সিডনী শুক্রবার, ২৯শে মার্চ ২০২৪, ১৫ই চৈত্র ১৪৩০

আশীর্বাদ : শাকিলা নাছরিন পাপিয়া


প্রকাশিত:
৩ ডিসেম্বর ২০২১ ০৪:৫১

আপডেট:
২৯ মার্চ ২০২৪ ১২:৩৯

 

ক্লাসের অন্যান্য ছাত্রীদের চেয়ে দু তিন বছরের বড় হবে। কিন্তু বুদ্ধিটা বাড়েনি। শরীরও বয়সের তুলনায় বেশ বাড়ন্ত। জামা কাপড়ের ঠিক থকতো না প্রায়ই। বিব্রত বোধ করতাম প্রায়ই। বুঝাতে চাইতাম চলাফেরায় সংযত হবার নিয়ম।
শুধু হাসত মেয়েটি।
দেড় বছর পর সামনে এসে দাঁড়াল এক মহিলা। প্রথমে চিনতে পারিনি। ভালো করে তাকিয়ে দেখলাম মাথা ভর্তি সিঁদুর, হাতে শাখা, মোটাসোটা শরীর নিয়ে যে মহিলা দাঁড়িয়ে আছে সে শান্তা রাণী দাস।
অবাক হয়ে তাকিয়ে আছি ভাষাহীন।
নিজে থেকেই জানালো ভালো ছেলে পেয়ে বাবা বিয়ে দিয়েছে এক বছর হলো।
জানতে চাইলাম ছেলে কী করে।
শান্তা জানালো ব্যবসা করে। তিনতলা বাড়ি আছে।
একটা চার বছরের মেয়ে আর একটা তিনদিনের ছেলে রেখে স্বামীর প্রথম স্ত্রী মারা যায়।
এককাঠা জমি লিখে দিয়ে, বিয়ের সম্পূর্ণ খরচ দিয়ে শান্তাকে বিয়ে করে অসম বয়সের লোকটি।
বাকরুদ্ধ আমি তাকিয়ে থাকি ওর মুখের দিকে।
শান্তা জানায় এ বিয়েতে ওর মা রাজি ছিল না। বাবা মাকে ঘরে আটকে রেখে ওকে বিয়ে দেয়। একমাত্র মেয়ের এমন বিয়ে মেনে নিতে পারেনি মা। এরপর থেকে সে পাগল।
পাশে দাঁড়ানো ছোট মেয়েটাকে প্রশ্ন করি, তোমার কী হয়?
দু হাতে শান্তাকে জড়িয়ে ধরে বাচ্চাটি বলে, আমার মা।
শান্তার কাছে জানতে চাইলাম বাচ্চা পেটে এসেছিল কি না?
হেসে উত্তর দিল, এসেছিল। নষ্ট করে ফেলেছি।
জানতে চাইলাম, কেন?
দু চোখে মমতা মিশিয়ে বলল, ছেলেটা ছোট। বড় হোক।
একরাশ বিস্ময় নিয়ে তাকাই বারো তেরো বছর বয়সী মেয়েটির দিকে। সারা অবয়বে যার মা মা মমতা।
ছুঁয়ে আছে যার হাত মা হারা একটা বাচ্চা মেয়ে। পৃথিবীর স্বার্থপর জটিল হিসাব আগেও বুঝেনি, আজও বুঝে না মেয়েটি।
মনে মনে বলি,তুই বোকাই থাকিস্ সারা জীবন। বোকা মা, বোকা স্ত্রী, বোকা মানুষ হয়ে একটা জীবন যেন কেটে যায় হাসতে হাসতে এই আশীর্বাদই করি।

 

শাকিলা নাছরিন পাপিয়া
শিক্ষক ও কলামিস্ট

 

এই লেখকের অন্যান্য লেখা



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Developed with by
Top