সিডনী শুক্রবার, ২৯শে মার্চ ২০২৪, ১৪ই চৈত্র ১৪৩০

বয় ফ্রেন্ড : হাসান আলী


প্রকাশিত:
৩১ মে ২০২২ ২০:০৯

আপডেট:
২৯ মার্চ ২০২৪ ০৫:৪৬

 

কানাডা প্রবাসী নাতাশা দেশে অবস্থান কারী মাকে ফোনে, আম্মু তুমি কি বয় ফ্রেন্ড জোগাড় করতে পারলে? নাতাশার মা মলি বললো, বয় ফ্রেন্ড কি বাজারে কিনতে পাওয়া যায়? নাতাশা বললো, আমি কি বলেছি বয় ফ্রেন্ড বাজারে পাওয়া যায়? তোমার এত সামাজিক যোগাযোগ কাউকে বেছে নাও। তোমার একাকী জীবন আমাকে চিন্তিত করে।টানা দশ বছর আমেরিকায় বসবাস করেও তোমার মন বসলো না। পৃথিবীর সবচাইতে নোংরা শহর তোমাকে আকর্ষণ করলো! মলি বিরক্ত হয়ে বললো, লেখা পড়া করতে আমেরিকা কানাডা পাঠালাম, তোমাদের দু বোনের বিয়ে দিলাম।তোমাদের বাচ্চাদের লালন পালন করলাম। তোমার আব্বার সহায় সম্পদ বিক্রি করে টাকা দিলাম। এত কিছু করে ও তোমাদের রাখতে পারলাম না। মায়ের দেয়া ফ্ল্যাট পেয়েছি আর নিজের পেনশন।

 

বান্ধবীদের আড্ডায় মলি বললো, মেয়েরা চায় আমি বিয়ে করি, না করলে অন্ততঃ পক্ষে একজন বয় ফ্রেন্ড যেন জোগাড় করি। ঘটক কে বায়োডাটা দিয়েছিলাম। ওঁরা এমন সব আবল তাবল লোক নিয়ে আসে দেখলে গা রি রি করে উঠে। পঁয়ত্রিশ  চল্লিশ বছরের পাত্র পর্যন্ত নিয়ে হাজির। ঘটক বলেছে আমার দেশে বিদেশে প্রচুর ধন সম্পদ রয়েছে এসব দেখা শুনা করার জন্যই বিয়ে, নামাজী পরহেজগার হতে হবে, স্ত্রী থাকলেও অসুবিধা নাই। সেলস্ ম্যান, মৌলভী, স্কুল শিক্ষক, ইমাম সহ বিভিন্ন পেশার মানুষের ভীড়ে মান সম্মান যায় যায় অবস্থা। মাঝখানে ঘটক পঞ্চাশ হাজার টাকা নিয়ে গেল।

মলির মা ঢাকার নাম করা স্কুলের প্রধান শিক্ষক আর,বাবা ছিলেন আমলা। স্কুল থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত ছেলেরা ঘুর ঘুর করেছে।শেষ পর্যন্ত একজনকে পছন্দ হলো এবং তাঁকেই বিয়ে করলো। বিয়ের দশ বছরের মধ্যে সড়ক দুর্ঘটনায় স্বামী মারা গেলেন। তারপর চাকরি ছেলে মেয়েদের পড়াশোনা সেবা যত্ন করতেই সময় চলে গেছে। নিজের দিকে তাকানোর ফুরসত পাননি। যখন তাকালেন তখন বুকটা হাহাকার করে উঠলো পরম শূন্যতায়। একটা ঘোরের মধ্যেই এত গুলো বছর পার হয়ে গেল। ছাত্র জীবনে ,কর্মজীবনে যাঁদের সাথে ঘনিষ্ঠতা ছিল তাঁদের সাথে নতুন  করে  যোগাযোগ গড়ে উঠলো। প্রথম দিকে খুব আগ্রহ উচ্ছাস থাকলেও কয়েক দিন পর শুকনো পাতার মত ঝরে পড়লো। বান্ধবী দের সাথে দুয়েক কথার পর অভিযোগ নালিশ দুঃখ বলার পালা।তারপর রাজনীতি ধর্ম ব্যবসা নিয়ে কথা এবং ভীষণ একঘেয়ে ব্যাপার। নিকটতম বান্ধবীদের ছাড়া কথা বলার কাউকে খুঁজে পাওয়া সত্যি কঠিন। ভাই বোন আত্মীয় স্বজনের সাথে ঝগড়া বিবাদ, মান অভিমান সরিয়ে মধুর সম্পর্ক গড়ে উঠছে না। কথা বলার জন্য গৃহ কর্মী, দারোয়ান, কেয়ারটেকার, ড্রাইভারই ভরসা। এঁরা ও মন বুঝে কথা বলে সুবিধা নিবে তারপরই হাওয়া ! 

মলি নিজকে ব্যস্ত রাখতে সচেতন ভাবেই সামাজিক কাজ কর্মে অংশ নেন। কাউকে বয়ফ্রেন্ড্ হিসাবে পছন্দ হলে সেই লোকটা আবার পছন্দ করেনা। যাকে পছন্দ হয় না সেই ঘনিষ্ঠ হতে চায়। পঁয়ষট্টি বছর বয়সে একজন পুরুষ বন্ধু পাওয়া খুবই কঠিন। একদিন বয়ফ্রেন্ড্ হবার জন্য অনেকেই আগ্রহী ছিল অথচ এখন প্রচণ্ড খরা।

বান্ধবী রা বলে,মলি তুই বয়ফ্রেন্ড্ দিয়ে কি করবি?

মলি বলে, জোছনার রাতে বারান্দায় হাত ধরে বসে থাকবো। লঞ্চে করে রাঙ্গাবালি যাব। ভাজা ইলিশ মুড়ি দিয়ে খাব। চরের মানুষের বাড়িতে মাস কাটিয়ে ফসলের ঘ্রাণ নিয়ে ঢাকায় ফিরবো। রেলগাড়ি করে পঞ্চগড় যাব। তেঁতুলিয়ার ডাকবাংলো তে রাত কাটাবো, ঝিঁ ঝিঁ পোকার ডাক শুনবো। নদীর পানিতে পা ভিজিয়ে বসে বিএসএফের জোয়ান দের পাহারা দেখবো !

 

সমাপ্ত

 

হাসান আলী
সভাপতি, এজিং সাপোর্ট ফোরাম
ট্রেজারার, বাংলাদেশ জেরাটলজিক্যাল (বিজিএ) অ্যাসোসিয়েশন

 

এই লেখকের অন্যান্য লেখা



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Developed with by
Top