সিডনী শুক্রবার, ২৯শে মার্চ ২০২৪, ১৪ই চৈত্র ১৪৩০


বিশ্বমানবতার মুক্তিবার্তা আল কোরআনের ম্যাজিক : জালাল উদ্দিন লস্কর শাহীন


প্রকাশিত:
২৪ সেপ্টেম্বর ২০২০ ২২:৪৫

আপডেট:
২৯ সেপ্টেম্বর ২০২০ ২৩:৪৫

 

সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ট মহামানব,মানবজাতির মুক্তির দিশারী সর্বশেষ নবী ও রাসুল হযরত মুহম্মদ(সা:) এর কাছে  মহান আল্লাহ মানবজাতির মুক্তিবার্তা মহপবিত্র কোরআন অবতীর্ন করেন। কোরআন নাযিলের ৬ মাস আগে থেকেই আল্লাহতাআলা মুহম্মদকে (সাঃ) স্বপ্নের মাধ্যমে এ মহান কাজের জন্য প্রস্তুত করে নিচ্ছিলেন।

ঐতিহাসিক তথ্য প্রমান অনুসারে পবিত্র রমজান মাসের ২১ তারিখ সোমবার রাতে কোরআনের প্রথম বাণী সুরা আলাকের 'ইকরা বিসমি রাব্বি কাল্লাযি খালাক' দিয়ে প্রধান ফেরেস্তা জিব্রাইল যার এক নাম 'রুহুল কুদ্দুস' ধারাবাহিকভাবে কোরআন নাযিলের সূচনা করেন।কোরআন নাযিলের ধারাবাহিকতা বা ব্যাপ্তিকাল ২২ বছর ৫ মাস।

উম্মুল মোমেনীন হযরত আয়েশা( রা:) থেকে বর্নিত: প্রিয় নবীর উপর ওহী নাযিলের সূচনা হয়েছিল স্বপ্নের মাধ্যমে। তিনি যে স্বপ্ন দেখতেন তা দিনের আলোর মতো তার জীবনে প্রতিভাত হতো। একটুকরো দৃশ্যমান নূর সদা তার অন্তরে জ্বল জ্বল করতো। তিনি ক্রমেই নির্জনতাপ্রিয় হয়ে উঠেন এবং হেরা গুহায় নিভৃতে আল্লাহর ধ্যানে মগ্ন থাকতেন আর তার বিশাল সৃষ্টি ও এর উদ্দেশ্য সম্পর্কে গভীর চিন্তাভাবনা করতে থাকেন। এভাবেই তার দিন অতিক্রান্ত হওয়ার এক পর্যায়ে জিবরাইল এসে তাকে বলেন,ইকরা অর্থাৎ পড়ুন! বিস্ময়ে হতবাক হয়ে তিনি বললেন, আমি তো পড়তে জানিনা না। জিবরাইল তাকে বুকে চেপে ধরে বললেন পড়ুন। তিনি জানালেন আমি পড়তে জানিনা। এভাবে তিনবার বুকে চাপ দিয়ে তারপর যখন জিবরাইল পড়তে বললেন তখন তিনি প্রথম পাঁচটি ওহী পাঠ করলেন। তিনি বাড়ী ফিরে আসলেন। স্ত্রী খাদিজা (রা:) কে বললেন, আমাকে চাদর দিয়ে ঢেকে দাও। তিনি তখনও কাঁপছিলেন। আপনি কাঁপছেন কেন খাদিজার জিজ্ঞাসার জবাবে তিনি বিস্তারিত জানালেন। খাদিজা তাকে সাহস দিলেন।বললেন ভয় পাবেন না। আপনি মানুষের উপকার করেন, মানবতার সেবা করেন, এতীমদের আশ্রয় দেন। অতএব মহান আল্লাহ কি আপনার কোনো ক্ষতি করতে পারেন! খাদিজা তাকে তার চাচাত ভাই হিব্রু ভাষার পন্ডিত ও ঈসায়ী ধর্মের আলেম ওরাকা বিন নওফেলের নিকট নিয়ে গিয়ে তারর কাছে সবকিছু খুলে বললেন। সব শুনে নওফেল বললেন, তিনিই স্রষ্টার দূত জিবরাইল যিনি মুসা (আ:) এর কাছেও আল্লাহর বাণী নিয়ে আসতেন।

যখন থেকে কোরআন নাযিল শুরু হয় তখন থেকেই তা লিপিবদ্ধ করে রাখার জন্য পারদর্শী সাহাবীদের নিযুক্ত করেন তিনি। হযরত যায়েদ বিন সাবেত( রা:) ছাড়াও আরো ৪২ জন সাহাবীকে এ কাজে নিযুক্ত করা হয়। এ সম্পর্কে রাসুল বলেন, তোমরা কোরআন ছাড়া আমার কাছ থেকে অন্য কিছু লেখো না। কোরআনে মোট ১১৪ টি সুরা আছে।হযরত আবু বকর (রা:) এর সময় যায়েদ বিনন সাবেত এ সংখ্যা নির্নয় করেন।সম্ভবত হযরত ওমর( রা:) এর সময় কোরআনের আয়াত নির্নয়ের কাজ শুরু হয়। হযরত আয়েশার মতে কোরআনের আয়াত সংখ্যা ৬৬৬৬ টি। হযরত ওসমান (রা:) এর মতে ৬২৫০, হযরত আলী ( রা:) এর মতে ৬২৩৬, ইবনে মাসউদ ( রা:) এর মতে ৬২১৮। ঐতিহাসিকদের মতানুসারে হযরত আয়েশা (রা:) এর গননাই প্রসিদ্ধ ও সর্বজন গ্রহনযোগ্য।  মোট ৬৬৬৬ টি আয়াতের মধ্যে, জান্নাতের ওয়াদা ১০০০, জাহান্নামের ভয় ১০০০, নিষেধ ১০০০, আদেশ ১০০০, উদাহরণ ১০০০, কাহিনী ১০০০, হারাম ২৫০, হালাল ২৫০, আল্লাহর পবিত্রতা ১০০, এবং বিবিধ প্রসঙ্গে ৬৬ টি আয়াত রয়েছে। বিষয়ভিত্তিক বিভাজনের কারনেনে নয় বরং তিলাওয়াতের সুবিধার্থে কোরআনকে ৩০ পারায় (জুলদ) ভাগ করা হয়েছে। কোরআনে মোট শব্দ সংখ্যা ৮৬৪৩০ টি। ৭৬৪৩০, ৭০৪৩৯, ৭২৪৫০ শব্দের কথাও আছে কয়েকটি বর্নননায়। কোরআনে মোট অক্ষর আছে ৩ লক্ষ ২০ হাজার ২শ ৬৭টি।

আলীফ অক্ষরটি আছে ৪৮৮৭২ বার, বা অক্ষর আছে ১১৪২৮ বার, তা ১১৯৯ বার, ছা ১২৭৬ বার, জীম ৩২৭৩ বার, হা ৯৭৩ বার, খা ২৪১৬ বার, দাল ৫৬০২ বার, যাল ৪৬৭৭ বার, রা ১১৭৯৩ বার, যা ১৫৯০ বার, সীন ৫৯৯১ বার, শীন ২১১৫ বার, ছোয়াদ ২০১২ বার, দোয়াদ ১৩০৭ বার, তোয়া ১২৭৭ বার, যোয়া ৮৪২ বার, আঈন ৯২২০ বার, গাঈন ২২০৮ বার, ফা ৮৪৯৯ বার, ক্বাফ ৬৮১৩ বার, কাফ ৯৫০০ বার, লাম ২৪৩২ বার, মীম ৩৬৫৩৫ বার, নুন ৪০১৯০ বার, ওয়াও ২৫৫৪৬ বার, হা ১৯০৭০ বার, লাম- আলীফ ৩৭৭০ বার এবং ইয়া এসেছে ৪৫৯১৯ বার। সোবহানআল্লাহ। এসব তথ্য গবেষকদের বহু কষ্টসাধ্য গবেষণার ফসল।

মহাপবিত্র কোরআনে আরো অনেক বিস্ময়কর ও চমকপ্রদ তথ্য আছে যা প্রমান করে যে আসলেই এটা এক মহাশক্তিশালী পরম সত্তার পবিত্র ইচ্ছায় লিখিত ও লাওহে মাহফুজে সংরক্ষিত-বাল হুয়া কোরআনুম মাজিদুন ফি লাউহিম মাহফুজ (সুরা বুরুজ)। সোবহানআল্লাহ !

তথ্য সুত্র: লন্ডনস্থ আল কোরআন একাডেমী থেকে প্রকাশিত আল কোরআনের সহজ সরল বাংলা অনুবাদ।

 

লেখকঃ জালাল উদ্দিন লস্কর শাহীন
লেখক ও শিক্ষক

 

এই লেখকের অন্যান্য লেখা



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Developed with by
Top