সিডনী শুক্রবার, ১৯শে এপ্রিল ২০২৪, ৬ই বৈশাখ ১৪৩১

দ্যা প্রফেট (প্রথম অনুচ্ছেদ) : কাহলীল জীবরান 


প্রকাশিত:
২৫ নভেম্বর ২০২০ ২২:৩৯

আপডেট:
২৫ নভেম্বর ২০২০ ২২:৫১

ছবিঃ কাহলীল জীবরান এবং অনুবাদক রোজীনা পারভীন বনানী 

 

মূলঃ কাহলীল জীবরান 
অনুবাদ: রোজীনা পারভীন বনানী 

কাহলিল জীবরান একজন লেবানিজ-আমেরিকান লেখক। বলা হয়ে থাকে শেক্সপিয়ার আর লাউজির পরে জীবরানের বই-ই এখন পর্যন্ত সব থেকে বেশি বিক্রিত বই।
তিনি একাধারে কবি, লেখকদার্শনিকধর্মতত্ত্ববিদ ও অসাধারণ চিত্রশিল্পী। তার 'দ্য প্রফেট' সাহিত্য ইতিহাসের আলোড়ন জাগনো একটি বই। এই বই এ পর্যন্ত মোট আশিটিরও ভাষায় অনূদিত হয়েছে। ১৯২৩ সালে এটি প্রথম প্রকাশিত হয়। জীবরানের এ বই এখনো এক বিস্ময়ের নাম। এত বছর পরেও এই বইয়ের আবেদন একটুও কমেনি। বইতে জীবরানের নিজের আঁকা ১২ টি চিত্রকর্ম আছে। বইয়ের মূল চরিত্র আল-মুস্তাফা। তিনি বারো বছর ধরে অপেক্ষা করছেন তার জাহাজের যাতে করে তিনি তার স্বদেশে ফিরে যেতে পারেন। এই বারোটি বছর তিনি কাটিয়েছেন ওরফেলিসে। আল-মুস্তাফার একাকী সময়, দুঃখের সময়ের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে গেছে ঐ দেশের মানুষ ও মাটি। একদিন পাহাড়ের উপর উঠে তিনি তার জন্য আসা জাহাজকে দেখতে পেলেন। জাহাজে তার স্বদেশী মানুষেরা তার জন্য অপেক্ষা করছিল। তার মন আনন্দে ভরে উঠলো। আবার একইসাথে তাকে বিষণ্ণতায়ও ঘিরে ধরলো। কারণ এই বারো বছরে তিনি ওরফেলিসের জনগণের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে গিয়েছিলেন। তাই বিদায় বেলায় এই দুঃখ তাকে জর্জরিত করে ফেলে। বিদায়লগ্নে তিনি এক দল মানুষের উদ্দেশ্যে জীবন এবং মানুষের অবস্থার বিষয় সম্পর্কে আলোচনা করেন। বইটি প্রেম, বিয়ে, সন্তান, দান, খাওয়া-দাওয়া, কাজ, আনন্দ ও দুঃখ, ঘর, কাপড়-চোপড়, ক্রয় এবং বিক্রয়, অপরাধ ও শাস্তি, আইন, স্বাধীনতা, কারণ এবং আবেগ, ব্যথা, আত্মদর্শন, শিক্ষাদান, বন্ধুত্ব, কথা, সময়, ভালো এবং মন্দ, প্রার্থনা, আনন্দ, সৌন্দর্য, ধর্ম, এবং মৃত্যু অনুচ্ছেদে বিভক্ত। প্রত্যেক অনুচ্ছেদে আছে কাব্যিক ঢঙে জীবনের নানা দিকের দার্শনিক উপস্থাপন। আলমিট্রা নামক জনৈক নারীর ভালোবাসা বিষয়ক প্রশ্নের মাধ্যমেই মূলত পুস্তকের শুরু। একে একে কবি, কৃষক, শিক্ষক, ব্যবসায়ী, আইনজীবী, পান্থশালার মালিকসহ নগরের বিভিন্ন শ্রেণির মানুষ বিভিন্ন বিষয়ে প্রশ্ন তুলে। প্রতিক্ষেত্রে আল মুস্তফার সস্নেহ উত্তর স্বভাবতই হৃদয়গ্রাহী। (সূত্রঃ উইকিপিডিয়া)

 

ছবিঃ দ্যা প্রফেট বইয়ের প্রচ্ছদ

 

প্রথম অনুচ্ছেদঃ

আল্ মুস্তাফা, সবার পছন্দের প্রিয়জন, তিনি ছিলেন তাঁর সময়ের ভোরের আলো, অরফানেজ শহরে অপেক্ষা করছিলেন তাঁর জাহাজ ফিরে আসার জন্য এবং যে জাহাজ তাঁকে নিয়ে যাবে সেই ছোট্ট দ্বীপে যেখানে তিনি জন্মেছিলেন। দ্বাদশ বছরে, ইলুল মাসের ৭ তারিখে, ফসল কাটার মাস, তিনি নগর প্রাচীর ছাড়া পাহাড়ে উঠলেন এবং সমুদ্রের দিকে তাকালেন। তিনি কুয়াশার ভিতর দিয়ে তাঁর জাহাজকে আসতে দেখলেন।

তখন তাঁর হৃদেরয় দরজা সজোরে খুলে গেল, এবং তাঁর আনন্দ সমুদ্রের উপর দিয়ে উড়ে গিয়ে সুদূরে মিলিয়ে গেল। তিনি চোখ বন্ধ করলেন এবং আত্মার নিস্তব্ধতার ভিতর প্রার্থনা করলেন।

 

কিন্তু পাহাড়ের উপর থেকে নামার সময় একটা দুঃখবোধ তাঁকে ঘিরে ধরল। তাঁর হৃদয়ের ভিতর চিন্তার স্রোত বয়ে গেল: আমি কিভাবে কোন দুঃখ ব্যতীত শান্তির সাথে চলে যাব? না, আত্মার ভিতর কোন ক্ষত ছাড়া আমি এই নগর ত্যাগ করতে পারব না।

এই প্রাচীরের ভিতর অনেক ব্যাথার দিন আমি অতিবাহিত করেছি। একাকী কেটেছে অনেক রাত। কেউ কি কোন বেদনাবোধ ছাড়া, তার ব্যথা এবং একাকীত্ব থেকে বিদায় নিতে পারে?

আমার আত্মার অনেক টুকরো আমি এই রাস্তায় ছাড়িয়েছি। আমার আকুল আকাঙ্খার অনেক শিশু নগ্ন পায়ে এই সমস্ত পাহাড়ের ভিতর বিচরণ করছে।

আমি এদের কোন বাঁধা এবং অবিরাম বেদনা ব্যতীত উঠিয়ে নিতে পারবনা।

এটা কোন পরিচ্ছদ নয় যে এই দিনে বন্ধন মুক্ত করতে পারি, এটা আমার আবরণ যা নিজ হাতে সবলে বিচ্ছিন্ন করতে পারি। না এ কোন চিন্তা যা আমি পিছনে ফেলে যেতে পারি, বরং একটা সুমধুর হৃদয় যা ক্ষুধা এবং তৃষ্ণা দিয়ে তৈরী।

তথাপি আমি বহুদূর পর্যন্ত বহন করতে পারবো না।

যে সমুদ্র সবাইকে তার কাছে ডাকে সে আমাকে ডাকছে এবং আমি অবশ্যই জাহাজে উঠব।

অপেক্ষা করার জন্য, যে সমস্ত ঘন্টা রাত্রে প্রজ্জ্বলিত হয়েছে তারপর শীতল এবং কেলাসিত হয়ে একটা ছাঁচ তৈরী করেছে ।

আমি যদি সানন্দে এখানে যা কিছু আছে সব আমার সংগে নিতে পারতাম! কিন্তু কিভাবে আমি তা পারব?

কন্ঠস্বর কখনও জিহ্বাকে বহন করতে পারে না বরং ঠোঁটই একে ভাষা দেয়। একাকী একে মেঘলোকের উপর মুক্ত আকাশ খুঁজতে হবে। একাকী নীড় ছাড়া ঈগলকে উড়তে উড়তে সূর্যকে অতিক্রম করতে হবে ।

 

তারপর যখন তিনি পাহাড়ের পাদদেশে পৌঁছিলেন, তিনি পুনরায় সমুদ্রের দিকে ফিরে আসলেন, এবং দেখলেন তাঁর জাহাজ বন্দর ছুঁয়েছে, এবং জাহাজের সম্মুখভাগে নাবিকরা, যারা তাঁর নিজের দেশের লোক। তাঁর আত্মা তাদের জন্য কেঁদে উঠলো, এবং তিনি বললেন:

 

আমার বৃদ্ধমাতার সন্তানেরা, তোমরা স্রোতের আরোহী, তোমরা প্রায়ই আমার স্বপ্নের বন্দরে নোঙর করেছো, এবং এখন তোমরা আমার জাগ্রত অবস্থায় এসেছ, যা আমার স্বপ্নের গভীরে ছিল।

আমি যাওয়ার জন্য প্রস্তুত, এবং পাল তোলার জন্য পুরোদমে বাতাস প্রবাহের জন্য অপেক্ষা করছি ।

শুধু আরেকবার আমি এই শান্ত বাতাসে নিঃশ্বাস নিতে পারব, পিছনে দৃষ্টি দিয়ে শুধু শেষবারের মত ভালবাসা দেখতে পাব, এবং তারপর আমি তোমাদের মাঝে দাঁড়াবো, একজন নাবিক হিসাবে অন্য নাবিকদের মাঝে। তুমি, বিশাল সমুদ্র, আমার ঘুমন্ত মা, যে একাকী শান্ত এবং নদী ও ঝরনার জন্য উন্মুক্ত, শুধুমাত্র অন্য বাঁক এই ঝরনা তৈরী করবে, শুধুমাত্র অন্য ঝিরঝিরে বাতাস এই বনের ভিতর প্রবাহিত হবে। তারপর আমি তোমাদের কাছে আসব, একটা সীমাহীন ফোঁটা হয়ে এক অসীম সমুদ্রে।

 

যখন তিনি হাঁটতে শুরু করলেন বহুদূর থেকে দেখতে পেলেন নারী এবং পুরুষরা তাদের ফসলের মাঠ এবং দ্রাক্ষাক্ষেত ত্যাগ করছে এবং দ্রুতবেগে নগরতোরনের দিকে যাচ্ছে।

 

তিনি শুনতে পেলেন তারা তাঁর নাম ধরে ডাকছে এবং মাঠে মাঠে চিৎকার করে একে অন্যকে জাহাজের আগমন বার্তা জানাচ্ছে। তিনি নিজেকে বললেন:

 

বিচ্ছেদের দিনই কি হয়ে যাবে জনসমাগমের দিন? এটাই কি ধরে নেয়া হবে যে আমার সন্ধ্যাই হচ্ছে আমার ভোর?

যে কৃষক তার লাঙল চাষের মাঝে ফেলে এসেছে তাকে আমি কি দিয়ে যাব অথবা যে শ্রমিক কারখানার চাকা বন্ধ করে চলে এসেছে তাকে? 

আমার হৃদয় কি ফলেপূর্ণ বৃক্ষ হয়ে যাবে যাতে সেই ফল একত্র করে আমি সকলকে দিতে পারি?

আমার আকাঙ্খাগুলো কি একটি ঝরনার মতো প্রবাহিত হবে যা দিয়ে আমি তাদের পেয়ালা পূর্ণ করতে পারি?

আমি কি কোন বীণা যাতে ইশ্বরের হাত আমাকে স্পর্শ করতে পারে, অথবা একটা বাঁশি যার ভিতর দিয়ে তার নিঃশ্বাস প্রবাহিত হতে পারে? 

আমি কি একজন নৈঃশব্দের অনুসন্ধানকারী এবং নৈঃশব্দের ভিতর আমি কি সম্পদ দেখতে পাই যা আত্মবিশ্বাসের সাথে আমি বিতরন করতে পারি?

 

যদি এই আমার ফসল তোলার সময় হয়, তাহলে আমি কোন মাঠে বীজ বুনেছিলাম, এবং কোন বিস্মরিত ঋতুতে?

যদি প্রকৃতপক্ষে এই সেই সময় হয় যখন আমি আমার প্রদীপকে উঠিয়েছি, তাতে কোন শিখা নেই যা এ সময়ে প্রজ্জ্বলিত হতে পারে।

আমি কি শূণ্য এবং অন্ধকার প্রদীপকে উপরে তুলব। রাতের অভিভাবক একে তেল দিয়ে পূর্ণ করবেন এবং আলো জ্বেলে দেবেন।

 

এই সমস্ত কথা তিনি সশব্দে বললেন। কিন্তু তার হৃদয়ে অনেক কথাই না বলা রয়ে গেল। তিনি নিজে তাঁর গভীর গোপন কথা বলতে পারলেন না।

 

যখন তিনি নগরের ভিতরে প্রবেশ করলেন তখন সমস্ত জনতা তার সঙ্গে সাক্ষাত করতে এল। তারা সকলে একস্বরে চীৎকার ক্রন্দন করতে লাগল। নগরের বয়োঃজ্যেষ্ঠরা সম্মুখভাগে দাঁড়িয়ে ছিলেন এবং বললেন:

 

আমাদের ছেড়ে কখনো চলে যাবেন না। সূর্যাস্তের আলোয় আপনি ছিলেন মধ্যাহ্ন স্বরূপ এবং আপনার যৌবন আমাদেরকে স্বপ্ন থেকে স্বপ্নে নিয়ে গেছে। আপনি আমাদের মাঝে কোন আগন্তুক ছিলেন না, কোন অতিথিও নয়, আপনি আমাদের পুত্র এবং প্রিয়তম প্রিয়জন। এখনও পর্যন্ত আমাদের চোখ আপনার মুখ দেখার জন্য ক্ষুধার্ত।

 

ধর্মযাজক এবং যাজিকারা তাঁকে বললেন:

 

এখন কোন সমুদ্র তরঙ্গ যেন আমাদেরকে আপনার কাছ থেকে পৃথক না করে এবং যে বছরগুলো আপনি আমাদের মাঝে কাটিয়েছেন সেগুলো আমাদের স্মৃতিতে স্মরণীয় হয়ে থাকবে। আপনি আমাদের মাঝে হেঁটে বেড়াতেন একটা আত্মার মত এবং আমাদের মুখের উপর আপনার ছায়া ছিল একটা আলোর মত।

আপনাকে আমরা প্রচন্ড ভালবাসেছি। কিন্তু আমাদের ভালবাসা ছিল মূক ও ঘোমটার আবরণে আবৃত।

এই ভালবাসা এখন চীৎকার করে আপনার জন্য কাঁদছে। এটা আপনার কাছে সত্য বলে প্রকাশিত হয়েছে।

বিচ্ছেদের ঘন্টা বাজার পূর্ব পর্যন্ত এই ভালবাসার গভীরতা আমাদের জানা ছিল না।

 

তারপর অন্যরাও আসলেন এবং তাঁকে অনুনয়-বিনয় করলেন। তিনি কোন উত্তর দিলেন না। শুধু মাথা নিচু করলেন; যারা নিকটে দাঁড়িয়ে ছিলেন তারা দেখলেন চোখের জলে তাঁর বুক ভেসে যাচ্ছে।

 

অতঃপর তিনি এবং সমস্ত জনতা মন্দিরের সম্মুখে অবস্থিত বিশাল চত্বরের দিকে অগ্রসর হতে লাগলেন। তখন উপাসনালয়ের ভিতর থেকে একজন স্ত্রীলোক বের হয়ে আসলেন যার নাম ছিল আলমিট্রা। তিনি ছিলেন একজন ধর্মযাজিকা।

 

তিনি অতিরিক্ত কোমলতার সংগে তাঁর দিকে তাকালেন, কারন আলমিট্রাই তাঁকে সর্বপ্রথম অনুসন্ধান করেছিলেন এবং তাঁর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করেছিলেন যখন তাঁর এই নগরীতে পদার্পণের মাত্র একদিন অতিবাহিত হয়েছিল।

 

আলমিট্রা তাঁকে প্রীতি সম্ভাষণ জানালেন, বললেন:

 

ঈশ্বরের দূত, আপনি বহুদিন যাবৎ আপনার জাহাজের জন্য চূড়ান্ত অনুসন্ধান করছেন। এখন আপনার জাহাজ এসেছে এবং আপনার অবশ্যই যাওয়া প্রয়োজন। আপনার স্মৃতির শহরের জন্য আপনার আকাঙ্খা ছিল গভীর এবং সেই আবাসস্হলের জন্য ছিল আকুল কামনা; আমাদের ভালবাসা আপনাকে বাঁধবে না। অথবা আমাদের প্রয়োজন আপনাকে ধরে রাখবে না। তথাপি আমাদের ছেড়ে যাওয়ার পূর্বে আপনি আমাদের কিছু বলুন এবং আপনার সত্য আমাদেরকে দিয়ে যান।

আমরা এই সত্য আমাদের সন্তানদের দিয়ে যাব, তারা তাদের সন্তানদের এবং এই সত্য কখনো বিনষ্ট হবে না। একাকীত্বের সময় আপনি আমাদের দিনগুলো লক্ষ্য করেছেন এবং জাগ্রত অবস্থায় আপনি আমাদের ঘুমন্ত ক্রন্দন এবং হাস্যধ্বনি শুনতে পেয়েছেন। এখন আমাদেরকে আমাদের কাছে প্রকাশিত হতে দিন এবং আমাদেরকে জন্ম ও মৃত্যুর মাঝখানে যা কিছু আপনাকে দেখানো হয়েছে সে সম্পর্কে বলুন।

 

তিনি উত্তর দিলেন: হে অরফালেজবাসী, এখন তোমাদের আত্মার ভিতর যা ধ্বনিত হচ্ছে তা ব্যতীত আমি তোমাদের কি বলতে পারি?

 

তখন আলমিট্রা বললেন, আমাদের ভালোবাসা সম্বন্ধে বলুন।

 

তিনি মাথা তুললেন এবং তাঁর সম্মুখের স্হির জনতার দিকে তাকালেন। ধীর উচ্চস্বরে বললেন:

যদিও ভালোবাসার পথ খুব বন্ধুর এবং খাঁড়া, তবুও ভালোবাসার সংকেত পেলে, তাকে অনুসরণ কর। যখন তার ডানা তোমাকে আলিঙ্গন করবে তার কাছে আত্মসমর্পণ কর, যদিও তার ডানায় লুকানো শক্ত করে বাঁধা তীক্ষ্ম তরবারি তোমাকে আহত করতে পারে। যখন ভালোবাসা তোমার সংগে কথা বলবে তার অস্তিত্বে বিশ্বাস কর, যদিও উত্তরের বাতাস যেমন সুন্দর বাগানকে মাটিতে মিশিয়ে ধ্বংস করে তেমনি তার স্বর তোমার  স্বপ্নকে চূর্ণ বিচূর্ণ করতে পারে।

ভালোবাসা তোমার মাথায় রাজমুকুট পরাবে আবার একই সময়ে তোমাকে তীব্র যন্ত্রণায় বিদ্ধ করবে। একই সময়ে সে তোমার সমৃদ্ধির জন্য দায়ী তেমনি তোমার অধঃপতনের জন্যও। এমনকি সে তোমার সমান উচ্চতায় উঠে  রোদে কাঁপতে থাকা তোমার কোমল শাখাটিকে আদর করতে থাকে। আবার একই ভাবে তোমার মূল অব্দি নেমে মাটি আঁকড়ে থাকা শিকড় ধরে নাড়া দেয়। শস্যের আঁটির মত ভালবাসা তোমাকে তার কাছে একটু একটু করে জড়ো করে। তোমাকে ঝেড়ে তোমাকে নগ্ন করে। তন্নতন্ন করে পরীক্ষা করে ভালবাসা তোমার খোলস থেকে তোমাকে মুক্তি দেয়।

 

 

তোমাকে চূর্ণ বিচূর্ণ করে তোমার সব শুভ্রতা বের করে তোমাকে দলাই-মলাই করে যতক্ষণ পর্যন্ত না তুমি বশ্যতা স্বীকার কর।

এবং তারপর ভালবাসা তার পবিত্র আগুনে তোমাকে পোড়াবে, যাতে তুমি পবিত্র রুটি হতে পারো ঈশ্বরের পবিত্র খাদ্যের জন্য ।

তুমি যেন তোমার হৃদয়ের গোপনীয়তাকে জানতে পার সে জন্য ভালবাসা এসব কিছুই করবে তোমার জন্য এবং এই জ্ঞান দিয়ে তুমি জীবন- হৃদয়ের একটি খন্ডে পরিনত হবে।

কিন্তু যদি তুমি ভয়ে শুধু ভালবাসায় শান্তি এবং আনন্দ খোঁজো, তাহলে তোমার জন্য ভালো হয় যদি তুমি তোমার নগ্নতাকে ঢাকতে পারো এবং ভালবাসার মেঝেতে মূর্ছিত হয়ে পড়ো। ঋতুশূণ্য পৃথিবীতে তুমি হাসবে, কিন্তু তোমার সমস্ত হাস্যধ্বনি দিয়ে নয় এবং কাঁদবে কিন্তু তোমার সমস্ত চোখের জল দিয়ে নয়।

ভালোবাসা নিজেকে ছাড়া কিছুই দেয় না আবার নিজের কাছ থেকে কিছুই গ্রহণ করে না। ভালোবাসা কিছুই অধিকার না করে সবকিছুই অধিকার করে নেয়।

 

ভালবাসার জন্য ভালোবাসাই যথেষ্ট।

 

যখন তুমি ভালোবাসবে তখন কখনও বলবে না, “ঈশ্বর আমার হৃদয়ে,” বরং বলবে, “আমি ঈশ্বরের হৃদয়ে”।

কখনও তুমি ভালোবাসার গতিকে নিয়ন্ত্রণের চিন্তা  করবে না, ভালবাসার জন্য যদি তুমি সুযোগ্য হও, ভালবাসা তোমার গতিকে নিয়ন্ত্রণ করবে।

 

ভালোবাসা নিজেই পূর্ণ তার অন্য কোন কামনা নেই।

 

কিন্তু যদি তুমি ভালবাস, তোমার অবশ্যই কিছু কামনা থাকবে। তোমার কামনাগুলো যেন এরকম হয়:

 

তুমি গলে সেই ছোট নদীটির মতো প্রবাহিত হবে যে তার সুমধুর গান রাত্রিকে শোনায়। অতিরিক্ত কোমলতার যন্ত্রণাকে তোমার জানতে হবে। তোমার নিজের ভালোবাসা বুঝতে পেরে আহত হবে এবং  স্বেচ্ছায় আনন্দের সাথে তোমাতে রক্তক্ষরণ হবে।

প্রভাতে হৃদয়ের ডানা মেলে জেগে উঠবে এবং আরেকটি প্রেমময় দিনের জন্য ধন্যবাদ জানাবে;

পড়ন্ত বেলায় বিশ্রাম নেবে এবং ভালোবাসার উচ্ছ্বাসের মধ্যে ধ্যানমগ্ন হবে।

সন্ধ্যাকালে কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বাড়ি ফিরে আসবে;

এবং তারপর যখন ঘুমাবে তখন তোমার হৃদয়ে থাকবে প্রিয়জনদের জন্য প্রার্থনা এবং তোমার ঠোঁটে থাকবে তার প্রশংসার গান॥

চলবে

 

রোজীনা পারভীন বনানী 
ঝিনাইদহ, বাংলাদেশ

 

এই লেখকের অন্যান্য লেখা



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Developed with by
Top