সিডনী মঙ্গলবার, ১৯শে মার্চ ২০২৪, ৫ই চৈত্র ১৪৩০

দ্বিতীয় প্রেম : দীলতাজ রহমান


প্রকাশিত:
১১ আগস্ট ২০২০ ২৩:০৪

আপডেট:
১৯ মার্চ ২০২৪ ১৬:১৭

 

কবি জায়েদ হোসাইন লাকী প্রথম প্রেম নিয়ে একটি গল্প লিখে দিতে বলেছেন। খুব খেটেখুটে গল্পটা লেখার পর মনে পড়লো, মারাত্মক ভুল করে ফেলেছি। ওটা তো আসলে দ্বিতীয় প্রেমের গল্প! প্রথম প্রেম যখন অনুভূত হয়েছিলো, তখন আমার বয়স আট। ওই যে ঊনসত্তরে যখন চাঁদের মাটিতে মানুষের পা রাখার খবর সোরগোল ফেলেছিলো। অবশ্য মানুষ যদি চাঁদে গিয়ে থাকে। কারণ কেউ কেউ বলেন, সেই অতো বছর আগে মানুষ যদি চাঁদে গিয়েই থাকতো, তাহলে মানুষের যা স্বভাব, এতোদিনে তারা সে চাঁদের সাথে সেতু বানিয়ে ফেলার কথা!
যা হোক, হিসেব মতে তখন আমার বয়স আটই হয়। কিন্তু এখনকার চেয়ে তখনকার শিশুরা খোলা পরিবেশে মানুষ হওয়ার কারণে সম্ভবত তাদের সংবেদনশীলতা অক্ষুণ্ন ছিলো। নাহলে এখনকার আট বছরের শিশুর তো এই অনুভূতি হওয়ার কথা নয়! আমরা তখন খুলনার দৌলতপুরে। ওখানে আমাদের পাশের বাড়ির আকতার নামে পনেরো, ষোলো বছরের এক ডাঙর ছেলে সব সময় আমাকে টিজ করতো! পানিতে নামলে হৈচৈরত এক দঙ্গল ছেলেমেয়ের ভিড় থেকে আমাকেই ঠ্যাং ধরে সে টেনে পানির অনেক ভেতরে নিয়ে কচলাকচলি করতো। তখন এতে আমার দম যায়যায় দশা হতো! শেষ পর্যন্ত ওকে আমার যমের মতো ভয় নয় শুধু, কেঁচোর মতো ঘেন্নাও হতো।
একবার কি করলাম, ওর একটা বিড়াল ছিলো। ভীষণ আদর করে পুষতো সে। সেই বিড়ালকে ধরে এনে ভাড়াটিয়া চলে যাওয়া এক খালি ঘরের আড়ার সাথে বেঁধে সাঙ্গপাঙ্গ নিয়ে পিটিয়ে মেরেই ফেললাম।
মরে যখন গেলো, সে মরা বিড়াল দেখে আমার মা’র আত্মারাম খাঁচা ছাড়া হওয়ার দশা! মা আমাকে বকতে বকতে বলতে লাগলো, দেখিস, আকতার কী করে! কারণ আকতাররা ওখানে আমরা তো আমরা, আমাদের বাড়িওয়ালাদের থেকেও প্রভাবশালী।
তবু মা’কে তো বলতে পারি না, ও আমাকে কিছু একটা করে বলেই তো আমি তার প্রতিশোধ নিলাম!
সত্যি সত্যি কিছুক্ষণের ভেতর আকতার কেঁদেকেটে ভাসা চোখে সেখানে এসে হাজির! পুঁচকেপাচকাদের কেউ একজন তাকে গিয়ে নিশ্চয় বলে দিয়েছিলো। নাহলে লাশ গুম করার আগে সে এলো কি করে, আজো ভেবে পাই না! আকতার কারো সাথে কোনো কথা না বলে, হাউমাউ করে কেঁদে উঠে তার বিড়ালের লাশ দু’হাতে তুলে নিয়ে চলে গেলো। এরপর আমি আর পারলে ঘর থেকে বেশি দূরে যাই না। পুকুরে গোসল করতে তো যাই-ই না। কিন্তু অনেকদিন পর, পরিস্থিতি একটু থিতিয়ে এলে এক অসময়ে, যখন পুকুরে কেউ ছিলো না, তেমন এক টইটুম্বর লগ্নে পুকুরের পাড় দিয়ে যেতে আমাকে যেন সে পুকুর তার সমস্ত জলের স্ফটিক ইশারায় আয় আয় করে ডাকতে লাগলো।

পানির প্রতি আমার অসম্ভব একটা টান ছিলো। যা এখনো আছে। আমি সুযোগ পেলেই মা’কে লুকিয়ে ইচ্ছে মতো ডুবিয়ে, সাঁতার কেটে বাসায় ফিরতাম। মনে করতাম মা টের পাবে না। কিন্তু শরীরের খরখরে অবস্থা দেখে মা বিষয়টা বুঝতে পারতো। আর ইচ্ছেমতো মার দিতো!
সেই দুপুরেও আমি আমার হাফপ্যান্টটি সিঁড়িতে রেখে সাঁতরে একটু শুধু কয়েক গজ দূরে মাত্র গেছি। তখনো একটি ডুবও দেইনি। এর ভেতর দেখি, বিশাল পুকুরটির যেই পারে আকতারদের বাড়ি, সেই পাড় থেকে বড় বড় পাতার একটি ডুমুর গাছ এমনভাবে পুকুরের ভেতর ঝুলে পড়েছে, যেন কলঙ্কের ভারে সে ডুবে মরতে চাইছে! ছাতার মতো সেই ডুমুর গাছের একেকটি পাতার ফাঁক দিয়ে দেখি জীবননান্দ দাশের চিত্রকল্পে আঁকা বিশাল এক পেঁচার মতো আকতারের ভয়ঙ্কর মুখ ঠা ঠা রোদে চকচক করছে!
ভয়ে আমার বুক চৈত্রের মাঠের মতো চৌচির হয়ে গেলো অথৈ পানিতে থেকেও! আমি কিভাবে যে পুকুর থেকে উঠলাম, মনে নেই। তারপর সিঁড়ি থেকে প্যান্টটা হাতে তুলে নিয়ে বাসার দিকে ভোঁ দৌড় দিলাম। আর মুহূর্তে একটা তীর ছুটে এসে আমার বাম হাঁটুর নিচে বিঁধে গেলো!

এখন বুঝি তীরটা আকতার অতো মসৃণ করে আমার বুকে মারার জন্যই পাকা বাঁশের শক্ত চটা চেঁছে বানিয়েছিলো। তীরটা আমার হাঁটু থেকে টানাটানি করে খুলতে আমাকে বেশ বেগ পেতে হয়েছিলো। দুপুরটা এতো নিজঝুম ছিলো, যে একটা মানুষ সেখানে কোথাও ছিলো না, যে দৌড়ে এসে আমাকে সহযোগিতা করে! এখনো মনে আছে, রক্তশূন্য মুখ কিন্ত পা রক্তে মাখামাখি। উঠোনে গিয়ে দাঁড়াতেই আমাকে ঘিরে ধরলো অনেকে। আমি শুধু বলতে পারলাম, আকতার...। ক’দিনধরে বাড়ি সরগরম হয়ে থাকতো মানুষে, এর ভেতর একদল উস্কাতো মামলা করতে। আরেক দল হাতে-পায়ে ধরতো, আমরা যেন কোনো আইন-আদালত না করি!

আয়ুর শেষ সীমানায় হলেও আমলটা তো তখন পাকিস্তানের। একটু রক্তাক্তিতেই তখন খবর হয়ে যেতো। তাই শালিস-দরবার, মাফ চাওয়া-চাওয়ির ভারে পরিবেশ ভারী হয়ে উঠলো। আকতারকে এ জীবনে আর আমি চোখের সামনে দেখিনি। ওকে বোধ হয় কোথাও পাঠিয়ে দেয়া হয়েছিলো।
এই আকতারেরই বড় ভাই হায়দার। নায়কের মতো ছিলো চেহারা, চাল-চলন। তখন মাত্র কলেজে উঠেছে। খুলনার মহসীন কলেজে পড়তো! তাকে দেখলে আমার খুব ভাল লাগতো। সেদিন রাতে হারিকেন হাতে করে আকতারের মা-বাবা আর বড়ভাই হায়দার এসেছিলো আমাকে দেখতে। আর কেবল তখনি মনে হয়েছে, ভালো করেছে, আকতার আমার পায়ে তীর মেরেছে! নাহলে হায়দার কোনোদিনও আমার পায়ে হাত দিয়ে দেখতো না!
হায়দারকে যেদিন কাছে থেকে দেখলাম, বুঝলাম কাছে থেকে দেখতে সে আরো সুন্দর! কি সুন্দর করে সবার সাথে কথা বলছে! আমোকে চোখে ঝিলিক মেরে বললো, ‘তুমি কেন ওর বিড়াল মেরেছো? সেটাও কিন্তু কম অপরাধ নয়! আকতার তোমাকে তীর না মারলে আমি তোমাকে জেলে ঢুকিয়ে দিতাম। ও, তোমার তো আবার জেল হতো না। তুমি ছোট মানুষ!’
হায়দারের এমন অনুযোগে তার প্রতি আমার ভালোলাগাটা আরো গাঢ়ো হয়ে উঠলো।
আকতারের দাদি মারা গেলে ওর দাদা আরেকটা বিয়ে করেছিলো। সেই মহিলার কোনো ছেলেমেয়ে ছিলো না। তার মাথায় ছিট ছিলো। কখনো তাকে পাগলামি করতে দেখিনি অবশ্য। তবু পাগল না হলে আকতারের মার হাতে বড় বড় চেলাকাঠের অমন মার খেয়েও, কেন সে পড়ে থাকতো ওই বাড়ি? তবু কেন হায়দার, আকতার ও ওদের ছোট ভাই রিয়াজুলকে সে অকারণে অতো ভালবাসতো? কেন কারো কিছু কুড়িয়ে পেলে তাকে খুঁজে জিনিসটি পৌঁছে দিয়ে আসতো? পাড়া-প্রতিবেশীও সবাই তাকে পাগলি বলেই ডাকতো। যেহেতু আকতারের বাবা স্বয়ং তার মা’র অবর্তমানে বাবার বিয়ে করে আনা এই দ্বিতীয় স্ত্রীকে খুঁজে না পেলে নিজেই ‘পা-গ-লি-ই...’ বলে সুর করে ইতিউতি ডেকে বেড়াতো!
পাগলি ওদের সব কাজ করে দিতো। কুড়াল দিয়ে আস্ত গাছ থেকে লাকড়ি বের করা থেকে, পুকুরে নিয়ে আকতারের মার একেক বোঝা পানও নরম ন্যাকড়া দিয়ে ডলে ডলে ধুতো। প্রায় পঞ্চাশ বছর আগের ঘটনা হলেও আজো পান ধুতে হলে আমি সেই আকতারের দাদির মতো করে ধুই। যাকে হায়দার ছাড়া আর সবাই বলতো পাগলি। হায়দার একাই বলতো দাদি! এজন্যই কি হায়দারকে আমার ভালো লাগতো কি না, জানি না!
পাগলির হাত-পা সব সময় সাদা দগদগে থাকতো। মানে সারাক্ষণ থালা-বাসন মাজা, কাপড়-চোপড় ধোয়া আর কাঁচা মাটির বাড়িঘর লেপাপোছা করতে করতে ঘা হয়ে থাকতো!
সত্তরের শেষের দিকে আমরা ঢাকা চলে আসি। এর ভেতর খুলনার সাথে আর কোনো যোগাযোগই নেই। ২০০৯ সালে কোরবানী ঈদের রাতে আমার ছোট মেয়ে ফারজানা আমাকে বললো, ‘ আম্মা, আমি কাল আমার অফিস থেকে খুলনা যাবো, তুমি কি আমার সাথে যাবে? গেলে সকালে রেডি থেকো!
সকালে ঘুমের ভেতর টের পেলাম আমার মেয়ে ফারজানা সুটকেস টেনে বেরিয়ে যাচ্ছে। আমি মাথা তুলে বললাম, তুমি না বললে আমাকে নিয়ে যাবে?
ফারজানা বললো, তুমি তো রেডি হওনি? আমাকে নিতে নিচে গাড়ি চলে আসছে!
আমি মুহুর্তে শাড়িটা পাল্টে ব্লাউজ পাল্টাতে আর সাহস পেলাম না। চাবিটা নিচে রিসিপশনে রেখে আমার ছোটবোন নাসিমাকে ফোন করে বললাম, আধকাঁচা মাংসসহ ঘরের যা অব্যাবস্থাপণায় আছে, সব ঠিকঠাক করে রেখে যেতে।
শ্যামলী থেকে বাসে উঠে বিকেল নাগাদ খুলনায় নেমে, ওখানকার ওয়েস্টিন হোটেলে গিয়ে উঠলাম। কিছুক্ষণের ভেতর দেখলাম সেখানে খুলনা ইউনিভার্সিটির রেজিস্ট্রার সৈয়দ মিজানুর সেখানে এসে হাজির। বয়সে তিনি আমার সমান। তবু তাকে চাচা ডাকি। কারণ কবি সৈয়দ হায়দারের তিনি ভাতিজা! তাই ভাতিজা না ডেকে চাচাই ডাকি। ভীষণ ব্যস্ততা তখন তার। আগামী দুদিনেও সময় দিতে পারবেন না। তাই একঘন্টা সময় আমার জন্য হাতে নিয়ে এসেছেন।
এই লেখাটি সেই তখন লিখলে অনেকটা ঠিকভাবে লিখতে পারতাম, তিনি একঘন্টা চুক্তিতে রিক্শা ভাড়া করে আমাকে কোথায় কোথায় নিয়েছিলেন। আর তর সাথে ফোনে নিশ্চয় কথা হতো। নাহলে আমি গিয়েছি, সে খবর তিনি পেলেন কী করে! তবে এটা ঠিক মনে আছে, সেই একঘন্টা সময় অভূতপূর্ব কেটেছিলো।
সকালে আমাকে তেমনি আমার ঘুমের ভেতর আমার ছোট মেয়ে বলতে লাগলো, আম্মা, আমি আমার কলিগদের সাথে বেরিয়ে যাচ্ছি। ফিরতে রাত হবে! তুমি তোমার ছোটবেলায় এখানে কোথায় কোথায় ছিলে, খুঁজে বের করে বেড়িয়ে এসো!
একা কোথায় ঘোরা যায়? হোটেলের নিচে রিসিপশনে গিয়ে রিসিপশনিস্টদের বললাম, আমি এখানে কোথায় ঘুরতে পারি? ওরা আমাকে বললো, এখান থেকে বিশটাকা রিকশা ভাড়া দিয়ে রূপসা ব্রীজের গোড়ায় চলে যান। তারপর দেখতে দেখতে হেঁটে পার হয়ে নদীর ওপারে চলে যান। সারাদিন ওপারের শান্ত পরিবেশে ঘোরাঘুরি করেন। আসার সময় নৌকোয় করে পার হয়ে এইপাশে আসেন।

এপাশে আসতে ডিসির বাংলোর সামনে নৌকা ভেড়ালো। কারণ ডিসির বাংলো তখন খালি ছিলো। দুপুরের পর থেকে আমি ওই বাংলোর শূন্য আঙিনাতে ঘুরছিলাম। শানবাঁধানো একটি বকুল গাছের গোড়ায় দেখলাম লেখা রয়েছে, বঙ্কিমচন্দ্র তার কপাল কুণ্ডলা এই বকুল গাছের নিচে বসে লিখেছেন!’ আমি অভিভূত হয়ে ক’খানা সরু ডাল ভেঙে মহৎ স্মৃতি হিসাবে হাতে নিলাম। তারপর সন্ধ্যা নামতে নামতে হোটেলে ফিরে গেলাম। পরদিন তেমনি উদ্দেশ্যহীনভাবে ঘুরতে একটি রিকশা নিলাম। দৌলতপুর কোন বাড়িতে ছিলাম তা তো ভুলে গেছি। জানতাম না, রিকশাওয়ালাকে কি বলতে হতো।
আগেরদিন ডিসির বাংলো থেকে যখন ওয়েস্টিন হোটেলে যাই, রিকশাওয়ালাকে বলেছিলাম, আমি আগামীকাল দৌলতপুর যেতে চাই। কিন্তু এলাকা চিনি না। তবে মুক্তিযুদ্ধের আগে দেখে গেছি তো, বিশাল এলাকাজুড়ে গোলপাতার ঘর। মাঝখানে দীঘির মতো একটা পুকুর। আর একটি মাত্র টিউবয়েল ছিলো। রাস্তার পাশে একটা রাইস মিল ছিলো। বাড়িটাকে আতিয়ার মিয়ার বাড়ি বলতো। বাড়িওয়ালার কোনো ছেলেমেয়ে ছিলো না।
আমারই সমবয়সী রিকশাওয়ালা বললো, ‘হ, চিনছি! আতিয়ার মিয়া যুদ্ধের আগেই আরেকটা বিয়ে কইরেছেলো। এহন তিনি নাই। এই ঘরে পাঁচ ছাওয়াল-মাইয়ে। তারা ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার অইছে বালো আছে তারা!’ আমি বললাম, ধুর তুমি চেনোনি! কারণ ওই বাড়িওয়ালা তার পাটরানীর মতো স্ত্রী’র দাপট টপকে আরেকটা বিয়ে করতে পারে, এ তখনকার যে কারো ভাবনার অতীত।
বিশাল এলাকাজুড়ে গোলপাতার ঘর হলেও, আতিয়ার মিয়া ও তার স্ত্রী জাহানারা বেগমের জন্য একতলা একটি বিল্ডিং ছিলো, যাতে বিশাল বড় বারান্দা ছিলো। সামনে ছিলো গোলাকার এক গোলাঘর। অন্যপাশে গোয়ালভরা গরু। আতিয়ার মিয়া বলে সবাই ডাকতো। কিন্তু তার নাম ছিলো আতিয়ূর রহমান মিয়া। খুব সুদর্শন দেখতে ছিলেন তিনি! বড় চাকরি করতেন। ছিলেনও স্ত্রী’র বিপরীত স্বভাবের এবং খুবই মিষ্টভাষী। তাদের কোনো ছেলেমেয়ে না থাকায়, ছোটবেলায় ওই বাড়িতে কাজ করতে আসা বাড়ির চাকর বিয়ের উপযুক্ত হলে, তাকে বিয়ে দিয়ে দুধে আলতা গায়ের রঙ, ফুটফুটে চেহারার যে বউ এনেছিলেন, বিল্ডিংয়ের দু’টি রুমের একরুমে জাহানারা বেগম আর আতিয়ূর রহমান থাকতেন, আরেক রুমে সেই রাখাল কাম রাইসমিলের চালক মোর্শেদ তার স্ত্রী ও অন্য দুটি সন্তানকে নিয়ে থাকতো। আর মোর্শেদের প্রথম ছেলে তমাল থাকতো আতিয়ূর রহমান ও জাহানারা বেগমের মাঝখানে। গদির ওপর আরেকটি গদি দিয়ে তার বিছানা হতো। সাথে রাবারক্লথও যখন বিছানোর কথা মনে পড়ছে, তার মানে, তমাল অনেক ছোট থাকতেই তার পিতার মনিবদ্বয়ের মাঝখানে জায়গা করে নিয়েছিলো।

বেবী সাইকেলের সাথে নিত্যনতুন খেলনা ও কর্তা-কর্ত্রীর অখণ্ড মনোযোগের জন্য তমাল ভাড়াটিয়াদের শখানেক ছেলেমেয়ের মধ্যে মধ্যমনি হয়ে থাকতো! তমালের বাপ সর্ব সাকুল্যে ও বাড়ির কেয়ার টেকারের পদমর্যাদা লাভ করলেও তমাল ছিলো জাহানারা বেগম ও আতিয়ার রহমান মিয়ার পুরোপুরি সন্তান বাৎসল্যে অনন্য দৌহীত্র!
মোর্শেদ ভাইয়ের সব সময় শুধু মুখে নয়, মনে হতো সারা শরীরে একটা উৎফুল্লভাব ফুটে থাকতো। সুন্দরী বৌ। বছর বছর বাচ্চা হচ্ছে বলে পিতা-মাতারও অধিক মনিবদ্বয় তাতে প্রসন্ন হচ্ছেন, নিঃসন্তান তারা চোখের সামনে নতুন বাচ্চকাচ্চার মুখ দেখছেন বলে। অথচ ফরশা, শক্তপোক্ত, চেপ্টা শরীরের লড়াকু চেহারার মোর্শেদ ভাইয়ের সেই খালি গা। মুখে পান। কোমরে গামছা বাঁধা। কখন কিসের কোন কূল টলে ওঠে আর একমাত্র তাকেই সব রক্ষে করতে হয়, এই ছিলো তার সব সময়ের ভাব!
০০০
রিকশা খুলনা ওয়েস্টিন হোটেল থেকে দৌলতপুর আসার পর কোথায় যাবো বুঝে উঠতে না পেরে পার্কে নেমে গেলাম। কিন্তু সেখানে জোড়ায় জোড়ায় ছেলেমেয়েদের আচরণ দেখলাম, ঢাকার চেয়ে খারাপ। সে অবস্থায় বেশিক্ষণ বসা গেলো না। তখন আমার মামাতো ভাই বি, এম, এনামুল হক ছিলেন রংপুরের ডিসি। আমি তাকে ফোন করে বললাম, দাদা, তুই যে একবার বিরাট একটা রুইমাছ নিয়ে দৌলতপুর আমাদের যে বাসায় এসেছিলি, সেই বাসাটা দৌলতপুরের কোথায়?
দাদা বললো, তুই এখন কোথায়?
আমি বললাম, দৌলতপুর পার্কে। তারপর দাদা কোনদিকে যেতে বললো, আমি না বুঝেই আরেকটা রিকশা নিলাম। অনুমান করে এক গ্রীলের দোকানের গিয়ে বর্ণনা দিতে লাগলাম। একজন বললো, আমি চিনি! সে হাতের কাজ ফেলে আমাকে নিয়ে ত্যাড়াব্যাঁকা এক রাস্তা দিয়ে হেঁটে যেতে লাগলো। আমি ভাবতে লাগলাম, আমি যে বাড়ির কথা বলছি, সে বাড়ি ছিলো মেইন রোডের পাশে। এই ছেলে নিশ্চয় আমাকে গলির গলি তষ্য গলির ভুল কোনো বাড়িতে নিয়ে তুলবে!

ছেলেটি অতপর যে বাড়িতে আমাকে নিয়ে থামলো, সেটা আভিজাত্যহীন, নিম্নবিত্তর এলাকার টিনসেড দুটি রুম আর তার বারান্দার দুপাশে আরো দুটি রুমের মতো করা। বারান্দার সে পকেট রুমের একটি থাকার রুম। আরেকটিতে রান্নাবান্নার কাজ করা হয়।
বাইরে মানুষের সাড়া পেয়ে ভেতর থেকে যে ক’জন একসাথে বেরিয়ে এলো, তার একজনকে চিনতে পেরে বুকের ভেতর তিরতির করে উঠলো। মুহূর্তে চোখ উপচে পানি উঠছে আমার। কথা বলতে গেলে গলা দিয়ে কথা না বেরিয়ে কান্না উথলে উঠছে। কিন্তু সেই পাটরানীর মতো গাভরা ভারী গয়নায় সেজে থাকা অথচ প্রচণ্ড মেজাজীই নয় শুধু, বদমেজাজীই যাকে মনে হতো, তাকে এখানে সাধারণ একখানা মোটা কাপড়ে দেখে আমার কেন কান্না আসবে? আমি তো তার শ’খানেক ভাড়াটিয়ার ছেলেমেয়ের সাথে তার কাছে পোকা-মাকড়ের অধিক কিছু ছিলাম না!
নিজের কান্নার জন্য নিজেই লজ্জা পাচ্ছিলাম। কথা জড়িয়ে যাওয়ার জন্য আমি বেশ ক’বার বলার পর তিনি চিনলেন। কারণ এতো বছর পর চেনার জন্য সেই ছোটবেলায়ও তিনি আমাকে সেভাবে দেখতে হবে তো!
তবু তাদের বাড়ির একটা পাশের পুরোটা আমরা ভাড়া নিয়ে থাকতাম! সেখানে ছিলো আমাদের ‘সিমোডিন ইউনানী দাওয়াখানা’ নামে ওষুধ তৈরির বিরাট কারখানা এবং রাস্তার পাশের দিকটায় নিজেদের করা বিক্রয় কেন্দ্র। আমার মা’র সাথে জাহানার বেগমের খানিকটা ভাব ছিলো। আমার মা অত্যন্ত কোমল মেজাজ ও শিল্পগুণের অধিকারী হওয়ায়, কেন যেন সবাইকে তার কাছে আসতে হতো। আসতেন গাভরা গয়নায় মোড়ানো এই জবরদস্ত জাহানারা বেগমও।
গতকাল রিকশাওয়ালা যা বলেছেন, তাই ঠিক। আতিয়ূর রহমান অরেকটা বিয়ে করেছিলেন। তারপর সে ঘরের ছেলেমেয়ে বড় হতে হতে বা আগেই মোর্শেদকে তার ছেলেমেয়ে বউসহ বেরিয়ে আসতে হয়েছে। ২০০৯ সালে আমি যখন গিয়েছি, তখন সেই সদা হাসিখুশি, বাড়ি মাতিয়ে রাখা শক্তপোক্ত শরীরের মোর্শেদ পরপারে চলে গেছে। জাহানারা বেগমের কি নিয়তি, তার মহল ছেড়ে দিয়ে এসে তাকে বাড়ির সেই চাকর মোর্শেদের ছেলেমেয়ের সাথে এসেই থাকতে হয়!
আর নিয়তি আমারও! যে আমি গেছি, অতি শিশুকালের শুধু পুরনো বাড়িটা আর আকতারকে এক নজর দেখার টানে, যে আকতারের এঁকে দেয়া দাগ আমি সারাজীবন হাঁটুর নিচে বহন করছি!
ছোট ভাইবোন সবার বিয়ে হলেও তমাল বিয়ে করেনি। কেন করে না, তার তার মা আর দাদি কেউ কারণ জানে না। তমালই বারান্দার ছোট্ট আরেকটি ওই পকেটরুমে একা থাকে!
তমালের দিকে তাকিয়ে ভাবলাম, জীবনের এতবড় উত্থান আর পতন দেখা দোটানার স্মৃতিতে যে ভোগে, তার তো অনেক কিছুতেই হিসেব না মেলারই কথা!

আমার কান্না দেখে খালাম্মা আশ্চর্যই হয়েছিলেন। হয়ত কোনদিনই কেউ তার জন্য কাঁদেনি! তার পরিবর্তন ও বিপর্যয়গুলো আমার চোখের সামনে ঘটলে আমারও গাসওয়া ঠেকতো!
মাটিতে বিছানো পাটিতে সবার সাথে ভাত খেয়ে জাহানারা বেগমকে বললাম, খালাম্মা, আমি একটু আকতারদে বাড়ি যেতে চাই। খালাম্মা তমালের ছোটভাই শরিফুলকে আমার সাথে দিলেন, আমরা দৌলতপুর ছাড়ার আগে সেই সত্তর সালে যার বয়স বছর তিনেক ছিলো। শরিফুল সেই তাদের পুরনো বাড়ির ভেতর দিয়ে আমাকে নতুন করে সব দেখাতে দেখাতে আনছিলো। শরিফুল একজনকে দেখিয়ে ইশারায় বললো, দাদার দ্বিতীয় স্ত্রী!
শুিরফুল না বললে, আমি হয়ত আরেকবার ফিরে তাকাতাম না, কাজের লোক মনে করে। আর আমার কাছে মনে হচ্ছিলো, কেন ছোটবেলায় এই একতলা বিল্ডিংটাকে এতো রাশভারি মনে হতো? বাড়িওয়ালার গোলাঘর। তবু ওটা দেখলে মনে অভূতপূর্ব এক শান্তি অনুভূত হতো! ওই গোলাঘরে কেউ ঢুকলে আমরা হুড়মুড়িয়ে পড়তাম, এক নজর অন্ধকার দেখতে। কিচ্ছু দেখা যেতো না ওতে। যে ধান বের করে আনতো, সে অনুমান করেই ধামা ভরে ধান তুলে বাইরে মইয়ের ওপর যে দাঁড়িয়ে থাকতো, তার হাতে দিতো।
তারপর পুকুরটাকেও আর প্রশান্তির লাগছিলো না। সারাজীবন সে কি এভাবেই ছিলো না কি এখন সে জৌলুস হারিয়েছে বুঝতে পারলাম না!
দাদা, বলছিলো, বাড়িটা চিনে যেতে পারলে দেখে আসিস্, পুকুরপাড়ে সেই কদবেল গাছটা আছে কি না! ঠাস করে একটা বেল পড়লে একদঙ্গল ছেলেমেয়ে ওই পুকুরে একসাথে ঝাঁপ দিতো বেল তুলতে! পেতো একজনে কিন্তু সবাই মিলে ভাগ করে খেতো!’ চল্লিশ বছর পর দেখলাম, গাছটি আছে। কিন্তু ন্যাড়াভাব। নেই সেই রাইস মিলটা। যেখানে মানুষ ধান ভাঙাতে এলে আমরা ছোটরা ঢুকতে পারলে মোর্শেদ ভাইকে ফাঁকি দিয়ে তুষসহ মেশিন থেকে বের হওয়া একেক মুঠ গরম চাল থাবা দিয়ে নিতাম। তারপর বাইরে এনে এক হাতের থেকে আরেক হাতে গড়ড়িয়ে ফুঁ দিয়ে তুষ বেছে ফেলে সে চাল খেতাম! আহা, অমৃত হার মানে তসরুফ করে আনা সে চালের স্বাদে!
আকতারদের বাড়িতে ঢুকেই হায়দার ভাইকে খুঁজলাম। শরিফুল বললো, এখন তো বাড়ি পাবেন না। বললাম, তাহলে বৌটা দেখে যাই! ঘরের ভেতর মুখ ঢোকাতেই যাকে নজরে পড়লো। দেখলাম, তাকে দ্বিতীয়বার দেখার মতো কিছু নেই। এতে অন্তরে শান্তি নয় শুধু, প্রশান্তিই বোধ হলো। তারপরে দেখলাম খুব হ্যান্ডসাম একজন যুবক উঠোনে দাঁড়ানো। পাশেই বেশ বড়সড় একখানা মোটর সাইকেল। এতে তার সৌন্দর্য যেন আমার চোখের ভেতর বিজ্ঞাপণের মডেলের মতো আরো বেড়ে গেলো। জিজ্ঞেস করে জানলাম, ওটা রিয়াজুল। বেলা তখন ডুবে গেছে। বাড়ির এককোনায় একবোঝা থালাবাসন নিয়ে দেখলাম বয়স্ক একজন মহিলা ছাই দিয়ে সে সব মাজামাজি করছে। কিন্তু হাত চলতে চাইছে না তার। দেখলাম, হাত থেকে থালাবাসন পড়ে পড়ে যাচ্ছে! আমি অনুমান করে বললাম, উনি খালাম্মা না?
রিয়াজুল বললো, হ্যাঁ!
আমি ছুটে সালাম করতে গিয়ে তার হাত-পা গতিক মতো পেলাম না। বরং বুকের থেকে হাঁপানির শোঁ শোঁ শব্দ শুনে আমি রিয়াজুলকে বললাম, একি করছো? বেশ শীত পড়ে গেছে। ওনাকে ওঠাও!
রিয়াজুল বললো, আপা, আমার বৌ এগুলো পারবে না। তারও শরীর ভালো নেই!
রিয়াজুলের বউকে ডেকে দেখার রুচি আর আমার থাকলো না! আমি তবু বললাম, আকতার কই? শরিফুল আর রিয়াজুল একসাথে বললো, সে আমাদের সবার থেকে ভালো আছে। এই বাড়ি আমাদেরকে ছেড়ে দিয়ে সে নতুন আরেকটা বাড়ি করেছে। আমি রিয়াজুলকে বললাম, ফোন করো! রিং বাজতেই ফোনটি রিয়াজুল আমার হাতে দিয়ে দিলো। আমি বললাম, তুমি একজনকে তীর মেরেছিলে, মনে আছে?
আকতার বললো, মনে আছে। কিন্তু নামটা ভুলে গেছি। কিন্তু এখন আমি কার সাথে কথা বলছি, যাকে তীর মারছিলাম তার সাথে, নাকি তার মার সাথে?
মেজাজটা খারাপ হয়ে গেলো আমার। মনে মনে ভাবলাম, এই নাম আর কারো আছে নাকি ব্যাটা, যে তুই আমাকে ভুলে যাবি? আমি রিয়াজুলকে ফোনটা ফিরিয়ে দিয়ে শরিফুলকে বললাম, চলো, আমাকে খুলনার ওয়েস্টিন হোটেলে যেতে একটি রিকশা ঠিক করে দাও!
কতক্ষণ একসাথে ঘুরে, এক পাটিতে বসে ভাত খেয়ে শরিফুলকে মনে হচ্ছিলো একেবারে নিজের ভাইয়ের মতো। ওই পরিবারের সবাইকে সেদিনের পর থেকে মনে হচ্ছিলো আমাদের নিজের কেউ। আমি ওদেরকে খুব আন্তরিকভাবে ঠিকানা দিয়ে আসছিলাম, যারা ঢাকাতে থাকে, তারা অন্তত যেন আমার বাসায় যাওয়া আসা করে!
আকতারদের বাড়িতে ঢুকে একজনের কথা জানতে চেয়ে অযথা সময় নষ্ট করিনি, জানি এতদিন তার বাঁচার কথা নয়। কিন্তু সে ছিলো! আমার মন-মগজ এককরেই ছিলো! আকতারের বিধ্বস্ত মাকে যখন দেখলাম, একটাল থালাবাসন নিয়ে ভরা সন্ধ্যায় ঝামা আর ছাই নিয়ে ঘষাঘষি করছেন, আর কারো তাতে ভ্রুক্ষেপ নেই, সেই দৃশ্য মনে পড়লে আমার আজো বুক ভার হয়ে ওঠে। মনে হয়, উনি অনন্তকাল ওভাবেই বিপর্যস্ত হয়ে কূলহীন অবস্থায় বসে আছেন শীতের অন্ধকারে মশার কামড় খেতে খেতে। যেখান থেকে তার কোনো উত্তরণ নেই! আর তার সুস্থ-সবল ছেলে- মেয়ে- বৌয়েরা তাকে একাজ থেকে তরিয়ে নেবে, আসলে সে সাধ্য তাদেরও নেই। তাদের দু’পক্ষেরই এই অধম পরিণতিই অনিবার্য!
কারণ আকতারের মা একটু ত্রুটিতে পাগলিকে চেলাকাঠ দিয়ে পিটাতো তো পিটাতোই, পোড়া কটা ভাত ছিঁটিয়ে দিতো, এ আমার নিজের চোখে দেখা। ক’দিন পরপর একবিড়া করে পান পাগলি ধুয়ে নিতো, সেই পাগলি দুটো পান সরিয়ে না রেখে এর-ওর কাছ থেকে একটু পানের কোনাকানা চেয়ে খেতো। অথচ, পাগলি কারো কাছেই একটু বদনাম করেনি পরিবারের কারোর। একটু অযত্ন করেনি কিছুর। জান দিয়ে তাকে তবু স-ব আগলে রাখতে দেখেছি। আসলেই এটা সুস্থ মাথার মানুষের কাজ নয়!
০০০
সে রাতে মেয়ে বললো, কাল আমাদের কর্মসূচি গোপালগঞ্জ। তুমিও চলো। তোমার বাপের বাড়ির থেকে বেড়িয়ে এসো। তাই হলো, খুব ভোরে রওনা দিয়ে মেয়ের সাথে গেলাম। রাতে নতুন বাড়ি ঘোষেরচরে থাকলাম। আগেই দাওয়াৎ দিয়েছিলেন সৈয়দ মিজান চাচা। গোপালগঞ্জ থেকে সরাসরি খুলনা ইউনিভার্সিটির ভেতর তার বাসায় যেতে হলো। আকাশ ছিলো থমথমে। কৃষ্ণপক্ষ চলছিলো। তাই খাওয়া ছাড়া ওখানে দেখার কিছু ছিলো না! গোপালগঞ্জ থেকে সরাসরি মিজান চাচার বাসায় ঢুকেছিলাম। বেশ রাত হয়েছিলো। কিন্তু আগেই যেহেতু দাওয়াৎ কবুল করা ছিলো, না গিয়ে উপায় ছিলো না। বারবার চাচাকে বলছিলাম, চাচা, দিনের বেলা এলে, খাওয়ার চেয়ে খুলনা উইনিভার্সিটির ক্যাম্পসটা ঘুরে দেখাই বড় লাভ ছিলো।

আমার থেকে বয়সে বেশ ছোট সুন্দরী চাচী খুব সুস্বাদু করে অনেক রকম তাজা মাছ রান্না করেছিলেন। এ লেখা সেই তখন হলে চাচীর সেই রান্নাই সাহিত্যের উপাদানে কতরকম বাগাড় দেয়া যেতো!

আর প্রথম প্রেমের ব্যর্থ গল্পে এই সৈয়দ মিজানুর রহমান চাচাই বাকি জীবনের জন্য কিছুটা রসদে রক্ষে করে রেখেছেন অন্তত।

 

দীলতাজ রহমান
লেখক ও সংগঠক

 

এই লেখকের অন্যান্য লেখা



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Developed with by
Top