সিডনী শনিবার, ২০শে এপ্রিল ২০২৪, ৭ই বৈশাখ ১৪৩১

সানগ্লাস : আহসান হাবীব


প্রকাশিত:
১৭ অক্টোবর ২০২১ ২১:১৮

আপডেট:
২০ এপ্রিল ২০২৪ ২২:৩২

 

আফজাল সাহেব এবং তার স্ত্রী দুজনেই হঠাৎ করে আবিষ্কার করলেন তারা ইদানিং চোখে ভাল দেখতে পাচ্ছেন না। বই বা পত্রিকা পড়তে বেশ অসুবিধা হচ্ছে। নিশ্চয়ই চোখের পাওয়ার বেড়েছে। নতুন চশমা নিতে হবে। শেষ পর্যন্ত গেলেন এক পরিচিত চোখের ডাক্তারের কাছে।

ডাক্তার চোখ পরীক্ষা করে যা বুঝলেন পাওয়ার বাড়েনি তবে দুজনের চোখেই ছানি পড়েছে। অপারেশন করতে হবে মানে ছানি কাটাতে হবে। একজনের দু চোখেরই ছানি কাটাতে হবে আরেকজনের একটা কাটালেই হবে।
তবে বলাই বাহুল্য এটা খুবই স্বাভাবিক প্রক্রিয়া বয়স হলেই চোখে ছানি পড়বে। ঐ যে কথায় আছে না চল্লিশ পেরুলেই চালশে। তাদের দুজনের চল্লিশতো কবেই পার হয়েছে; বালাই ষাটের কাছাকাছি পৌঁছে গেছেন প্রায়।

সে যাই হোক তারা দুজনেই সিদ্ধান্ত নিলেন দুজনেই ছানি কাটাবেন, এক সাথেই। ডাক্তারের সাথে অপারেশনের ডেট ফাইনাল করলেন। একই দিনে দুজনের অপারেশন হবে। অপারেশন এত জটিল কিছু না বিশ মিনিটের ছোট্ট অপারেশন। চোখের মনির উপরের লেয়ারটা কেটে একটা লেন্স বসিয়ে দিবে ব্যাস। তবে অপারেশনের পর একমাস দুজনকেই সানগ্লাস পরে থাকতে হবে।

ডেট ফাইনাল করে বেরুবেন তখন ডাক্তারের চেম্বারের একজন এসে দুজোড়া সানগ্লাস ধরিয়ে দিল। ‘স্যার চশমা জোড়া রাখুন অপারেশনের পর দুজনেরই লাগবে। ’
ওহ ধন্যবাদ
স্যার ৩০০ ৩০০ ৬০০ টাকা।
ও আমি ভেবেছিলাম ফ্রি বলে আফজাল সাহেব ৬০০ টাকা দিলেন।
আগেই দিলাম পরে অনেক সময় পাওয়া যায় না। আপনারা দুজনেই স্যারের স্পেশাল রোগী।
না ঠিক আছে ধন্যবাদ। পরেতো লাগবেই এর চেয়ে আগে ভাগে...

অপারেশনের দিন তাদের ছেলে সঙ্গে এল। বাবা মা দুজনেই ঢুকে গেছেন অপারেশন রুমে ছানি কাটাতে, ছেলে বাইরে বসে টিভি স্ক্রীনে বাবা মার ছানি কাটার অপারেশন দেখার অপেক্ষা করছে। এই সময় ডাক্তারের চেম্বার থেকে এক লোক এল।
আপনার বাবা মার তো চোখের অপারেশন হচ্ছে?
জি
এ সানগ্লাস জোড়া রাখুন। ব্যান্ডেজ খোলার পর টানা এক মাস পরে থাকতে হবে দুজনকেই।
ও আচ্ছা । কত দিতে হবে?
৩০০ ৩০০ ৬০০ টাকা।
ছেলে দু জোড়া সানগ্লাস তার ব্যাগে ঢুকিয়ে রাখল।

দুজনের অপারেশনই ভাল হয়েছে, একদিন পর ব্যান্ডেজ খোলা হব। তারপর টানা এক মাস সানগ্লাস পরে থাকতে হবে দুজনকেই।
পরদিন মেয়ে বাবা মাকে নিয়ে এল ব্যান্ডেজ খোলাতে, ছেলে অফিসে ছুটি পায় নি। বাবা মা ব্যান্ডেজ খোলাতে ভিতরে ঢুকে গেলেন। এই সময় ডাক্তারের চেম্বারের একটা লোক এল।
আপনার বাবা মার ব্যান্ডেজ খোলা হয়েছে?
হ্যাঁ ব্যান্ডেজ খুলতেই নিয়ে গেছে ভিতরে
তাহলে এ চশমা জোড়া রাখুন ব্যান্ডেজ খোলার পর দুজনকেই পরতে হবে।
সবসময় পড়তে হবে?
শুধু ঘুমাবার সময় খুলবেন।
কত দাম
৩০০ ৩০০ ৬০০ টাকা।
আচ্ছা এইযে। আমাকে আরো দু জোড়া দিন। আমার মার আবার চশমা ভেঙে ফেলার রোগ আছে ; যদি ভেঙে টেঙ্গে ফেলে। বরং দুজনেরই এক জোড়া করে একস্ট্রা থাকুক। 
ঠিক বলেছেন, বুড়ো মানুষ। পরতে গিয়ে হাত থেকে পড়ে গিয়ে চশমা ভাঙতেই পারে। এই যে আরো দু জোড়া ৬০০ ৬০০ ১২০০ টাকা।
ধন্যবাদ।

চোখের ব্যান্ডেজ খুলিয়ে দুজনে কালো চশমা মানে সানগ্লাস পরে বাসায় এলেন। দুজনেই এখন ঝকঝকে দেখছেন সব কিছু। ঝকঝকে চোখে দুজনেই আবিস্কার করলেন। বাসায় ইতোমধ্যে আট জোড়া কালো চশমা জমা হয়েছে। আর তখনই তাদের তাদের পারিবারিক বন্ধু আরমান তার পত্নি সহ বেড়াতে এলেন। ছানী কাটার খবর পেয়েছেন তারা।
কি এখন সব কিছু পরিষ্কার দেখতে পাচ্ছ তো?
তা আর বলতে, পাচ্ছি। সব চকচকে ঝকঝকে
গুড গুড। তবে সাবধানে থাকতে হবে এক মাস, চোখের উপর প্রেসার দেয়া যাবে না। আমি বছর কয়েক আগে কাটিয়েছিলাম। টানা একমাস কিন্তু সানগ্লাস পরে থাকতে হবে। এই যে তোমাদের জন একজোড়া সানগ্লাস এনেছি। হাসপাতাল থেকে যেগুলো দেয় ওগুলোর মান অত ভাল নয় । এ দুটো ব্যবহার কর। একদম খাটি জিনিষ। পরে আরাম পাবে।


পরদিন আফজাল সাহেবের সাথে দেখা করতে এলেন পাড়ার এক লোক।
আঙ্কেল স্লামালিকুম
ওয়ালাইকুম কি ব্যাপার?
আঙ্কেল ভুলে গেছেন? আপনার গ্যারেজটা ভাড়া নিতে চেয়েছিলাম
কেন?
ঐ যে বললাম একটা দোকান করব, কনফেকশনারী দোকান। আপনার গ্যারজটাতো পরেই আছে খালি। কোন কাজে আসছে না। বরং একটা ভাড়া ধরে দিলে...
দীর্ঘশ্বাস ছাড়লেন আফজাল সাহেব। অস্পষ্ট স্বরে বললেন ‘নাহ ’
ভাড়া দিবেন না?
না
কেন?
ভাবছি নিজেই একটা দোকান দিব
কিসের দোকান?
সানগ্লাসের।
গ্যারেজ ভাড়া নিতে আসা লোকটা অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে আফজাল সাহেবের দিকে। তিনি সানগ্লাস পড়ে আছেন বলে তার চোখের ভাষা ঠিক বোঝা যাচ্ছে না। তিনি ঠাট্টা করছেন না সিরিয়াস!

 

লেখক: আহসান হাবীব
কার্টুনিস্ট/ সম্পাদক
উম্মাদ, স্যাটায়ার কার্টুন পত্রিকা
 

এই লেখকের অন্যান্য লেখা



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Developed with by
Top