সিডনী বৃহঃস্পতিবার, ২৮শে মার্চ ২০২৪, ১৪ই চৈত্র ১৪৩০


দেশের অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে পোশাক কারখানা চালু


প্রকাশিত:
৩ মে ২০২০ ২০:৪৪

আপডেট:
২৮ মার্চ ২০২৪ ১৪:১২

ঢাকার একটি কারখানায় কাজ করছে শ্রমিকরা

 

প্রভাত ফেরী: প্রতি বছর তৈরি পোশাক রফতানি করে বাংলাদেশ আয় করে ৩০ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি। গত ২০১৮-১৯ অর্থবছরে তৈরি পোশাক রফতানি করে ৩৪ বিলিয়ন (৩ হাজার ৪১৩ কোটি) ডলার আয় হয়েছিল। এই অর্থবছরে তৈরি পোশাক খাতের রফতানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩৮ বিলিয়ন (৩ হাজার ৮২০ কোটি) ডলার। এরমধ্যে বছরের শুরুতেই করোনা পরিস্থিতির কারনে অনেকগুলো অর্ডার বাতিল হয়েছে। এখনো অনেকগুলো অর্ডার বাকী আছে।

তাই তৈরি পোশাকের রফতানি অর্ডার ধরে রাখতে সাভার-আশুলিয়া, গাজীপুর ও নারায়ণগঞ্জ এলাকায় ধীরে ধীরে গার্মেন্ট কারখানা খুলে দেওয়া হয়েছে। গার্মেন্ট মালিকরা বলছেন, দেশের অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) এবং সরকারের সঙ্গে আলোচনা করে সব কারখানা খুলে দিতে চান তারা। তবে যেসব কারখানার অর্ডার বাতিল হয়েছে, সেসব কারখানা হয়তো নাও খুলতে পারে। কারখানার মালিকরা মনে করছেন, সময়মতো এসব অর্ডারের পণ্য সরবরাহ করতে না পারলে বাংলাদেশ থেকে অর্ডার চিরদিনের জন্য হাতছাড়া হয়ে যেতে পারে।

এ ব্যাপারে  তৈরি পোশাক মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ ও বিকেএমইএ প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নিয়েছে। এরই মধ্যে স্বাস্থ্য সুরক্ষায় শ্রমিকদের মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এছাড়া রাখা হয়েছে শরীরের তাপমাত্রা মাপা, জীবাণুনাশক দিয়ে জুতা পরিষ্কার, হাত ধোয়াসহ নানা ব্যবস্থা।

আইডি কার্ড দেখিয়ে ঢাকায় আসতে পারবেন পোশাক শ্রমিকরা: কাজের জন্য পোশাক শ্রমিকদের ঢাকায় প্রবে‌শ করতে হলে অবশ্যই ফ্যাক্টরি আইডি কার্ড সঙ্গে রাখতে হবে।

শ‌নিবার (২ মে) কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদফতর এ-সংক্রান্ত নির্দেশনা জা‌রি করেছে। এতে বলা হয়েছে, কোনো শ্রমিককে কারখানার কাজের জন্য ঢাকায় আসার প্রয়োজন হলে তাকে অবশ্যই ফ্যাক্টরি আইডি কার্ড সাথে বহন করতে হবে এবং সংশ্লিষ্ট যথাযথ কর্তৃপক্ষকে প্রদর্শন করতে হবে। অন্যথায় ঢাকায় তাদের প্রবেশের অনুমতি প্রদান করা যাবে না।

ইতোমধ্যে ঢাকা ও এর আশপাশের পোশাক কারখানাগুলো খুলে দেয়া হয়েছে। লকডাউন উপেক্ষা করে ঢাকায় ফিরছেন পোশাক শ্রমিকরা। লকডাউনের কারণে মহাসড়কে গণপরিবহন বন্ধ থাকলেও চাকরি হারানোর ভয় ও জীবিকার তাগিদে এসব পোশাক শ্রমিক হেঁটে এবং নদী পার হয়ে ঢাকা, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জসহ বিভিন্ন স্থানে যাচ্ছেন। তবে ঢাকার বাইরে অথবা দূর-দূরান্ত থেকে পোশাক শ্রমিকদের পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত ঢাকায় আগমনে মালিক কর্তৃপক্ষের নির্দেশ করা হয়েছে।

গার্মেন্টস খোলার বিরোধিতা করছে রাজনৈতিক দলগুলো: দেশের বামদল ও শ্রমিক সংগঠনগুলো এই মুহূর্তে পোশাক কারখানা খোলার তীব্র বিরোধিতা করছে। বামদলের নেতারা বলছেন, দেশে যখন সাধারণ ছুটি ও লকডাউন চলছে এবং দেশবাসী চরম আতঙ্কে তখন বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ ছাড়াই একেবারে অপ্রস্তুত অবস্থায় এভাবে গার্মেন্টস খুলে দেয়াটা গোটা জাতির জন্যই আত্মঘাতী। শুধু তাই না গার্মেন্টস শ্রমিকদের নিয়ে মালিক ও সরকারের যে মরণখেলা শুরু হয়েছে তা আরও ভয়াবহ বিপর্যয় ডেকে আনবে। এমনকি সরকারের শরিক ১৪ দলের নেতারা সরকারের এ সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করছে।

শ্রমিক সংগঠনের নেতারা আরও বলছেন, মালিক ও সরকারের স্বেচ্ছাচারী ভূমিকার কারণে শ্রমিকদের জীবন বিপন্ন হলে তার সম্পূর্ণ দায়-দায়িত্ব সরকার ও মালিকদেরকেই বহন করতে হবে।

বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম গার্মেন্টস খোলা প্রসঙ্গে বলেন, বর্তমান করোনা-মহাবিপর্যয়কালে গার্মেন্টস খুলে দেয়াটা গোটা জাতির জন্যই আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত। বর্তমান পরিস্থিতিতে গার্মেন্টস, কারখানা খুলে দেয়া চরম হঠকারিতা। এটা মালিকের মুনাফার স্বার্থে শ্রমিকদের মৃত্যুকূপে ঠেলে দেয়া ছাড়া কিছুই নয়। করোনা-মহাবিপর্যয়কালে এর আগেও মালিকরা গার্মেন্টস শ্রমিকদের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলেছে।

সরকারের শরিকদল বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন বলেন, যেভাবে হঠাৎ করে তাদের ডেকে এনে কারখানার কাজে যোগদান করানো হয়েছে, এটা ঠিক হয়নি। আর গার্মেন্টস শ্রমিকদের যেভাবে শত শত মাইল হেঁটে আনার যে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে সেটাও অমানবিক। গার্মেন্টস যদি খুলতেই হয় তাহলে শ্রমিকদের স্বাস্থ্য সুরক্ষার বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে।

সরকারের আরেক শরিক জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনু বলেন, একদিকে সরকারি ছুটির নামে অঘোষিত লকডাউন করে মানুষকে ঘরে রেখে সংক্রমণ বিস্তার রোধ এবং লকডাউনে কর্মহীন নিরুপায় অসহায় মানুষকে ত্রাণ সহায়তা প্রদান করে মানুষ বাঁচানোর আপ্রাণ ও অকান্ত প্রচেষ্টা চলছে। অন্যদিকে সীমিত আকারে গার্মেন্টস খুলে দেয়া, শিথিলতা, সমন্বয় ও পরিকল্পনাহীনতা যেন করোনা সাগর পারি দিতে মাঝ সাগরে হাল ছেড়ে দেয়া বা যুদ্ধে নেমে মাঝপথে রণভঙ্গে আত্মসমর্পণে পরিণত না হয়।

 



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Developed with by
Top