বৈশিষ্ট্য।  দ্বিতীয়টিকে আমরা সামাজিক নিয়মনীতি,  সংস্কৃতি বা প্রথা হিসাবেও আখ্যা দিতে পারি। পৃথিবীতে মানুষের জন্য সমাজ কর্তৃক নির্ধারিত বেশ কিছু স্বীকৃত ধর্মবাদ বা ধর্মদর্শন প্রচলিত। এরমধ্যে কিছু হাজার হাজার বছরের পুরনো ধর্মবাদ। আবার মাঝে মাঝে নতুন নতুন ধর্মবাদেরও সৃষ্টি হচ্ছে। বর্তমান বিশ্বে প্রচলিত ধর্মবাদগুলো নিয়ে নানান ধরণের ইতিবাচক ও নেতিবাচক মতবাদেরও শেষ নেই। আমার প্রশ্ন হলো এই ধর্মদর্শনগুলো পৃথিবীর মানুষের জন্য আদৌ প্রয়োজন ছিল কিনা বা প্রয়োজন আছে কিনা। নিরপেক্ষ দৃষ্টিভঙ্গি থেকে বিষয়গুলো আলোচনা করা খুবই প্রয়োজন। পৃথিবীর নির্দিষ্ট কোন এলাকার মানুষদেরকে বিভিন্ন ধরণের হানাহানি, দাঙ্গা-হাঙ্গামা ইত্যাদি থেকে রক্ষা করতে, উদ্ভূত পরিস্থিতিকে নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে ঐ সমাজের জ্ঞানীগুণীজন সৃষ্টি করেছেন কিছু নিয়মকানুন, সংস্কৃতি ও প্রথা। ঐ নিয়মকানুনগুলো ঐ সমাজের মানুষেরা অনুসরণের মাধ্যমে সামাজিক শৃঙ্খলা অনেকটা ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছিলেন। আমরা যদি নাস্তিক্যবাদ ও আস্তিক্যবাদকে গুলিয়ে না ফেলি তাহলে ঐ নিয়মনীতিগুলো পরবর্তীতে এক একটি ধর্মে পরিণত হয়েছে। আমার আলোচনার বিষয় পৃথিবী সৃষ্টির পেছনে একজন মহান স্রষ্টা আছেন কি নেই তা নিয়ে নয়। আলোচ্য বিষয় হলো এসব ধর্মগুলো স্রষ্টা কর্তৃক প্রেরিত নবী বা অবতার দ্বারা হয়েছে কি, হয়নি সেই প্রমাণে না গিয়ে এই ধর্ম মতবাদগুলো আদৌ সমাজের কোন পরিবর্তন আনলো কিনা। আধুনিক সমাজ ব্যবস্থার গোড়াপত্তন কোত্থেকে হলো? বর্তমানে পৃথিবীর মানুষ সভ্যতার কথা বলছি। সেই সভ্যতার গোড়াপত্তন কোথা থেকে হলো? ইতিহাস পর্যালোচনায় দেখা যায়,

পৃথিবীর বড় বড় সভ্যতাগুলো গড়ে উঠেছে এক একটি ধর্মমতবাদের ভিত্তিতে। ধর্মকে আশ্রয় করে গড়ে উঠেছে শিক্ষা, সংস্কৃতি ও সভ্যতা।

তাহলে, স্পষ্টত বলা যায়, ধর্মের নিয়মকানুনগুলোই পৃথিবীর মানুষকে দিয়েছে বিবেক, দিয়েছে শৃঙ্খলিত পথ, দিয়েছে সমাজ ব্যবস্থা। আবার আরেকটি বিষয় হলো,  এই ধর্মগুলির মূল ভিত্তি হলো আস্তিক্যবাদ। অতএব, আমরা এই সিদ্ধান্ত নিতে পারি যে, আস্তিক্যবাদ ভিত্তিক ধর্ম মতবাদ পৃথিবীকে দিয়েছে নতুন একটি রূপ, যে রূপে পৃথিবী হয়েছে আরও সুন্দর,  আরও শৃঙ্খলিত,  আরও নিয়ন্ত্রিত। তবে, বলার অপেক্ষা রাখে না যে, হাজার হাজার বছর ধরে মানুষের হৃদয়ে লালিত আস্তিক্যবাদ ভিত্তিক ধর্মগুলো স্বীকার হচ্ছে নানা ধরণের প্রতিকুল অবস্থার। এই ধর্মগুলোর চারপাশে অবস্থান নিচ্ছে নাস্তিক্যবাদ।

 

প্রশ্ন হলো আস্তিক্যবাদ ভিত্তিক ধর্মীয় আচার-আচরণ, নিয়মনীতিগুলো কি আমাদের পালন করা উচিৎ, নাকি উচিৎ নয়? আমার উত্তর হলো উচিত। ধর্মীয় মতাবাদগুলো যেহেতু সমাজের মানুষের কল্যাণের জন্য, প্রয়োজনে এই ধর্মীয় মতামতগুলো কিছুটা সংস্কারের মাধ্যমে আরও গ্রহণযোগ্য ও যুক্তিনির্ভর করতে পারলে ধর্মীয় আচার-আচরণ মানুষকে নিশ্চিতভাবে সামাজিক শান্তি ও সমৃদ্ধি প্রদান করতে সক্ষম হবে। পৃথিবীর যে কয়টি প্রতিষ্ঠিত ধর্মীয় মতবাদ আছে কোনটিতেই মানুষের অকল্যাণের কথা বলা হয়নি। তাহলে কেনইবা আমরা ধর্মীয় মতবাদের বিরোদ্ধে কথা বলবো? আমরা কি একবার ভেবেছি, এই ধর্মীয় মতবাদগুলো গড়ে না উঠলে পৃথিবীর অবস্থা কেমন হতো। পৃথিবীর নানা জ্ঞান বিজ্ঞানের মূল উৎসই হলো ধর্মীয় মতবাদ।

সেই ধর্মীয় মতাবাদগুলোই হলো মানুষের আদি জ্ঞান। পৃথিবীর প্রায় সকল সাহিত্যের সূত্রপাত ঘটে ধর্মকে কেন্দ্র করে। মহাকাশ বিজ্ঞান থেকে শুরু করে আজকের আধুনিক বিজ্ঞান ধর্মের হাত ধরেই গোড়াপত্তন হয়েছে। প্রকৃত অর্থে পৃথিবীর জ্ঞান বিজ্ঞানের আদি ক্ষেত্রই হলো ধর্ম তথা ধর্মীয় মতবাদ।

যে ধর্মীয় মতবাদগুলো মানব সভ্যতাকে এ পর্যায়ে নিয়ে এসেছে,  নিঃসন্দেহে এই মতবাদগুলো যারা সৃষ্টি করেছেন তাঁদের অবদানের কথা স্মরণ করা এবং সমাজে তাঁদেরকে একটি বিশেষ মর্যাদায় স্থান দেওয়া নিশ্চিতভাবে আমাদের করণীয় একটি কাজ।  সভ্যতা যাদের কাছে ঋণী তাঁদেরকে নবী, অবতার বা দেবতা রূপে স্বীকার করতে আমাদের আপত্তি কোথায়?  আমি মনে করি, তাঁদেরকে স্ব-স্ব ধর্মীয় সংস্কৃতির ভিত্তিতে যথাযথ মর্যাদায় আসীন করলে লাভ বৈকি ক্ষতির আশংকা নেই।

আমরা দেখছি, কিছু মানুষ আস্তিক্য ও নাস্তিক্যবাদের নামে পরস্পরকে ইচ্ছেমত গালিগালাজ ও কাদা ছুড়াছুড়িতে মত্ত আছে। এমনকি ধর্মীয় মতবাদদানকারী নবী, রসুল, অবতার, মহাপুরুষদের নিয়ে নানা ধরণের কুৎসা রটাতেও তারা পিছপা হচ্ছে না।

 

যুক্তির খাতিরে বলছি, ধর্মীয় মতবাদের ভিত্তিতে যদি সমাজ গড়ে না উঠে, তবে আমরা কিসের ভিত্তিতে গড়ে তুলবো।

নাস্তিক্যবাদের ভিত্তিতে কি আমরা আমাদের সমাজ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে পারি? ধরে নিলাম একটা পুকুরের কথা।

পুকুরের যে পরিমান পানি ও অন্যান্য উপাদান আছে যা পুকুরে বেড়ে উঠা মাছ বা অন্যান্য প্রাণীদের জন্য বসবাস উপযোগী, যে পরিবেশে প্রাণীগুলো নিজেকে খাপ খাইয়ে নিয়েছে। হঠাৎ কেউ এসে পুকুরের সব উপদানগুলোকে পরিবর্তন করে দিয়ে ভিন্ন ভিন্ন উপদান দিয়ে পুকুরের পরিবেশেকে নতুনভাবে সাজিয়ে একই প্রাণীগুলো পুকুরে ছেড়ে দিল। ভাবুন তো একবার, প্রাণীগুলো কি বেঁচে থাকবে?

আপনিও হয়তো একমত হবেন, কোনভাবেই প্রাণীগুলো বাঁচতে পারে না।

একইভাবে বর্তমানে বিদ্যমান আস্তিক্যবাদ ভিত্তিক ধর্মব্যবস্থার সামাজিক পরিবেশকে নাস্তিক্যবাদ ভিত্তিক সমাজ ব্যবস্থায় রুপান্তর করলে সমাজের মানুষগুলোর কি অবস্থা হবে? নিশ্চয় সমাজের মানুষগুলোর আত্মিক মৃত্যু হবে।

বরং ওটা করা সম্ভব যে, আস্তিক্যবাদ ভিত্তিক ধর্মীয় সমাজ ব্যবস্থাকে তার কাঠামো ঠিক রেখে এই ব্যবস্থার দুর্বলতাগুলো খুঁজে বের করে উপযুক্ত সংস্কার সাধন করা। এতে সমাজের মানুষগুলো আরও বেশি সজীব হবে, আরও বেশি উজ্জীবিত হবে। এক্ষেত্রেও কি নাস্তিক্যবাদ মার খাচ্ছে না?

এতকিছুর পরেও কেন পৃথিবীতে নাস্তিক্যবাদ লক্ষ্য করা যাচ্ছে? সেক্ষেত্রে আমি স্পষ্টত বলবো, তা আস্তিক্যবাদীদের উদাসীনতার কারণে।

পৃথিবীতে যে সকল আস্তিক্যবাদ ভিত্তিক ধর্ম ব্যবস্থা আছে, সেই ধর্মগুলোর মধ্যে নেই পরস্পর ভাতৃত্বসূলভ আচরণ।

প্রতিনিয়ত লেগে আছে এক ধর্মের মানুষের সাথে আরেক ধর্মের মানুষের ধর্মীয় সংঘাত। এক ধর্মের মানুষ আরেক ধর্মের মানুষকে বলছে, আমার ধর্ম বড় বা আমার ধর্ম ছাড়া অন্য কোন ধর্মে ঈশ্বরের সান্নিধ্য লাভ করা অসম্ভব। আবার কেউ কেউ ধর্ম প্রচারের নামে করছে নানা ধরণের কুকর্ম। আবার লক্ষ করা যায়, একই ধর্মীয় মতবাদের বিশ্বাসীদের মধ্যে নানাবিধ বিভক্তি। গোত্রবাদ, সম্প্রদায়বাদ, বর্ণবাদ, গুরুবাদসহ এই ধরণের নানা বাদ-বিবাদে আস্তিক্যবাদ নির্ভর ধর্মসমূহ জর্জরিত। এছাড়া, ধর্মীয় উগ্রবাদের কারণে আস্তিক্যবাদ নির্ভর ধর্মগুলোকে অনেকে ভয় পেতে শুরু করেছে।  স্বাভাবিকভাবেই সমাজগুলো হয়ে উঠছে অশান্ত, সমাজের মানুষগুলো শান্তির অন্বেষণে হচ্ছে বিপথগামী। কেউ কেউ এক ধর্ম থেকে আরেক ধর্মে লাফ দিচ্ছে, আবার কেউ কেউ নাস্তিক্যবাদে ঝুঁকে পড়ছে।

নাস্তিক্যবাদ যে সমাজে শান্তি আনতে সক্ষম হবে তার সম্ভবনা কতটুকু?

নাস্তিক্যবাদে মানুষ নিজের বর্তমান অস্তিত্ব ছাড়া অন্য কোন অস্তিত্বে বিশ্বাসী নয়। নিজের অস্তিত্বে বিশ্বাসী নয় মানে ঈশ্বর বা পরাকালেও বিশ্বাসী নয়। যার মধ্যে পরকালের ভয় নেই, যে কিনা জাগতিক সুখ-শান্তি ছাড়া অন্য কিছু বুঝে না, সে চাইলে সুযোগ পাওয়া সাপেক্ষে যেকোন ধরণের খারাপ কাজ করতে পারে। এমনকি সে ইচ্ছে করলে একজন মানুষকে হত্যা করে তার সবকিছু নিজের করে নিতে পারে,  ইচ্ছে করলে সাধারণ প্রাণীর মতো আচরণও করতে পারে। আস্তিক্যবাদে যে মাত্রায় উগ্রবাদ কাজ করে তারচেয়ে বেশি উগ্রতা কাজ করার সম্ভবনা উড়িয়ে দেওয়া যায় না নাস্তিক্যবাদে।

হয়তো তারা বলতে পারে, দেশ, সমাজ চলবে আইন বা সংবিধানের মাধ্যমে। আস্তিক্যবাদে আছে পরকালের ভয়, কর্মফল ভোগের মতো কিছু বিষয়।

যেখানে পৃথিবীর অধিকাংশ দেশ রাষ্ট্রীয় সংবিধান ও আস্তিক্যবাদ নির্ভর সমাজ ব্যবস্থায় পরিচালিত হয়েও বিভিন্ন সংঘাতে লিপ্ত হচ্ছে, সেক্ষেত্রে নাস্তিক্যবাদের মতো নিজের অস্তিত্ব ও কর্মফল উদাসীন মতবাদের মাধ্যমে মানুষকে কতোটা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে।

পৃথিবীর মানুষগুলো প্রধানত দুটি ভাগে বিভক্ত হচ্ছে, ১/ আস্তিক্যবাদী, ২/ নাস্তিক্যবাদী। মধ্যমপন্থী অনেক মানুষ আছে যারা পৃথিবীকে সেভাবে নিয়ন্ত্রণ করছে না বা তারা অনেকসময় সুবিধাবাদী হয়ে দল ভারির দিকে ঝুঁকে পড়ে।

লক্ষ করা যায়, পৃথিবীর সকল নাস্তিক্যবাদী মানুষ একই চেতনায় বিশ্বাসী যদিও তাঁদের সমাজ, দেশ ও সংস্কৃতি ভিন্ন ভিন্ন। তাঁদের মধ্যে একাধিক মতবাদ গড়ে উঠেনি। কিন্তু, আস্তিক্যবাদ হাজার হাজার বছরের পুরনো এবং সমাজ, সভ্যতা বিকাশ ও জ্ঞান-বিজ্ঞান প্রসারের আদি ক্ষেত্র হওয়া সত্ত্বেও পৃথিবীর সমস্ত আস্তিক্যবাদীরা এক সুরে, এক চেতনায় কথা বলতে পারছে না। ধর্ম ভিন্ন হোক তাতে কি হয়েছে? সবাই তো একই আস্তিক্যবাদ মতবাদে বিশ্বাসী।

পৃথিবী ব্যাপি আস্তিক্যবাদীরা এক হতে না পারলে সমাজে শৃঙ্খলা দিন দিন হ্রাস পাবে। ফলস্বরূপ, বৃদ্ধি পাবে নাস্তিক্যবাদীর সংখ্যা।

আবার নাস্তিক্যবাদের উত্তানে সমাজ ব্যবস্থা সম্পূর্ণরূপে শ্রীহীন হওয়ার সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া যায় না।

তাহলে, আমাদের করণীয় কি?

আমাদের করণীয় হলো, পৃথিবীর সকল আস্তিক্যবাদী ধর্মগুলোকে একীভূত করা।

পৃথিবীর সকল আস্তিক্যবাদী ধর্মগুলোকে এক পতাকা তলে নিয়ে আসা। সব ধর্মের উগ্রবাদকে নির্মূল করে আস্তিক্যবাদ ধর্ম নামে নতুন একটি মতবাদ প্রদান করা। যে মতবাদে সবাই স্ব-স্ব জন্মগত ধর্ম পালন করলেও তাঁদের একটিমাত্র পরিচয় হবে আস্তিকবাদী। তারা পরস্পর ভাতৃত্বের বন্ধনে আবদ্ধ হবে। ধর্ম ভিন্ন হলেও তারা একটি নির্দিষ্ট এলাকায় একই সমাজভূক্ত হবে। ধর্মীয় সংস্কৃতি ভিন্ন ভিন্ন পালন করলেও স্রষ্টা মতবাদে একই সম্প্রদায়ভূক্ত হিসাবে গণ্য হবে। একইসাথে রাষ্ট্রধর্ম হিসাবে আস্তিক্যবাদকে উল্লেখ করা যেতে পারে।

এমনকি ব্যক্তির ধর্ম পরিচয়ের ক্ষেত্রে শুধুমাত্র আস্তিক্যবাদকেই সনাক্ত করা যেতে পারে। কোন ব্যক্তি ধর্ম পরিচয়ে নাস্তিক্যবাদ উল্লেখ করতে চাইলে সেটি তার একান্ত ব্যক্তিগত ব্যাপার বলে গণ্য হবে।

আর এইভাবে যদি পৃথিবী ব্যাপি আস্তিক্যবাদীদের মধ্যে সংঘাত, হানাহানি লেগে থাকে একসময় যে হারে নাস্তিকবাদী বেড়ে চলেছে, সমাজ ব্যবস্থা নাস্তিকবাদীদের নিয়ন্ত্রণে চলে যাবে।

ফলে সমগ্র পৃথিবী ভোগবিলাসীতার খপ্পরে পড়ে উদাসীন ও বিশৃঙ্খল  সমাজ ব্যবস্থা গড়ে উঠবে। আমি মনেকরি, আস্তিক্যবাদীদের এখনই সচেতন হওয়া উচিত। আস্তিক্যবাদীরা যদি নিজেদের মধ্যে সংঘাত, হানাহানি, নিজ ধর্মকে বড় করে দেখার মতো মানসিকতাগুলো ত্যাগ করতে না পারে, পৃথিবী পতিত হবে ঘোর অন্ধকারে। তাই যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আস্তিক্যবাদীদের একই প্লাটফরমে কাজ করা উচিত। আমরা কি ভাবছি, পৃথিবীকে নাস্তিক্যবাদীদের হাতে তুলে দেওয়াই শ্রেয়?

তা যদি না হয়, কেন আস্তিক্যবাদীরা নিজেদের মধ্যে সংঘাতে লিপ্ত হবে?

 

সাজিব চৌধুরী
কবি ও প্রাবন্ধিক

 

এই লেখকের অন্যান্য লেখা



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Developed with by
Top