সিডনী শনিবার, ২০শে এপ্রিল ২০২৪, ৭ই বৈশাখ ১৪৩১

জীবনের গল্প : কণিকা দাস


প্রকাশিত:
১৩ মার্চ ২০২০ ১৬:২৪

আপডেট:
১৩ এপ্রিল ২০২০ ০১:২৬

 

সকাল সকাল স্নান সেরে নিয়ে তুলসী তলায় এসে দাঁড়ায় নন্দিনী। গলায় আঁচল টেনে জোড়হাতে প্রণাম করে পারিবারিক ঐতিহ্য অনুযায়ী। আজ তার বড় আনন্দের দিন। মেয়ে নিম্মী আজ প্রথম বিমানচালক হিসাবে তার চাকুরীজীবন শুরু করতে চলেছে।

নন্দিনীর চোখের কোণে জল। অশ্রুধারায় ধুয়ে যাচ্ছে পুরনো সব দুঃস্মৃতি। কিন্তু পরক্ষণেই আবার ভেসে উঠছে মাঝ নদীতে ঝড়ে টালমাটাল নৌকোর মত।

একান্নবর্তী পরিবারে নিম্মী বাড়ির প্রথম কন্যা সন্তান। জন্মটাকে সবাই সেলিব্রেট করলেও তার শিক্ষা জীবনে নানা বাঁধার সম্মুখীন হতে হয়েছে বারবার। তুত দাদাদের চেয়ে বেশি মেধা সম্পন্ন বলে যে অদৃশ্য দূরত্ব তৈরি হয়েছিল তা নন্দিনী টের পেতো। আর এটা নন্দিনী বেশ উপভোগ করত। কিন্তু ঠাকুমা, পিসি বা শাশুড়ীমা এমনকি বাড়ির কর্তা ব্যক্তিরাও যখন বলতো--"মেয়ে মানুষের এত পড়াশোনার কী দরকার? সেই তো পরের বাড়িতে গিয়ে হেঁসেল সামলাবে।" তখন নন্দিনীর জেদ আরো চেপে বসতো।

নিজে যা শুনে বড় হয়েছে আর নিজের আশা আকাঙ্খা যখন জলাঞ্জলি দিতে বাধ্য হয়েছে তখন মেয়ের ক্ষেত্রে তা হতে দিতে পারেনা। তিল তিল করে জমিয়ে রাখা হাত খরচের টাকা আর শেষ সম্বল বাবার দেওয়া প্রচুর সোনার গয়না বিক্রি করেছে মেয়েকে পাইলট বানানোর জন্য।

এই নিয়েও কম কথার খোঁচা খায়নি নন্দিনী। ভাসুর-জা, ননদ সবার এক কথা-- শেষ সম্বলও তো মেয়ের পিছনে অযথা নষ্ট করছো। দেখো পরে কিন্তু আমাদের কাছে হাত পাততে এসো না।"

সংসারের কারো কোন সহযোগিতা তো পায়ই নি, এমন কী নিম্মীর বাবাও একসময় হাত উঠিয়ে নিয়েছিল বাড়ির অন্যদের কথা শুনে। ঠোঁট উল্টিয়ে যখন শাশুড়ি বলতেন, "মেয়েকে পাইলট বানানোর স্বপ্ন দেখো না বউমা। সবাই সবকিছু পারেনা।" তখন মনটা মাঝে মাঝে দমে যেতো।

অথচ নিম্মী যখন পাইলটের সার্টিফিকেট পেল তখন নন্দিনীর চেয়ে বাড়ির অন্য সবার উৎসাহটাই বেশি দেখা গেল। বাড়িতে পার্টি দিয়ে লোকজন ডেকে বুঝিয়ে দেওয়া হল সৌম্যজিতের মেয়ে পাইলট হয়েছে। সেখানে নন্দনীর নাম একবারও উঠে আসেনি। নিম্মী অবশ্য মায়ের হাত চেপে ধরে বলেছিল "এ আমাদের মা মেয়ের লড়াইয়ের জিত। আমি সব কৃতিত্ব মাকে দিব।" তখন গর্বে চোখ দিয়ে দুফোঁটা জল গড়িয়ে পড়েছে অবাধ্যের মতো।

সেই নিম্মী আজ প্রথম পাইলট হিসাবে বিমান চালাবে! সবাই যখন সেই আনন্দে আত্মহারা তখন নন্দিনী ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করছে ওর সুস্থ সুনিশ্চিত জীবন।

 

কণিকা দাস
লেখক ও সংগঠক

 

এই লেখকের অন্যান্য লেখা



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Developed with by
Top