সিডনী বৃহঃস্পতিবার, ২৫শে এপ্রিল ২০২৪, ১২ই বৈশাখ ১৪৩১


অসুস্থ ব্যক্তিকে দেখার ফজিলত ও আদব


প্রকাশিত:
১৩ জুন ২০২০ ০০:৩৩

আপডেট:
২৫ এপ্রিল ২০২৪ ২৩:৩১

ফাইল ছবি

 

প্রভাত ফেরী: অসুস্থ অবস্থা মানুষ খুব অসহায় বোধ করে। অসুস্থ মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে তাকে সান্ত্বনার বাণী শোনালে, খোঁজখবর নিলে, একটু সেবাযত্ন করলে তার দুশ্চিন্তা লাঘব হয়। সে অন্তরে অনুভব করবে প্রশান্তি। তাই মানবিক বিচারে রোগীর খোঁজখবর নেওয়া, সেবাযত্ন করা উচিত। পাড়া-প্রতিবেশী, আত্মীয়-স্বজন এবং বন্ধু-বান্ধবদের কেউ অসুস্থ হলে তার খোঁজখবর নেওয়ার ব্যাপারে অবহেলা করা উচিত নয়। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, এক মুসলমানের ওপর অপর মুসলমানের ৫টি হক রয়েছে। তা হলো

. সালামের জবাব দেওয়া

. হাঁচির উত্তর দেওয়া

. দাওয়াত কবুল করা

. অসুস্থ হলে দেখতে যাওয়া

. জানাজায় অংশগ্রহণ করা। (বোখারি : ১২৪০)

অনেক ব্যক্তিকে দেখতে যাওয়া, সেবা-শুশ্রƒষা করা সান্তনা দেওয়া অনেক সওয়াবের কাজ তো বটেই; এটা রাসুলুল্লাহর (সা.) সুন্নত। অসুস্থ ব্যক্তির সেবাযত্ন করাকে নবীজি (সা.) সর্বোৎকৃষ্ট নেক আমল ইবাদত ঘোষণা করেছেন। হাদিসে কুদসিতে বলা হয়েছে, ‘কিয়ামতের দিন আল্লাহ বলবেন, হে আদম সন্তান! আমি অসুস্থ হয়েছিলাম, কিন্তু তুমি আমাকে দেখতে যাওনি। বান্দা বলবে, আপনি তো বিশ^জাহানের প্রতিপালক- আমি আপনাকে কীভাবে দেখতে যেতে পারি? আল্লাহ বলবেন, আমার অমুক বান্দা অসুস্থ হয়েছিল। তুমি তাকে দেখতে গেলে সেখানে আমাকে পেতে।’ (মুসলিম : ২১৬২)

রোগী দেখার অসংখ্য ফজিলতের কথা হাদিসে বর্ণিত হয়েছে। হজরত আলী (রা.) বর্ণনা করেন, আমি রাসুলকে (সা.) বলতে শোনেছি, যে ব্যক্তি সকালবেলা কোনো অসুস্থ মুসলমানকে দেখতে যায়, সত্তর হাজার ফেরেশতা বিকাল পর্যন্ত তার জন্য দোয়া করতে থাকে। আর বিকালে রোগী দেখতে গেলে সকাল পর্যন্ত সত্তর হাজার ফেরেশতা দোয়া করে। (তিরমিজি : ৯৬৭) অসুস্থ ব্যক্তিকে দেখতে গেলে মৃত্যু আখেরাতের কথা স্মরণ হয়। হজরত আবু সাঈদ খুদরি (রা.) বর্ণনা করেন- রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘তোমরা রোগী দেখতে যাও এবং জানাজায় অংশগ্রহণ কর, কেননা তা তোমাদেরকে পরকালের কথা স্মরণ করিয়ে দেবে।’ (মুসনাদে আহমদ : /৪৮)

রোগী বা অসুস্থ ব্যক্তিকে দেখতে যাওয়ার কিছু নিয়ম আদব রয়েছে। এসবের প্রতি খেয়াল রাখা-

. অজুসহকারে রোগী দেখতে যাওয়া। মর্মে রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি উত্তমরূপে অজু করে সওয়াবের উদ্দেশ্যে কোনো অসুস্থ মুসলমান ভাইকে দেখতে যায়, তাকে জাহান্নাম থেকে ৬০ বছরের পথ দূরে রাখা হবে। (আবু দাউদ : ৩০৯৭)

. রোগীর অবস্থা বুঝে শরীরে হাত রেখে রোগের কথা জিজ্ঞাসা করা। রাসুল (সা.) বলেছেন, শুশ্রƒষার পূর্ণতা হলো- রোগীর কপালে বা শরীরে হাত রেখে জিজ্ঞেস করা, কেমন আছেন? (তিরমিজি)

. রোগীর সামনে এমন কথা বলা যাতে সে সান্ত্বনা লাভ করে। রাসুলুল্লাহ (সা.) কোনো রোগীকে দেখতে গেলে বলতেন, এমন সান্ত্বনামূলক কথা বলতেন বলে হাদিসে ইরশাদ হয়েছে।

. রোগীর কাছে বেশি সময় ক্ষেপণ না করা। রাসুল (সা.) বলেন, রোগী দেখার সময় হলোÑ উটের দুধ দোহন পরিমাণ। আরেক বর্ণনায় এসেছে, রোগী দেখার উত্তমপন্থা হলো- তাড়াতাড়ি ফিরে আসা।

. রোগী কিছু খেতে চাইলে এবং তা তার জন্য ক্ষতিকর না হলে খেতে দেওয়া। রাসুল (সা.) বলেছেন, রোগী যদি কিছু খেতে চায়- তবে তাকে খেতে দেওয়া উচিত। (ইবনে মাজাহ)

. রোগীর সামনে উচ্চ আওয়াজে কথা না বলা। ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, সুন্নত হলো- রোগীর পাশে কম সময় বসা এবং উঁচু আওয়াজে কথা না বলা।

. রোগীর জন্য দোয়া করা। বিভিন্ন দোয়া হাদিসে বর্ণিত হয়েছে। রাসুল (সা.) বলেন, কোনো রোগীর কাছে গিয়ে নিম্নের দোয়াটি সাতবার পাঠ করলে মৃত্যুরোগ ছাড়া সব রোগ থেকে সে সুস্থ হয়ে উঠবেÑ ইনশাল্লাহ। দোয়াটি হলো- আসআলুল্লাহাল আজিম, রাব্বাল আরশিল আজিম, আই ইয়াশফিয়াকা। (আবু দাউদ : ৩১০৬)

. রোগীর কাছে নিজের জন্য দোয়া চাওয়া। রাসুল (সা.) বলেন, তোমরা রোগী দেখতে গেলে তার কাছে নিজের জন্য দোয়া চাও। কেননা তার দোয়া ফেরেশতাদের দোয়ার সমতুল্য। (ইবনে মাজাহ)


বিষয়:


আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Developed with by
Top