সিডনী শুক্রবার, ২৯শে মার্চ ২০২৪, ১৫ই চৈত্র ১৪৩০

বাঙালির পৌষ পার্বণ : এস ডি সুব্রত


প্রকাশিত:
১৮ জানুয়ারী ২০২২ ০১:৩৯

আপডেট:
২৯ মার্চ ২০২৪ ১৩:১৫

 

বাঙালির বারো মাসে তেরো পার্বণের একটি হচ্ছে পৌষ সংক্রান্তি বা মকর সংক্রান্তি। ১২টি রাশি অনুযায়ী ১২টি সংক্রান্তি রয়েছে। বাংলা পৌষ মাসের শেষ দিন পালন করা হয় মকর সংক্রান্তি। একদিকে নতুন ধান উঠার আনন্দ। অন্যদিকে মকর রাশি তে সূর্যের আগমন কে কেন্দ্র করে দিনটি মকর সংক্রান্তি নামে পরিচিত। বছরের বারটি সংক্রান্তির মধ্যে বেশি তাৎপর্যপূর্ণ মকর সংক্রান্তি। এ সময় সূর্য দক্ষিনায়ন থেকে উত্তরায়ণে যায়। খাওয়া দাওয়া, ঘুড়ি উৎসবের পাশাপাশি পূণ্য স্নানের জন্যও মকর সংক্রান্তি গুরুত্বপূর্ণ। মকর সংক্রান্তি যে মূলত বসন্ত কে আহ্বান জানানো হয়। এটা ফসল কাটার উৎসব হিসেবেও বিবেচিত হয়। ভোরের স্নান, সূর্য প্রণাম, পিঠা পুলি ও চিড়া মুড়ির নাড়ু ,তিলের নাড়ু খাওয়া, ঘুড়ি উৎসব নিয়ে ব্যস্ত থাকে বাঙালিরা। পৌষের শেষ আর মাঘ মাসের শুরুতে যে সংক্রান্তি আসে তাই পৌষ সংক্রান্তি বা মকর সংক্রান্তি। পৌষ মাস মল মাস বা অশুভ মাস হিসেবে চিহ্নিত হলেও শাস্ত্র মতে মকর সংক্রান্তি থেকেই শুরু হয় শুভক্ষণ। এই সময় সূর্য ধনু রাশি ত্যাগ করে মকর রাশিতে গমন করে । শুরু হয় সূর্যের উত্তরায়ন তাই একে মকর সংক্রান্তি বলে। কেউ আবার এটাকে উত্তরায়ণ সংক্রান্তিও বলে। ছয়মাস থাকে উত্তরায়ন আর ছয় মাস থাকে দক্ষিণায়ন।
পৌষের শেষ মুহূর্তের এই উৎসব সনাতন সংস্কৃতি র এক প্রাসঙ্গিক বিষয়। পৌরাণিক মতে দেবতাদের দিন শুরু হয় উত্তরায়ণের সাথে সাথে। দক্ষিণায়নের সাথে সাথে শুরু হয় দেবতাদের রাত্রি। দীর্ঘ রাত্রি থেকে দেবতাদের দিনে প্রবেশ করার ক্ষণটিকে উৎসব আকারে পালন করে সনাতন ধর্মাবলম্বীরা। তবে এ উৎসব পালন নিয়ে রয়েছে নানা মত।
সনাতন ধর্মীয় বিশ্বাস মতে মকর সংক্রান্তি যে উত্তরায়ণের সূচনা এবং এ উৎসব পালন করার মাধ্যমে অশুভ শক্তি নাশ হয়।
পূরাণ অনুসারে মকর ক্রান্তির এই দিনে অসুরদের সাথে দেবতাদের যুদ্ধের অবসান ঘটে। ঐ দিন ভগবূ বিষ্ণু অসুরদের বধ করে তাদের ছিন্ন মুন্ড (মাথা) মন্দিরা পর্বতে পুঁতে দেন এবং শুভ শক্তির সূচনা করেন।
মহাভারত ও কালিকাপুরাণ অনুসারে এই মকর সংক্রান্তিতে দেবতাদের আরাধনা করা হয়। আর্থিক সমৃদ্ধির জন্য এ সময় লক্ষ্মী দেবীর আরাধনাও করা হয়। মল মাসের অর্থাৎ র্পৌষ মাসের শেষে এই উৎসব পালনের মাধ্যমে অশুভ শক্তির ত্যাগ আর শুভ শক্তির সূচনা করা হয়।
আবার কোন কোন‌ মতে এই দিনে সূর্য দেব তার পুত্র মকর রাশির অধিপতি শনির উপর রাগ প্রশমিত করে তার বাড়িতে বেড়াতে গিয়েছিলেন। এই জন্য সূর্য দেবের কাছ থেকে আশির্বাদ পেতে সকালে সূর্য কে প্রাণের মধ্য দিয়ে মকর সংক্রান্তির উৎসবের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়।
চিড়া মুড়ি পিঠা পুলি খাওয়ার পাশাপাশি গ্রামাঞ্চলে ছোট ছেলে মেয়েরা পৌষ সংক্রান্তির আগের রাতে খড় দিয়ে ছোট ঘর বানায় যাকে বলে তিল্লার ঘর। ঐদিন ছেলে মেয়েরা বাড়ির পাশে ঘর বানিয়ে সেমাই সুজি মাংস রান্না করে চড়ুই ভাতির মতো খাওয়া দাওয়া করে এবং রাত্রি যাপন করে। খুব ভোরে উঠেই স্নান করে তিল্লা ঘর পুড়িয়ে আগুন পোহায়। এ দৃশ্য অনেক টা কমে গেলেও গ্রামাঞ্চলে এখনো এ দৃশ্য চোখে পড়ে ।
পৌষ সংক্রান্তি র দিন ঘুড়ি উড়ানো বাংলাদেশের প্রাচীন ঐতিহ্য বাহী একটি উৎসব। মুঘল আমল থেকে এই উৎসব পালন হয়ে আসছে। পুরোনো ঢাকার একটি জনপ্রিয় অনুষ্ঠান এটি।
সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এই দেশে, উৎসব পার্বণের এই দেশে আমরা সবাই মিলে মিশে চলব এই কামনা আজ পৌষ সংক্রান্তির এই দিনে। বাঙালির ইতিহাস ঐতিহ্য এভাবেই এগিয়ে চলুক সুন্দর আগামীর পাণে, এই পৃথিবী মুক্ত হোক করোনার কবল থেকে। আগের মতো মুখরিত হোক এ ধরা। প্রাণচাঞ্চল্য ফিরে আসুক আমার শ্যামল বাংলা আর সারা বিশ্বজুড়ে। যারা হারিয়েছেন স্বজন তাঁরা শোক কাটিয়ে ফিরে আসুক স্বাভাবিক কার্যক্রমে। পৃথিবীটা ভরে উঠুক আবার হাসিগানে। সামর্থবান যারা শীতার্তদের পাশে দাঁড়াক সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে।

 

এস ডি সুব্রত
কবি ও প্রাবন্ধিক, সুনামগঞ্জ

 

এই লেখকের অন্যান্য লেখা



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Developed with by
Top