সিডনী বৃহঃস্পতিবার, ২৫শে এপ্রিল ২০২৪, ১২ই বৈশাখ ১৪৩১

চাওয়া পাওয়া (২য় পর্ব) : বেগম জাহান আরা


প্রকাশিত:
২০ ডিসেম্বর ২০১৯ ২০:৩২

আপডেট:
২৫ এপ্রিল ২০২০ ২১:০৮

শাহেরাও কথা বলে ছেলের সঙ্গে। কিন্তু সুর লাগে না তার সারেঙিতে। মাঝে মাঝে ঝগড়াও হয়ে যায়। নাসিম কি চায়, তা বুঝা যায় না। তার ওপর এমনকরে কথা বলে, যেনো শত্রুর সাথে বোঝাপড়া হচ্ছে। কখনও রাগ ঝাল করে ফোন কেটে দেয়। হয়তো কথা বন্ধ থাকে কয়েক সপ্তাহ।

আবার ফোন করে, হয় শাহেরা না হয় সাদিক। যে কোন মূ্ল্যে তারা ছেলের অভিমান ভাঙাতে চায়। দীর করতে চায় ছেলের কষ্ট। বাবা মাও যে পেছনের কথা ভেবে এখন কষ্ট পাচ্ছে সেটা নাসিম বুঝতে চায় না। বলে, সব তোমাদের ঢং, লোক দেখানো ঢং।

একদিন বললো আমি চলে আসাতে তোমাদের অনেক টাকা বেঁচে গেছে।  সেটা ভেবেছো কখনো ,.?

-সব টাকাই আমি তোমার জন্য রেখে জন্য রেখে দিয়েছি বাবা, শাহেরা বলছে।

-কতো টাকা রেখেছো.? আমাকে ইউনিভার্সিটি পর্যন্ত পড়াতে কতটাকা লাগতো তোমাদের.? আমি যদি সেই সব টাকা এখন চাই?

দেবো, সব দেবো। সাহেরা বলে।

আবার হয়তো একদিন বলে, বাসা থেকে আসার সময় আমি ছিলাম রাস্তার ফকির। তোমাদের কোনো কষ্ট হয়নি তাতে। আজ আমার অভাব নেই, কিন্তু দুঃখটা আছে। এখন টাকা দিয়ে কি করবো।

যা হবার হয়ে গেছে বাবা, তুই বাড়ি আয় একবার। আমাদের এই বাড়িঘর সবই তো তোদের।

-দিয়ে দাও সব তোমাদের ছোট ছেলেকে।এখন আর কিছুরই প্রয়োজন নেই আমার। মনে করো নাসিম বলে কেউ ছিলো না তোমাদের। রাগে ফোঁস ফোঁস করতে থাকে নাসিম।

তবু রফা একটা হয়েছিল। নাসিম এসেছিল বাড়িতে দুই সপ্তাহের জন্য। মা বাবা দিয়েছিলো দশ লাখ টাকা। খালা চাচার সহযোগিতায় আপোস হয়েছিলো। কথা দিয়েছিল নাসিম, পরিবারের সাথে সম্পর্ক স্বাভাবিক করবে। কিন্তু হয়নি সেটা। তবুও ছেলে তো। এক তরফাই থাকে সম্পর্ক। দু-তিন বছর চলে এইভাবে। হঠাত হার্ট এটাকে সাদিক চলে গেলো। তখন এসেছিলো নাসিম। অনেকেই মনে করেছিলো এইবার মন গলবে নাসিমের।

কিন্তু না, গলে নি নাসিমের।  দশদিনের মাথায় বাবার চল্লিশার দোয়া আর এতিম খানায় একবেলা খাওনের কাজ সেরে চলে গেল সে। আবার বিরতি যোগাযোগে।

প্রায় ছয়মাস পর ফোন করে শাহেরা। ছোট ছেলে জসিম এসএসসি পাশ করেছে সে খবর  দিয়ে।

আসলে খবর দেয়াটা অছিলা। শাহেরা চাইছিলো নাসিমের সাথে সম্পর্ক জাগিয়ে তুলতে। জসিম কথা বললো বড় ভাইয়ের সাথে। সেও চায় বড় ভাইয়ের সাথে সম্পর্ক রাখতে। বাবা নেই। ফাঁকা বাড়ি। ভাই এসে তাদের সাথে থাকলে নিশ্চয়ই ভালো লাগবে সবার। তাছাড়া নাসিম তো বলেছিলো মাঝে মাঝে বাড়ি আসবে সে। সেই কথা মনে করিয়ে দেয় জসিম।

নাসিমও চায় দেশে যেতে। কিন্তু পরক্ষনেই মনকে শক্ত করে নেয়। হয়তো মায়ের সাথে তার সম্পর্ক আর কোনদিনই স্বভাবিক হবে না। পচে যাওয়া সম্পর্ক টেনে চলার দরকারই বা কি।

শাহেরা চায় নাসিম দেশে আসুক। হলো তো বিদেশে থাকা। এবার দেশে এসে বিয়ে থা করে সংসার করুক। বুঝে নিক নিজেদের বাড়ি সহায় সম্পত্তি যা আছে।

নাসিমের মন কখনো দুলে উঠে। কিন্ত মাকে সে ক্ষমা করতে পারছে মন থেকে। শৈশবের ক্ষতগুলো থেকে ক্ষরন হয় আজও।  সবচেয়ে অবাক লাগে তার মায়ের নির্লিপ্ততা দেখে। যেন কিছুই করেনি সে ছেলের সাথে। কেনো তাকে কাছে নিয়ে বলতে পারে না, বাবা আমি আজ বুঝতে পারি সব। কিন্তু দিন তো আর ঘুরে আসবে না। সামনের দিনগুলোকে আমরা সাজিয় তুলতে চেষ্টা করবো। কেনো মা পারে না সহজ হতে কেনো পারে না তাকে আদর করতে?

শাহেরা চায় নাসিম এইবার সহজ হোক। তার অভিযোগের পর অনেক টাকা দেয়া হয়েছে তাকে। সে ক্ষতিপূরণ চেয়েছিলো। বাবা সেটা দিয়েছে। বাবাটা দুনিয়ে ছেড়ে চলেও গেছে। বড়ো ছেলো হিসেবে তার কিছু দায়িত্ব আছে, সেটা এবারা পালন করা উচিত তার।

তবুও যোগাযোগ থাকে জসিমের জন্য বলতে গেলে। বাড়ির প্রতি মায়া জাগে না নাসিমের। দিন বসে থাকে না। বয়সও বসে থাকে না। নাসিম বিয়ে করলো একা একা। বছর খানেক পর জানালো সে কথা। অভিমান হলো মায়ের।

নাসিমের জমজ বাচ্চা হলো। জানালো না কাউকে। দুবছর পর ছবি পাঠালো বাচ্চাদের। ছেলে বৌ আর নাতনিদের ছবি দেখে শাহেরর বুক মুচড়ে ওঠে। তার ছেলে আজ ছেলের বাবা হয়েছে। েএখন তো বোঝা উচিত মা বাবার মন। তার চাওয়াগুলো এখনোও একেবারেই বোঝে না নাসিম। চলবে...

 

বেগম জাহান আরা
লেখক ও সাবেক পরিচালক, মহিলা ও শিশু একাডেমি
বর্তমানে জার্মান প্রবাসী

এই লেখকের অন্যান্য লেখা



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Developed with by
Top