সিডনী শুক্রবার, ২৯শে মার্চ ২০২৪, ১৫ই চৈত্র ১৪৩০


দরজায় কড়া নাড়ছে ইবাদতের বসন্ত কাল : মোঃ শামছুল আলম


প্রকাশিত:
৮ এপ্রিল ২০২১ ১৯:২৫

আপডেট:
২৯ মার্চ ২০২৪ ১১:১৩

 

দরজায় কড়া নাড়ছে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ন ও ফজিলতময় পবিত্র মাহে রমজান মাস। ‘রামাদান’ শব্দটি আরবি ‘রাম্দ’ ধাতু থেকে উদ্ভূত। এর আভিধানিক অর্থ হচ্ছে দহন, প্রজ্বলন, জ্বালানো বা পুড়িয়ে ভস্ম করে ফেলা। রমজান মাসে সিয়াম সাধনার মাধ্যমে মানুষ নিজের সমুদয় জাগতিক কামনা-বাসনা পরিহার করে আত্মসংযম ও কৃচ্ছ্রতাপূর্ণ জীবন যাপন করে এবং ষড়রিপুকে দমন করে আল্লাহর একনিষ্ঠ অনুগত বান্দা হওয়ার সামর্থ্য অর্জন করে।
রোজা মানুষের অভ্যন্তরীণ যাবতীয় অহংকার, কুপ্রবৃত্তি, নফসের দাসত্ব জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে ছারখার করে দেয় বলে এ মহিমান্বিত মাসের নাম ‘রমজান’।

সিয়াম-সাধনা ও ইবাদতের মাধ্যমে মহান আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টি ও নৈকট্য লাভের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ন মাস এটি। তাই প্রতিটা মুহূর্তকে আমাদের সঠিক ইবাদতের মাধ্যমে কাটাতে হবে। এবং সেই সাথে পবিত্র রমজান মাসের শিক্ষা সারা বছর ধরে রেখে সঠিকভাবে ইসলামের পথে প্রতিটা দিন চলতে হবে।
রমজান মাসে জান্নাতের দরজাগুলো খুলে দেয়া হয়, জাহান্নামের দরজাগুলো বন্ধ করে দেয়া হয় এবং শয়তানদেরকে শিকল দিয়ে বেঁধে রাখা হয়।

ইসলামের পঞ্চভিত্তির তৃতীয় ভিত্তি হলো রোজা, প্রত্যেক প্রাপ্ত বয়স্ক মুসলমান নর-নারীর প্রতি মাহে রমজানের রোজা পালন করা ফরজ। একজন মুসলমানের জন্য নামাজ যেমন ফরজ, ঠিক তেমনিভাবে রমজান মাসের রোজা পালন করাও ফরজ। মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন-

‘হে মুমিনরা তোমাদের প্রতি আমি মাহে রমজানের রোজাকে ফরজ করেছি। যেমন ফরজ করেছিলাম তোমাদের পূর্ববর্তী উম্মতদের প্রতি। এতে আশা করা যায় যে, তোমরা তাকওয়া বা খোদাভীতি অর্জন করতে পারবে।’ [বাকারা-১৮৩] মহান আল্লাহ আরো বলেন-

‘অবশ্যই আমি এ কুরআনকে লাইলাতুল কদরে নাজিল করেছি। আপনি জানেন লাইলাতুল কদর কী? তা হচ্ছে এমন রাত যা হাজার মাস থেকে উত্তম।’ [কদর আয়াত ১-৩]
রহমত, মাগফিরাত আর নাজাতের পয়গাম নিয়ে সমাগত পবিত্র মাহে রমজান। রাসূলুল্লাহ সাঃ বলেন-

‘যখন পবিত্র রমজান মাস এসে যায় তখন আসমান তথা জান্নাতের দরজাসমূহ খুলে দেয়া হয়, জাহান্নামের দরজাসমূহ বন্ধ করে দেয়া হয় এবং শয়তানকে শৃঙ্খলাবদ্ধ করা হয়।’- [বুখারী : ১৮৯৯]।
হযরত সাহল বিন সা’দ রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ্ সাঃ বলেছেন-

জান্নাতের একটি দরজা রয়েছে যার নাম ‘রাইয়্যান’। কেয়ামতের দিন ঐ দরজা দিয়ে রোজাদারগণ জান্নাতে প্রবেশ করবে। তারা ছাড়া তাদের সাথে আর কেউই ঐ দরজা দিয়ে প্রবেশ করবে না। বলা হবে- ‘কোথায় রোজাদারগণ?’ তখন তারা ঐ দরজা দিয়ে জান্নাতে প্রবেশ করবে।- [বুখারী-১৮৯৬]

রমজানকে স্বাগত জানিয়ে চলছে মসজিদ গুলোতে ধোয়া মোছার কাজ আর তারাবীর প্রস্তুতি। যদিও এখনও বলা যাচ্ছে না করোনাভাইরাস ময় সময়ে এবারও মসজিদে নামাজ/তারাবি আদায় করা যাবে কিনা। তারপরও খতিব সাহেবগন জুমার খুতবায় রমজানের তাৎপর্য ও করনীয় সম্পর্কে সাধারন মুসল্লিদের জানান দিতে শুরু করেছেন। ইমাম সাহেবগন প্রত্যেক দোয়ায় বলেই চলছেন -

"হে আল্লাহ! আপনি আমাদের জন্য রজব ও সাবান মাস কে বরকতময় করে দিন এবং আমাদের কে রমজান পযর্ন্ত পৌছে দিন।
মুসলিম পরিবার গুলোতে চলছে সাঝ সাঝ রব। মায়েরা সবকিছু সাজিয়ে গুছিয়ে পরিপাটি করছেন আর বাবারা রমজানের অতিরিক্ত ব্যয় ও রুচিশীল খাবারের পাথেয় সরবরাহে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছন। কোরানে ইরশাদ হচ্ছে-

"হে মুমিনগন! তোমাদের উপর সওম কে ফরজ করা হয়েছে যেমনি ভাবে তোমাদের পূবর্বতীদের উপর ফরজ করা হয়েছিল। যাতে তোমরা মুত্তাকী হতে পার।"
বিখ্যাত হাদিস বিশারদ সাহাবী হজরত আবু হুরায়রা রাঃ বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাঃ বলেন-

'যে ব্যক্তি ঈমানের সঙ্গে ও সওয়াবের নিয়তে রমজান মাসের রোজা রাখবে তার পূর্বের গুনাহসমূহ মাফ করে দেওয়া হবে। যে ব্যক্তি ঈমানের সঙ্গে ও সওয়াবের নিয়তে রমজান মাসের রাত্রিতে এবাদত করবে তার পূর্বের সমস্ত গুনাহ মাফ করে দেওয়া হবে। যে ব্যক্তি ঈমানের সঙ্গে ও সওয়াবের নিয়তে কদরের রাত্রি এবাদতে কাটাবে তার পূর্বের সমস্ত গুনাহ মাফ করে দেওয়া হবে।' [বুখারী, মুসলিম]।

আরো এসেছে, প্রিয় নবী সাঃ বলেন, 'আল্লাহ তায়ালা এরশাদ করেন, রোজা ছাড়া আদম সন্তানের প্রত্যেকটি কাজই তার নিজের জন্য। তবে রোজা আমার জন্য। আমি নিজেই এর পুরস্কার দেব।'
রোজা (জাহান্নামের আজাব থেকে বাঁচার জন্য) ঢাল স্বরূপ। তোমাদের কেউ রোজা রেখে অশ্লীল কথাবার্তায় ও ঝগড়া বিবাদে যেন লিপ্ত না হয়। কেউ গালমন্দ বা ঝগড়া বিবাদ করলে শুধু বলবে, আমি রোজাদার। সেই মহান সত্ত্বার কসম যার করতলগত মুহাম্মদের জীবন, আল্লাহর নিকট রোজাদারের মুখের গন্ধ কস্তুরির সুঘ্রান হতেও উওম।

রোজাদারের খুশির বিষয় দু’টি। যখন সে ইফতার করে তখন একবার খুশির কারণ হয়। আর একবার যখন সে তার রবের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে রোজার বিনিময় লাভ করবে তখন খুশির কারণ হবে। [বুখারী]

উপরোক্ত আয়াত ও হাদিস বিশ্লেষন করলে বুঝা যায় যে, রোজা এমন একটি ইবাদত যা কেবল মাত্র ইমানের সাথে সাওয়াবের আশায় তাকওয়া অজর্নের লক্ষ্যেই হওয়া উচিত।
সুতরাং যদি এর ব্যতিক্রম হয়, যদি নিছক লোক দেখানোর জন্য হয়, যদি শুধু সামাজিক রীতি হিসেবে হয় এবং যদি ইমানের সাথে না হয়, সওয়াবের আশায় না হয় ও তাকওয়া অজর্নের লক্ষ্যে না হয় তাহলে এই রোজা শুধুমাত্র উপোস থাকা ছাড়া অন্য কোন কাজে আসবে না।

অতএব পবিত্র রমজান মাসে রহমত, মাগফিরাত আর নাজাতের অংশিদার হতে হলে অবশ্যই আমাদেরকে রিপুর পূজা পরিহার করতে হবে, হারাম রুজি থেকে তাওবা করে হালাল রুজি অণ্বেষন করতে হবে, দিবসে সিয়াম সাধনা করে রাত্রি বেলায় মহান রবের দরবারে নামাজ পড়ে কান্না কাটি করতে হবে এবং সাধ্যানুযায়ী দান-খয়রাত করতে হবে। এমনি ভাবে সদকায়ে ফিতর আদায় করতে হবে, জাকাত ফরজ হলে তা পূণর্রূপে হকদারের নিকট পৌছে দিতে হবে এবং ধনী-গরিবের ব্যবধান ভূলে গিয়ে ঈদুল ফিতরের আনন্দ সবার মাঝে ছড়িয়ে দিতে হবে।

তাই আসুন, আমরা সম্মেলিত ভাবে রমজানের করনীয় গুলো মেনে চলি এবং বজর্ণীয় গুলো ছেড়ে দিয়ে আল্লাহর নৈকট্য অর্জনে নিজেদের কে সপে দেই এবং তাওবা-আস্তাগফিরুল্লাহ ও জিগির-আছগার করে করোনাভাইরাস সহ সব গজব ও আজাব হইতে মহান আল্লাহ পাকের দরবারে কান্নাকাটি করে দোয়া করি। আল্লাহ আমাদের কে কবুল করুন। আমীন।

 

মোঃ শামছুল আলম
লেখক ও গবেষক

 

এই লেখকের অন্যান্য লেখা



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Developed with by
Top