সিডনী শনিবার, ২০শে এপ্রিল ২০২৪, ৭ই বৈশাখ ১৪৩১


২০২১ সাল হোক ভালো কাজের পাল্লা ভারী হওয়ার বছর : মোঃ শামছুল আলম


প্রকাশিত:
৩০ ডিসেম্বর ২০২০ ২২:১০

আপডেট:
২০ এপ্রিল ২০২৪ ০৬:২৩

 

২০২০ সালের সূর্য্য প্রায় অস্তমিত! নতুন ভোরের সূর্যোদয়ের মধ্যে দিয়ে শুরু হবে আরেকটি নতুন বছর। প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তির দোলাচলে কালের আবর্তে মহাকালের গর্ভে হারিয়েছে আরো একটি বছর। নতুন স্বপ্ন আর সম্ভাবনা নিয়ে যাত্রা শুরু হোক নতুন বছরের। করোনা/মহামারী, না পাওয়ার সব গ্লানি মুছে নতুন বছর অর্জন আর প্রাচুর্য্যে, সৃষ্টি আর কল্যাণে হেসে উঠবে-এই প্রত্যাশা সবার।

বর্তমান সময়ে বর্ষবরণ নামে যে অশ্লীলতা, বেহায়াপনা, হৈ-হুল্লোড় ও নগ্নতার প্রদর্শন চলে, তা কি একজন মুমিনের জন্যও শোভা পায়? বছরের সূচনালগ্নে যখন একজন মুমিন উপস্থিত হয়, তখন তার অনুভূতি এ ধরনের হওয়া দরকার—যে দিনগুলো আমার শেষ হয়ে গেল, তা তো আমার জীবনেরই একটি মূল্যবান অংশ। একটি বছর শেষ হওয়ার সরল অর্থ, আমার জীবনের দালান থেকে ৩৬৫ দিনের ৩৬৫টি পাথর যেন খসে পড়ল! আমার জীবন সংকীর্ণ হয়ে এলো। এটা আনন্দের নয়, চিন্তার ব্যাপার। এখন আনন্দ-উল্লাসের সময় নয়, বরং সময় হলো হিসাব-নিকাশের। কাজেই একটি বছরের উপসংহারে দাঁড়িয়ে মুমিনের মানসপটে প্রশ্ন উত্থাপিত হয় যে একটি বছর তো আমি শেষ করেছি,, কিন্তু যে মহান উদ্দেশ্যে (মহান রবের ইবাদত-বন্দেগির জন্য) মহান আল্লাহ আমাকে এই বসুন্ধরায় পাঠালেন, সে পথে কতটুকু অগ্রসর হয়েছি? সে পথে আমার প্রাপ্তি কতটুকু?

ইসলামী জাহানের দ্বিতীয় খলিফা হজরত ওমর (রা.) একবার মিম্বরে দাঁড়িয়ে তাঁর খুতবায় এক ঐতিহাসিক উক্তি উপস্থাপন করেছিলেন, যা ইমাম তিরমিজি (রহ.) স্বীয় গ্রন্থ তিরমিজি শরিফ এবং ইমাম ইবনে আবি শায়বা (রহ.) স্বীয় গ্রন্থ মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বায় উল্লেখ করেন। হজরত ওমর (রা.) বলেছিলেন-

"হিসাব চাওয়ার আগে নিজের হিসাব করে নাও, তোমার কাজ পরিমাপ করার আগে নিজেই নিজের কাজের পরিমাপ করে নাও"।

বর্ষবরণের অনুষ্ঠান যদি করতেই হয় ,তবে রাত্রি জাগরণ করে আল্লাহর দরবারে রোনাজারি করে বিগত জীবনে ভুলত্রুটি থেকে ক্ষমা চেয়ে ভবিষ্যৎ জীবনের কল্যাণে বিনিদ্র রজনী অতিবাহিত করাই হচ্ছে উত্তম। যেহেতু আতশবাজি, ঘণ্টাধ্বনি, নির্ঘুম রাত অতিবাহিত করাসহ বাদ্যযন্ত্রের ব্যবহার, নগ্ন নারী-পুরুষ সংমিশ্রণ ইত্যাদি কাজ ইসলামে হারাম সেহেতু মুসলিম মাত্রই এ কাজ থেকে বিরত থাকা ঈমানের ফরজ দায়িত্ব।

আসুন, নববর্ষের অনুষ্ঠান পালনে আমরা বিগত জীবনের ভুল সংশোধনে আমলনামা সমৃদ্ধকরণের প্রতিযোগিতায় অবতীর্ণ হই। আল্লাহ তাআলা বলেছেন, হে মুমিনগণ! আল্লাহকে ভয় কর এবং সঠিক কথা বল। তিনি তোমাদের আমল-আচরণ সংশোধন করবেন এবং তোমাদের পাপসমূহ ক্ষমা করবেন। যে কেউ আল্লাহ ও তাঁর রসূলের আনুগত্য করে, সে অবশ্যই মহা সাফল্য অর্জন করবে। (সুরা আহযাব : আয়াত ৭০-৭১)

বিশ্বব্যাপী বর্ষবরণের সকল অপসংস্কৃতি পরিহার করে নিজেদের দ্বীন ও আদর্শে উজ্জীবিত হয়ে বছরের শেষ রাতে এবং নতুন বছরের প্রথম দিন থেকে আমলি জিন্দেগি যাপন করাই হোক বর্ষবরণের ধর্মীয় সংস্কৃতি।

পরিশেষে নতুন বছরে আমাদের প্রত্যাশা, অনৈসলামিক কাজ হইতে বিরত থাকা, ব্যক্তি জীবনের পরিশুদ্ধি ও রাজনৈতিক ক্ষেত্রে জনকল্যাণের বিষয়টি গুরুত্ব পাবে, বৈরিতার পরিবর্তে সৃষ্টি হবে সহযোগিতার পরিবেশ। মানুষের জন্য বাসযোগ্য একটি মানবিক মূল্যবোধসম্পন্ন গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ আমাদের প্রত্যাশা। সেই প্রত্যাশা নিয়ে সবাইকে জানাচ্ছি ইংরেজি নতুন বছরের শুভেচ্ছা।

 

মোঃ শামছুল আলম
লেখক ও গবেষক

 

এই লেখকের অন্যান্য লেখা



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Developed with by
Top