সিডনী শুক্রবার, ২৬শে এপ্রিল ২০২৪, ১২ই বৈশাখ ১৪৩১


পরিবেশ রক্ষায় ইসলামের ভূমিকা


প্রকাশিত:
২০ ডিসেম্বর ২০১৯ ২১:২৯

আপডেট:
২২ ডিসেম্বর ২০১৯ ০৪:০০

ফাইল ছবি

প্রভাত ফেরী ডেস্ক: পরিবেশ দূষণ নিয়ে গোটা বিশ্ব এখন উদ্বিগ্ন। নানাভাবে নষ্ট হচ্ছে আমাদের পরিবেশ। আর এ দূষণের ফলে এ বিশ্ব পড়েছে ভয়ানক বিপর্যয়ের মুখে। জ্ঞান-বিজ্ঞানের আজকের যুগেও মানুষ তার পরিবেশ রক্ষায় তেমন সচেতন নয়। ফলে আমাদের চারপাশ, আমাদের সমাজ ও রাষ্ট্র, এমনকি মানুষের জীবনও পড়েছে ঝুঁকির মধ্যে। তাই পরিবেশ রক্ষায় গোটা দুনিয়ায় চলছে নানান গবেষণা।

পরিবেশকে বাঁচাতে চলছে ব্যাপক আলোচনা, চলছে ব্যাপক উদ্যোগ। এ জন্য রচিত হচ্ছে অনেক ব্যয়বহুল পরিকল্পনা। প্রায় প্রতিটি দেশের সমাজ ও পরিবেশ বিজ্ঞানীরা এ বিষয়ে এখন গলদঘর্ম প্রচেষ্টায় নিয়োজিত। তাদের সবার লক্ষ্য একটাই, কিভাবে দুনিয়াকে নিশ্চিত ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করা যায়, মানুষের এ সুন্দর সমাজকে কিভাবে বসবাসের উপযোগী রাখা যায়। এ কথা আজ সবার কাছে স্পষ্ট যে, পরিবেশ দূষণের ফলে আমাদের সমাজে চলছে ভাঙ্গন ও বিশৃঙ্খলা। এ দূষণের কারণে রোগ-শোক, জ্বরা-ব্যাধিতে আক্রান্ত হচ্ছে অগণিত মানুষ। তাই পরিবেশ রক্ষায় আমাদের সবার সচেতন হওয়া অপরিহার্য হয়ে পড়েছে।

ইসলামে যেমন ইবাদতের তাৎপর্য রয়েছে, তেমনি রয়েছে পরিবেশের গুরুত্ব। কোন পরিবেশে বসবাস করলে মানুষের সুবিধা হবে বা মানুষ সুন্দরভাবে বেঁচে থাকতে পারবে, ইসলাম তা সুনিশ্চিত করেছে। আমাদের চারপাশে যা কিছু আছে; যেমন গাছপালা, বাড়িঘর, মাটি, পানি, বায়ু, জীবজন্তু, পশুপাখি, রাস্তাঘাট, নদীনালা, পাহাড়-পর্বত, যানবাহন, কলকারখানা ইত্যাদি নিয়েই পরিবেশ। এগুলো সবই মহান আল্লাহর শ্রেষ্ঠ নেয়ামত। এরশাদ হচ্ছে ‘আমি পৃথিবীকে বিস্তৃত করেছি এবং এতে পর্বতমালা সৃষ্টি করেছি। আমি পৃথিবীতে প্রতিটি বস্তু সুপরিমিতভাবে সৃষ্টি করেছি। এতে তোমাদের জন্য জীবিকার ব্যবস্থা করেছি। আর তোমরা যাদের জীবিকাদাতা নও, তাদের জন্যও। প্রতিটি বস্তু ভান্ডার আমার কাছে রয়েছে। আমি তা প্রয়োজনীয় পরিমাণে সরবরাহ করে থাকি। আমি বৃষ্টিগর্ভ বায়ু প্রেরণ করি। এরপর আকাশ থেকে মুষলধারে বৃষ্টি বর্ষণ করি। তা তোমাদের পান করতে দিই। এর ভান্ডার তোমাদের কাছে নেই।’ (সুরা হিজর : ১৯-২২)

মানুষ ও অন্য সৃষ্টিজীবের সুস্থভাবে বেঁচে থাকার জন্য পরিবেশের বিভিন্ন উপাদান খুব দরকার। এগুলোর বিনাশ বা ক্ষতি সাধন করা হলে প্রকৃতি ও পরিবেশের ভারসাম্য বিনষ্ট হয়। অথচ ইসলাম তার অনুসারীদের সামগ্রিকভাবে সৌন্দর্যমন্ডিত দেখতে চায়। তাই স্বাস্থ্যসম্মত পরিচ্ছন্ন পরিবেশ এবং উন্নত জীবনমান পদ্ধতি একে অপরের পরিপূরক। পৃথিবীর মানুষকে গাছপালা ও পাহাড়-পর্বতকে ধ্বংস না করার জন্য সতর্কবাণী দিয়ে পবিত্র কোরআনে ঘোষণা করা হয়েছে ‘তিনিই আল্লাহ, যিনি বায়ু প্রেরণ করেন। এরপর তা (বায়ু) মেঘমালাকে সঞ্চালিত করে। অতঃপর তিনি (আল্লাহ) মেঘমালাকে যেভাবে ইচ্ছে আকাশে ছড়িয়ে দেন এবং তাকে (মেঘমালাকে) স্তরে স্তরে রাখেন। এরপর তুমি দেখতে পাও যে, তার মধ্য থেকে বৃষ্টিধারা নির্গত হয়। তিনি (আল্লাহ) তার বান্দাদের মধ্যে যাদের ইচ্ছে তা (বৃষ্টি) পৌঁছান; তখন তারা আনন্দিত হয়।’ (সুরা রুম : ৩৮)

যেখানে-সেখানে, উন্মুক্ত স্থানে ময়লা-আবর্জনা, কফ, থুথু ও মলত্যাগে পরিবেশ দূষিত হয়ে স্বাস্থ্যের মারাত্মক ক্ষতি করে। নোংরা ও দূষণযুক্ত পরিবেশ রোগব্যাধির প্রধান কারণ। তাই এসব দূষণযুক্ত পরিবেশের কবল থেকে পরিবেশ পরিচ্ছন্ন রাখলে মারাত্মক ও সংক্রামক রোগ-ব্যাধি থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। পক্ষান্তরে এসব নোংরা পরিবেশ দূষণমুক্ত রাখার ওপরই নির্ভর করে জনস্বাস্থ্যের সফলতা। তাই প্রাকৃতিক সৌন্দর্য রক্ষা ও দূষণ প্রতিরোধে সবার যথোচিত দায়িত্ব পালন করা উচিত। যত্রতত্র ময়লা-আবর্জনা নিক্ষেপ ও রুচিহীনতা পরিবেশ দূষণের অন্যতম কারণ। অথচ ইসলাম এটাকে নিষিদ্ধ করেছে। সুস্থতা, সৌন্দর্য, মননশীলতা, উৎকর্ষ ও সমৃদ্ধির কথা বলে ইসলাম। সুতরাং ময়লা-আবর্জনা দিয়ে পরিবেশ দূষিত করা ঠিক নয়। নবী (সা.) সাবধান করে বলেছেন ‘তোমরা তোমাদের আঙিনাকে পরিচ্ছন্ন রাখ।’ (তিরমিজি : ২৭৯৯)। পরিচ্ছন্নতা ও পবিত্রতার ব্যাপারে রাসুল (সা.) এরশাদ করেছেন, ‘পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ইমানের অঙ্গ।’ (মুসলিম : ২২৩)

 


বিষয়:


আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Developed with by
Top