সিডনী শুক্রবার, ১৯শে এপ্রিল ২০২৪, ৬ই বৈশাখ ১৪৩১

সাঁঝে কমল : ডঃ ময়ূরী মিত্র 


প্রকাশিত:
৩০ আগস্ট ২০২১ ২০:৪৪

আপডেট:
১৯ এপ্রিল ২০২৪ ১৮:২২

ছবিঃ ডঃ ময়ূরী মিত্র 

 

গোল গোল করে পাকানো মিহিদানা। আর সেই দলা মিহিদানার মাথায় গোলাপি সন্দেশের শিখিপাখা। এমনই এক ককটেল মকটেল মিষ্টি নিয়ে আমার মা সেদিন এসেছিলেন আমার স্কুলে। মিষ্টিগুলো বাচ্চাদের দিলেন। শুরু থেকেই একটি বাচ্চা নিবিষ্টচিত্তে ফলো করে যাচ্ছিল। আমাকে, আমার মাকে আর আমাদের দুজনের মাঝে ধরে থাকা মিষ্টির বাক্সটাকে। কমলা গোলাপি মিষ্টিটি হাতে আসা মাত্তর বলে উঠলো, evening পদ্ম 

শিশুটি Differently Abled । কথা ভালোই বলে, কিন্তু বুদ্ধি তার বয়সের স্বাভাবিক শিশুর চেয়ে বেশ ক বিঘত কম। প্রথমে আমি নিজেই বুঝতে পারছিলাম না, কেন মিহিদানায় সন্ধ্যেকে খুঁজে পেল সে, আর সে সন্ধ্যেতে কেমন করেই বা সে ফোটাল সন্ধেপদ্ম। মনে করাল সেই। 

কদিন আগেই ক্লাসে পড়িয়েছি, কোন বস্তুর কী রঙ। রঙ দিয়েই বস্তুকে বুঝতে শিখিয়েছি। চিনতে শিখিয়েছি দিনের বিভিন্ন সময়। ভোর দুপুর সন্ধ্যে রাত। কমলা বর্ণের সন্ধ্যে আর মিহিদানার কমলা এক নয় নিশ্চয়। কিন্তু অল্পমাত্তর বুদ্ধি দিয়ে কেমনেই বা সে বুঝবে, বিশ্বচরাচরের বহুবরণ - বর্ণের দুস্তর তফাৎ। 

দেখলাম - আধখানা খেয়েই মিষ্টিটি ঢুকিয়ে ফেলল তার টিফিন কৌটোয়। বাকি মিষ্টিটা বাড়ি গিয়ে দেবে তার পোষা পাখিটিকে। জিজ্ঞেস করলাম - ক্যানো রে। ওতো স্বাদু মিষ্টি ! তুইই খা না পুরোটা। বললে- তোমার মা দিলে তোমাকে। তুমি দিলে আমাকে। আমি দি পাখিকে। 

ওমা ! এমন করেই বুঝি আমাদের মা মেয়েকে এতক্ষণ জুড়ছিলি তুই ? বুঝি জুড়তে জুড়তেই বুনে ফেলছিল আরেক মা মেয়ের ছক ! সে আর তার পাখিছানা। পাখিকে এমন করে বেঁধে কাছে রাখা ঠিক কিনা তা সে বোঝে না। কিন্তু এ বোঝে, ছানাটিকে কাছে রাখতে গেলে তাকে ভালোবাসতে হয়। নিজের ভালোবাসার খাদ্যটি ধরেও দিতে হয়। গোলাপি সন্দেশ সাজানো এক মুঠি মিহিদানাতেই উজ্জ্বল কমলা রঙ ধরেছে তার সন্ধ্যেতে। সে সাঁঝে ফোটে শত কমল। 

এও যে তার মায়ের কাছেই পাওয়া।

 

ডঃ ময়ূরী মিত্র
পশ্চিম বঙ্গ, ভারত

 

এই লেখকের অন্যান্য লেখা



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Developed with by
Top