সিডনী শুক্রবার, ১৯শে এপ্রিল ২০২৪, ৫ই বৈশাখ ১৪৩১


ঈদ উল আযহার তাৎপর্য : শাহান আরা জাকির পারুল


প্রকাশিত:
৩ আগস্ট ২০২০ ২৩:১৫

আপডেট:
৩ আগস্ট ২০২০ ২৩:১৬

 

কুরবানি শব্দটি হিব্রু কোরবান আর সিরিয়াক ভাষার কুরবানা শব্দ দুটির সঙ্গে সম্পর্কিত যার আরবি অর্থ কারো 'নিকটবর্তী হওয়া' ! ঈদ উল আযহা মুলত আরবি বাক্যাংশ ! এর অর্থ হোল ত্যাগের উৎসব ! এ দিনটিতে মুসলমানেরা ফজরের নামাজ এর পর ঈদগাহে গিয়ে দুই রাকাত ঈদ উল আযহার নামাজ আদায় করে ও অব্যাহত পরে্ স্ব স্ব আর্থিক সামর্থ্যনুযায়ী গরু, ছাগল, ভেড়া, মহিষ উট আল্লাহ্‌র নামে কোরবানি করে!

ইসলামে কুরবানির ইতিহাস বেশ প্রাচীন! আল কুর আনে হজরত আদম (আঃ) পুত্র হাবিল ও কাবিল এর উল্লেখ পাওয়া যায়! হাবিল প্রথম মানুষ যে আল্লাহর জন্য একটি পশু কুরবানি করেন!  ইবনে কাসির বর্ণনা করেছেন যে হাবিল একটি ভেড়া এবংতার ভাই কাবিল তার ফসলের কিছু অংশ স্রষ্টার উদ্দেশে নিবেদন করেন! আল্লাহর নির্ধারিত পদ্ধতি যে আগুন আকাশ থেকে নেমে আসবে এবং গ্রহণযোগ্য কুরবানি গ্রহণ করবে! তদনুসারে আগুন নেমে আসে এবং হাবিলের জবেহকৃত পশুটির কুরবানি গ্রহণ করে ! অন্যদিকে কাবিলের ফসল কুরবানি প্রত্যাখ্যান করে ! কাবিল এই ঘটনায় ঈর্ষান্বিত হয় ও সামাজিকভাবে অপমানবোধ করে ! কুরবানি না হওয়ার বিষয়টি মেনে নিতে না পেরে হাবিলকে হত্যা করে, যা মানব ইতিহাসে প্রথম হত্যাকাণ্ড হিসেবে পরিচিত ! কাবিল তার কৃতকর্মের জন্য অনুতপ্ত না হওয়ায় আল্লাহ তাকে ক্ষমা করেননি!

অপদিকে, ইসলামের বিভিন্ন বর্ণনানুযায়ী মহান আল্লাহতা'লা ইসলামের রাসুল হযরত ইব্রাহীম কে স্বপ্নযোগে তার প্রিয় বস্তুটি কুরবানি করার নির্দেশ দেন; তুমি তোমার প্রিয় বস্তু আল্লাহর নামে কোরবানি করো'!  ইব্রাহীম স্বপ্নে এই আদেশ পেয়ে দশটি উট কোরবানি করলেন! কিন্তু পুনরায় তিনি একই স্বপ্ন দেখলেন! ইব্রাহীম এবার একশত উট কোরবানি করলেন! এরপরেও তিনি একই স্বপ্ন দেখে ভাবলেন, আমার কাছেতো এ মুহূর্তে প্রিওপুত্র ইস্মাইল (আঃ) আর কোন প্রিয় বস্তু নেই! তখন তিনি পুত্র কে কোরবানি দেয়ার উদ্দেশ্যে আরাফাত ময়দানে যাত্রা করেন! যখন ইব্রাহীম আরাফাত পর্বতের উপর তার পুত্র কে কোরবানি দেয়ার জন্য তার গলদেশে ছুরি চালানোর চেষ্টা করেন, তখন তিনি বিস্মিত হয়ে দেখেন যে, তাঁর পুত্রের পরিবর্তে একটি প্রাণী কোরবানি হয়েছে এবং তার পুত্রের কোনই ক্ষতি হয়নি! এই ঘটনাকে স্মরণ করে সারা বিশ্বের মুসলিম ধর্মাবলম্বীরা আল্লাহ তাআলার সন্তস্তি অর্জনের জন্য প্রতি বছর এই দিবসটি ঈদ উল আযহা নামে উদযাপন করে!

 কোরবানির পশুকে আল্লাহ তার মহিমার প্রতিক করেছেন!

কোরবানি সম্পর্কে পবিত্র কুরআনে উল্লেখ আছে, আমি প্রত্যেক সম্প্রদায়ের জন্য কোরবানিকে ইবাদতের অংশ করেছি! যাতে জীবনোরপকরণ হিসেবে যে গবাদি পশু তাদের দেয়া হয়েছে, তা জবাই করার সময় তারা আল্লাহর নাম উচ্চারণ করে আর সব সময় যেন মনে রাখে একমাত্র আল্লাহ্‌ই তাদের উপাস্য ! অতএব তার প্রতিই পুরপুরি সমর্পিত হও! আর সুসংবাদ দাও সমর্পিত বিনয়াবনতদের, আল্লাহর নাম নেয়া হলেই যাদের অন্তর কেঁপে ওঠে, যারা বিপদে  ধৈর্য ধারন করে, নামাজ কায়েম করে আর আমার প্রদত্ত জীবনপকরন থেকে দান করে ! (সুরা হজ,আয়াত ৩৬)

পবিত্র কোরআন শরীফে কুরবানি সম্পর্কে একাধিক সুরায় উল্লেখ আছে!

ইসলামে হিজরি ক্যালেন্ডারের ১২ তম চন্দ্র মাসের জিলহজ্জ মাসের ১০ তারিখ সকাল থেকে ১৩ তারিখ সূর্যাস্ত পর্যন্ত কোরবানি করার সময় হিসেবে নির্ধারিত!

ইসলামি চান্দ্র পঞ্জিকায়, ঈদ উল আযহা জিলহজ্জ মাসের ১০ তারিখে পড়ে ! আন্তর্জাতিক (গ্রেগরিও) পঞ্জিকায় তারিখ প্রতি বছর ভিন্ন হয়, সাধারণত এক বছর থেকে আর এক বছর ১০ বা ১১ দিন করে কমতে থাকে ! ঈদের তারিখ স্থানীয়ভাবে জিলহজ্জ মাসের চাঁদ দেখার ওপর নির্ভর করে !

 

শাহান আরা জাকির পারুল 
নাট্যকার, লেখক ও গবেষক

 

এই লেখকের অন্যান্য লেখা



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Developed with by
Top