সিডনী বুধবার, ২৪শে এপ্রিল ২০২৪, ১০ই বৈশাখ ১৪৩১


বন্ধু : রাজ


প্রকাশিত:
১২ ডিসেম্বর ২০২০ ২২:৪২

আপডেট:
১২ ডিসেম্বর ২০২০ ২২:৪৪

 

আমি তখন খুব ছোট্ট আনুমানিক ৮/১০ বছর বয়সী। তখন আমাদের একটা সাদা গাভী ছিল। আমি গাভীটিকে ভীষণ পছন্দ করতাম। প্রতিদিন নিয়ম মাফিক ঘাস, ভাতের ফেনা খাওয়ানো ও মাঠে  নিয়ে চড়ে বেরানোই ছিল আমার কাজ। এভাবে সাদা গাভী ও আমার মাঝে একটা অলিখিত বন্ধুত্ব গড়ে উঠে। আমরা দুজনে ছিলাম মানিক -জোর এর মতো। আমি ঘোড়ার মতো ওর পীঠে চড়ে বেড়াতাম। সে আমাকে পীঠে নিয়ে বেড়াতো। অথচ ওর কাছে ভিড়তে কেউ সাহস পেতোনা। আমি যেন তাকে বুঝতে পারতাম সে- ও আমাকে বুঝতে পারতো।  পারিবারিকভাবে আমরা তেমন সচ্ছল ছিলাম না। একটা টিনের চালা ছিল। আমার বিছানার এককোনায় আমার বন্ধুকে রাখা হতো। আমার বন্ধু সারারাত ধরে জাবরকাটত আমার খুব ভালো লাগতো। আমাকে  একটু দেরিতে দেখলে হাম্বা হাম্বা করে ডাকতো। আমি পীঠে হাত বুলিয়ে দিলে চুপচাপ থাকতো। একদিন আমার বড়ো আপার বিয়ের প্রস্তাব এলো। বড়ো আপাকে দেখার পরে বিয়ের কথাবার্তা ও চুড়ান্ত হলো। যৌতুক হিসেবে ১০,০০০ হাজার টাকা ধার্য করা হলো। বাবা-মা পরে গেলেন মহা ঝামেলায়। আমাদের সম্বল বলতে আমার বন্ধু ও ভিটেমাটি ছাড়া কিছুই ছিল না। একটা  অদ্ভূত  জিনিস লক্ষ্য করলাম যে- দুই দিন হতে আমার বন্ধু আর আগের মতো হাম্বা হাম্বা করে আমায় দেখলে ডাকেনা। দেখলাম - ওর কাজল কালো বড়ো বড়ো দুটি চোখ দিয়ে টপটপ করে জল গড়িয়ে পরছে। আমি বাবা -মা কে  বললাম - আমার বন্ধু কাঁদছে কেন?  তোমরা কি কিছু বলেছো? 

বাবা- মা বললেন - আসলে আমরা গত দুইদিন হতে সিদ্ধান্তঃ নিয়েছি গাভীটি বিক্রি করে তোর বড়ো আপাকে যৌতুকের টাকা দিবো। ওরা পশু হলেও বিধাতা  তাদেরকে সেই শক্তি দিয়েছেন। ওরা আগাম বুঝতে পারে। আমি বললাম - আমার বন্ধু কে আমি বিক্রি করতে দিবোনা। বাবা-মা বললেন - দেখো বাবা এছাড়া আর কোন উপায় নেই। আজ হাটবার।  এরপর বাবা আমার বন্ধুকে নিয়ে পুকুরে নিয়ে গোসল করিয়ে নিয়ে এলেন। গোসল করার পরে বন্ধুকে আরো ধবধবে সাদা লাগছে। খুব সুন্দর লাগছে। তার কাজল কালো দুটি আঁখিতে পুকুরের পানিতে আছন্ন করে রেখেছে। সত্যি সে কাঁদছে।তারপর বাবা বন্ধুর গলা হতে  দড়ি খুলে ৩ হাতের মতো কেটে নিয়ে আবার গলায় বেঁধে দিয়ে বিক্রি করার উদ্দেশ্য হাটে রওনা হলেন। আমি পিছু পিছু দৌড়ে যাচ্ছি। বাবা হনহন করে চলে যাচ্ছে। কিছু দূর যাওয়ার পরে আমি থামলাম। বন্ধু একবার আমার দিকে পিছনে ফিরে তাকালো। বাবা দড়িচটা জোরে টান দিলেন। কাছে হতে বন্ধু ধীরে ধীরে দূরে মিলিয়ে গেলেন। বন্ধুকে আর দেখতে পাচ্ছি না। আমি চোখ মুছতে মুছতে বাসায় আসলাম। সেদিন কিছু মুখে দিইনি। জানি বন্ধু ও কিছু মুখে দেয়নি। এ যে আমাদের আত্মার বন্ধন। যেখানে থাকিস -ভালো থাকিস বন্ধু। বহু ইচ্ছে থাকা সত্তেও তোকে আগলে  রাখার মতো সেদিন আমার কোন শক্তি  ছিল না । কি আর করবো বলো বন্ধু? -

আমরা যে সত্যি বড়ো অসহায়! 

 

ছবিঃ ইন্টারনেট থেকে

 

রাজ
গল্পকার, কবি ও উপন্যাসিক, তেতুলিয়, পন্চগড় 

 

এই লেখকের অন্যান্য লেখা


বিষয়: রাজ


আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Developed with by
Top