সিডনী বৃহঃস্পতিবার, ২৫শে এপ্রিল ২০২৪, ১২ই বৈশাখ ১৪৩১

করোনাকালে হোক আগাপে প্রেম : প্রফেসর এড‌ওয়ার্ড রিয়াজ মাহামুদ


প্রকাশিত:
২৮ এপ্রিল ২০২১ ২০:৫৮

আপডেট:
২৫ এপ্রিল ২০২৪ ২৩:৫২

ছবিঃ প্রফেসর এড‌ওয়ার্ড রিয়াজ মাহামুদ

 

নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণে দিন দিন পরিস্থিতি ভয়াবহ হচ্ছে। এক দেশ থেকে অন্য দেশে ছড়িয়ে পড়ছে এই ভাইরাস। জ্যামিতিক হারে বাড়ছে মৃতের সংখ্যাও। ফলে ঘরবন্দি হয়ে পড়েছে পুরো বিশ্ব। এরই মধ্যে রেস্তোরাঁ, ক্লাব, পার্ক, সমুদ্র সৈকত- সবই বন্ধ। কিন্তু প্রেমতো মানছে না কেনো বাধা। কেননা ‘প্রেম চিরসহিষ্ণু, প্রেম মধুর, ঈর্ষা করে না, প্রেম আত্মশ্লাঘা করে না, গর্ব করে না, অশিষ্টাচরণ করে না, স্বার্থ চেষ্টা করে না, রাগিয়া উঠে না, অপকার গণনা করে না, অধার্মিকতায় আনন্দ করে না, কিন্তু সত্যের সহিত আনন্দ করে; সকলই বহন করে, সকলই বিশ্বাস করে, সকলই প্রত্যাশা করে, সকলই ধৈর্যপূর্বক সহ্য করে। প্রেম কখনো শেষ হয় না।’

প্রদত্তবিশেষ সংজ্ঞার আলোকে কয়জন প্রেম করতে পারেন? পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি উচ্চরিত শব্দগুলোর মধ্যে একটি হলো প্রেম বা ভালোবাসা। যদিও ‘প্রেম’ ও ‘ভালোবাসা’ শব্দযুগল ভিন্ন ভিন্ন অর্থ বহন করে। তবুও পৃথিবীর প্রত্যেকটি প্রাণীর মধ্যে ভালোবাসা বিদ্যমান। ভালোবাসার রং রূপ গন্ধ কিছুই নেই, আছে শুধু অনুভূতি। যার শক্তিতে পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্ত জয় করা সম্ভব।

পবিত্র শাস্ত্র বিভিন্ন প্রকারের প্রেমের কথা বলেন। গ্রীক শব্দ ফিলিও, তার অর্থ “বন্ধুত্ব অথবা স্নেহপূর্ণ ভালোবাসা।” তারপর ইরোস, যেটি কামুক ভালোবাসা একজন প্রেমিকার প্রতি আমরা অনুভব করি। কিন্তু সেখানে একটি তৃতীয় প্রকার আছে আর সেটা হলো এক উচ্চতর ভালোবাসা। আগাপে হল সেই রকম ভালোবাসা যা সৃষ্টিকর্তা মানবজাতির প্রতি করেন। এই ভালোবাসা বলিদানের…যে ভালোবাসা আমরা যোহন ৩:১৬ তে দেখি। কারণ ঈশ্বর জগতকে এমন প্রেম করিলেন যে, আপনার একজাত পুত্রকে দান করিলেন…।

পবিত্র শাস্ত্রে এই বিষয়ের উপর অনেক শিক্ষা আছে; এটি সত্যিই আপনার ব্যক্তিগতভাবে একা বসে অধ্যায়নের বিষয়। আগাপে ভালোবাসার বিষয়ে পবিত্র শাস্ত্রে আরেকটি ধারণা দেয় মথি ৫:৪৪ পদে। এটি আমাদের বলে তোমার শত্রুদের প্রেম করো এবং যারা তোমাদের উপর অত্যাচার করে তাদের জন্য প্রার্থনা করো। তাই হয়তো কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এমনই মুহূর্তকে স্মরণ করে লিখেছেন,

‘দোহাই তোদের, এতটুকু চুপ কর
/ভালোবাসি বারে, দে মোরে অবসর।

প্রেম হল অন্য কোন ব্যক্তির প্রতি কোন ভালোবাসার অনুভূতি, বা কোন দৃঢ় আকর্ষণ, এবং এসকল বিষয়ের ফলে সৃষ্ট আবেগ-অনুভূতি প্রকাশের উদ্দেশ্যে কোন ব্যক্তি কর্তৃক বিয়ের নিমিত্তে বিবাহপূর্ব সম্পর্ক গঠনকারী আচরণাবলি প্রকাশের পদক্ষেপ গ্রহণ করা।

ভালোবাসার সঙ্গে প্রেমের পার্থক্য খুব স্পষ্ট। ভালোবাসার ব্যাপ্তি অনেক বেশি। আমরা আমাদের বাবা-মা, ভাই-বোন ও বন্ধু-বান্ধবীদের ভালোবাসি। আত্মীয় এবং স্বজনের মধ্যে এই ভালোবাসা গড়ে ওঠে দীর্ঘদিন একসঙ্গে বাস করা বা মেলামেশার কারণে। এই ভালোবাসায় শরীরী তৃষ্ণা নেই। কিন্তু হঠাৎ করে দু’জন মানুষের মধ্যে যে ভালোবাসা গড়ে ওঠে, সে ভালোবাসার মানুষকে কাছে পাওয়ার আকুলতা অনুভূত হয় শরীরে, সেই ভালোবাসা দ্রুত কিংবা ধীরে গড়িয়ে প্রেমে রূপান্তরিত হয়। কোনও ঈশ্বরপ্রেম বা প্রকৃতিপ্রেম নয়, নারী পুরুষের প্রেমের কথা বলছি, যৌনতা ছাড়া এই প্রেম সম্ভব নয়। যে যাই বলুক না কেন যে, প্রেমের সঙ্গে শরীরের সম্পর্ক নেই, প্রেম শুধু প্রেমই, প্রেম স্বর্গীয়। একসময় ঈশ্বরপ্রেমের মতো নারী-পুরুষের কামগন্ধহীন প্রেম শুরু হলেও বেশিদিন টিকে থাকেনি। প্রেমের কিন্তু বিবর্তন ঘটেছে, বিবর্তন প্রতিনিয়ত ঘটতে থাকে, খালি চোখে একে দেখা যায় না। শতাব্দী গেলে নজর পড়ে। এখন প্রেম কেবল চুম্বনের জন্য আর একটু-আধটু শরীর স্পর্শের জন্য তুলে রাখা হয়  না।

আপনি মানুষের প্রতি ধৈর্যশীল হয়ে “আগাপে ভালোবাসা” প্রকাশ করতে পারেন, তাদের উপলব্ধি করে, তাদের কিছু উৎসাহজনক কিছু বলে অথবা যখন পারেন তখন তাদের কিছু না বলে। মানুষ হিসাবে, আমরা মজ্জাগতভাবে স্বার্থপর, সর্বদা জিজ্ঞাসমান, “আমার কী হবে?” আগাপে ভালোবাসার শক্তি দ্বারা স্বার্থপরতার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করার এখন সময় হয়েছে। পবিত্র শাস্ত্র ভালোবাসা সম্বন্ধে কী বলে তা অধ্যায়ন ও উপলব্ধি করে এখনই সময় মানুষের প্রতি ভালো ব্যবহার করা এবং তাদের ভালোবাসা। আপনার মধ্যের আগাপে ভালোবাসা অন্যদের প্লাবিত করতে দিন।

প্রিয় অনুভূতি, স্মৃতি, আবেক দিয়ে সমাজ টিকে আছে। ভালোবাসার আবদ্ধে মানুষ অমর হয়ে থাকে। তাই সকলের উচিত প্রিয়জনের সঙ্গে সমাজ দেশটাকে ভালোবাসা। যে শহীদরা মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের মাধ্যমে আমাদের চলাফেরার স্বাধীনতা দিয়েছেন, দিয়েছেন নতুন মানচিত্র সেই সব বীর শহিদ ও গাজীদের ভালোবাসার দিন। আমাদের প্রত্যয় হোক হিংসাত্মক রাজনীতি ভুলে দেশের মানুষের কথা ভেবে, তাদের কল্যাণে কাজ করা। একটি সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গঠন করা। তবে সুফলা শস্য শ্যামলার দেশ সমৃদ্ধি হবে। সকলের আগাপে প্রেমে উগ্র সাম্প্রদায়িক, উস্কানিমূলক, জঙ্গি, কুসংস্কার, ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠা পাক পৃথিবীর মানচিত্রে এমন প্রত্যাশা হোক এই করোনা কালীন সময়ে।

 

এডওয়ার্ড রিয়াজ মাহামুদ
লেখক: শিক্ষক, কলামিস্ট ও গবেষক

 

এই লেখকের অন্যান্য লেখা



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Developed with by
Top