সিডনী বৃহঃস্পতিবার, ২৮শে মার্চ ২০২৪, ১৪ই চৈত্র ১৪৩০


বাংলাদেশে একদিনে করোনায় সর্বোচ্চ আক্রান্ত ও মৃত্যুর রেকর্ড


প্রকাশিত:
১৯ মে ২০২০ ১৯:১১

আপডেট:
২৮ মার্চ ২০২৪ ১৭:০৯

ফাইল ছবি

 

প্রভাত ফেরী: দেশে প্রথম রোগী শনাক্তের ৭২তম দিনে নমুনা পরীক্ষার সংখ্যা ১০ হাজার ছুঁইছুঁই। বেশি নমুনা পরীক্ষায় সর্বোচ্চ সংখ্যক করোনাভাইরাসে সংক্রমিত মানুষ শনাক্ত হয়েছে সোমবার। ২৪ ঘণ্টায় ৯ হাজার ৭৮৮টি নমুনা পরীক্ষা করে আরও ১ হাজার ৬০২ জনের মধ্যে সংক্রমণ ধরা পড়েছে। এতে করে দেশে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ২৩ হাজার ৮৭০। এটি এখন পর্যন্ত এক দিনে সর্বাধিক সংখ্যক আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। রোববার ৮ হাজার ১১৪টি নমুনা পরীক্ষায় করোনাভাইরাসে সংক্রমিত ১ হাজার ২৭৩ জন শনাক্ত হয়েছে। এর আগের দিন শুক্রবার ছিল বলে ৩৩টি ল্যাবে ৬ হাজার ৭৮২টি নমুনা পরীক্ষায় ৯৩০ জনের মধ্যে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়। গত সপ্তাহ জুড়ে করোনা শনাক্তের সংখ্যা হাজারের ওপরে ছিল। এতে বোঝা যায়, যত বেশি নমুনা পরীক্ষা করা হচ্ছে তত বেশি করোনা রোগী শনাক্ত হচ্ছে দেশে।

এদিকে তীব্র ছোঁয়াচে এই রোগে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে মৃত্যুর সংখ্যা। এক দিনেই রেকর্ড ২১ জনের মৃত্যুর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে নতুন করোনাভাইরাসে মৃতের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ৩৪৯। বাংলাদেশে ৮ মার্চ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত প্রথম রোগীর খোঁজ মেলার পর দশ দিনের মাথায় প্রথম মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। গত দশ সপ্তাহে কখনও এক দিনে এত নতুন রোগী আর এত বেশি মৃত্যু বাংলাদেশকে দেখতে হয়নি।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশে প্রয়োজনীয় সংখ্যক নমুনা পরীক্ষা না হওয়ায় প্রকৃত সংখ্যক করোনায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা জানা যাচ্ছে না। বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ায় দিনে ১০ হাজার নমুনা পরীক্ষার টার্গেট করা হলেও তা এখনও বাস্তবায়ন করা যায়নি। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রথম সংক্রমণের দুই মাসেও নমুনা পরীক্ষা সংখ্যা বাড়াতে না পারলে সংক্রমণের সঠিক পরিস্থিতি বোঝা যাবে না। যেখানে বাংলাদেশে বেশিরভাগ করোনা রোগীর কোনো উপসর্গ দেখা যাচ্ছে না।

দেশে লগডাউন শিথিলে করোনা সংক্রমণের হার প্রতিদিনই বাড়ছে। এপ্রিলের শেষ সপ্তাহ পর্যন্ত যেখানে প্রতিদিন নতুন করোনায় শনাক্তের সংখ্যা ৫শ থেকে সাড়ে ৫শ জনে ওঠা নামা করছিল, সেখানে মে মাসে শুরু থেকেই তা লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়তে থাকে। সংখ্যার এই ঊর্ধ্বগতি চলতি মে মাসটিকে আরও বেশি নিষ্ঠুর করে তুলতে পারে এমনটাই বলে আসছিলেন বিশেষজ্ঞরা। গত এক সপ্তাহে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যার দিকে তাকালে তার প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে। ইতোমধ্যে পোশাক কারখানা চালু করা হয়েছে। করোনায় আক্রান্ত পোশাক শ্রমিক পাওয়া গেছে। গাজিপুর ও নারায়ণগঞ্জে পোশাক কারখানার আশপাশে রোগী বাড়ছে। হোটেল-রেস্তোরাঁ চালুর কারণে মানুষের ভিড়ও বেড়েছে সেসব স্থানে। বিপণিবিতানগুলোতে উপচে পড়া ভিড়। স্বাস্থ্যবিধি মেনে সবকিছুই খোলার পক্ষে সরকার। এসবের মধ্যে ঘনবসতিপূর্ণ নগরী ঢাকায় স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা সম্ভব হচ্ছে না। স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্য অনুযায়ী বরাবরের মতো ঢাকা মহানগরীতে রোগ শনাক্ত এবং মৃত্যুর হার দুইই বেশি। তীব্র ছোঁয়াচে এই রোগে আক্রান্তের সর্বোচ্চ পর্যায়টি কী হবে তাও নিশ্চিত করা সম্ভব হচ্ছে না।

সোমবার নিয়মিত অনলাইন বুলেটিনে স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক নাসিমা সুলতানা দেশে করোনাভাইরাস পরিস্থিতির এই সবশেষ তথ্য তুলে ধরে বলেন, সারা দেশে বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি রোগীদের মধ্যে গত ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হয়েছে ২১২ জন। সব মিলয়ে এ পর্যন্ত মোট ৪ হাজার ৫৮৫ জন সুস্থ হয়ে উঠল। তিনি জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে ৪২টি ল্যাবে ৯ হাজার ৭৮৮টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। মোট পরীক্ষা করা হয়েছে ১ লাখ ৮৫ হাজার ১৯৬টি।

ডা. নাসিমা সুলতানা বলেন, ২৪ ঘণ্টায় যারা মারা গেছে তাদের মধ্যে পুরুষ ১৭ জন, নারী চার জন। এদের মধ্যে হাসপাতালে আনার পর মৃত ঘোষণা করা হয় দুজনকে, হাসপাতালে মারা গিয়েছে ১৫ জন এবং বাসায় মারা গেছে চারজন। ঢাকা বিভাগের ১২ জন, চট্টগ্রাম বিভাগের সাতজন, সিলেট বিভাগের একজন এবং রাজশাহী বিভাগের একজন রয়েছে। ঢাকা বিভাগের মধ্যে রাজধানীর ছয়জন, ঢাকা জেলার দুজন, গোপালগঞ্জের একজন, মুন্সীগঞ্জের একজন, টাঙ্গাইলের একজন, মানিকগঞ্জের একজন রয়েছে। আর চট্টগ্রাম বিভাগের মধ্যে জেলার দুজন, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের একজন, ফেনীর দুজন, নোয়াখালীর একজন, কুমিল্লার একজন রয়েছে। এছাড়া অন্য দুই বিভাগের মধ্যে সিলেটের একজন এবং বগুড়ার একজন রয়েছে।

বয়স বিশ্লেষণে দেখা যায়, ৬১ থেকে ৭০ বছরের মধ্যে পাঁচ জন, ৫১ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে আট জন, ৪১ থেকে ৫০ বছর বয়সের মধ্যে ছয় জন ও ৩১ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে রয়েছে দুই জন। অন্যদিকে ঢাকা সিটিসহ দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে গত ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হয়েছে ২১২ জন। এ নিয়ে মোট সুস্থ হয়েছে ৪ হাজার ৫৮৫ জন। শনাক্ত বিবেচনায় সুস্থতার হার ১৯ দশমিক ২১ শতাংশ, মৃত্যুর হার ১ দশমিক ৪৬ শতাংশ।

তিনি বলেন, গত ২৪ ঘণ্টায় আইসোলেশনে এসেছে ২৩১ জন। মোট আইসোলেশনে আছে তিন হাজার ৩৮৩ জন। হোম ও প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে এসেছে তিন হাজার ৪১২ জন। এখন পর্যন্ত কোয়ারেন্টাইনে এসেছে ২ লাখ ৪৩ হাজার ৯০৭ জন। আর ছাড়পত্র নিয়েছে ১ লাখ ৯৩ হাজার ৮৭২ জন। বর্তমানে কোয়ারেন্টাইনে আছে ৫০ হাজার ৮৮ জন। সারাদেশে ৬৪ জেলায় ৬২৬টি প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনের জন্য প্রস্তুত। তৎক্ষণিকভাবে এসব প্রতিষ্ঠানে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনের সেবা দেওয়া যাবে ৩১ হাজার ৮৪০ জনকে।

নাসিমা বলেন, সারা দেশে আইসোলেশন শয্যা আছে ৯ হাজার ১৩৪টি। ঢাকার ভেতরে আছে তিন হাজার ১০০টি। ঢাকা সিটির বাইরে শয্যা আছে ছয় হাজার ৩১৪টি। আইসিইউ সংখ্যা আছে ৩৩৯টি, ডায়ালাইসিস ইউনিট আছে ১০২টি। করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি এড়াতে সবাইকে স্বাস্থ্য অধিদফতর ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরামর্শ-নির্দেশনা মেনে চলার অনুরোধ জানানো হয় স্বাস্থ্য বুলেটিনে। নাসিমা সুলতানা জানান, কোভিড-১৯ রোগে আক্রান্তদের চিকিৎসা দিতে বর্তমানে ১৬ হাজার ১ জন চিকিৎসক আছেন। এছাড়া আরও প্রায় চার হাজার চিকিৎসক স্বেচ্ছায় কাজ করছেন।


বিষয়: করোনা


আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Developed with by
Top