সিডনী মঙ্গলবার, ১৬ই এপ্রিল ২০২৪, ৩রা বৈশাখ ১৪৩১


বিনিময় : ডা. রোকশানা শরীফা


প্রকাশিত:
৮ অক্টোবর ২০২০ ২৩:১০

আপডেট:
১০ অক্টোবর ২০২০ ২২:৪০

 

শরতের এক নির্মল সকাল, বাতাসে শিউলী ফুলের গন্ধ ভেসে আসছে।
উঠোনটা ঝাড়ু দিয়ে কুড়ানী ডালা নিয়ে মাঠের দিকে রওনা দিল
কুড়ানী কুড়ায় সারাদিন, ভাঙ্গা ঘটিবাটি পুরনো খেলনা
তার ডালা ভরে ওঠে নানা ধরনের ফেলে দেওয়া জিনিসে,
দিন শেষে কুড়ানি তা বিক্রি করে ক’টা ফুটো কড়ি তুলে দেয় মা’র হাতে।
আজ কুড়ানী এসেছে পদ্মানদীর ধারে,
ঝকঝকে নীল আকাশে পাল তোলা সাদা মেঘের ভেলা
নদীর ধারে শ্বেতশুভ্র কাশবন যেন হাতছানি দিয়ে ডাকছিল।
হঠাৎ কানের কাছে বলে উঠলো কেউ, “যাবি”
কুড়ানী চমকে উঠে দেখল পাশে দাঁড়িয়ে আছে রাখাল
উৎসাহে চকচক করছে তার চোখ।
দুজনে ছুটল সাদা কাশবনের দিকে।
ঝোপের আড়ালে গিয়ে রাখাল ডেকে উঠল-  “কুড়ানী ………”
কাশের বন দুলে উঠলো সেই ডাক শুনে।
দুজনের খেলা জমে উঠলো যেন মেঘের সাথে সূর্যের লুকোচুরি,
রাখাল কাশফুলগুলো কে মুঠো করে ধরে ময়ূরপুচ্ছ বানিয়ে নেচে দেখালো,
খিল খিল হাসিতে লুটিয়ে পড়ল কুড়ানী
শরীরে জড়িয়ে গেল কাশের পেজা তুলো।
ফুলের কেশর সাজিয়ে তৈরি হল শুভ্র সিংহাসন
কুড়ানী গিয়ে বসলো মহারানী বেশে।
বাতাসের তালে তালে কাশফুল গাইল বন্দনা সংগীত
মহারানীর মনতুস্টিতে ব্রেক ড্যন্সে মেতে উঠল রাখাল,
সে এক কল্পলোকের দৃশ্য।
ইতিমধ্যে কুড়ানীর পেটে মোচড় দিচ্ছে ক্ষিদে, গতকাল থেকে কিছু খাওয়া হয়নি,
‘আমি যাই, মা বকবে” বলে ডালা নিয়ে রওনা দিল কুড়ানী।
রাখাল ছুটে এসে একগুচ্ছ কাশফুল গুঁজে দিল হাতে, হেসে বললে, “ঝাড়ু বানিয়ে বেচতে  পারবি ।”
মাথায় ডালা আর একহাতে বুকে কাশফুল জড়িয়ে কুড়ানী হাঁটছিল পথের ধার দিয়ে
সহসা একটি সাদা গাড়ি গা ঘেঁষে দাঁড়াল, জানালার কাচ নামিয়ে বেরিয়ে এল একটি সুন্দর মুখ, ‘এই মেয়ে ফুল বিক্রি করবে?” হাত বাড়িয়ে মেলে ধরলো
একটি  ৫০০ টাকার নোট
মন্ত্রমুগ্ধের মত কুড়ানি তার হাতে তুলে দিল কাশফুলের গুচ্ছ।
গাড়ীটা চলে যাবার পর
কুড়ানী অবাক হয়ে উল্টেপাল্টে দেখছিল নোটটি
আবার ফিরে এল গাড়িটা,কাচ নামিয়ে এবার বাড়িয়ে ধরল তাজা লাল গোলাপের তোড়া,
মুখে বললে,
‘‘ভাবলাম তোমার ফুলের বিনিময়ে আমার ফুলটা দিয়ে যাই”
এতগুলো লাল গোলাপ কুড়ানী কোনদিন হাতে ধরেনি,
বুকের মধ্যে কেমন যেন করছিল ।
গাড়ির মেয়েটা দেখল বাইরের সময়টা ছবির মতো স্থির হয়ে আছে
কুড়ানী দাঁড়িয়ে আছে ক্যানভাস হয়ে, বাম হাতে ধরে আছে মাথার ঘটিবাটি ডালা
হাওয়ায় উড়ছে উসকো খুসকো চুল, বুকে আগলে রেখেছে লাল গোলাপের তোড়া।
স্থির হয়ে আছে পদ্মার পানি, থির হয়ে আছে দুরের কাশবন,
পলকহীন কুড়ানির জল ভরা চোখ
মুহূর্তেই নদী হয়ে গড়িয়ে পড়ল গালে ।
মেয়েটা কুড়ানীর হাত স্পর্শ করে বললে, “আমি সুস্মিতা, আজ আসি কেমন”।
ফিরতি পথে গাড়ির কাচ নামানোই থাকলো
বাতাসে এলোমেলো হচ্ছিল সুস্মিতার কেশবিন্যাস
ধীরে ধীরে পেছনে মিলিয়ে যাচ্ছিল ক্যানভাসের কুড়ানী
সুস্মিতা কাশফুলের পালকে হাত বুলিয়ে বিড়বিড় করে উঠলো
‘সব বিনিময় কি সমান হয়? হয়না। ’
সব বিনিময় সমান হয়না
সব বিনিময়ে অংক সয়না।



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Developed with by
Top