সিডনী বৃহঃস্পতিবার, ১৮ই এপ্রিল ২০২৪, ৫ই বৈশাখ ১৪৩১


দুনিয়ার কর্ম-পরিচয়ে পরকালের সম্মান


প্রকাশিত:
২৫ জুলাই ২০২০ ০০:৩৫

আপডেট:
১৮ এপ্রিল ২০২৪ ২১:০১

 

প্রভাত ফেরী: আল্লাহ তায়ালা পার্থিব সব ভালো কাজের ভেতরেই রেখেছেন দুনিয়া ও আখিরাতের সফলতার সুযোগ। একজন মানুষ যদি তার কাজ ও দায়িত্ব আল্লাহর আদেশ-নিষেধ অনুযায়ী সম্পাদন করে তাহলে দুনিয়াতে যেমন সম্মানের অধিকারী হবে আখিরাতেও পাবে অনন্তকালের শান্তি। তাই একজন মুসলিমের উচিত হবে আখিরাতের লাভের প্রত্যাশায় সৎ কর্মের প্রতিযোগিতা করা। আল্লাহ তায়ালাও পুণ্যের কাজে প্রতিযোগিতা করার নির্দেশ দিয়েছেন। ইরশাদ করেন, ‘সৎ বিষয়ে প্রতিযোগীরা প্রতিযোগিতা করুক।’ (সূরা মুতাফফিফিন : ২৬)। প্রিয় নবী (সা.) বলেন, ‘নিশ্চয় আল্লাহ তায়ালা তোমাদের আকৃতি ও ধন-সম্পদের দিকে তাকাবেন না; বরং তিনি তোমাদের অন্তর ও কর্মের দিকে খেয়াল করবেন।’ (বুখারি : ৫১৪৪; মুসলিম : ২৫৬৪)। সুতরাং আল্লাহর হুকুম ও অন্তরের বিশুদ্ধতা বজায় রেখে যে কেউ পার্থিব যেকোনো পেশায় নিয়োজিত হবে আল্লাহ তাকে পুরস্কৃত করবেন ইনশাল্লাহ। এখন কয়েকটি পেশার কথা তুলে ধরছি, আল্লাহ তাতে কী সম্মান ও প্রতিদান রেখেছেন মুমিনের জন্য।

ব্যবসায়ী: অনেক নবীই জীবিকা নির্বাহের জন্য ব্যবসাকে বেছে নিয়েছিলেন। আমাদের প্রিয় রাসুলও ব্যবসার সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। ব্যবসা সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা বলেন ‘যারা সুদ খায়, তারা কিয়ামতে দণ্ডায়মান হবে, যেভাবে দণ্ডায়মান হয় ওই ব্যক্তি, যাকে শয়তান আসর করে মোহাবিষ্ট করে দেয়। তাদের এ অবস্থার কারণ এই যে, তারা বলেছে ক্রয় বিক্রয়ও তো সুদ নেওয়ারই মতো। অথচ আল্লাহতায়ালা ক্রয়-বিক্রয় বৈধ করেছেন এবং সুদ হারাম করেছেন।’ (সূরা বাকারা : ২৭৫)। ব্যবসায়ীদের সম্মান ও প্রতিদান সম্পর্কে হাদিসে অনেক বর্ণনা এসেছে। হজরত আবু সাঈদ খুদরি (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করিম (সা.) বলেছেন, ‘সত্যবাদী ও আমানতদার ব্যবসায়ী কিয়ামতের দিন নবী, সিদ্দিক এবং শহীদানদের সঙ্গে থাকবে।’ (তিরমিজি : ১২৫২)।

স্বাস্থ্যকর্মী: স্বাস্থ্যকর্মী বলতে ডাক্তার, নার্স, ওয়ার্ডবয়সহ স্বাস্থ্যসেবার সর্ব স্তরের কর্মী ও কর্মচারীকে বুঝায়। দেশের জন্য, দেশের মানুষের জন্য এদের অবদান অতুলনীয়। একজন রোগীকে সুস্থ করার জন্য এসব স্বাস্থ্যকর্মীরা নিজের জীবনকে বির্সজন দিয়ে দেন। আল্লাহ তায়ালাও এদেরকে দুনিয়াতে যেমনিভাবে সম্মানিত করেছেন আখিরাতেও রেখেছেন অনন্ত মর্যাদা। হজরত আলী (রা.) বর্ণনা করেন, আমি রাসুল (সা.) কে বলতে শুনেছি, ‘যে ব্যক্তি সকালবেলা কোনো অসুস্থ মুসলমানকে দেখতে যায়, সত্তর হাজার ফেরেশতা বিকাল পর্যন্ত তার জন্য দোয়া করতে থাকে। আর বিকালে রোগী দেখতে গেলে সকাল পর্যন্ত সত্তর হাজার ফেরেশতা দোয়া করে।’ (তিরমিজি : ৯৬৭)। এই স্বাস্থ্যসেবায় নিয়েজিত কর্মীরা সারা জীবনই রোগীর দোখভালে অতিবাহিত করে থাকেন। যার ফলে প্রতিনিয়তই ৭০ হাজার ফেরেশতা তাদের জন্য মাগফিরাতের দোয়া করতে থাকেন। হযরত ছাওবান রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, কোনো মুসলমান যখন তার অসুস্থ মুসলমান ভাইকে দেখতে যায়, তখন সে ফিরে আসা পর্যন্ত জান্নাতের ফল বাগানে বিচরণ করতে থাকে।’ (মুসলিম : ২৫৬৮)

সীমান্ত প্রহরী: দেশের বর্ডার গার্ড বাহিনীর চৌকস ভাইয়েরা দেশ পাহারায় নিদ্রাহীন রাত্রিযাপন করছে। দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর অতন্দ্র প্রহরীদের স্বদেশপ্রেমে উজ্জীবিত করে হাদিস শরিফে বলা হয়েছে, ‘আল্লাহর পথে এক দিনের সীমান্ত পাহারা দুনিয়া ও এর মাঝে যা কিছু আছে, তা থেকে উত্তম।’ (তিরমিজি : ১৬৬৭)। রাসুল (সা.) আরও বলেন, ‘যে ব্যক্তি এক দিন ও এক রাত সীমান্ত প্রহরায় থাকবে, সে বাড়িতে বসে এক মাস সিয়াম সাধনার সমান সওয়াব পাবে।’ (মুসলিম : ১১)। আরও বলা রয়েছে, ‘যে ব্যক্তি সীমান্ত পাহারায় থাকাকালীন সময়ে মারা যাবে, তার জন্য কিয়ামত পর্যন্ত সওয়াব জারি করে দেওয়া হবে। শহীদদের মতো সে রিজিক পেতে থাকবে। সে কবরের সব ফিতনা থেকে নিরাপদ থাকবে।’ (তাফসিরে মাজহারি)। বিজিবি ভাইরা শুধুমাত্র আখিরাতে পুরস্কার পাওয়ার লোভে কাজকে আপন মনে করে করতে থাকে তবে আখিরাতের সঙ্গে তাদের দুনিয়ায় হাসিল হয়ে যাবে। আল্লাহ তায়ালা দুনিয়াকে বাদ দিয়ে আখিরাত বানাতে বলেনি। যার কারণে তিনি ইরশাদ করেছেন, ‘তোমরা নামাজ আদায় করার পর জমিনে ছড়িয়ে পড়ো, আল্লাহর দেওয়া জীবিকা অন্বেষণ করো এবং আল্লাহকে বেশি বেশি স্মরণ করো, যাতে তোমরা সফলকাম হও।’ (সূরা জুমার, আয়াত : ১০)

নৌবাহিনী: এই নৌবাহিনীর সঙ্গে ইসলামের বিজয়াভিযানের গৌরব ওতপ্রোতভাবে জড়িত। ইসলামের প্রাথমিক যুগ থেকেই নৌবাহিনীর প্রাধান্য লক্ষ্য করা যায়। দ্বিতীয় খলিফা হজরত ওমর (রা.)-এর যুগে নৌবাহিনী গঠনে প্রস্তাব দেন মুসলিম সেনাপতিরা। কিন্তু আরব উপদ্বীপের রাজনৈতিক স্থিতি সন্তোষজনক না হওয়ায় তিনি তা প্রত্যাখ্যান করেন। কিন্তু ওমর বিন খাত্তাব (রা.)-এর পর উসমান (রা.) মুসলিম বিশে^র খলিফা হলে আবারও নৌবাহিনী গঠনের অনুমতি চাওয়া হয়। অনুমতি পেয়ে মুয়াবিয়া (রা.)-এর নেতৃত্বে পূর্ণ উদ্যমে নৌবাহিনী গঠনে পূর্ণ মনোযোগ দেওয়া হয় এবং অল্প কিছুদিনের মধ্যেই একটি শক্তিশালী নৌবাহিনী গঠনে সক্ষম হয়। একজন নৌ সেনা স্বাধীন ও সার্বভৌম দেশমাতৃকাকে গভীর ভালোবাসে এবং মাতৃভূমির প্রতি ইঞ্চি সীমানা রক্ষার জন্য ত্যাগ স্বীকার করে। কয়েকটি হাদিসে রাসুল (সা.) নৌসেনাদের সম্পর্কে সুসংবাদ দিয়েছেন।

সাধারণ পেশাজীবী: কামার, কুমার, তাঁতি, জেলে, ড্রাইভারসহ সাধারণ এই মানুষের জন্যও রয়েছে আল্লাহর ওয়াদা। এদের দ্বারা সমাজের মানুষ তাদের প্রত্যাহিক কাজগুলোকে সমাধান করতে পারে। যা একপ্রকার সাহায্য। আল্লাহ তায়ালা কোরআনুল কারিমে ইরশাদ করেন, ‘মুমিনরা পরস্পর ভাই ভাই।’ (সূরা হুজরাত, আয়াত : ১০)। এক ভাই যখন আরেক ভাইয়ের সাহায্যে এগিয়ে যায়, আল্লাহ তখন অনেক খুশি হয়। চালক ভাইয়েরা নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে হাজারো মানুষকে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় বহন করে। জেলে ভাইরা আমাদের মৎসের জোগান দেয়। কামার ভাইয়েরা লৌহ জিনিসপত্র বানিয়ে আমাদের সমস্যা সমাধানে সাহায্য করে। আল্লাহর নবী হজরত দাউদ (আ.)-এর পেশাও ছিল এই লৌহ জিনিসপত্র বানানো। রাসুলুল্লাহ (সা.) আরও বলেন, ‘আল্লাহ তায়ালা বান্দার সাহায্যে ততক্ষণ থাকেন, যতক্ষণ সে অপর ভাইয়ের সাহায্যে থাকে।’ (মুসলিম : ২৩১৪)।

এ ছাড়া সমাজের অন্য সব পেশাগত পরিচয়ে পরিচিত ব্যক্তিরাও আল্লাহর প্রিয় পাত্র হতে পারে শুধুমাত্র তাদের সৎ চিন্তা দ্বারা এবং আল্লাহ হুকুম পালনের মাধ্যমে। আর ফজিলতগুলোর অধিকারী হওয়ার জন্য শুধুমাত্র নিয়্যত করে আল্লাহর কাছে সাহায্য চাইতে হবে এবং প্রতিটি কাজে সৎপন্থা অবলম্বন করতে হবে। এর মাধ্যমে পেশাগত পরিচয়ে আমরা যেমন দুনিয়ার জীবনের উচ্চ শিখরে আরোহণ করতে পারব তেমনি আখিরাতেও পাব সুমহান মর্যাদা। আল্লাহ তায়াল আমাদের সকলকে হেফাজত করুক।


বিষয়:


আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Developed with by
Top