সিডনী শুক্রবার, ২৯শে মার্চ ২০২৪, ১৫ই চৈত্র ১৪৩০

শ্রীকৃষ্ণের বিচারে কর্ণ ও অর্জুনের মধ্যে কে প্রকৃত দানবীর? : অধ্যাপক সৌম্য ঘোষ


প্রকাশিত:
৭ জুন ২০২১ ২০:০৫

আপডেট:
২৯ মার্চ ২০২৪ ২০:১৪

 

নিজের নিশ্চিত মৃত্যু জেনেও যিনি প্রাণ রক্ষাকারী কবচ-কুণ্ডল দান করতে দ্বিধা করেননি, তিনি হলেন কর্ণ। দাতা কর্ণ হিসেবেই তিনি বেশি পরিচিত। সমগ্র মহাভারত খুঁজেও এমন দানবীর আর দেখতে পাওয়া যায় না। একবার কর্ণকে দানবীর আখ্যা দেওয়ায় অর্জুন বেশ ক্ষুব্ধ হন। তিনি পরমেশ্বর শ্রীকৃষ্ণকে জিজ্ঞেস করেন, কেন শুধুমাত্র কর্ণ কে দাতা হিসেবে মহিমান্বিত করা হয়? তিনি নিজেও যে গরীব-দুঃখীকে দান করেন, সে কথা স্মরণ করিয়ে দেন।

তখন ভগবান শ্রীকৃষ্ণ অর্জুনকে একটি স্বর্ণের পাহাড়ে নিয়ে যান। তারপর অর্জুনকে বলেন, হে অর্জুন, এই স্বর্ণসমৃদ্ধ পাহাড়ের সকল স্বর্ণ সমস্ত গ্রামবাসীদের মধ্যে ভাগ করে দাও। খেয়াল রাখবে যেন একটি স্বর্ণ অবশিষ্ট না থাকে।

অর্জুন তখন পার্শ্ববর্তী গ্রামে গিয়ে সবাইকে জানালেন, তিনি স্বর্ণ বিলিবন্টন করবেন। অর্জুনের ঘোষণা শুনে সবাই সেই পাহাড়ের সামনে এসে উপস্থিত হয়। দুদিন ধরে অক্লান্ত পরিশ্রম করে তিনি স্বর্ণ বিলি 

করলেন। কিন্তু তখনও তিনি পাহাড়ের বেশিরভাগ খুঁড়ে উঠতে পারেননি। অথচ গ্রামবাসী তখনো অপেক্ষা করে আছে।

ক্লান্ত-বিধ্বস্ত অর্জুন শ্রীকৃষ্ণকে বললেন, হে কৃষ্ণ, বিশ্রাম না করে আমি আর পারছিনা। পরমেশ্বর শ্রীকৃষ্ণ তখন কর্ণকে ডেকে পাঠান।

কর্ণকে একটি স্বর্ণের পাহাড় দেখিয়ে তিনি গ্রামবাসীদের মধ্যে স্বর্ণ বিলি করতে বলেন।‌ কর্ণ বিন্দুমাত্র সময় নষ্ট না করে গ্রামবাসীদের বললেন, এই স্বর্ণের পাহাড়টা আপনাদের। তারপর তিনি সেখান থেকে চলে যান।

হতভম্ব অর্জুন ভাবতে থাকেন যে, তার মাথায় কেন এমন চিন্তা এলো না। তখন শ্রীকৃষ্ণ তাকে বলেন,

এইজন্যই কর্ণ দানবীর। অর্জুন স্বর্ণ বিলি করেছেন কিন্তু কাকে কতটা দেবেন সেই সিদ্ধান্ত নিজের হাতে রেখেছেন। স্বর্ণ বন্টনের সময় গ্রামবাসীর জয়ধ্বনিতে আত্মতৃপ্তি  লাভ করেছেন। কিন্তু দাতা কর্ণ কোন কিছুর প্রত্যাশা না করেই সম্পূর্ণ ভাবে দান করতে পারেন। 

তার দানের পিছনে প্রতিদানে কিছু পাওয়ার কোনো রকম প্রত্যাশা থাকে না। সেই কারণেই তিনি প্রকৃত দানবীর।

 

অধ্যাপক সৌম্য ঘোষ
পশ্চিমবঙ্গ, ভারত

 

এই লেখকের অন্যান্য লেখা



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Developed with by
Top