সিডনী বৃহঃস্পতিবার, ২৫শে এপ্রিল ২০২৪, ১২ই বৈশাখ ১৪৩১

বাবু খাইছো? : রহমান তৌহিদ


প্রকাশিত:
২১ নভেম্বর ২০২০ ২৩:০৩

আপডেট:
২১ নভেম্বর ২০২০ ২৩:১৩

 

এক এক সময় এক এক বানী ভাইরাল হয়। যুগটাই এখন ভাইরালের। বাবু খাইছো? বাবু খাইছো? শুনতে শুনতে একদিন মফিজ বিরক্ত হয়ে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিল : “ আমার শোনা অন্যতম সেরা স্টুপিড ডায়লগ: বাবু খাইছো? - আপনার? ”
মফিজ লক্ষ্য করেছে, স্ট্যাটাসে একটা প্রশ্ন ছুড়ে দিলে কিছু মন্তব্য বেশি পাওয়া যায়।
তো, নানা রকম মন্তব্য পাওয়া গেল। বেশিরভাগই মফিজকে উত্যক্ত করা।
“ সুইট একটা ডায়লগকে আপনি স্টুপিড ভাবলেন, আপনার সমস্যা আছে।”
“ ভাইয়ের সমস্যা আছে মানে, কঠিন সমস্যা। ভাই, আপনাকে বলার কেউ নেই তো, তাই জেলাস করেন।”
“ ভাই, এক কাজ করেন, জেলাস গেলাসে ভরে খেয়ে ফেলেন। তারপর বাবু খাইছো শুনতে ভাল লাগবে।”
আর পড়তে মফিজের বড়ই শরমিন্দা হল। ভাবল, ধইঞ্চ্যা পোলাপানের কথাবার্তা নিয়ে স্ট্যাটাস দেওয়া ঠিক হয় নাই।
পরদিন অফিসে মফিজের জন্য আরো কিছু অপেক্ষা করছিল।
জুনিয়র এক কলিগ প্রশ্ন করল, গতকালে স্ট্যাটাসের অর্থ বুঝলাম না, স্যার। বাবু খাইছো - মানে কি?
মফিজ একটু দম নিল। সব কৌতুহল দ্রুত মেটাতে নেই।
প্রশ্নকর্তা নিজেই খোলাসা করল : মানে স্যার বাবু কন্ট্রাকটর খাবে কেন, সে তো খাওয়াবে।
সত্যিই আমরা এক অদ্ভুত সমাজে বাস করছি। আমরা ভাবছি একজন খাবে, আর একজন খাওয়াবে।
বাবু খাইছো কালচার হাল আমলের।
একসময় বাচ্চা খেয়েছে কিনা তার খোজ নিতে মা বলত: বাবা খাইছো?.
হাতের মুঠোয় ফোন ছিল না তখন। চিঠি লিখে তো আর জিজ্ঞাসা করা যায় না, বাবা খাইছো? তাই ঈদের বা পূজোর ছুটিতে ছেলে বাড়ীতে এলে মা এটা সেটা রাঁধতো আর ঘুরে ফিরে জিজ্ঞাসা করতো : বাবা খাইছো?
দিন বদলেছে। মোবাইল ফোন এখন সর্বত্রগামী। মায়েদের দু:খ ঘুচেছে। যখন তখন খোঁজ নিতে পারে : বাবা খাইছো?
অবশ্য অধিকাংশ মায়ের অনুযোগ, খাওয়া দাওয়ার খোঁজ নিলে ছেলে নাকি নাখোশ হয়।
কি দিনকাল পড়েছে। অথচ, ছেলে ভাত খেতে চেয়ে স্বাধীনতা যুদ্ধে গেল। মা ভাত রেধে অপেক্ষা করে। ছেলে ফিরে আসে না। মাও ভাত খায় না। সেই মা আর ভাত খায়নি।
সেই বাবারা এখন বাবা খাইছো শুনতে পছন্দ করে না, করে বাবু খাইছো শুনতে।
যাহোক, মায়ের বাবাদের শুধু বদনামই করছি, একটু সুনাম করি। এই বাবারা একসময় রান্না করতে পারতো না। বিদেশে গেলে সিদ্দিকা কবীরের রান্নার বই সাথে করে নিয়ে যেত। একসময় পাকা রাধুনী হয়ে যেত। আর দেশি বাবারা আলু ভর্তা, ডাল ভর্তা, ডিম ভাজিতে তাদের রান্না প্রতিভা সীমাবদ্ধ রাখতো। এখন তো ইউটিউব আর ফেসবুকে রান্নার ছড়াছড়ি। রান্না আর খাওয়া দাওয়ার ভিডিওতে ছয়লাব। কেউ কেউ এতই বিখ্যাত হয়ে গেছে যে, তারা যেখানে ফাও খেয়ে ভিডিও ছাড়ে, সেটা দেখে পরের দিনই পয়সা খরচ করে সেখানে যাওয়া চাই অনেকের।
খাওয়া নিয়ে এত কথা হল তো এক লাইনের গল্প না বললেই নয়।
খাওয়ার টেবিলে এক গল্পকারকে তিনটি শব্দে বেদনার গল্প বলতে বলায় তিনি বললেন : চপে আলু কম।
গল্পটি আলুর কেজি পঞ্চান্ন টাকা হওয়ার সময়কালের কিনা আমি বলতে পারছে না।
ইউটিউবে একই রান্নার অনেক রেসিপি। এগুলো দেখে বলদও রান্না করতে পারবে। তবে, সত্যিকারের স্বাদ আনতে লাগবে রাধুনীর ধৈর্য্য। সেটা আবার বাবাদের অনেকেরই নেই।
বাবু বলতে আমরা সাধারণত ছোট বাচ্চা বুঝি। আকিকা দিয়ে নাম রাখার আগ পর্যন্ত বাচ্চাকে বাবু নামে ডাকা হয়। তাই একসময় বাচ্চা মানেই বাবু। সেই বাবুগুলোর মধ্যে কেউ কেউ দীর্ঘায়িত বাবু। অর্থাৎ তাদের বাবু নামটা কেমন করে যেন বড় বয়সেও চালু থাকে। কেউ কেউ আবার বড় বাবু, কেউ বা ছোট বাবু।
যাহোক, বাবুরা খেয়েছে কিনা সে চিন্তা মা বা বাবুর উপরে ছেড়ে দিয়ে আমরা বরং মেসেঞ্জারের চ্যাটিংটা দেখি:
: বাবু খাইছো?
: আমাকে বাবু বইলো না। বাবু আমার বাবার ডাক নাম।
: ওকে বেবি
: বেবি আমার মায়ের ডাক নাম
: ওকে ডোন্ট ওরি, চিল সুইটি
: সুইটি আমার ভাতিজির নাম। আমারে বরং বিউটিফুল, পরি, ময়না ডাকতে পারো
: তোরে আর ডাকুমই না। বিউটি আমার খালার নাম, পরি আমার ফুফুর নাম আর ময়না আমার চাচীর নাম।
এখন প্রশ্ন হল, বাবু খাইছো? বলে শুরু করেছিল কে?
ছেলে না মেয়ে?
যদি আপনি দুই সেকেন্ডের মধ্যে এর সঠিক উত্তর দিতে না পারেন, তো আপনি মফিজের যথার্থ অনুসারী।

 

রহমান তৌহিদ
রম্য লেখক
লেক সার্কাস, কলাবাগান, ঢাকা।

 

এই লেখকের অন্যান্য লেখা



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Developed with by
Top