সিডনী শুক্রবার, ১৯শে এপ্রিল ২০২৪, ৬ই বৈশাখ ১৪৩১

ছোট্ট চড়ুই: আফরোজা অদিতি


প্রকাশিত:
২৬ এপ্রিল ২০১৯ ১৬:৩১

আপডেট:
৩০ এপ্রিল ২০২০ ১৩:২০

 

কোন এক শীতার্ত আবহাওয়ায় ছোট্ট চড়ুই পাখিরা খাবার পাচ্ছিল না। তাদের বয়স এক বছরের কম ছিল। তারা বড়দের মতো চালাক-চতুর ছিল না বলে তারা মারামরি করে কোন বীজ বা ক্ষুদ্র শস্যকণাও সংগ্রহ করতে পারতো না। ওদের মধ্যে একটু বড় যে চড়–ই ওর নাম বিকি; বিকি বলল, “আমরা বাবা-মায়ের কাছে ফিরে যাবো, গতবছর তারা আমাদের বাসাতে খাবার দিয়ে সাহায্য করেছে।” বিকির কথাগুলো শোনার পর তারা উড়ে গেল সেখানে, যেখানে বড় চড়ুইরা গোলাবাড়ির ছাদের ওপর বসেছিল; অপেক্ষা করছিল মুরগীর খাবারের জন্য। যখন মুরগীর খাবার দিবে এবং মুরগীরা খাবার খাবে তখন সেখানে উড়ে উড়ে নামবে তারা যদি কিছু শস্যদানা পাওয়া যায়। “ওখানে আমাদের বাবা-মায়েরা আছে” বলল সবচেয়ে পুচকে চড়–ই। ওর নাম টেইলর। সে আরও বলল, “মা তোমাকে আমাকে মানা করতে পারবে না।”

মইয়ের ধাপের ওপর থেকে বাদামি রঙের বড় চড়–ই ওদের লক্ষ্য করছিল।  ছোট্ট চড়ুইরা কাছে আসতে সে বলল, “ওহ, তোমরা সেই দুষ্টু ছোট্ট চড়–ই যারা বাসা থেকে ওড়ার চেষ্টা করেছিলে।” সে আরও বলল, “আমি তোমাদের বিশ্বাস করতে পারি! তোমরা কী চাও?” টেইলর বলল, “প্লিজ মা, আমরা ছোট্ট চড়–ই এই কুয়াশাচ্ছন্ন আবহাওয়ার জন্য খাবার খুঁটতে পারিনি। আমরা ক্ষুধার্ত। কিছু খাবার চাই। বাসা থেকে বের হওয়ার আগে যেমন দিয়েছ, তেমনি।” এই কথা শুনে বয়স্ক চড়–ইটি বলল,“কি বলছ, আমরা তা পারি না, তোমরা প্রায় এক বছরের কাছাকাছি হয়েছ! তোমরা অবশ্যই তোমাদের দেখভাল নিজেরাই করতে পারবে।” এই কথা শুনে ছোট্ট চড়ুইয়েরা দুঃখ পেল, হতাশ হলো। এখন তারা কী করবে।

একটি ছোট্ট পরী ওখান দিয়ে যাচ্ছিল। সে দুখী ছোট্ট চড়ুইদের দেখে দাঁড়ালো। “কী হয়েছে?” বলল পরীটি। ছোট্ট 

চড়–ইয়েরা বলল, “তারা ক্ষুধার্ত।” তখন পরীটি মাথা ঝাঁকালো এবং বলল,“অনেক লোক ক্ষুধার্ত এই পাখীদের মতো কিন্তু আমি খুব ভাগ্যবান, আমার অনেক খাদ্য জমা আছে- তোমরা চাইলে শেয়ার করতে পারো।” “ওহ্ তুমি খুব দয়ালু।” চিৎকার করে বলল 

চড়ুইয়েরা। তারপর বলল, “আমরা কি এখন তোমার সঙ্গে আসতে পারি?” “হ্যাঁ” বলল ছোট্ট পরী।

“দিনে একবার তোমাদের খাবার দিবো। তোমরা ডিনারের সময় আসবে; অনেক খোসাসহ আলু রান্না করবো,এবং অনেক রুটিও বানাবো আমি। চলে এসো।” আনন্দে উচ্ছল হয়ে কিচিরমিচির করতে করতে তারা উড়তে লাগল। পরী তার ছোট বাড়িতে ওদের নিয়ে গেল এবং ঝোপঝাড়ের মধ্যে লুকিয়ে রাখলো যাতে পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় কেউ যেন ওদের দেখে না ফেলে! 

 রাতের খাবার সময় পরীটি বলল, “এখন ওভেন থেকে গরম আলু বের করবো তোমাদের জন্য।” সে তার ঘরের চারপাশে তাকালো সেখানে একটি চেয়ার ছিল, সে তার বইয়ের র‌্যাক ও সোফা দেখল। এবং বলল,“চড়–ই ছেলেরা, তোমরা বইয়ের র‌্যাকের ওপর এবং চড়ুই মেয়েরা, তোমরা সোফার পেছনে বস।” সে আরও বলল, “কিন্তু, সোনামনিরা শোন, আমার কাছে তোমরা দেখতে প্রায় একই রকম! আমি তোমাদের আলাদাভাবে চিনতে চাই!”  

  এই কথা শুনে টেইলর বলল,“আমি ছেলে চড়–ই” আর বিকিস-ও ছেলে।” এবং ওরা বুককেসের ওপর বসলো। টেইলর আরও বলল,“টপি,ফ্লিক, ফিদার এবং ফ্লুপ মেয়ে চড়–ই; ওরা ছাড়া অন্য সকলেই ছেলে।” পরীটি ওদের বলল, “আমি কাউকে চিনি না, কিন্তু আমি চাই তোমরা তোমাদের কাজ যথাযথভাবে করবে, আমি জানি! আমি ছেলে চড়–ইদের ছোট কালো বিবস্ দিবো পরার জন্য; যেটা দিয়ে আমি সহজেই ছেলে চড়–ইদের চিনতে পারবো।” সে আটটা ছোট কালো বিবস্ ড্রয়ার থেকে বের করে ওদের দিলো। সেটা পরার পর তাদের উজ্জ্বল দেখাচ্ছিল এবং সত্যিই তারা আনন্দ অনুভব করছিল। 

মেয়েরাও তাই চাইছিল কিন্তু পরীটি তার মাথা নেড়ে বলল, “না, যদি তোমরা সকলেই কালো বিবস্ পরো তাহলে আমার তালগোল পাকিয়ে যাবে।” সে প্রতিটি চড়–ইকে কিছু আলু আর শুকনো খাবারের টুকরা দিলো। তারা ক্ষুধার্ত ছিল এবং গোগ্রাসে খেয়ে ফেলল। খাবার শেষ করার পর ছেলে চড়–ইয়েরা বলল,“আমরা কি ভালো বিবস্ রাখতে পারি। আমরা খুব সুখ অনুভভ করবো।” একটু হেসে পরীটি বলল, “তোমাদের ইচ্ছা।” তাদের দেখতে হাস্যকর লাগছিল। তারা সকলে উড়লো, তাদের নতুন বিবস্ পরে অহঙ্কারী দেখাচ্ছিল। 
  

যতোদিন গরম আবাওয়া না এলো ততোদিন তারা পরীর কাছে এসে খাবার খেতো। গরম এলে পরীটি বলল,“এখন তোমরা নিজেদের খাবার নিজেরাই সংগ্রহ করে খেতে পারবে।” পরীটি আরও বলল, “কিন্তু পরের বছর যদি মনে করো তোমাদের আমর সাহায্য প্রয়োজন আমি সাহায্য করবো।” পরীটি আরও বলল,“প্লিজ শরৎকালে আমাকে কিছু কাঁটাঝোপ এনে দিয়ো, কারণ আমার লেপ ও কুশন প্রয়োজন।” শরতে চড়–ইয়েরা দয়ালু পরীর জন্য কাঁটাঝোপ খুঁজে নিয়ে এলো এবং পরীটিও নতুন বছরের শীতে নানা ধরনের খাবার দিলো তাদের। 

তারা তাদের বিবস্ পরেই ছিল! তোমরা কি বিশ্বাস করো? আচ্ছা ভালো করে সব চড়–ইদের খেয়াল করো দেখতে পারে ছেলে চড়–ইদের গলায় কালো বিবস চেইনের মতো আছে। এবং মেয়ে চড়–ইদের তা নেই। নতুন বছরে ছেলে চড়–ইয়েরা সবসময় বিবস্ পরে, তোমরা দেখবে। আর যখনই তোমরা চড়–ইদের দেখবে ঐ বিবস্ দেখে ছেলে আর মেয়ে চড়–ই হিসেবে চিনতে পারবে।     

 [ ছোট্ট চড়ুই একটি অনুবাদ গল্প। দ্য স্প্যারো চিল্ড্রেন, এই গল্পের মূল লেখক এনিড ম্যারি ব্লাইটন (১১ আগস্ট ১৮৯৭- ২৮ নভেম্বর ১৯৬৮)। এনিড ম্যারি ব্লাইটন একজন ইংরেজ শিশুসাহিত্যিক। তাঁর বাবা ছিলেন ব্যবসায়ী। তাঁর বাবা তাকে লেখালেখিতে উৎসাহ দিতেন কিন্তু মা লেখালেখি পছন্দ করতেন না। তাঁর মা মনে করতেন লেখালেখি সময়ের অপচয়। ১৯১৭ সালে মাত্র ১৪ বছর বয়সে তাঁর প্রথম কবিতা শিশুদের পত্রিকাতে প্রকাশিত হয়। পরবর্তীতে ১৯২১ সালে তাঁর গল্প ও কবিতা বিভিন্ন পত্রপত্রিকাতে ছাপা হতে থাকে। তাঁর প্রথম কবিতার বই ‘চাইল্ড হুইসপার’ প্রকাশিত হয় ১৯২২ সালে। শিশুদের জন্য ৬০০ এর অধিক বই লিখেছেন তিনি। তিনি প্রখ্যাত শিশুসাহিত্যিক। তাঁর বই ৯০টি ভাষায় অনূদিত হয়েছে। তিনি একাধারে উপন্যাসিক, কবি, শিক্ষক ও ছোট গল্পকার।]  

 

আফরোজা অদিতি
কবি ও কথা সাহিত্যিক

 

এই লেখকের অন্যান্য লেখা



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Developed with by
Top