সিডনী শুক্রবার, ২৯শে মার্চ ২০২৪, ১৪ই চৈত্র ১৪৩০

মানুষ, বাঙালি, অতঃপর ধর্ম : এডওয়ার্ড রিয়াজ মাহামুদ


প্রকাশিত:
১৯ এপ্রিল ২০২১ ২২:২৪

আপডেট:
১৯ এপ্রিল ২০২১ ২২:২৯

 

 

সেই কত শতাব্দী আগে কবি বড়– চণ্ডীদাস বলে গেছেন, ‘সবার উপরে মানুষ সত্য, তাহার উপরে নাই’। সত্যিকার অর্থে মানুষের সবচেয়ে বড় পরিচয় হল সে মানুষ। সৃষ্টির সেরা জীব। যার মধ্যে আছে বুদ্ধি, বিবেক, বিচার-বিবেচনা ও মানবতাবোধ। তবে এসব কিছু থাকা সত্ত্বেওও মানুষ কখনও কখনও তার মনুষ্য পরিচয় ভুলে যায়। জাতি, ধর্ম, বর্ণ ও গোত্রের বিভেদ সৃষ্টি করে সে রচনা করে নতুন নতুন পরিচয়। এরপর নিজের জাত, ধর্ম, বর্ণ ও গোত্রকে সমুন্নত রাখতে এবং নিজের পরিচয়কে সর্বোচ্চ আসনে অধিষ্ঠিত করতে শুরু হয় দ্বন্ধ। জন্ম নেয় অন্যের প্রতি হিংসা, বিদ্বেষ ও ঘৃণা। আর তা থেকে সৃষ্টি হয় সাম্প্রদায়িকতা। যার ফলে সহিংসতা ও যুদ্ধ অনিবার্য হয়ে ওঠে। তা থেকে মানুষকে সুপথে ফেরাতে পারে কেবলমাত্র সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি।

প্রথমত, যদি বিভিন্ন ধর্মের ধর্মগ্রন্থ থেকে সৃষ্টিতত্ত্ব দেখি, তাহলে মানুষ সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যাবে। “পরে ঈশ্বর কহিলেন, আমরা আমাদের প্রতিমূর্তিতে, আমাদের সাদৃশ্যে মনুষ্য নির্মাণ করি; আর তাহারা সমুদ্রের মৎস্যদের উপরে, আকাশের পক্ষীদের উপরে, পশুগণের উপরে, সমস্ত পৃথিবীর উপরে, ও ভূমিতে গমনশীল যাবতীয় সরীসৃপের উপরে কর্তৃত্ব করুক। পরে ঈশ্বর আপনার প্রতিমূর্তিতে মনুষ্যকে সৃষ্টি করিলেন; ঈশ্বরের প্রতিমূর্তিতেই তাহাকে সৃষ্টি করিলেন, পুরুষ ও স্ত্রী করিয়া তাহাদিগকে সৃষ্টি করিলেন” (পবিত্র বাইবেল, আদিপুস্তক ১:২৬-২৭)। আমরা দেখতে পাই, ঈশ্বর মানুষকে শুধু পুরুষ ও স্ত্রী এই দ্ইু শ্রেণিতে সৃষ্টি করেছিলেন। এখানে কোনো ধর্মের কথা উল্লেখ নেই। সুতরাং এটা স্পষ্ট যে, ধর্ম ও সাম্প্রদায়িকতা মানুষের সৃষ্টি।

মানবজাতির এই সম্মান ও মর্যাদা সর্বজনীন। প্রতিটি মানুষ সে বিশ্বাসী হোক বা অবিশ্বাসী মৌলিক সম্মান ও অধিকারের ক্ষেত্রে সমান। পবিত্র কোরআনের বর্ণনা থেকেও ‘সাধারণ সম্মান সব মানুষের জন্য’ প্রমাণিত হয়। আল্লাহ বলেন, ‘আমি মানবজাতিকে সম্মানিত করেছি, তাকে কর্তৃত্ব দিয়েছি স্থলে ও জলে, তাদেরকে দিয়েছি উত্তম জীবিকা এবং তাদের শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছি আমার সৃষ্টিজগতের অনেকের ওপর।’ (সুরা বনি ইসরাইল, আয়াত: ৭০)

দ্বিতীয়ত, ধর্মকে কেন্দ্র করেই মানুষের মাঝে সম্প্রদায়গত বিভাজন সবচেয়ে বেশি লক্ষ করা যায়। যেমন কেউ মুসলিম, কেউ-বা হিন্দু, কেউ বৌদ্ধ, কেউ-বা খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের মানুষ। আবার একটি ধর্মের ভেতরেও আছে ভিন্ন ভিন্ন বর্ণের মানুষ। যেমন মুসলমানদের ক্ষেত্রে কেউ সুন্নি, কেউ-বা শিয়া। খ্রিষ্টানদের মধ্যে কেউ ক্যাথলিক, আবার কেউ প্রোটেস্টান্ট। হিন্দুদের মধ্যে কেউ ব্রাহ্মণ, কেউ ক্ষত্রিয়, আবার কেউ-বা শুদ্র। যদিও ধর্ম সম্প্রদায় সৃষ্টি করে, তাই বলে কোনো ধর্ম কখনও কাউকে সাম্প্রদায়িক হতে বলে না। তা ছাড়া ধর্ম কখনও সাম্প্রদায়িকতাকে সমর্থনও দেয় না। কারণ বেশিরভাগ ধর্মই মানুষকে শান্তি ও সম্প্রীতির পথ দেখায়।

তৃতীয়ত, আবহমানকাল থেকেই বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির অনন্য দৃষ্টান্ত হিসেবে স্বীকৃত। এটা ঐতিহাসিকভাবে সত্য যে, ভারতীয় উপমহাদেশে প্রাক ব্রিটিশ যুগে, অর্থাৎ মধ্যযুগে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা কিংবা অপর ধর্মের ওপর হামলার কোনো নজির নেই। এদেশে সাংবিধানিকভাবে ধর্ম-বর্ণ সবাই সমান। এতদসত্ত্বেওও পরিতাপের বিষয়, আধুনিক সময়ে বসবাস করেও সাম্প্রদায়িক ক্ষতের প্রকোপ নিয়ে আমাদের ভাবতে হচ্ছে। আমরা বোধহয় জীবনের প্রায় শতকরা ৯৯ ভাগ সময়ই মানুষ থাকি না। পহেলা বৈশাখের একদিনের বাঙালি হওয়ার মতোই একদিনের বন্ধুত্ব করি। বন্ধু দিবস এলে আমরা বন্ধুত্ব নিয়ে ভাবি। অথচ সেদিনও বেশিরভাগ মানুষ বহুজাতিক কোম্পানির আর্থিক বিজ্ঞাপনে প্রভাবিত হয়ে শুধু বন্ধুত্ব রক্ষার অভিনয় করে থাকে। তাই সে অভিনয় স্থায়ী হয় না।

চতুর্থত, মুসলিম, হিন্দু, বৌদ্ধ নাকি খ্রিষ্টান? বাঙালি? নাকি মানুষ আমি? জবাবটা দিতে আমার খুব ভয় হচ্ছে। কোনটা বলে যে কার ক্রোধের পাত্রে পরিণত হই সে তো আর বলার অপেক্ষা রাখে না। তবে হ্যাঁ, বিষয়টা নিয়ে একটু আলোচনা করতে তো দোষ নেই। ভাষা বাংলা তাই বাঙালি, থাকি স্বাধীন বাংলায় তাই বাংলাদেশি, আর ধর্ম বলে আমি ধর্ম বিশ্বাসী। অনেকেই সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিকে নিছক ফ্যাশন মনে করেন। আমাদের সমাজের বেশিরভাগ মানুষ শব্দবন্ধটিকে নিজেদের স্ট্যাটাস বৃদ্ধির জন্য উচ্চারণ করেন মাত্র। অথচ নিজেরাই সাম্প্রদায়িক মনোভাব পোষণ করে থাকেন। এই লুকোনো কদর্যতা বেরিয়ে পড়ে যেকোনো সময়ই। ফলে হঠাৎ সংখ্যালঘুরা লক্ষ করেন, তাদের এতদিনের আস্থাভাজন ব্যক্তিরা তাদের জীবন হরণে নেতৃত্ব দিচ্ছেন! কী যে কষ্টের এই অবস্থা! ঐ অবস্থায় যারা পড়েছেন তারাই কেবল সেটা বোঝেন।

পঞ্চমত, আমাদের প্রতিবেশী দেশে সংখ্যালঘুদের অবস্থার ওঠা-নামায় এদেশের সংখ্যালঘুদের অবস্থার পরিবর্তন করতে আগ্রহী অনেকেই। একটু ভালো করে লক্ষ করলেই বোঝা যায়, এরা মূলত চরমপন্থী। এরা বিভিন্নভাবে সংখ্যালঘুদের ক্ষতি করে লাভবান হতে চায়। কেউ আর্থিকভাবে, কেউ ভ‚মি দখল করে, আবার কেউ ধর্ম ব্যবসা করে। আর সাধারণ মানুষ এদের দ্বারা প্রভাবিত হয় বলেই সংখ্যালঘুরা সার্বিকভাবেই করুণ অবস্থায় পড়ে যায়। এসব চরমপন্থী লোভী শ্রেণির অদ্ভুত যুক্তির কাছে মানবতা পরাজিত হয়। একবার আমি আমার এক বন্ধুকে বলেছিলাম আমাদের দুজনেরই হাত কেটে রক্ত বের করতে। এতদিনের গলাগলি ভাব। নিশ্চয়ই রক্তের রং এক হবে। মানুষ বলে গণ্য না হলেও, হয়তো বন্ধুত্বের ভরসায় তার রক্তের রং আমার রক্তের সাথে মেলাতে চেয়েছিলাম। তবে আমি এখনও জানি না তার রক্ত আর আমার রক্ত একই বর্ণের কিনা, কারণ সে আমার আহবানে সাড়া দেয়নি।

ষষ্ঠত, বাংলার প্রাচীন মানুষেরা ছিলেন দ্রাবিড় বা সম্মানিত ভাববাদী নোহের বড় ছেলে সামের বংশধর। খ্রিষ্টপূর্ব ১৫০০ সালের দিকে ইয়াফসের বংশের একটি শাখা আর্য নামে ভারতে আগমন করে। ক্রমান্বয়ে তারা ভারত দখল করে এবং আর্য ধর্ম ও কৃষ্টিই পরবর্তীকালে হিন্দু ধর্ম নামে প্রসিদ্ধি লাভ করে। ভারতের দ্রাবিড় এবং অনার্য ধর্ম ও সভ্যতাকে বিলীন করে নিজেদের প্রতিষ্ঠা করেছে আর্যগণ। কালক্রমে আর্যগণের পাশাপাশি সহাবস্থান গ্রহণ করে মৌর্যগণ। তারপর ক্রমান্বয়ে আসতে থাকে গুপ্ত, গৌড়, পাল ও সেন বংশ। তারপর মুসলিমেরা। সবশেষে আগমন ঘটে ব্রিটিশদের। তবে ব্রিটিশেরা শাসন ও শোষণ করলেও তাদের ধর্ম কিন্তু কখনওই চাপিয়ে দেয়নি।

যে কারণে সেই প্রাচীনকাল থেকে চলে আসা রীতির ভাঙন ধরে তা আমাদের অজানা নয়। ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান আর হিন্দুস্থানের জন্ম হওয়ার মাধ্যমে একটি উপমহাদেশ কাচের টুকরো হয়ে যায়। এর আগে পুরো বাংলাকে একই শাসকের অধীনে রেখে শাসনপদ্ধতি বিদ্যমান ছিল। কিন্তু ১৯৪৭ সালে ধর্মের ভিত্তিতে বাঙালি জাতি দুই ভাগে বিভক্ত হয়। আমাদের নতুন পরিচয় হয় পূর্ব পাকিস্তানি। তবে হ্যাঁ, মাঝখানে ছয় বছরের কিছু বেশি সময় বঙ্গভঙ্গের কারণে বাঙালিরা দুই ভাগে বিভক্ত ছিল। তখন তাদের পরিচয়ও ছিল একটু ভিন্ন। এতদিন যেখানে বলা হত বঙ্গবাসী, এখন (১৯০৫-১১) সেখানে বলা হচ্ছে পূর্ব বা পশ্চিমবঙ্গের অধিবাসী। কালের আবর্তন আর যুগের বিবর্তনে যে অনেক কিছু পরিবর্তন হতে পারে কারওরই তা অবিশ্বাস করার কথা নয়।

সপ্তমত, আপনি কি জানেন বর্তমানে আমাদের পরিচয় বাংলাদেশি কেন? এদেশে আমার জন্ম, ভাষা বাংলা এবং ধর্ম আছে, তাই আমি বাংলাদেশি। একদম সোজা কথা। এটা না বোঝার মতো কী? হুম! কথাটা একদম ঠিক বলেছেন। তবে এর পেছনে জড়িয়ে আছে লাখো মানুষের রক্তের ইতিহাস। মিশে আছে চাতুর্যপূর্ণ রাজনৈতিক কৌশল। ১৯৪৭ সালের পর পাকিস্তান শুনলেই নাকে লাগে যেমন মুসলমানদের গন্ধ, ঠিক তেমনি ভারত বা বঙ্গ নামটির সাথে মিশে যায় হিন্দুত্ববাদী চিন্তা। ঘর থেকে বের হতেই যদি বিপরীত কিছুর গন্ধ নাকে আসে তাদের জন্য এর চেয়ে বড় কষ্ট মনে হয় পৃথিবীতে আর কিছুই ছিল না। তাই কালক্রমে সেই গন্ধই তারা রূপান্তরিত করে মুক্তিযোদ্ধা-রাজাকার গন্ধে। সে গন্ধ আজো বিদ্যমান এবং এর শেষ যে কোথায় তা বেমালুম। তবে একটা বিষয় স্পষ্ট। যতদিন এই গন্ধের প্রচার করা যাবে ততদিন স্বার্থাণে¦ষীরা তাদের মিষ্টি কথা আর শিষ্ট ব্যবহার দিয়ে আমাদের শোষণ করে যাবেন। ও আচ্ছা, আমি কী তা তো আর বলা হল না। হুম, উপরের আলোচনা দ্বারা আমি কী হতে পারি বা আমার কী হওয়া উচিত তা বিচার করার দায়িত্ব আপনার।

এই দেশের মানচিত্র গড়তে ত্রিশ লক্ষ মানুষ রক্ত দিয়েছে। সেই রক্তে কি আলাদা করে কোথাও লেখা ছিল হিন্দুর রক্ত, মুসলমানের রক্ত, বৌদ্ধের রক্ত কিংবা খ্রিষ্টানের রক্ত? কোথাও লেখা ছিল না। তবু কেন এই দেশের সব শ্রেণি ও পেশার মানুষের ধর্মীয় বিশ্বাসে স্বাধীনভাবে মত প্রকাশ করার, স্বাধীনভাবে চলাফেরা করার অধিকার নেই? কেন এই দেশের তথাকথিত রাজনৈতিক দলের লোকজন, নেতাকর্মী, ধর্মীয় সংখ্যাগুরু সম্প্রদায়ের লোকজন সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উপর আঘাত হানে? এই প্রশ্নের উত্তর কারও জানা নেই। কেন একজনের ধর্মীয় বিশ্বাসে আপনি আঘাত করবেন? কেন একজনের পবিত্র উপাসনালয়ে আপনি হামলা করবেন? কেন আপনি নিজের বিশ্বাস আরেকজনের উপর চাপিয়ে দেবেন? কে আহমদিয়া সম্প্রদায়ের, কে শিয়া, কে সুন্নি, কে হিন্দু, কে বৌদ্ধ, কে খ্রিষ্টান, কে আদিবাসী তা দিয়ে আপনার কী দরকার?

অষ্টমত, আপনি কি আদৌ নিজের ধর্ম পরিপূর্ণভাবে বিশ্বাস করেন? নাকি ধর্মের বেশভ‚ষা নিয়ে রাস্তায় ঘুরে বেড়ান? আপনার ধর্মের পবিত্র গ্রন্থে কী লেখা আছে তা কি কখনও পড়ে দেখেছেন? নাকি শোনা কথায় গোটা জীবন, যৌবন পার করে দিয়েছেন? কে কী অজুহাত দিল তা মনেপ্রাণে বিশ্বাস করে নিজের পবিত্র ধর্মকে ও ধর্মগ্রন্থকে অপমান করেছেন। পৃথিবীতে এমন কোনো ধর্ম নেই, এমন কোনো ধর্মগ্রন্থ নেই যেখানে লেখা আছে অন্যের ধর্মীয় বিশ্বাসে আঘাত করার কথা, অন্যের বিশ্বাসকে ভেঙে চুরমার করে দেয়ার কথা, অন্য ধর্মের উপাসনালয়ে হামলা করার কথা। তবে কেন এই পৈশাচিকতা? কেন এই বর্বরতা? কেন? তবে হ্যাঁ, আপনি যেই হোন না কেন, আপনি জানেন যে, এসব ধর্মীয় উপাসনালয়ে হামলা করলে, বর্বরতা চালালে আপনার বিচার হবে না। আপনি স্বাধীন দেশের স্বাধীন নাগরিক হয়ে মাথা উঁচু করে, বুক ফুলিয়ে চলতে ফিরতে পারবেন। তাই আপনি এই কাজ করছেন তো! বেশ ভালো। সমস্যা নেই। আপনার ঘরে এই শত্রæ বড় আকার ধারণ করে আপনাকেই আঘাত করবে।

পরিশেষে, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে হলে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিকে রক্ষা করতে হবে। জাতিগত, বর্ণগত ও ধর্মীয় বিভেদকে তুচ্ছ করে সবার মধ্যে সম্প্রীতির বন্ধনকে জোরালো করতে হবে। সবার প্রতি সহযোগিতা ও সহমর্মিতার হাত বাড়াতে হবে, সৃষ্টি করতে হবে পারস্পরিক আস্থা ও বিশ্বাস। রাষ্ট্র ও সমাজ কর্তৃক সবার জন্য সমান সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে। এমন পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে যেন সংখ্যালঘুরা নিরাপদে এবং নির্দ্বিধায় সবকিছুতে অংশ নিতে পারে। সবার ভেতর অসাম্প্রদায়িক চেতনার বিকাশ ঘটাতে হবে। সরকার, রাজনৈতিক দল ও রাষ্ট্রব্যবস্থাকে সংখ্যালঘুদের অনুক‚ল হতে হবে। ধর্মান্ধতা পরিহার করে মানুষের প্রতি, অন্য ধর্মের প্রতি, অন্য সম্প্রদায়ের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে হবে। বিশ্বাস করতে হবে যে, অন্য ধর্মের নিরীহ, নির্দোষ মানুষকে হত্যা করার নাম জিহাদ বা ক্রুসেড নয়। আর তা হলেই জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠিত হবে।

“জগৎ জুড়িয়া এক জাতি আছে, সে জাতির নাম মানুষ জাতি”- কবির এই কথা মনেপ্রাণে বিশ্বাস করলে কোনো মানুষের পক্ষে সাম্প্রদায়িক হওয়া সম্ভব নয়। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি মানুষকে অন্যের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে শেখায়। দৃষ্টিভঙ্গি উদার করে। মানুষকে ঐক্যে বিশ্বাস করতে শেখায়। নিজের ধর্মের প্রতি যেমন বিশ্বাস জোরালো করে তেমনি অন্যের ধর্মের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করা যাবে না- এই বোধও তৈরি করে দেয়। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির কারণেই বহু সম্প্রদায় থাকা সত্ত্বেওও অনেক জাতি শক্তিশালী জাতি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে। জয় হোক মানবতার!

 

এডওয়ার্ড রিয়াজ মাহামুদ
লেখক: গবেষক ও বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক

 

এই লেখকের অন্যান্য লেখা



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Developed with by
Top