সিডনী শনিবার, ২০শে এপ্রিল ২০২৪, ৭ই বৈশাখ ১৪৩১

দীপাবলি কী এবং কেন : এস ডি সুব্রত


প্রকাশিত:
১৪ নভেম্বর ২০২০ ২২:২৩

আপডেট:
১৪ নভেম্বর ২০২০ ২৩:০৩

 

সনাতন ধর্মাবলম্বীদের কাছে দীপাবলি বা দিওয়ালি বা দীপান্বিতা একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎসব। দীপাবলিতে ভারত, নেপাল, শ্রীলঙ্কা, মায়ানমার, মরিশাস, ত্রিনিদাদ ও টোবাগো, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর ও ফিজিতে সরকারি ছুটির দিন। সংস্কৃত শব্দ দীপাবলি দুটি শব্দের সমন্বয়। দীপ এবং অবলি। দীপ শব্দের অর্থ আলো এবং অবলি শব্দের অর্থ সারি। দীপাবলি মানে আলোর সারি। রঙিন আলোয় আর আল্পনায় সেজে উঠে বাড়িঘর। সারি সারি প্রদীপের আলাকে স্বর্গের দেবতাকে মর্ত্যের কুটিরে বরন করে নেয়ার উৎসব ই হল দীপাবলি। দুর্গোৎসব শেষ হওয়ার আঠার দিন পর দীপাবলি শুরু হয়। আশ্বিন মাসের কৃষ্ণা ত্রয়োদশী তে ধনত্রয়োদশীর অনুষ্ঠানে র মাধ্যমে দীপাবলি শুরু হয় এবং কার্তিক মাসের শুক্লা দ্বিতীয়া তিথিতে ভাইফোটার মাধ্যমে এই উৎসব শেষ হয়।
এই দিনে হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা ঘরে ঘরে ছোট মাটির প্রদীপ বা মোমবাতি জ্বালান। প্রদীপ প্রজ্বলন হচ্ছে অমঙ্গল বিতাড়নের প্রতীক। দীপাবলি তে কালীপূজা বিশেষ জনপ্রিয়। ১৭৭৭ খ্রীষ্টাব্দে কাশীনাথ রচিত শ্যামাসপর্যাবিধি গ্রন্থে এই দীপাবলির প্রথম উল্লেখ পাওয়া যায়। দীপাবলি অমাবস্যায় পালিত হয়। দীপাবলি নামের মধ্যে রয়েছে ইতিহাস ও পূরানের অভিবন্দনা। দীপাবলি হচ্ছে অন্তর থেকে উৎসারিত অফুরন্ত আনন্দের প্রজ্বলিত আলোকমালা।
দীপাবলির ইতিহাসের সাথে পূরাণের যে সব কাহিনী জড়িত রয়েছে তার মধ্যে সবচেয়ে প্রচলিত রাম সীতা ও লক্ষনের অযোধ্যায় ফেরার কাহিনী। রামায়ণ মতে দশেরায় রাবন বধ করে দীপাবলি তেই অযোধ্যায় ফেরেন রাম, সীতা ও লক্ষন। তাদের স্বাগত জানাতেই প্রদীপ জ্বালিয়ে সাজানো হয় গোটা অযোধ্যা নগরী। রামচন্দ্রের পথ আলোকিত করতেই অমাবস্যার রাতে আলোয় সেজেছিল অযোধ্যা নগরী।
জৈনমতে ৫২৭ খ্রীষ্টপূর্বাব্দে মহাবীর দীপাবলির দিনেই মোক্ষ বা নির্বাণ লাভ করেছিলেন।
শিখদের ষষ্ঠ গুরু হরগোবিন্দ ও ৫২ জন রাজপুত্র ১৬১৯ খ্রীষ্টাব্দে দীপাবলির দিন মুক্তি পেয়েছিলেন বলে শিখরাও এ উৎসব পালন করে।
আর্য সমাজে এই দিনে স্বামী দয়ানন্দ সরস্বতীর মৃত্যু দিবস পালন করে।
বাংলাদেশে দীপাবলি তে কালী পূজার প্রচলন রয়েছে। জানা যায় ... নদীয়ার রাজা কৃষ্ণচন্দ্র রায় অষ্টাদশ শতকে তার সকল প্রজাকে শাস্তির ভীতি প্রদর্শন করে কালী পূজা করতে বাধ্য করেন। সেই থেকে নদিয়ায় কালী পূজা বিশেষ জনপ্রিয়তা লাভ করে। যা আমাদের বাংলাদেশে অনেক জায়গায় প্রচলিত রয়েছে।
মহাভারত অনুসারে ভূদেব ও বরাহের পুত্র নরকাসুর খুব শক্তিশালী ছিল। স্বর্গ ও মর্ত্য দখল করে প্রবল অত্যাচার শুরু করে। শ্রীকৃষ্ণ নরকাসুরকে বধ করে তার প্রাসাদে বন্দী ১৬০০০ নারী কে উদ্ধার করেন এই দীপাবলি তেই।
মহাভারতে আরও আছে যে, বার বছর বনবাসে ও এক বছর অজ্ঞাত বাস থাকার পর দীপাবলি তেই হস্তিনাপুরে ফিরে এসেছিলেন পান্ডবগণ। সেই জন্য আলোকমালায় সাজানো হয়েছিল গোটা হস্তিনাপুরকে।
এবারের দীপাবলির মঙ্গল আলোকে আলোকিত হোক আমার স্বদেশ, আলোকিত হোক প্রিয় বসুন্ধরা। বাংলাদেশ তথা বিশ্ব হোক সন্ত্রাসমুক্ত, দুর্নীতিমুক্ত, ধর্ষণমুক্ত ও মহামারী করোনামুক্ত।

 

এস ডি সুব্রত
কবি ও প্রাবন্ধিক

 

এই লেখকের অন্যান্য লেখা



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Developed with by
Top