সিডনী শুক্রবার, ২৯শে মার্চ ২০২৪, ১৫ই চৈত্র ১৪৩০

নিজের সাধ্যমত সবধরনের অনাচারের বিপক্ষে দাঁড়িয়েছিলেন কবি জীবনানন্দ : আরিফুল ইসলাম সাহাজি


প্রকাশিত:
১১ জানুয়ারী ২০২১ ২০:৩০

আপডেট:
২৯ মার্চ ২০২৪ ০৬:১৫

ছবিঃ কবি জীবনানন্দ দাস

 

পৃথিবীকে বিশ্বপিতা হাতে সাজিয়ে ছিলেন মানুষের বসবাসের যোগ্য করে তুলবার জন্য। তবে দুঃখের বিষয় এই পৃথিবী কখনোই একেবারে সাধারণ গন মানবের জন্য খুব একটা বাস উপযোগী ছিল না। একটা সময় আদিম মানুষ সভ্য হলেন,  দলবদ্ধ হলেন, গড়ে তুললেন রাষ্ট্র। এই রাষ্টের বিনির্মাণের মধ্য দিয়ে এক অদ্ভুত রকমের ক্ষমতার লোভ কিছুসংখ্যক মানুষ কে বিবশ করে তুলল। সমাজে তৈরি হলো শাসক এবং শোষিত সম্প্রদায়। রাজতান্ত্রিক  কিংবা গণতান্ত্রিক  উভয়  রাষ্ট্র ধারণায় শাসক থাকেন ক্ষমতার মূল  অলিন্দে আর সাধারণ গণমানব যাঁরা  রাষ্ট্রের মূল চালিকাশক্তি তারা সব সময় প্রদীপের নিচের অন্ধকারের মতো অসহায় নিপীড়িত অবস্থায় থাকেন। এটাই সর্বকালের একটি অলিখিত বিধানের মত। যেমন হরপ্পা সভ্যতার ধ্বংসাবশেষ আবিষ্কারের পর দেখা গিয়েছিল বৃহৎ বৃহৎ অট্টালিকার পাশেই ছোট ছোট বস্তি মহল্লার অস্তিত্ব রয়েছে। শাসক যেহেতু ক্ষমতার মূল পিরামিডে অবস্থান করেন। সেইহেতু একটি চলন্ত গাড়ির মধ্যে থাকা যাত্রীদের জীবনের নিরাপত্তা যেমন ড্রাইভার এর উপর নির্ভর করে। ঠিক তেমনি জনগণের জীবনের গল্পগুলো কোন পথে ও  কোন খাদে  চালিত হবে সেটাও নির্ভর করে রাষ্ট্রনায়কদের মতি গতির উপর। একটি বিষয় লক্ষ্য করার মত। পৃথিবী পুরুষের সৃষ্টিলগ্ন হতে আজ পর্যন্ত মহামতি শাসকের সংখ্যা অত্যন্ত অল্প সংখ্যক। মানুষের বাসের নিমিত্তে তৈরি এই পৃথিবীর ক্ষমতার অলিন্দে সিংহভাগ সময় ধরে রয়েছেন হিটলার মুসোলিনি তেজোর মত  নিষ্ঠুর রাষ্ট্র নায়কগণ। ফলত,  একেবারে সাধারণ মানুষ যাঁরা,  তাঁরা, কোনোকালেই খুব একটা সুখে নিজেদের জীবন পরিচালিত করতে পারেননি। শাসকের রক্তচক্ষু,  নিষ্ঠুর অত্যাচার বরাবরই তাদেরকে ব্যতিব্যস্ত করে রেখেছিল।

শুধুমাত্র রাষ্ট্রীয় শক্তির নিপীড়ন ও সন্ত্রাস নয়, রাষ্ট্র পরিচালিত সামন্ত প্রভু এবং রাষ্ট্রের অন্যান্য কর্তাব্যক্তিরা বরাবরই সাধারণ গন মানবের জীবনের পথ কে খাদের  দিকে টেনে নিয়ে গেছেন। তবে লক্ষ্য করবার বিষয় সাধারণ মানুষ যাঁরা,  তারা সকলেই কিন্তু ধোয়া তুলসী পাতাটি নন। তাঁদের মধ্যেও রয়েছে ক্ষমতা ও  অর্থলোভ, কামনা-বাসনার অন্যান্য কুদিক।

ফলে মানবকূল শিক্ষায় এবং নাগরিক সভ্যতাই  আধুনিকতম হয়ে উঠলেও হৃদয়গত  ব্যাপারে তাঁরা  ক্রমশ মধ্যযুগীয় বর্বরতার দিকে ঠেলে দিয়েছেন মানুষের পৃথিবীকে। সামান্য স্বার্থের জন্য অন্যের জীবন এবং সম্পদ দখল। নারীর সম্মান লুণ্ঠন সহ অন্যান্য অমানবিক বিষয় ও  ব্যাপারে মানুষের জুড়ি মেলা ভার। প্রাণের কবি জীবনানন্দ যে সময়টিতে হেঁটে বেরিয়েছেন পৃথিবীর বুকে সেই সময়টি। মোটেও সুলক্ষনা যুক্ত ছিল না। উপনিবেশিক শক্তি নিজেদের সাম্রাজ্যবাদী অভিলিপ্সা পূরণের জন্য এশিয়া এবং আফ্রিকার এক একটি ভূখণ্ড নিজেদের দখলে নিয়ে শাসনের নামে নির্যাতন এবং অত্যাচারের স্টিমরোলার চালিয়ে দিয়েছিল জোরকদমে। পাশ্চাত্যের হায়েনার দল ভারতবর্ষ চীনসহ এশিয়া এবং আফ্রিকা ভূখণ্ডের মানুষের জীবনকে অচল করে তুলেছিল। তাদের শাসনের নামে শোষণের  ফলে ভারতবর্ষের আকাশেও  নেমে এসেছিল এক কালো আমাবস্যা। সেইসাথে দু-দুটি বিশ্বযুদ্ধ এবং দুর্ভিক্ষ অনাহারের সঙ্গে লড়তে হয়েছিল এই দেশের মানুষকে। জীবনানন্দ  পিরামিড কবিতা লিখছেন

'শতাব্দী শবদেহে শ্মশানের ভস্মবহ্নি জ্বলে 
পান্থ ম্লান চিতার কবলে 
একে একে ডুবে যায় দেশ-জাতি সংসার সমাজ।' 

কবি জীবনানন্দ দাশ রবীন্দ্র-উত্তর কালের সর্ব শ্রেষ্ঠ কবি পুরুষ এ বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই। রবীন্দ্র-নজরুল সময়ে জন্মগ্রহণ করেও তিনি নিজস্ব একটি কাব্যঘরানা  তৈরি করতে ভীষণ রকম সক্ষম হয়েছিলেন। আর পাঁচজন কালজয়ী সাহিত্য সাধকের মত তিনিও তার জীবন কালে পাননি তার যোগ্য  সম্মান। আসলে  তিনি তাঁর কাল থেকে অনেকটাই এগিয়ে ছিলেন। যিনি অশ্বমেধের ঘোড়া হবেন তিনি তাঁর কাল থেকে এগিয়ে থাকবেন সেটাই স্বাভাবিক।  জীবনানন্দের ক্ষেত্রে ঠিক তেমনই হয়েছিল। তাঁর  সমকালের কাব্য পাঠক এবং কাব্য সমালোচক তার কবিতার গুরুত্ব নিরূপণ করতে ব্যর্থ হলেও, আধুনিককালের পাঠকগণ ঠিক তার কাব্যের আস্বাদ যেমন অনুভব করেছেন,  তেমনি জীবনানন্দের কবিতার শব্দ -  উপমা এবং রূপকল্পে বিভোর হয়েছেন। বর্তমান সময়ে কবি জীবনানন্দ দাশ সর্বাধিক পঠিত, আলোচিত ব্যক্তি, এ বিষয়ে সন্দেহ হওয়ায় প্রয়োজনীয়তাই নেই বললেই চলে। জীবনানন্দের কবিতা এবং তাঁর  ব্যক্তি জীবন নিয়ে গবেষণার বহর দেখলেই বোঝা যায় তার জনপ্রিয়তা কত্তটা আকাশচুম্বী। কবি জীবনানন্দ দাশ তাঁর সমকাল এবং সেকালের অন্ধ দিকসমূহ এড়িয়ে যাননি। ধ্বংসের পিরামিডে বসে 'আহা কি আনন্দ আকাশে বাতাসে' গান ধরবার মনন তার ছিল না। জীবনানন্দের কবিতায় আমরা বারে বারে লক্ষ্য করেছি কালের প্রসববেদনাকে তিনি কাব্যরূপ দিয়েছেন। 'অদ্ভুত আঁধার এক' নামক কবিতাটি তারই এক জ্বলন্ত দৃষ্টান্ত। 

পৃথিবীর গভীর গভীরতর অসুখ ' সেই সময় জীবনানন্দের মাথার ভিতরে স্বপ্ন নয় কোন এক বোধ কাজ করেছে। আর পাঁচটা সাধারণ মানুষের মতো হাই তুলে ঘুমাতে পারেন না কবিবর। সাধারণ মানুষের কষ্ট এবং মনুষত্বের মৃত্যু তাকে ব্যতিব্যস্ত করে তুলল। জীবনানন্দ এইসময় লিখলেন এক একটি কালজয়ী সব কবিতা। 

'হাজার বছর শুধু খেলা করে অন্ধকারে জোনাকির মতো /চারিদিকে পিরামিড - কাফনের ঘ্রাণ' 

 সাদা কাফনের জলচ্ছবি জীবনানন্দের হৃদয়কে ভরাক্রান্ত করে তোলে। ক্ষমতালোভী কিছু মানুষের হাতে নিরীহ গনমানবের জীবনের বাঁচা মরা দেখে ছটফট করে ওঠেন প্রাণের কবি জীবনানন্দ। তাঁর 'মনে হয় এরচেয়ে অন্ধকারে ডুবে যাওয়া ভালো' কবি উপলব্ধি করেন,

'আজকের আগে যেই জীবনের ভিড় জমেছিল 
তারা মরে গেছে; / প্রতিটি মানুষ তার নিজের স্বতন্ত্র সত্তা নিয়ে অন্ধকারে হারায়েছে' 

নিষ্ঠুর হয়ে উঠেছে মানুষের সভ্যতা। একে অপরের রক্তঝরানোটা যেন এক উল্লাসকর অবস্থা। মানুষের এই জরাগ্রস্থ মানসিকতা দেখে হতাশ হয়েছেন কবি। অন্য একটি কবিতাই তিনি লিখলেন,

 'মানুষ মেরেছি আমি - তার রক্তে আমার শরীর ভরে গেছে / পৃথিবীর  পথে এই  নিহত ভ্রাতার  ভাই আমি' 

একটা অন্ধকার যেন ক্রমশ শরীর ঘেঁষে হয়ে উঠছে। অন্ধ রাত  গ্রাস করছে মানুষের এই পৃথিবীকে।  এমন এক অদ্ভুত হতাশ করা মুহূর্তে কবি লিখলেন 'অদ্ভুত আঁধার এক' নামক এই কবিতাখানি। 

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের ধ্বংসস্তূপের সমস্যা জর্জরিত ভূমিতে দাঁড়িয়ে কবিতা লিখেছেন জীবনানন্দ। যুদ্ধউত্তর পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে পাল্টে গেছে জীবনের মূল সংগতি।  পরবর্তীতে দুর্ভিক্ষ ও অন্যান্য সামাজিক অসঙ্গতিতে হারিয়ে গেছে জীবনের ছন্দ। সেই বিশ্বাস-অবিশ্বাসের সময় ও কালগত পরিআবহিক অবস্থায়। হৃদয়ের অস্থির যন্ত্রণাবোধকে  কাব্যরূপ দেওয়ার জন্যই ' অদ্ভুত আঁধার এক' কবিতার  মতো বেশ কিছু কবিতায় প্রাণের কবি জীবনানন্দ কুণ্ডুলিপাকানো  ধোঁয়াটে কাল ও  সময় কে কবিতার শরীর হিসাবে  গ্রহণ করেছেন।  আসলে জীবনানন্দ জীবনের কবি। মানুষের অসহায় অবস্থাকে এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা তিনি কখনই  করেননি। তাঁর বারেবারে মনে হয়েছে,

 'যক্ষ্মা রোগীর মত ধুঁকে মরে মানুষের মন / জীবনের চেয়ে সুস্থ মানুষের নির্ভীক মরণ' 

জীবনানন্দ নজরুলের মতো ব্যাপক বিদ্রোহে ফেটে পড়তে না পারলেও,  তাঁর  হৃদয়ের যে অস্থিরতা,  তা লিপিবদ্ধ করেছেন, তাঁর  একাধিক মন কেমন করা কবিতাই।  'অদ্ভুত আঁধার এক' কবিতার প্রথম চরণটিতে খুবই স্পষ্ট করে দিয়েছেন কবি এ কবিতার মূল কথন খণ্ডকে। একটা কালো মেয়ে যেন পৃথিবী পুরুষকে আচ্ছন্ন করে তুলছেন। অদ্ভুত মায়াবী আবেদনে পৃথিবীর শরীর  বিগলিত হয়ে উঠছে। একটা ঘুণধরা সমাজ ব্যবস্থা জনপ্রিয় হয়ে উঠছে পৃথিবীর গালিচা পাতা শাসন ব্যবস্থায়। ধর্মগ্রন্থগুলোতে লেখা আছে পৃথিবীর শেষের  দিন যখন ঘনিয়ে আসবে। তখন অযোগ্যের দল হয়ে উঠবেন ক্ষমতার মূল স্তম্ভ। যাদের যোগ্যতা বিগ জিরো। তারাই হবেন সমাজ ও রাষ্ট্রের মূলাধার। শাসন ক্ষমতার অলিন্দে সেই মানুষগুলোই আসীন হবেন। যাদের দ্বারা কোন কল্যাণকর অবস্থা তৈরি হবে না রাষ্ট্র ও সমাজের।  তাদের শাসন এবং শোষণে ব্যতিব্যস্ত হয়ে উঠবে সমাজের যথার্থ শুভবুদ্ধি সম্পন্ন সম্প্রদায়। যাঁদের শক্ত হাতে দেশ কিংবা রাষ্ট্র পরিচালিত হওয়ার কথা। তাঁরা থাকবেন  রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার থেকে বহুদূরে। কবি জীবনানন্দ দাশ এ কবিতায় যেন পৃথিবীর পুরুষের সেই শেষ দিকে ধাবিত হওয়ার গল্প শোনালেন। একদল অযোগ্য অপদার্থ মানবকুল নিজেদেরকে ক্ষমতার অলিন্দে স্থাপন করতে সক্ষম হয়েছেন। তাদের অঙ্গুলিহেলনে শুভবুদ্ধি সম্পন্ন মানুষের জীবন হয়ে উঠেছে বিপন্ন। নিজেদেরকে সভ্য বলে জাহির করা সেই অসভ্যের দল মানবজীবনকে ক্রমশ টেনে নিয়ে যাচ্ছে খাদের কিনারে।  হতাশ জীবানন্দ লিখছেন, 

'অদ্ভুত আঁধার এক এসেছে পৃথিবীতে আজ' 

কবিতার এই চরণটি ভীষণ রকম প্রাসঙ্গিক,  মনে হয় একটু আগেই কবিবর যেন লিখে বাইরে পায়চারি করছেন। বর্তমান  পৃথিবীর যেরূপ পথ চলা তাতে করে অনুভব হয় সত্যই কুন্ডুলি পাকানো অন্ধ গহ্বর গিলতে আসছে। তার পেটে ভীষণ খিদে। যোগ্য মানুষের যথার্থ সম্মান কোনোকালেই সমাজ ও রাষ্ট্রব্যবস্থায় সেই অর্থে দেওয়া হয়নি। কেননা সর্বকালেই  মসনদ আলো  করে বসেছেন সবচেয়ে অন্ধের দল। যাদের হৃদয়ে কোনো প্রেম নেই, প্রীতি নেই, নেই  ভালোবাসা প্রলেপ। অথচ দুঃখের  বিষয় তাদের পরামর্শ ছাড়া এই পৃথিবী অচল। পূর্বে আমি বলেছি,  সৃষ্টির আদি হতে আজ পর্যন্ত পৃথিবী শাসন করেছেন যত রাষ্ট্রনায়ক তাঁরা  অধিকাংশ স্বৈরাচারী নিষ্ঠুর এবং অকৃতজ্ঞ। পৃথিবীতে কল্যাণকর আবহ সৃষ্টিতে  তাদের বিন্দুমাত্র অবদান নেই। কবিতার তৃতীয় এবং চতুর্থ চরণে সেই কথারই প্রতিষ্ঠা দিলেন কবি। তিনি লিখলেন, 

'যাদের হৃদয়ে কোনো প্রেম নেই - প্রীতি  নেই -  করুণার আলোড়ন নেই /পৃথিবী অচল আজ তাদের সুপরামর্শ ছাড়া'

পূর্বেই বলেছি, সমাজের শুভবুদ্ধি সম্পন্ন যে সমস্ত মানুষজন আছেন অর্থাৎ যাদের দ্বারা রাষ্ট্র ও সমাজের কল্যাণকর আবহ গড়ে উঠবে। তাঁরা বরাবরই মূল ক্ষমতা থেকে অনেকটা দূরে অবস্থান করেন অর্থাৎ সেই সমস্ত মানুষ শোষিত এবং লাঞ্ছিত হন। যাদের সত্যঅর্থেই সমাজ ও রাষ্ট্র গঠনে সদর্থক  কল্যাণকর পরিআবহের সাথে যুক্ত হওয়ার দরকার ছিল কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয় ক্ষমতালোভীর  দল তাদেরকে সমাজ ও রাষ্ট্রের জন্য কল্যাণকর প্রকল্প কিংবা ব্যবস্থার সঙ্গে যুক্ত করেন না। ঐ সকল মানুষগুলো যতটুকু করেন অর্থাৎ তাদের মহৎ সত্য বা রীতি শিল্প সাধনার রেওয়াজ  সাধারণত ব্যক্তিগত স্তরে প্রতিধ্বনিত হতে দেখা যায়। জীবনের এই অবস্থার হতশ্রীদশা দেখেছিলেন কবি, জীবনের ক্লান্তিকে। অস্তিত্ববাদের যন্ত্রণাকে তিনি এ কবিতায় এক অসাধারণ কাব্যময় শরীর রূপে উপস্থাপন করলেন। অযোগ্য ও  নিষ্ঠুর শাসকের অত্যাচার ভয়াবহতায় মহৎপ্রাণ সমূহ আক্রান্ত হতে দেখে কবিবর হতাশ হয়েছেন, 'সুচেতনা'  কবিতার মত এ কবিতায় তিনি কোন আশার বাণী শোনাতে পারেননি। বলতে পারেননি 'সুচেতনা এই পথে আলো জ্বেলে এ পথেই পৃথিবীর ক্রমমুক্তি হবে'। 'অদ্ভুত আঁধার এক'  কবিতায় কবি অন্ধকার কে আরো ঘনীভূত করে লিখলেন, 

'এখনো যাদের কাছে স্বাভাবিক বলে মনে হয়/ মহৎ সত্য বা রীতি কিংবা শিল্প অথবা সাধনা 
শকুন ও শেয়ালের খাদ্য আজ তাদের হৃদয়'

জীবনানন্দ বরাবরই ন্যায় ও সত্যের পথে থেকেছেন। পৃথিবীর মানুষের চোখে যেটা সত্যকার সাফল্য (মোটা চাকরি - অর্থ), সেইরূপ সাফল্য তিনি কখনই পাননি। তবুও পথভ্রষ্ট হননি। নিজের সাধ্যমত সব ধরনের অনাচারের বিপক্ষে তিনি নিজের অবস্থান স্পষ্ট করেছেন। 

 

আরিফুল ইসলাম সাহাজি 
অধ্যাপক, পশ্চিমবঙ্গ, ভারতবর্ষ 

 

এই লেখকের অন্যান্য লেখা



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Developed with by
Top