সিডনী মঙ্গলবার, ২৩শে এপ্রিল ২০২৪, ১০ই বৈশাখ ১৪৩১


করোনা হোক করুণা লাভের উপলক্ষ


প্রকাশিত:
২৯ মে ২০২০ ২১:১৬

আপডেট:
২৩ এপ্রিল ২০২৪ ২২:২৪

 

পৃথিবীজুড়ে  করোনা ভাইরাসের যে আজাব নেমে এসেছে তা কারো আর অজানা নয়। দিন দিন এ আজাবের বিস্তার বেড়েই চলেছে। এ পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়েছে প্রায় দুইশটির বেশি দেশে। আক্রান্ত হয়েছে সাত লক্ষাধিক মানুষ। মৃত্যবরণও করেছে তেত্রিশ হাজারের মতো। প্রতিনিয়ত বেড়েই চলছে এর সংক্রমণ। এমতবস্থায় করোনা প্রতিরোধে নিজেদের অক্ষমতা দেখে হাহাকার করছে পৃথিবীর উন্নত রাষ্ট্র গুলো পর্যন্ত। ব্যর্থ হয়েছে মানবিক সকল জ্ঞান, ব্যর্থ হয়েছে বিজ্ঞান। অমুসলিমরা পর্যন্ত বলতে বাধ্য হচ্ছেন- আমাদের সব ক্ষমতা শেষ, উপরওয়ালা ছাড়া আমাদের আর কোনো ক্ষমতা নেই!

কিন্ত রোগ প্রতিরোধের জন্য সর্বপ্রথম প্রয়োজন উৎপত্তিস্থল নির্ণয় করা। আজকের এই মহামারির উৎপত্তির কথা পবিত্র কোরআন অনেক আগেই বলে দিয়েছে। ইরশাদ হয়েছে- ‘অনিষ্টতা ছড়িয়ে পড়েছে জলে ও স্থলে, শুধুমাত্র মানুষের কৃতকর্মের ফলে। যেন আল্লাহ মানুষকে আস্বাদন করান তাদের কিছু মন্দ কর্মের শাস্তি। যাতে মানুষ ফিরে আসে আল্লাহর কাছে!’ (সুরা রুম, আয়াত : ৪১ )

পবিত্র আয়াতের ভাষ্য থেকে স্পষ্ট বোঝা যায়- করোনা ভাইরাস মানুষের কৃত মন্দ কর্মের ফল। পৃথিবীর মানুষ আল্লাহকে ভুলে গেছে, ভুলে গেছে তাদের মহান স্রষ্টাকে। তাদের রিজিকদাতা পরম করুণাময় রবকে। সত্য-ন্যায়ের প্রাচীর ধ্বসে অসৎ মানুষেরা সেখানে নির্মাণ করেছে মিথ্যার কালো দেয়াল। ধ্বসে গেছে সততার মিনার, খেয়ানতদারিতা হয়েছে আকাশচুম্বী। নদীর স্রোতের মতো ভেসে গেছে হৃদয়ের হৃদ্যতা, কোমলতা আর ভালোবাসা। সেখানে বাসা বেঁধেছে হিংসা বিদ্বেষ, বিস্তার করেছে অপকর্মের জাল। মানুষে মানুষে বেড়েছে বিভাজন। অসৎ লোকেরা হয়েছে মহাজন।

এগুলো আমাদের নিজেদের কথা। আরেকজনের দিকে ঠেলে দিয়ে নিজেকে পাশ কাটিয়ে এখান থেকে গুটিয়ে নেয়ার কোনো সুযোগ নেই। আমাদের সমাজের সার্বিক চিত্র এটি। যার প্রতীফলন করোনার মত বিষধর সাপ হয়ে ধেয়ে আসছে আজ আমাদের দিকে। ছাবলে ছোবলে ছিনিয়ে নিচ্ছে তাজা প্রাণ। ধুঁকে ধুঁকে মরছে হাজারো মানুষ।

তাই আজকের এই অসময়ে অযাচিত বিপদ থেকে মুক্তির জন্য আমাদের প্রথম পদক্ষেপ হবে তওবা-ইসতিগফার, তথা কৃত সকল পাপ থেকে দৃঢ় প্রতিজ্ঞার সঙ্গে নিজেকে ফিরিয়ে এনে মহান প্রভুর অভিমুখী করা। আল্লাহ তায়ালা এই মহামারি দিয়েছেন যেন আমরা আল্লাহর দিকে ফিরে যাই। করোনার আতঙ্কে হলেও যেন আমরা আল্লাহর করুণার প্রতি নত হই। তাই আমাদের আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। কারণ দয়াময় আল্লাহর দিকে ফিরে যাওয়ার মোক্ষম সময় এটি। নিজেদের কলঙ্কিত অতীতের কথা ভুলে গিয়ে আলোকিত ভবিষ্যৎ সাজাতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হওয়ার এটিই উপযুক্ত সময়। এখন আমাদের উচিত নিয়মিত পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করা। প্রভুর কাছে আহাজারি আর রোনাজারিতে নিজেদের সব পাপ মুছে ফেলার চেষ্টা করা।

 দ্বিতীয়ত আমল ইবাদত ও রোনাজারির পাশাপাশি এই মহামারি থেকে মুক্তির জন্য আমাদেরকে বাহ্যিক মাধ্যমও গ্রহণ করতে হবে। এবং এটা থেকে বেঁচে থাকার সকল চেষ্টা করতে হবে। অনেকের মধ্যে এমন একটা ধারণা ছড়িয়ে পড়েছে যে, ইসলামে ছোঁয়াচে রোগ বলতে কিছু নেই। এই ধারণার কারণে দুইটা সমস্যা হয়। কেউ কেউ সব সতর্কতা ছেড়ে দিয়ে নিজেকে একবারে এলিয়ে দেয়। আবার কেউ কেউ যখন দেখে যে, সংক্রমণের মাধ্যমে করোনা ছড়িয়ে পড়ছে, তখন ইসলামের মধ্যে সংশয় খুঁজে পায়। আসলে ইসলামে কোনো ছোঁয়াচে রোগ নেই, কথাটি এভাবে বলাটা পুরোপুরি ঠিক নয়। কারণ ইসলাম ছোঁয়াচে রোগ তথা সংক্রমণের মাধ্যমে ভাইরাস ছড়িয়ে পড়াকে কখনোই অস্বীকার করেনা। বরং ইসলাম শুধু আমাদের মধ্যে এই বিশ্বাসটুকু বধ্যমুল করতে চায় যে, সংক্রমণের মাধ্যমে রোগ ছড়িয়ে পড়াটাও আল্লাহর ইচ্ছায় হয় এবং তাকে সংক্রমণের শক্তিটাও আল্লাহ তায়ালাই দেন। যেমন এক হাদিসে এসেছেÑ ‘রোগ নিজ থেকে সংক্রমিত হওয়ার কোনো বিশ্বাস ইসলামে নেই।’ (আবু দাউদ, হাদিস : ৩৯১১)

কিন্তু আল্লাহর ইচ্ছায় সংক্রমণ হতে পারে। তাই সতর্কতার সকল মাধ্যম আমাদেরকে গ্রহণ করতে হবে। যেমন নবী (সা.) আরেক হাদিসে বলেছেন- ‘কুষ্ঠরোগে আক্রান্ত ব্যক্তির কাছ থেকে তুমি (সতর্কতা স্বরূপ) পলায়ন করো, যেমন পালায়ন করো সিংহের কাছ থেকে।’ (মুসনাদে আহমাদ, হাদিস : ৫৭২২)। করোনা থেকে সতর্কতার অমূল্য নির্দেশনা রয়েছে আমাদের জন্য এই হাদিসে নববিতে।

তৃতীয়ত সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে বিষয়টা সেটি হচ্ছে, আল্লাহ না করুন আমরা কেউ এই মহামারিতে আক্রান্ত হয়েই গেলাম; তো তখন কী করবো! আসলে তখনো আমাদের জন্য ভয়ের কোনো কারণ নেই। মহামারি কাফের বেঈমানদের জন্য ভয় ও উদ্বেগের কারণ হলেও মুমিনদের জন্য শান্তি ও প্রশান্তির মাধ্যম। কারণ এর মাধ্যমে মুমিন পৌঁছতে পারে মর্যাদার অতি উচ্চ এক আসনে, যার নাম শাহাদাত। তবে এর জন্য শর্ত হচ্ছে আক্রান্ত ব্যক্তির ধৈর্য ধারণ করা এবং সাওয়াবের প্রত্যাশা করা। যেমন নবী (সা.) বলেছেন- ‘মহামারি হলো একটি আজাব, যা আল্লাহ প্রেরণ করেন যার প্রতি ইচ্ছা করেন। আর আল্লাহ মহামারিকে মুমিনদের জন্য বানিয়েছেন রহমত। যে কোনো মুমিন মহামারিতে আক্রান্ত হবে অতপর সে তার আপন জায়গায় বসবাস করবে ধৈর্য ধারণকারী ও সওয়াবের প্রত্যাশী হয়ে এবং সে বিশ্বাস করবে যে, তাকে যা কিছুই আক্রান্ত করছে তা আল্লাহ তার জন্য পূর্ব থেকেই লিখে রেখেছেন, তো তার জন্য থাকবে শহীদের সমপরিমাণ সওয়াব।’ (বুখারি, হাদিস : ৩৪৭৪)। আরেক হাদিসে এসেছেÑ ‘মহামারি হলো প্রতিটি মুমিনের জন্য শাহাদাত।’ (বুখারি : ৫৭৩২)

তাহলে বর্তমান সময়ে আমাদের প্রথম করণীয় হলো, তওবা করে আল্লাহর কাছে ফিরে যাওয়া, নামাজ রোজা ও রোনাজারিতে মশগুল হওয়া। দ্বিতীয় করণীয় হলো, করোনা থেকে বাঁচার জন্য সতর্কতামূলক সব ব্যবস্থা গ্রহণ করা। নিয়মিত দুই হাত পরিষ্কার করা, মাস্ক ব্যবহার করা, বিনা প্রয়জনে বাইরে বের না হওয়া এবং এ জাতীয় আরো অন্যান্য ব্যবস্থা গ্রহণ করা।  সর্বশেষ করণীয় হলো, আল্লাহ না করুন- যদি আমরা কেউ আক্রান্ত হই তাহলে ধৈর্য ধরে সওয়াবের প্রত্যাশা করা। আল্লাহ সবাইকে তাওফিক দান করুন। আমিন। 

 


বিষয়:


আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Developed with by
Top