সিডনী শনিবার, ২০শে এপ্রিল ২০২৪, ৭ই বৈশাখ ১৪৩১

জন্মাষ্টমী: ভগবান শ্রীকৃষ্ণের জন্মতিথি : এস ডি সুব্রত


প্রকাশিত:
২৯ আগস্ট ২০২১ ২১:৩১

আপডেট:
২০ এপ্রিল ২০২৪ ১৬:৫১

 

পরম করুণাময় ভগবান শ্রীকৃষ্ণের ধরাধামে আবির্ভূত হওয়ায় তিথিকে জন্মাষ্টমী বা গোকুলাষ্টমী বা কৃষ্ণাষ্টমী হিসেবে পালন করা হয়। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বারো মাসে তেরো পার্বণ এর মধ্যে জন্মাষ্টমী অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ।সনাতন ধর্মাবলম্বীদের কাছে আজ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দিন।দ্বাপরযুগে আজ থেকে পাঁচ হাজার বছর আগে দুষ্টের দমন ও শিষ্টের পালনে স্বয়ং ভগবান এই ধরাধামে আবির্ভূত হন পূর্ণ অবতার রূপে। জন্মাষ্টমী তে ভগবান শ্রীকৃষ্ণের পূজা, আরাধনা ও হরিনাম সংকীর্ত্তনের আয়োজন করা হয় মন্দিরে মন্দিরে ও সনাতন ধর্মাবলম্বীদের ঘরে ঘরে। ঈশ্বরের শক্তি আর গুনাবলী প্রদর্শন ও বিষ্ণুর প্রত্যক্ষ উপস্থিতকে পূর্ণ অবতার বলে ধরা হয়।ভাদ্র মাসের কৃষ্ণ পক্ষের অষ্টমী তিথিতে রোহিনী নক্ষত্র যোগে জন্মাষ্টমী পালিত হয় প্রতি বছর। ভগবান শ্রীকৃষ্ণ কংসের কারাগারে দেবকীর গর্ভে জন্ম গ্রহন করেন।দেবকী ও বসুদেবের অষ্টম পুত্র শ্রীকৃষ্ণের জীবন বিপদাপন্ন জেনে বাসুদেব শ্রী কৃষ্ণকে যশোদা ও নন্দের ঘরে রেখে আসে এবং যশোদার সদ্যজাত কন্যা কে নিয়ে আসেন।যে সময় ভগবান শ্রীকৃষ্ণ কংসের কারাগারে দেবকীর গর্ভে জন্মগ্রহণ করেন সেই মূহূর্তে তার নির্দেশে ভগবতী যোগমায়া নন্দের গৃহে যশোদার কন্যারুপে জন্ম গ্রহন করেন। শাস্ত্রে আছে --......."একং সদিপ্রা বহধা বদন্তী",মানে সেই একক সদ্ববস্তুকে বহুভাবে জানেন। শাস্ত্রে আরো আছে
......" সাধুকানাং হিতার্থায় ব্রহ্মনো রুপ ভগবান"। অর্থাৎ শ্রী কৃষ্ণের এই ধরাধামে নবরুপে আবির্ভাব সেই একই উদ্দেশ্যে হয়েছ। বিদ্রোহী কবির ভাষায় ........" তুমি বহুরুপী, তুমি রুপহীন,তব লীলা হেরী অন্তবিহীন। দ্বাপরযুগের এই দিনে পাশবিক শক্তি যখন সত্য ও ন্যায় কে গ্রাস করেছিল তখন সত্য ও ন্যায়ের পূন প্রতিষ্ঠায় অবতার রূপে শ্রীকৃষ্ণের আবির্ভাব ঘটে। দ্বাপরযগে এই সময় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম হয়েছিল।কতিপয় রাজা রাজধর্ম,কুলাচার, সদাচার ভুলে
অন্যায় ও অবিচারে মত্ত হয়ে উঠেছিল।মথুরার রাজা কংস‌ পিতা
পিতা জরাসন্ধ কে উৎখাত করে সিংহাসনে আরোহণ করেন।অন্যায় শাসন চালিয়েছিল জরাসন্ধ,কংস,চেদিরজ,শশুপালসহ অনেক রাজা। জানা যায় যে জরাসন্ধ একই সাথে ৮৬ জন যুবককে কারাগারে রেখেছিল বলি দেয়ার জন্য। হস্তিনাপুরে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছিল দুর্যোধন - দুঃশাসন। মহাভারতের কাহিনীতে আছে দুঃশাসন কর্তৃক প্রকাশ্য সভাকক্ষে দ্রৌপদীর বস্ত্র হরন করা হয়েছিল।সৎ ও ধার্মিক ব্যক্তিদের তখন প্রতিবাদ করার সাহস ছিল না। এহেন অধর্ম ও অবিচার দূর করে ধর্ম ও ন্যায় প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে শ্রীকৃষ্ণ ধরাধামে আবির্ভূত হন।এদের ধ্বংস করে ধর্ম স্থাপনের জন্য ভগবান শ্রীকৃষ্ণ পৃথিবীতে আসেন। এই অত্যাচারী রাজাদের মধ্যে কংসের কারগারে বোন দেবকীর গর্ভে ভগবান জন্মগ্রহণ করেন।দেবীর অষ্টম সন্তানের হাতে কংসের মৃত্যু হবে দৈববাণী শুনে কংস দেবকী ও বাসুদেব কে কারাগারে বন্দী করে রাখে।একে একে দেবকীর ছয় সন্তান কে জন্মের পর পরই কংস মেরে ফেলে।সপ্তম সন্তানের বেলায় দেবকীর গর্ভ স্থানান্তরিত হয় রোহিনীর গর্ভে।অষ্টম সন্তান রুপে জন্ম নেয় শ্রী কৃষ্ণ যশোদার কুলে। বিষ্ণুর কথা মতো কৃষ্ণ পক্ষের অন্ধকার রাতে প্রচন্ড ঝড় বৃষ্টি তে বসুদেব সদ্যজাত পুত্র কে রেখে আসেন যশোদার ঘরে এবং যশোদার কন্যকে নিয়ে আসেন কারাগারে দেবকীর কাছে। শ্রীকৃষ্ণের সন্ধান না পেয়ে কংস পুতনা রাক্ষুসী কে দিয়ে ছয় মাস বয়সের সকল শিশুকে হত্যার পরিকল্পনা করে।পুতনা রাক্ষুসী স্তনে বিষ মাখিয়ে বিষমাখা স্তন পান করিয়ে শিশু দের হত্যা করতে থাকে। কিন্তু শ্রী কৃষ্ণকে স্তন পান করিয়ে মারতে গিয়ে পুতনা রাক্ষুসী নিজেই মারা যায়। এভাবে শ্রী কৃষ্ণ একের পর এক অতিমানবিক ঘটনা ঘটাতে থাকে যা লীলা নামে পরিচিত।কংসসহ সকল অত্যাচারী রাজাদের হত্যা করেন শ্রী কৃষ্ণ। এভাবেই ন্যায় প্রতিষ্ঠা করেন ভগবান শ্রীকৃষ্ণ। সারা বিশ্বের সকল অকল্যাণ ও অসুন্দর দূরীভূত হোক, সুন্দর ও কল্যাণে ভরে উঠুক পৃথিবী। মহামারী করোনা ভাইরাস এর কবল থেকে মুক্ত হোক সারা বিশ্বের সকল মানুষ‌ ‌। চিরচেনা পৃথিবী আবার ফিরে আসুক সবার মাঝে জন্মাষ্টমীতে এই প্রার্থনা সৃষ্টিকর্তার কাছে।


এস ডি সুব্রত
কবি ও প্রাবন্ধিক, সুনামগঞ্জ

 

এই লেখকের অন্যান্য লেখা



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Developed with by
Top