সিডনী শুক্রবার, ১৯শে এপ্রিল ২০২৪, ৬ই বৈশাখ ১৪৩১

সিলেটের প্রাচীন রাজনৈতিক ইতিহাস : মুহম্মদ সায়েদুর রহমান তালুকদার


প্রকাশিত:
৩০ মার্চ ২০২২ ২৩:৩৪

আপডেট:
১৯ এপ্রিল ২০২৪ ২৩:১০

ছবিঃ মুহম্মদ সায়েদুর রহমান তালুকদার

 

সাধারণত একটি ধারণা রয়েছে যে, সিলেটের ইতিহাস আলোচনায় আসে ১৩০৩ খ্রিস্টাব্দে হযরত শাহজালাল র. কর্তৃক সিলেট বিজয়ের কাল থেকে। কিন্তু এর পূর্ব কালেও সিলেটের অবস্থিতি ও সীমা সংক্রান্ত তথ্য পাওয়া যায়। যোগিনীতন্ত্রে সিলেট বা শ্রীহট্টের সীমা সংক্রান্ত যে তথ্য পাওয়া যায়, তাতে মনে হয় সিলেট অঞ্চল থেকে বহুদূর পর্যন্ত এর বিস্তৃত ছিল। এতে বলা হয়েছে:
পূর্ব্বে স্বর্ণ নদীশ্চৈব দক্ষিণে চন্দ্রশেখরঃ।
লৌহিত্য পশ্চিমে ভাগে উত্তরেচ নীলাচলঃ।
এতন্মধ্যে মহাদেব শ্রীহট্ট নামে নামতা।
উপরোক্ত শ্লোকে শ্রীহট্টের যে সীমা নির্দেশিত হয়েছে তাতে দেখা যায়, শ্রীহট্ট দক্ষিণে চন্দ্রশেখর পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। চন্দ্রশেখর মূলত চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড পাহাড়ের প্রাচীন নাম। শ্রীহট্টের সীমানা কখনও সীতাকুণ্ড পাহাড় পর্যন্ত ছিল এমন প্রমাণ অন্য কোনো তথ্যে পাওয়া যায় না। স্বর্ণ বা সোনাই নদী শ্রীহট্টের পূর্ব সীমান্তে বিদ্যমান। লৌহিত্য বা ব্র‏‏হ্মপুত্র নদী ময়মনসিংহের মধ্য দিয়ে মেঘনায় পতিত হয়েছে। খাসিয়া ও জয়ন্তিয়া পাহাড় দূর থেকে নীলাভ মনে হয় বলে অনেকের ধারণা যোগিনীতন্ত্রে ঐ পাহাড়কেই নীলাচল বলা হয়েছে। এ অঞ্চল অতীতে প্রাগজ্যোতিষ রাজ্যের অন্তর্গত ছিল। পরবর্তী কোন এক সময়ে এ অঞ্চলে বঙ্গ জাতির অভিবাসন ঘটে।
সুকুমার সেন লিখেছেন, `বাঙ্গালা দেশের সঙ্গে প্রাগ্জ্যোতিষ-কামরূপ অঞ্চলের প্রাচীনকালে সরাসরি যোগ না থাকিলেও এই দুর্গম স্থানে যে প্রত্ন-বাঙ্গালী উপনিবিষ্ট হইয়াছিল তাহাতে কোনো সন্দেহ নাই। তার প্রমাণ অসমীয়া ভাষা। এ ভাষা বাঙ্গালার যমজ ভগিনী।‘
এ অঞ্চলের সর্ব প্রাচীন রাজ্যের নাম প্রাগজ্যোতিষ। রামায়ণের ভাষ্য অনুযায়ী চন্দ্র বংশীয় রাজা অমূর্তরজা পুÐ্রভূমি অতিক্রম করে কামরূপ অঞ্চলে প্রাগজ্যোতিষ নামে একটি আর্যরাজ্য স্থাপন করেন। মহাভারতের বর্ণনা মতে, প্রাগজ্যোতিষের রাজা ভগদত্ত দুর্যোধনের সাহায্যার্থে গিয়েছিলেন। আইন-ই-আকবরীতে উল্লেখ আছে, রাজা ভগদত্ত রাজা দূর্যোধনের সাথে তাঁর বন্ধুত্বের ফলে দিল্লীতে আগমন করেন এবং বর্তমান সময়ের ৪০৯৬ বৎসর পূর্বের মহাভারতের যুদ্ধে বীরোচিত ভাবে যুদ্ধ করে মৃত্যুবরণ করেন।

ভগদত্তবংশ খ্রিষ্টপূর্ব সপ্তম শতাব্দী পর্যন্ত কামরূপে রাজত্ব করে। নিধনপুর তাম্র লিপি থেকে জানা যায় যে, তিনি পৌরাণিক নরক রাজার বংশধর ছিলেন এবং নরকের পুত্র ছিলেন মহাভারতে বর্ণিত কুরু-পাÐব যুদ্ধের প্রখ্যাত ভগদত্ত। এরপর ৩০০০ বছর অতিক্রম হলে নরক বংশীয় পুষ্যবর্মা কামরূপের নৃপতি হন। পুষ্যবর্মার পরে তার বংশধরগণ কামরূপে রাজত্ব করেন। এদেরই অধঃস্তন পুরুষ ভুতিবর্মা। তিনি একটি তাম্রফলকের মাধ্যমে ব্রা‏‏হ্মণদেরকে কিছু ভূমি দান করেছিলেন। সেই ফলক হারিয়ে যাওয়ার ফলে তদীয় প্রপৌত্র ভাষ্কর বর্মা নতুন করে আর একটি দানপত্র করেন। ইহাই নিধনপুর তাম্রশাসন হিসেবে ইতিহাসে খ্যাত। এতে দেখা যায় যে, ভূতিবর্মা থেকে আরম্ভ করে ভাস্করবর্মা পর্যন্ত সবাই ঐতিহাসিক ব্যক্তি ছিলেন।
বর্তমান সিলেট বিভাগের নবীগঞ্জের যে ঐতিহাসিক স্থানটি ঐতিহাসিকদের দ্বারা সমধিক আলোচিত হয়েছে তা হলো দিনারপুরের সদরঘাট গ্রামে রাজা ভগদত্তের রাজধানীর ধ্বংসাবশেষ। সিলেটের ইতিহাস আলোচনা কালে প্রায় সকলেই এ এলাকায় রাজা ভগদত্তের রাজধানী থাকার কথা স্বীকার করেছেন। সিলেটের পুরাতত্ত্ববিদগণ ও সাধারণ মানুষ আজও গর্ব এবং আনন্দের সাথে রাজা ভগদত্তের কথা স্মরণ করেন।
বর্মন রাজবংশের প্রথম রাজার (৩৫০-৩৮০) রাজত্ব কালে প্রাগজ্যোতিষের নতুন নামকরণ হয় কামরূপ। বঙ্কিম চন্দ্র তার ‘বাঙ্গালার ইতিহাসের ভগ্নাংশ‘ প্রবন্ধে লিখেছেন: `যথায় এখন কামরূপ তথায় অতি প্রাচীন কালে এক আর্য্যরাজ্য ছিল। তাহাকে প্রাগজ্যোতিষ বলিত। বোধ হয় এই রাজ্য পূর্ব্বাঞ্চলের অনার্য্য ভূমি মধ্যে একা আর্য্যজাতির প্রভা বিস্তার করিত বলিয়া ইহার এই নাম।
প্রবন্ধের অন্যত্র তিনি লিখেছেন, `এক সময় এই কামরূপ রাজ্য অতি বিস্তৃত হইয়াছিল। পূর্ব্বে করতোয়া ইহার সীমা ছিল; আধুনিক আসাম, মনিপুর, জয়ন্ত্যা, কাছাড়, ময়মনসিংহ, শ্রীহট্ট, রঙ্গপুর, জলপাইগুড়ি ইহার অন্তর্গত ছিল। আইন আকবরীতে লেখে যে, ভগদত্তের বংশের ২৩ জন রাজা এখানে রাজত্ব করেন।‘
বাংলাদেশের প্রাচীন ইতিহাসের যথেষ্ট যুক্তিপূর্ণ ব্যাখ্যা প্রদান করেছেন রমেশচন্দ্র মজুমদার। তিনি লিখেছেন, `ভারতবর্ষের যে ভূখণ্ড বিংশ শতকের পূর্বে বঙ্গদেশ বলিয়া পরিচিত ছিল প্রাচীন হিন্দু যুগে তাহার এরূপ কোন একটি নাম ছিল না। ইহার বিভিন্ন অংশের ভৌগোলিক নাম ছিল এবং তাহার অনেকগুলিই বিভিন্ন যুগের রাজ্যের নাম হইতে উদ্ভুত। আর্য প্রভাবের ফলেই যে অধিকাংশ নামের উৎপত্তি হইয়াছে সে বিষয়ে কোন সন্দেহ নাই। আর্য প্রভাবের পূর্বে মাত্র বঙ্গ ও পুণ্ড্র দুইটি জাতি অথবা স্থানের উল্লেখ পাওয়া যায়।‘
`বঙ্গ‘ খুবই প্রাচীন দেশ। এর উল্লেখ রয়েছে বৈদিক রচনায় রামায়ণ, মহাভারতসহ প্রাচীন পুঁথিতে। `বঙ্গ` শব্দটি প্রথমে ছিল জনপরিচয় বাচক, পরবর্তীতে হল জনপদ বাচক বা দেশ বাচক। বঙ্গের প্রাচীনত্ব নিরূপণ করতে গিয়ে ড. সুকুমার সেন বলেছেন, `বঙ্গ জাতি হইতে দেশবাচক বঙ্গ নামের উৎপত্তি। বঙ্গজাতি তথা বঙ্গ শব্দের প্রাচীনতম উল্লেখ রহিয়াছে ঐতরেয় আরণ্যকে; সেখানে বলা হইয়াছে যে, তিনটি জাতি নষ্ট হইয়া গিয়াছিল এবং এই তিন জাতি হইতেছে পক্ষী অর্থাৎ পক্ষিসদৃশ যাযাবর বঙ্গ, বগধ এবং চেরপাদ। পূর্ব্ব দিকে ক্রমশঃ হটিতে হটিতে এই যাযাবর বঙ্গজাতি এখন যে স্থানকে পূর্ব্ববঙ্গ বলা হয় তথায় বাস করিতে থাকে; তাহা হইতে পূর্ব্ব বঙ্গের প্রাচীন নাম হয় বঙ্গ।’
ভক্তিরত্মাকর নামক প্রাচীন গ্রন্থে শ্রীহট্ট, ময়মনসিংহ ও ঢাকা কেন্দ্রীক পূর্ববঙ্গকেই বঙ্গদেশ হিসেবে দেখানো হয়েছে। জাতিতত্ত¡ বারিধি গ্রন্থে আছে, ‘ময়মনসিংহ ও শ্রীহট্ট প্রাগজ্যোতিষ দেশের এবং ত্রিপুরা কিরাত রাজ্যের অন্তর্গত ছিল, এইক্ষণে এই সকল স্থান পূর্ব্ববঙ্গ বলিয়া সংজ্ঞিত হইয়াছে।’
প্রকৃতপক্ষে বাংলার সুপ্রাচীন ইতিহাস আলোচনার সাথে সিলেটের ইতিহাস উৎপ্রোত ভাবে জড়িত। প্রাচীন বাংলা সম্পর্কে ড. মুহম্মদ এনামুল হক লিখেছেন, ``বাংলা অতি প্রাচীন দেশ। ঋগ্বেদের (আনুমানিক কাল খ্রিষ্টপূর্ব তিন হাজার বছর) শাখা ঐতরেয় আরণ্যক গ্রন্থে ‘বঙ্গ` নামে এই দেশের উল্লেখ দেখিতে পাওয়া যায়। সেই যুগ হইতে আরম্ভ করিয়া খ্রীষ্টীয় সপ্তম শতাব্দী পর্যন্ত প্রাচীন বঙ্গভূমি ‘বঙ্গ`, ‘পুণ্ড্র`, ‘গৌড়`, ‘রাঢ়`, ‘সুহ্ম’, ‘ব্রহ্ম`, ‘তাম্রলিপ্ত`, ‘সমতট` প্রভৃতি জনপদে বিভক্ত ছিল।
অধ্যাপক শ্রী সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় লিখেছেন, `বাঙলাদেশ মুখ্যতো প্রাচীনকাল থেকেই এই কয়টি বিভাগে বিভক্ত : রাঢ়, সু‏হ্ম, বরেন্দ্র বা পুণ্ড্রবর্দ্ধন, সমতট, বঙ্গ, কামরূপ। এই নামগুলির মধ্যে প্রায় সবগুলিই হ`চ্ছে জা`তের নাম, জা`তের নাম থেকে দেশের নাম-করণ খুবই সাধারণ প্রথা।‘
প্রাচীন ‘বঙ্গ` মূলত ‘জন` বা ‘জনপদ` বাচক একটি শব্দ। জন বা জনপদ বাচক এই বঙ্গ শব্দের উৎপত্তি সম্পর্কে একাধিক পৌরাণিক কাহিনীর সন্ধান পাওয়া যায়। এর একটি পুরাণ ও মহাভারতের বর্ণনা, অপরটি ফারসী ভাষায় লিখিত রিয়াজ-উস-সালাতীন নামক গ্রন্থের বর্ণনা। হিন্দু ধর্মশাস্ত্র পুরাণ ও মহাভারতের উদ্ধৃতি দিয়ে ড. রমেশচন্দ্র মজুমদার লিখেছেন, `দীর্ঘতমা নামে এক বৃদ্ধ অন্ধ ঋষি যযাতির বংশজাত পূর্বদেশের রাজা মহাধার্মিক পণ্ডিত প্রবর সংগ্রামে অজেয় বলির আশ্রয় লাভ করেন এবং তাঁহার অনুরোধে তাঁহার রাণী সুদেষ্ণার গর্ভে পাঁচটি পুত্র উৎপাদন করেন। ইঁহাদের নাম অঙ্গ, কলিঙ্গ, পুণ্ড্র, সুহ্ম ও বঙ্গ। তাঁহাদের বংশধরেরা ও তাঁহাদের বাসস্থান তাঁহাদের নামে পরিচিত। অঙ্গ বর্তমান ভাগলপুর এবং কলিঙ্গ উড়িষ্যা ও তাহার দক্ষিণবর্তী ভূভাগ। পুণ্ড্র, সুহ্ম ও বঙ্গ যথাক্রমে বাংলার উত্তর, পশ্চিম এবং দক্ষিণ ও পূর্বভাগ। সুতরাং এই পৌরাণিক কাহিনীতে উল্লেখিত প্রদেশগুলির অধিবাসীরা এক জাতীয় এবং আর্য ব্রাহ্মণ ও ক্ষত্রিয়ের মিশ্রণে সমুদ্ভুত।‘
অপর বর্ণনায় গোলাম হোসায়ন সলীম লিখেছেন, `ইতিহাসবেত্তাদের অনেকে বর্ণনা করেছেন যে, নুহ পয়গম্বরের (তাঁর উপর শান্তি বর্ষিত হোক) পুত্র হাম তাঁর পূতপবিত্র পিতার অনুমতি অনুযায়ী (পৃথিবীর) দক্ষিণ দিকে মনুষ্য বসতির জন্য মনস্থ করেন। সেই উদ্দেশ্য কার্যকরী করার জন্য তিনি তাঁর পুত্রদের দিকে দিকে মানুষের বসতি স্থাপনের জন্য প্রেরণ করেন। তাঁর (হামের) প্রথম পুত্রের নাম হিন্দ; দ্বিতীয়ের সিন্ধ; তৃতীয়ের হাবাশ; চতুর্থের জানায; পঞ্চমের বার্বার এবং ষষ্ঠের নাম নিউবাহ। যে সকল অঞ্চলে তাঁরা উপনিবেশ স্থাপন করেন সেগুলির নাম তাঁদের নামানুসারে রাখা হয়েছে। জ্যেষ্ঠ সন্তান হিন্দ হিন্দুস্থানে আসার দরুণ এই অঞ্চলের নাম তাঁর নামানুসারে রাখা হয়। সিন্ধ জ্যেষ্ঠ ভ্রাতার সঙ্গে এসে সিন্ধু দেশে বসতি স্থাপন করায় এই অঞ্চলের নাম তাঁরই নামানুসারে সিন্ধু রাখা হয়। হিন্দের চার পুত্র ছিল। প্রথম-পুরব; দ্বিতীয়-বঙ্গ; তৃতীয়-দক্ষিণ; চতুর্থ-নাহারওয়াল। এরা যে যে অঞ্চলে উপনিবেশ স্থাপন করেন, তার প্রতিটির নাম তাদেরই প্রত্যেকের নামানুসারে রাখা হয়। ....হিন্দের পুত্র বং (বঙ্গ) এর সন্তানেরা বাংলায় উপনিবেশ স্থাপন করেন।‘
একটি বর্ণনায় পাওয়া যায়, সেমেটিক ভাষার ‘আল‘ শব্দটির বাংলা ভাবার্থ আওলাদ, সন্তান-সন্ততি ও বংশধর। এ অর্থে (বং+আল) বঙাল বা বঙ্গাল (অর্থাৎ বং এর বংশধর)।
এ অঞ্চলে আর্যদের আগমন সম্পর্কে ড. সুকুমার সেন লিখেছেন, `ইরান হইতে ভারতবর্ষে আর্যভাষা ও সংস্কৃতি দুই বা ততোধিক ধারায় আসিয়াছিল। প্রথমে যাহা আসিয়াছিল তাহাকে বলিতে পারি প্রাচীন (বা প্রাক-বৈদিক) ধারা। পরে যাহা আসিয়াছিল তাহা অর্বাচীন বা বৈদিক ধারা।‘
অধ্যাপক সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় লিখেছেন:
`অতি প্রাচীনকালে এখন হইতে চারি হাজার-পাঁচ হাজার বৎসর পূর্বে, এদেশে অনার্যজাতির লোকেরা বাস করিত। ইহারা মুখ্যতঃ কোল (অস্ট্রিক) ও দ্রাবিড় জাতির লোক ছিল- ইহাদের ভাষা আর্যভাষা সংস্কৃত হইতে একেবারে পৃথক। পরে পশ্চিম হইতে ইরান বা পারস্য দেশ হইয়া আর্য জাতির লোক কিছু কিছু ভারতবর্ষে আগমন করে, এবং দেশের অনার্যদের মধ্যে উপনিবিষ্ঠ হয়। এই ব্যাপার কবে ঘটিয়াছিল, তৎসম্বন্ধে নানা মত আছে। তবে অধুনা-লব্ধ অনেকগুলি বস্তু ও তথ্য হইতে অনুমান হয় যে, আর্যদের ভারত আগমন, খ্রীষ্টপূর্ব্ব দ্বিতীয় সহস্রকের মধ্যভাগে বা দ্বিতীয়ার্ধে ঘটিয়াছিল (আনুমানিক ১৫০০ খ্রিঃ পূঃ তে)। নিজ ভাষা লইয়া আর্যজাতির ভারতবর্ষে আগমনের ফলে উত্তরকালে এদেশে বাঙ্গালা হিন্দী প্রভৃতি, আধুনিক আর্যভাষার উদ্ভব সম্ভব হইয়াছিল।‘
তিনি বলেন: `আর্যদের আগমনের পূর্বে দু‘টি বড়ো অনার্য জা‘ত বাস ক‘রত- দ্রাবিড় আর কোল। আর্যেরা এল‘ পূর্ব-পারস্য হ‘য়ে ভারতবর্ষে- কোন দেশ থেকে তারা এল, তা‘ আমরা জানিনা। তবে অন্ততো ভাষায় আর সভ্যতায় যারা তাদের জ্ঞাতি এমন সব জা‘ত পাওয়া যায় পারস্যে, আর্মেনিয়ায় আর ইউরোপের প্রায় সর্বত্র।‘
বঙ্গদেশের গঠন সম্পর্কে অচ্যুতচরণ চৌধুরী লিখেছেন:
`যখন রামায়ণ রচিত হয়, তখন বঙ্গভূমে আর্য্যনিবাস স্থাপিত হয় নাই, সম্ভবতঃ তখন ইহার অধিকাংশ স্থান সমুদ্র গর্ভোত্থিত জল ও জঙ্গলা ভূমি ছিল। হিমালয়ের পাদদেশে সামুদ্রিক জীবকঙ্কাল দৃষ্টে ভূতত্ত্ববিৎগণ বলেন যে, পুরাকালে বঙ্গদেশের অস্তিত্ব ছিল না, তখন সাগরোর্ম্মি হিমালয়ের পাদতটে প্রহত হইত। পর্ব্বতধৌত মৃত্তিকা ও গঙ্গা এবং ব্রহ্মপুত্রের পলিদ্বারা ক্রমে বঙ্গভূমি গঠিত হইয়াছে। তিনি বঙ্গ সম্পর্কিত স্পষ্ট ধারণা দিতে গিয়ে লিখেছেন: রামায়ণে বঙ্গদেশের নামোল্লেখ আছে। যদিও তখন এদেশে জনবসতি স্থাপনের কোন প্রমাণ পাওয়া যায় না, তথাপি তখন ইহা একটি দেশ রূপে খ্যাত হইয়াছে। রামায়ণের অযোধ্যাকাণ্ডে দেখিতে পাওয়া যায় যে, দশরথ কৈকেয়ীকে বলিতেছেন- সূর্য্যরে রথচক্র যতদূর পরিভ্রমণ করে ততদূর পর্য্যন্ত পৃথিবী আমার অধীন। দ্রাবিড়, সিন্ধু, সৌবীর, সৌরাষ্ট্র, দক্ষিণাপথ, বঙ্গ, অঙ্গ, মগধ, মৎস্য এবং অতি সমৃদ্ধশালী কোশল রাজ্য এ সকলই আমার অধিকারে আছে। ঐ সময় বঙ্গদেশ আর্য্যসমাজে পরিজ্ঞাত ও দশরথের অধিকারভুক্ত থাকিলেও এখন আমরা যাহাকে বঙ্গালদেশ বলি, প্রাচীন বঙ্গ তাহা নহে, পূর্ব্ববঙ্গই তখন বঙ্গদেশ নামে খ্যাত ছিল। রামায়ণের বঙ্গ তাহারও সামান্য একটু অংশ বই ছিল না।‘
প্রাচীন বাংলার মানচিত্র ও প্রচলিত ধারণা অনুযায়ী যে স্থানকে ‘বঙ্গ‘ বা ‘বঙ্গাল‘ হিসেবে উল্লেখ করা হয় তার অবস্থান হচ্ছে ভাগীরথী ও পদ্মার মধ্যবর্তী স্থান। যা মূলত গাঙ্গেয় ব-দ্বীপ। কিন্তু এ অঞ্চল সম্পর্কে ড. সুকুমার সেন বলেন, `আড়াই হাজার-তিন হাজার বছর আগে বাঙ্গালা দেশের বেশীর ভাগই জলাভূমি ও জঙ্গল ছিল- বিশেষ করিয়া ভাগীরথীর পূর্ব ও পূর্বোত্তর পাড়।‘ তিনি উত্তর-পূর্ব বঙ্গ ও আসামকে তখনকার প্রাগজ্যোতিষ-কামরূপ রাজ্যভুক্ত বলে অভিমত ব্যক্ত করেন।
ব-দ্বীপ অঞ্চল সম্পর্কে অজয় রায় লিখেছেন:
`সুজলা-সুফলা শস্য শ্যামলা বাংলা। পৃথিবীর বৃহত্তম বদ্বীপ অঞ্চল। এই বদ্বীপ অঞ্চলের বেশীরভাগ ভূভাগই গড়ে উঠেছে গঙ্গা-ভাগীরথী-পদ্মা-মেঘনা-যমুনা-ব্র‏হ্মপুত্র বয়ে নেমে আসা পলি-মাটিতে, পৃথিবীর প্রাচীন ভূ-ভাগগুলির তুলনায় অপেক্ষাকৃত হাল আমলে। এই তো বেশী দিনের কথা নয় যতদূর জানা যায়, জল সরে গিয়ে ফরিদপুরের কোটালিপাড়া অঞ্চল মাত্র মাথা তুলছে খ্রীস্টীয় ষষ্ঠ শতকে। তিনি বলেন, শ্রীহট্টের পূর্বাঞ্চল, ময়মনসিংহের মধুপুর গড়, ঢাকার ভাওয়ালের গড়, পার্বত্য ত্রিপুরা, পার্বত্য চট্টগ্রাম বাদ দিয়ে পূর্ববাংলার সবটুকুই হল নবভূমি। এর মাঝে ময়মনসিংহ, ঢাকা, ফরিদপুর, ত্রিপুরার সমতলভাগ ও শ্রীহট্টের অধিকাংশ ভূমি তুলনামূলকভাবে প্রাচীন। খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও নোয়াখালীর সমতল ভূমি অঞ্চল আরও নতুন। সেজন্যই এ অঞ্চলকে বলা হয় নাব্যমÐল। মধ্য ও দক্ষিণ বঙ্গেরও একই অবস্থা।‘
তাই প্রশ্ন হচ্ছে, যে স্থানে ভূমির উত্থান ঘটেছে মাত্র আড়াই হাজার বছর পূর্বে এবং ৬ষ্ঠ শতকেও যে অঞ্চল নাব্য ভূমি হিসেবে পরিচয় বহন করত, সে অঞ্চল কিভাবে ৪/৫ হাজার বছর পূর্ববর্তী বঙ্গ জাতির বসতিস্থল হিসেবে চি‎িহ্নত হতে পারে? দ্বিতীয় প্রশ্ন হলো, যদি পারস্য তথা আরব অঞ্চল থেকে ভারতে আর্যদের আগমন ঘটে থাকে এবং হযরত নূহ (আঃ) এর অধঃস্তন ‘বং‘ এর বংশধর বা উপনিবেশস্থল থেকে ‘বঙ্গ‘ এর উৎপত্তি হয়ে থাকে তবে বাঙ্গালার কোন অঞ্চলে এর প্রথম পর্ব সম্পন্ন হয়েছিল? এর উত্তরে সাহসের সাথেই বলা যেতে পারে, বর্তমান বাংলাদেশ অঞ্চলে তৎকালীন সময়ের বাসযোগ্য ভূমিই সে অঞ্চলের দাবিদার। যেহেতু সেকালে কেবলমাত্র বাংলার পূর্বাংশের পাহাড় অঞ্চল ছাড়া প্রায় সমগ্র বাংলাদেশ জলতলে নিমজ্জিত ছিল সেহেতু এ দেশের সর্বপ্রাচীন ভূমি ও জনবসতিপূর্ণ এলাকাই উদ্দিষ্ট অঞ্চল গণ্য হওয়া যুক্তিযুক্ত।
তাহলে এ দেশের সর্বপ্রাচীন ভূমি কোথায় ছিল? বিশিষ্ট গবেষক তোফায়েল আহমদ-এর বক্তব্যে এর উত্তর পাওয়া যায়। তিনি বলেন, `তিন ধরণের ভূ-প্রকৃতি বাংলাদেশে বিদ্যমান। পূর্বে চট্টগ্রাম-পার্বত্য চট্টগ্রাম ও উত্তর-পূর্বে সিলেটের পাহাড়ী অঞ্চল প্রায় ১ কোটি বছর আগে টারশিয়ারী যুগের শেষের দিকে সৃষ্টি হয়।‘ টারশিয়ারী যুগে হিমালয় পর্বত উত্থিত হওয়ার সময় এ সকল এলাকা সৃষ্টি হয়েছিল বলে উহাকে টারশিয়ারী পাহাড় বলা হয়। উক্ত পাহাড়গুলিকে আসামের লুসাই এবং মায়ানমারের (বার্মা) আরাকান পাহাড়ের সমগোত্রীয় বলেও মনে করা হয়। হবিগঞ্জ ও মৌলভীবাজার এলাকার পাহাড়গুলি খুব খাড়া এবং উপরিভাগ অসমান। এদের উচ্চতা ৬০ থেকে ৩১০ মিটার (২০০-১০২০ ফুট)। ভৌগোলিক বর্ণনায় এগুলো ত্রিপুরার পাহাড় শ্রেণিভুক্ত।
প্রাচীন পাহাড় শ্রেণি ব্যতীত বাংলাদেশের সমগ্র অঞ্চল নদীবাহিত পলল দ্বারা গঠিত। এ ব্যাপারে ‘বঙ্গে ব্রাহ্মণাধিকার‘ প্রবন্ধে বঙ্কিমচন্দ্র অভিমত পোষণ করেন যে: `ভূতত্ত্ববিদেরা প্রমাণ করিয়াছেন যে, অতি পূর্ব্বকালে বঙ্গদেশ ছিল না; হিমালয়ের মূল পর্য্যন্ত সমুদ্র ছিল। অদ্যাপি সমুদ্রবাসী জীবের দেহাবশেষ হিমালয় পর্ব্বতে পাওয়া গিয়া থাকে। কি প্রকারে গঙ্গা এবং ব্রহ্মপুত্রের মুখানীত কর্দ্দমে বঙ্গদেশ সৃষ্টি, তাহা র্স চার্লস্ লায়েল্ প্রণীত Principles of Geology নামক গ্রন্থে বর্ণিত হইয়াছে।
তিনি ইউরোপীয় পণ্ডতদের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন: `ইরান বা তৎসন্নিহিত কোন স্থানে আর্য জাতীয়দিগের আদিম বাস। তথা হইতে তাঁহারা নানা দেশে গিয়া বসতি করিয়াছেন এবং তথা হইতেই ভারতবর্ষে আসিয়া বসতি করিয়াছিলেন। প্রথমকালে আর্যজাতি কেবল পাঞ্জাব মধ্যে বসতি করিতেন। তথা হইতে ক্রমে পূর্ব্বদেশ জয় করিয়া অধিকার করিয়াছেন।‘
এই পাহাড়াঞ্চল ব্যাতীত সমগ্র বাংলাদেশের ভূমি সাম্প্রতিক কালের প্লাবন সমভূমির অন্তর্গত। পদ্মা, মেঘনা, ব্রহ্মপুত্র, যমুনা প্রভৃতি নদী ও এদের উপনদী এবং শাখানদী বাহিত পলল দ্বারা দেশের বৃহৎ ভূভাগ গঠিত। এ অঞ্চলে বিক্ষিপ্তভাবে অসংখ্য জলাভূমি ও বিল ছড়িয়ে আছে। এগুলি এদেশের ভূ-প্রকৃতির অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য। সুনামগঞ্জ, সিলেট, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, ময়মনসিংহ, গোপালগঞ্জ, শেরপুর জেলার হাওর ও বিল সমূহ এবং রাজশাহী অঞ্চলের চলন বিল এর প্রকৃষ্ট উদাহরণ। তবে এ অঞ্চলটি সর্বত্র একরূপ নয়। তাই ইহাকে সিলেট অববাহিকা, কুমিল্লা সমভূমি, পাদদেশীয় পলল সমভূমি, গঙ্গা-ব্রহ্মপুত্র-মেঘনা প্লাবন সমভূমি ও বদ্বীপ অঞ্চলের সমভূমি এই পাঁচটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে। তন্মধ্যে সিলেট, সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জ জেলার অধিকাংশ স্থান এবং কিশোরগঞ্জ ও নেত্রকোনা জেলার পূর্বদিকের সামান্য অংশ সিলেট অববাহিকার অন্তর্গত। চাঁদপুর, কুমিল্লা ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার অধিকাংশ স্থান এবং লক্ষীপুর, নোয়াখালী, ফেনী ও হবিগঞ্জ জেলার কিছু অংশ জুড়ে কুমিল্লা (বা ত্রিপুরা) সমভূমি বিস্তৃত।
ইতিহাসে বঙ্গ জাতির উদ্ভবকাল চার-পাঁচ হাজার বছর পূর্বেকার বলে স্বীকৃত। এ অঞ্চলে যখন বঙ্গ জাতির আবির্ভাব ঘটে তখন দেশের পূর্ব ভাগের এই পাহাড়াঞ্চল ছাড়া কোনো স্থলভাগ ছিল না। ইরান বা তৎসংশ্লিষ্ট এলাকা হতে তারা হিমালয়ের পাদদেশ অতিক্রম করে পূর্ব দিকে এসেছিল তাতে সন্দেহ নেই। বিভিন্ন তথ্যে নিম্নবঙ্গ (দক্ষিণবঙ্গ) অঞ্চলে প্রাচীন বঙ্গ বা বঙ্গাল-এর অবস্থান নির্দেশিত হলেও পৌরাণিক ধর্মীয় শাস্ত্র কথিত সময় কালে সংশ্লিষ্ট অঞ্চলটি যে স্থলভাগের অন্তর্ভুক্তই ছিলনা তা স্পষ্ট। বাগড়ী, সুহ্ম, রাঢ় প্রভৃতি মূল বঙ্গের পরবর্তীকালীন বর্ধিতাংশ মাত্র। তাই দশম শতাব্দীতে শ্রীচন্দ্রের পশ্চিমভাগ তাম্রশাসনে বঙ্গাল শব্দের উল্লেখ ও এর অবস্থানগত নির্দেশনা অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। সে হিসেবে সিলেট অঞ্চলের পাহাড় সংশ্লিষ্ট ভূমিই যে প্রাচীন বঙ্গ জাতির নিবাস ছিল তাতে দ্বিমত পোষণের সুযোগ সীমিত।
সিলেট অঞ্চলের প্রাচীন ইতিহাস জানার জন্য ১৮৭২-৭৩ খ্রিষ্টাব্দে আবিষ্কৃত ভাটেরার তাম্রশাসন, ১৯১২ খ্রিষ্টাব্দে আবিষ্কৃত নিধনপুর তাম্রশাসন, ১৯৬৩ খ্রিষ্টাব্দে প্রাপ্ত কালাপুর তাম্রশাসন এবং ১৯৬৫ খ্রিষ্টাব্দে আবিস্কৃত পশ্চিমভাগ তাম্রশাসন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ভাটেরার তাম্রফলকের কাল নির্ণয়ে নানা যুক্তি প্রদর্শন করে অচ্যুৎচরণ চৌধুরী ইহাকে ২৩২৮ যুধিষ্টিরাব্দের বলে মত ব্যক্ত করেছেন। সে হিসেবে প্রথম প্রশস্তির ভূদানকাল বর্তমান (২০১৯) হতে প্রায় ২২২৮ বৎসর পূর্ববর্তী সময়ের ঘটনা।
ভাটেরার তাম্রশাসনের প্রশস্তিদ্বয় নাগরাক্ষরে অঙ্কিত হলেও কোনো কোনো অক্ষর যে বঙ্গাক্ষরের আদিরূপ তা প্রতীয়মান হয়। ললিত বিস্তার গ্রন্থে লিখিত আছে, বুদ্ধদেব অধ্যাপক শ্রীমিত্রের নিকট বঙ্গলিপি, অঙ্গলিপি, ব্রা‏হ্মী, সৌরাষ্ট্রী ও মগধলিপি শিক্ষা করেছিলেন। বুদ্ধদেব খ্রিস্টের ৫৫৭ বৎসর পূর্বে আবির্ভূত হন। বুদ্ধদেবের বঙ্গ লিপি শিক্ষা গ্রহণ থেকে এর প্রাচীনত্বই প্রমাণিত হয়। এসব কারণে তৎপরবর্তী কালে উত্থিত ভূভাগে প্রাচীন বঙ্গের অবস্থান নির্দেশ বিষয়টি প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে যায়।
প্রাচীন বঙ্গের সাথে সিলেটের সম্পৃক্ততা সম্পর্কিত প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনও রয়েছে। পশ্চিমভাগ তাম্রশাসনে ‘বঙ্গালদেশীয়‘ ও ‘দেশান্তরীয়‘ ব্রাহ্মণ বিষয়ক যে বর্ণনা পাওয়া যায় তাতে এ বিষয়টি স্পষ্টত প্রমাণ হয়। এটি দশম শতাব্দীতে শ্রীচন্দ্রের রাজত্বের পঞ্চম বৎসরে প্রকাশিত। এর মাধ্যমে প্রাচীন কালে পৌণ্ড্রবর্ধন ভুক্তির অধীন ‘শ্রীহট্ট মণ্ডল‘ নামে সিলেট অঞ্চলের একটি পৃথক প্রশাসনিক পরিচিতি ও সামাজিক-সাংস্কৃতিক ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সম্পর্কে অবগত হওয়া যায়।
উক্ত তাম্রশাসন সম্পর্কে আব্দুল মমিন চৌধুরী লিখেছেন, `দানকৃত দ্বিতীয় ভূখন্ডটির আয়তন ছিল ২৮০ পাটক (৪২০০ একর) যা চারটি দেশান্তরীয় মঠ (অর্থাৎ বিদেশীয়) এবং চারটি বঙ্গাল মঠ-এর অনুকূলে দেয়া হয়েছিল। ---এখানে একটি বিষয় খুবই আকর্ষণীয় যে, মোট আটটি মঠের দুটি গ্রুপ এ এলাকায় গড়ে উঠেছিল; একটিকে বলা হয়েছে ‘বঙ্গাল‘ (স্থানীয়দের জন্য) এবং অপরটিকে ‘দেশান্তরীয়‘ (অ-বঙ্গাল ব্রা‏হ্মণ, পূজক ও ভক্তদের জন্য)।‘
এই লিপী প্রমাণে স্পষ্ট যে, দশম শতাব্দীর শ্রীহট্ট মণ্ডল বা সিলেট বঙ্গের অন্তর্গত ছিল।
সুপ্রাচীন কাল হতে বঙ্গ ও বঙ্গাল নামের ভৌগোলিক অঞ্চলের উল্লেখ থেকে মনে হয় বঙ্গ শব্দটি প্রথমে ছিল জনপরিচয় বাচক, পরবর্তীতে হয়েছে জনপদ বাচক। জনপরিচয় বাচক ‘বঙ্গ‘ থেকে জনপদ বাচক ‘বঙ্গাল‘ শব্দটি প্রাচীন কালে কোন এলাকার জন্য প্রযোজ্য ছিল তা স্পষ্ট না হওয়ার কারণ হতে পারে ইতিহাস কালের প্রাথমিক পর্বে বঙ্গের রাজনৈতিক পরিচয় সম্পর্কিত ইতিহাসের নীরবতা বা অস্পষ্টতা। মুসলিম যুগে বঙ্গের অস্তিত্ব অনুভব করা গেলেও তা ছিল মূল বঙ্গের বর্ধিতাংশ। ইতিহাস কালের প্রাথমিক পর্ব থেকে রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক এবং ভাষাগত কারণে বর্তমান বৃহৎ বাংলাভুক্ত সকল জনপদই বঙ্গ, বঙ্গাল, বাঙ্গালা, বাঙ্গালাহ্, বেঙ্গল প্রভৃতি শব্দের সাথে একাকার হয়ে গেছে।
প্রাগৈতিহাসিক কালের মত ইতিহাস কালের বঙ্গের অবস্থানও সুস্পষ্ট নয়। আমরা যে বঙ্গদেশ বা বাংলাদেশকে জানি, তা সুলতান শামস উদ্দিন ইলিয়াস শাহ্ এর সময়ে রাজনৈতিক পরিচিতি নিয়ে আবির্ভূত হয়। প্রাচীন কালে সমগ্র বাংলাদেশের একক কোনো নাম ছিল না। বিভিন্ন অংশ বিভিন্ন নামে পরিচিত ছিল। বঙ্গ ছিল এদের মধ্যে অন্যতম এবং প্রাচীনতম। শক্তিশালী পাল ও সেন রাজাদের রাজত্বকালেও সমগ্র বাংলা কোনো একক পরিচিতি অর্জনে ব্যর্থ হয়। সেন রাজা লক্ষণ সেনের শাসনামলে সমগ্র বাংলা রাঢ়, বরেন্দ্র, বাগড়ী ও বঙ্গ এই চারটি অংশে বিভক্ত ছিল। সেনদের সম্পর্কে আর সি মজুমদার মন্তব্য করেছেন যে, জাতিভেদ প্রথাকে সুসংহত করার অভিপ্রায়ে বল্লাল সেন স্বীয় কর্তৃত্বাধীন দেশকে মিথিলা, রাঢ়, বাগড়ী, বরেন্দ্র ও বঙ্গ অঞ্চলে বিভক্ত করেন। সুতরাং হিন্দু যুগের শেষ সময়েও বাংলাদেশ বিভিন্ন অংশে বিভক্ত ছিল বলে প্রতীয়মান হয়।
বঙ্গ জনপদের অবস্থান সম্পর্কে ভিন্ন মত থাকলেও এ কথা স্বীকার করতেই হবে যে, বৃহৎ বঙ্গ প্রাচীন বঙ্গের বর্ধিতাংশ। ড. অসিত কুমার বন্দোপাধ্যায় তাই লিখেছেন, `একদা এদেশ গৌড়ভূমি বলে পরিচিত হয়েছিল, পরে মুসলমান যুগ থেকে এ দেশের একাংশ বঙ্গের (পূর্ববঙ্গ) নামানুসারে গোটা ভূখন্ডটাই বঙ্গ, বাঙ্গালা, বঙ্গালা প্রভৃতি নামে চি‎হ্নিত হল, পাশ্চাত্য বণিকেরাও এই বাংলাদেশকে ভূগোলে স্বীকার করে নিল। রাঢ়-বরেন্দ্র-বঙ্গ সবই আজ বঙ্গ-বাংলা নামের মধ্যে আশ্রয় নিয়েছে।‘
মুসলিম বিজয়ের পূর্ববর্তী ইতিহাসকালের কোনো পর্যায়ে ‘বঙ্গ‘ বা ‘বাঙ্গালা‘ নামের কোনো রাজনৈতিক বা প্রশাসনিক কাঠোমোর অস্তিত্ব খোঁজে পাওয়া যায় না। মুসলিম বিজয়ের পরে সিজিস্থানের অধিবাসী হাজী ইলিয়াসই প্রথম শাম্স-উদ-দীন ইলিয়াস শাহ উপাধি নিয়ে ‘সলতনত-ই-বাঙ্গালা‘ প্রতিষ্ঠা করেন। মূলত সেই থেকে ‘বাঙ্গালা‘ প্রশাসনিক বা রাজনৈতিক কাঠামোর অন্তর্ভুক্ত হয়।
প্রাচীন বঙ্গের পরিচিতি, অবস্থান ও সীমা সংক্রান্ত বিষয়ে কোনো কোনো ক্ষেত্রে মতপার্থক্য আছে তা অনস্বীকার্য। বর্ণনা ভেদে একই সময়ে কোনো কোনো স্থাননামের ভিন্ন ভিন্ন অবস্থান পরিলক্ষিত হয়। এখনো এ বিষয়ে কোনো সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত প্রতিষ্ঠিত হয়নি। এ ক্ষুদ্র পরিসরে বিষয়টির আলোচনা সম্ভব নয়। বক্ষমান নিবন্ধে তাই ‘বঙ্গ‘ বা ‘বঙ্গাল‘-এর অবস্থানগত ভিন্নমতের বিষয়টি যৌক্তিক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে বিশ্লেষণের জন্য পণ্ডতগণের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হল মাত্র।
সুলতানী আমল ও মোগল আমলেও সিলেট অঞ্চল বাংলার অংশই ছিল। সুলতান শামসউদ্দীনের শাসনামলে বাঙ্গালা নামে প্রশাসনিক কাঠামো প্রতিষ্ঠিত হলেও এ সময়ে বা তার পরবর্তী কালে বৃহৎ বাঙলার বিভিন্ন অংশ স্বাধীন ভাবে শাসিত হতে দেখা যায়। এ সময়কালে সিলেট অঞ্চলে গৌড়, লাউড় ও তুঙ্গাচল (তরফ) নামে পৃথক এবং স্বাধীন রাজ্যের অস্তিত্ব ছিল। ১৩০৩ খ্রিস্টাব্দে হযরত শাহজালাল র. কর্তৃক সিলেট বিজয়ের পর এ ৩টি রাজ্য একত্রে সুলতানী সনদের অধীনে শাসিত হয়। মোগল আমলে বাংলা বিশেষত পূর্ব বাংলা বিভিন্ন এলাকার জমিদারদের দ্বারা স্বাধীনভাবে শাসিত হতো। এ সময়ে মোগল সম্রাট আকবর বাংলাকে একটি সুবা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেন। কিন্তু এখানকার জমিদাররা আকবরের শাসন অমান্য করে নিজেরা স্বাধীনভাবে চলার জন্য ঈশা খানের নেতৃত্বে একটি মৈত্রী বন্ধনে আবদ্ধ হন। এই মৈত্রী বন্ধনে আবদ্ধ জমিদারেরা বারভূঁইয়া নামে ইতিহাসে পরিচিতি পান। সম্রাট জাহাঙ্গীরের সময়ে ভূইয়াদের দমন করে সিলেট পর্যন্ত অঞ্চল সুবা বাংলার অধীন মোগল সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত হয়। সুবা বাংলার অন্যতম সরকার ছিল সিলেট।
১৭৬৫ খ্রিস্টাব্দের ১২ আগস্ট মোগল সম্রাট দ্বিতীয় শাহ আলমের কাছ থেকে লর্ড ক্লাইভ বাৎসরিক ২৬ লক্ষ টাকা কর প্রদানের শর্তে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির নামে বাংলা, বিহার ও উড়িষ্যার দেওয়ানী লাভ করেন। একই সময়ে সিলেটও (শ্রীহট্ট) ইস্ট ইণ্ডয়া কোম্পানির অধীনে আসে। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির দেওয়ানী লাভের সময় থেকে সিলেট ছিল ঢাকা বিভাগের অন্তর্গত। ১৭৭২ খ্রিস্টাব্দে সিলেট জেলা গঠিত হওয়ার সময়ও এ জেলা ঢাকার অধীনে ছিল। ১৮৭৪ খ্রিস্টাব্দে চিফ কমিশনার পদধারী একজন কর্মকর্তার কর্তৃত্বে আসাম প্রদেশের কার্যক্রম শুরু হয়। প্রদেশ গঠনের পর দেখা যায়, আসামের আয় ও লোক সংখ্যা অল্প বিধায় নতুন প্রদেশের ব্যয় সঙ্কুলান সম্ভব হবে না। আসাম সরকার পরিচালনায় স্থানীয় শিক্ষিত লোকেরও অভাব পরিলক্ষিত হয়। এমনি প্রেক্ষাপটে আসামের সাথে সিলেটকে অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাব করা হয়। কিন্তু সিলেটবাসী অসমীয়দের সাথে পরিবেশ, ভাষা ও সংস্কৃতিগত বৈপরীত্বের কারণ দেখিয়ে এর বিরোধিতা করে আন্দোলন শুরু করে।
আন্দোলন সামাল দিতে শেষ পর্যন্ত গভর্নর জেনারেল লর্ড নর্থ ব্রæক সিলেটে আসেন। তিনি আন্দোলনের নেতৃবৃন্দের সাথে আলোচনাক্রমে আশ্বাস দেন যে, আসামের সাথে সংযুক্ত হলেও সিলেটে প্রচলিত আইন-কানুন, বিধি-ব্যবস্থা, ভূমি বন্দোবস্তের নিয়মকানুন প্রভৃতি অপরিবর্তিত রাখা হবে। এতে আন্দোলনকারী নেতৃবৃন্দ সম্মত হলে ১২ সেপ্টেম্বর সিলেট জেলাকে নবগঠিত আসাম প্রদেশের অন্তর্ভুক্ত করা হয়। অবশ্য গভর্নর জেনারেল পরবর্তীতে তার সব প্রতিশ্রæতি রক্ষা করেননি।
এ বিষয়ে সিলেট ডিস্ট্রিক্ট গেজেটিয়ারে বলা হয়েছে: Until 1874 Sylhet formed an integral part of Bengal, being included in the Dacca Division, but in that year, by a Proclamation, dated the 12th September, it was transferred to the newly created province of Assam, together with the adjoining district of Cachar.
১৮৯২ ও ১৮৯৬ খ্রিস্টাব্দে সরকারি মহল হতে রিপোর্ট করা হয় যে, আসাম ও পূর্ব বাংলার জেলাগুলো নিয়ে স্বতন্ত্র প্রদেশ করা উচিৎ। এরই প্রেক্ষিতে বড়লাট লর্ড কার্জন ভারত সচিব লর্ড হেমিল্টনের সাথে পরামর্শ ক্রমে চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। ১৯০৩ খ্রিস্টাব্দের ১২ ডিসেম্বর চট্টগ্রাম বিভাগ এবং ঢাকা ও ময়মনসিংহ জেলা আসামের সাথে যুক্ত করার পরিকল্পনা প্রকাশ পায়। এতে বাংলার হিন্দু সমাজ প্রতিবাদমুখর হয়ে উঠে। ১৯০৪ খ্রিস্টাব্দের ২৫ জানুয়ারি ঢাকার সুহৃদ সংঘ আসাম, চট্টগ্রাম, ঢাকা ও রাজশাহী বিভাগগুলো নিয়ে (দার্জিলিং, জলপাইগুড়ি ও কুচবিহার বাদে) একটি নতুন প্রদেশ গঠনের দাবি পেশ করে।
ফেব্রুয়ারি মাসে লর্ড কার্জন ঢাকা এসে এ বিষয়ে প্রথমে ঢাকার নবাব সলিমুল্লাহর সাথে মতবিনিময় করেন। এরপরে গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তাদের সাথে পরামর্শ করে বাংলাদেশের পূর্বাঞ্চল ও আসাম নিয়ে ‘পূর্ববঙ্গ ও আসাম‘ প্রদেশ গঠনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ভারত সচিব ব্রডারিক-এর অনুমোদন সাপেক্ষে বাংলাকে বিভক্ত করে নতুন প্রদেশের বিষয়টি চুড়ান্ত হয়। উক্ত পরিকল্পনা ১০ জুলাই প্রকাশিত হয়। বঙ্গভঙ্গের এ পরিকল্পনা অনুযায়ী আসাম, চট্টগ্রাম, ঢাকা, রাজশাহী বিভাগ এবং মালদহ ও পার্বত্য ত্রিপুরার জেলাগুলো নিয়ে পূর্ববঙ্গ ও আসাম প্রদেশ গঠিত হয়। এই নতুন প্রদেশের রাজধানী স্থাপিত হয় ঢাকায়। নবগঠিত এ প্রদেশের জন্য একজন ছোটলাট, একটি ব্যবস্থাপক পরিষদ ও একটি রাজস্ব বোর্ডের ব্যবস্থা হয়। এ সংবাদ প্রকাশিত হলে হিন্দু নেতৃবৃন্দ তীব্র প্রতিবাদ জানায়। এতদসত্তে¡ও বড়লাট তাঁর সিদ্ধান্তে অটল থেকে ১৬ অক্টোবর ১৯০৫ থেকে ‘পূর্ব বাংলা ও আসাম‘ নামে স্বতন্ত্র প্রদেশের ঘোষণা দেন।
নবগঠিত এ প্রদেশকে ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, সুরমা উপত্যকা ও আসাম উপত্যকা এই ৫টি বিভাগে বিভক্ত করা হয়। তন্মধ্যে ঢাকা বিভাগের অন্তর্গত ছিল- ঢাকা, ফরিদপুর, বাখরগঞ্জ ও ময়মনসিংহ জেলা; চট্টগ্রাম বিভাগে- ত্রিপুরা, চট্টগ্রাম, পার্ব্বত্য চট্টগ্রাম ও নোয়াখালী জেলা; রাজশাহী বিভাগে- দিনাজপুর, রাজশাহী, রঙ্গপুর, বগুড়া, পাবনা, মালদহ ও জলপাইগুড়ি জেলা; সুরমা উপত্যকা বিভাগে- শ্রীহট্ট, কাছাড়, খাসিয়া ও জয়ন্তীয়া পাহাড়, নাগা পাহাড় ও লুসাই পাহাড় জেলা; আসাম উপত্যকা বিভাগে- গোয়াল পাড়া, কামরূপ, দরঙ্গ, নওগাঁ, লক্ষীমপুর, শিবসাগর ও গারো পাহাড় জেলা।
কিন্তু বাংলার এই বিভক্তি হিন্দু নেতৃবৃন্দ মেনে নিতে পারেননি। স্বদেশী আন্দোলনের নামে তারা এর তীব্র বিরোধিতা করতে থাকেন। এক পর্যায়ে সরকার ১৯১১ খ্রিস্টাব্দে বঙ্গভঙ্গ রদ করলে পুনরায় আসামে চীফ কমিশনারের পদ সৃস্টি করা হয়। ১৯২১ খ্রিস্টাব্দ থেকে আসাম গভর্নর শাসিত প্রদেশে রূপান্তরিত হয়। বঙ্গভঙ্গ রদ হওয়ার পর ১৯১২ খ্রিস্টাব্দের ১ এপ্রিল থেকে সিলেটকে পুনরায় আসামের অন্তর্ভুক্ত করা হয়। সেই থেকে ব্রিটিশ শাসনের শেষ দিন তথা ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত এ জেলা আসামের সাথেই থাকে। ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দের ১৫ আগস্ট পাকিস্তান প্রতিষ্ঠিত হলে নানা রকম বিরোধিতা মোকাবেলা করে শেষ পর্যন্ত গণভোটের রায় আনুযায়ী সিলেট দীর্ঘকালীন নির্বাসন থেকে মুক্তি লাভ করে পাকিস্তানের অন্তর্ভুক্ত হয়। এ পর্যায়ে বঙ্গবন্ধু প্রশংসনীয় ভূমিকা রেখে সিলেটবাসীর আস্তা কুড়াতে সক্ষম হন। এরই ধারাবাহিকতায় ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দে সিলেট বাংলাদেশের অন্তর্ভুক্ত হয়।
সিলেটের সবচাইতে দুঃখজনক বিষয় হল, জাতীয় ইতিহাসে ব্রিটিশ শাসনকালের ইতিহাস সম্পর্কিত আলোচনায় সিলেট অঞ্চল গুরুত্বহীন বা অনুপস্থিত বলা হলেও অত্যুক্তি হবে না। এর কারণ, ১৮৭৪ থেকে ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত প্রায় ৬৭ বছর সিলেট অঞ্চলের বাংলা থেকে নির্বাসন বা বিচ্ছিন্ন থাকা। ব্রিটিশপূর্ব কালের ইতিহাস সম্পর্কিত তথ্যগত অপ্রতুলতার কারণে সে সময়কালের সিলেট সংক্রান্ত বিস্তারিত আলোচনার ক্ষেত্র সীমাবদ্ধ হলেও ব্রিটিশ কালের ঐতিহাসিক তথ্য বিচ্ছিন্নভাবে অতি সংক্ষেপে বিভিন্ন রেকর্ডপত্রে রয়েছে। অথচ এরপরও বাংলার ইতিহাস আলোচকগণ এ সময়ের ইতিহাসে সিলেটকে অনেকটা পাশ কাটিয়ে গেছেন।
[লেখক: এশিয়াটিক সোসাইটির অধীন ‘এনসাইক্লোপিডিয়া অব বাংলাদেশ ওয়ার অব লিবারেশন’ প্রকল্পের গবেষক ও হবিগঞ্জ জেলা সমন্বয়ক। বাংলা একাডেমির হাওর বিষয়ক গবেষক]

 

মুহম্মদ সায়েদুর রহমান তালুকদার
হবিগঞ্জ জেলার ইতিহাস, হাওরের ইতিবৃত্ত, প্রসঙ্গ: মুক্তিযুদ্ধে হবিগঞ্জ, মুক্তিযুদ্ধে মাধবপুর প্রভৃতি গ্রন্থ প্রণেতা। সমন্বয়ক (হবিগঞ্জ জেলা): এনসাইক্লোপিডিয়া অব বাংলাদেশ ওয়ার অব লিবারেশন, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি।

 

এই লেখকের অন্যান্য লেখা



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Developed with by
Top