সিডনী বৃহঃস্পতিবার, ২৫শে এপ্রিল ২০২৪, ১২ই বৈশাখ ১৪৩১


ইসলামের আলোকে মা-বাবার সেবায় আত্মনিয়োগ করা


প্রকাশিত:
২২ মার্চ ২০২০ ০৫:৫৬

আপডেট:
২২ মার্চ ২০২০ ০৬:০০

ফাইল ছবি

সন্তানের ওপর মা-বাবার হক সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। আল্লাহ তায়ালা স্বয়ং তার ইবাদতের পরপরই মা-বাবার হক আদায়ের নির্দেশ দিয়েছেন কোরআনে। নবীজিও এ ব্যাপারে অনেক গুরুত্বারোপ করেছেন। একদিনের ঘটনা, এক সাহাবী রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর খিদমতে এসে বললেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ্! আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের জন্য এবং আখেরাতে জান্নাত প্রাপ্তির আশায় আমি আপনার সঙ্গে জিহাদে যেতে চাই। নবীজি বলেন, ‘তোমার জন্য আক্ষেপ, তোমার মা কি জীবিত আছে?’ তিনি বললেন, হ্যাঁ। নবীজি বলেন, ‘ফিরে গিয়ে তার সেবা করো’।

এরপর তিনি অন্য পাশ থেকে ঘুরে পুনরায় এসে বললেন, হে আল্লাহর রাসুল! আমি আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন এবং আখেরাতে জান্নাত লাভের আশায় আপনার সাথে জিহাদে যেতে চাই। নবীজি বলেন, ‘তোমার জন্য আক্ষেপ, তোমার মা কি জীবিত আছে?’ বললেন, হ্যাঁ। নবীজি বলেন, ‘তুমি ফিরে যাও এবং তার সেবা করো।’ এরপর তিনি সম্মুখভাগে এসে বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন এবং আখেরাতে জান্নাত লাভের আশায় আমি আপনার সাথে জিহাদে যেতে চাই। নবীজি বলেন, ‘তোমার জন্য আক্ষেপ, তোমার মা কি জীবিত আছে?’ তিনি বললেন, হ্যাঁ। নবীজি বলেন, ‘তোমার জন্য আফসোস! যাও, তোমার মায়ের পায়ের নিচে পড়ে থাকো (অর্থাৎ মায়ের খেদমতে লেগে থাকো); জান্নাত তো তার পায়ের নিচে!’ (ইবনে মাজা : ২৭৮১; নাসায়ি : ৩১০৪)

সন্তানের পক্ষ থেকে মা সবচেয়ে বেশি হকের দাবিদার। তারপর বাবা। হাদিসে এসেছে, এক ব্যক্তি রসূলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে এসে জিজ্ঞেস করলÑ হে আল্লাহর রাসুল! কে আমার নিকট উত্তম ব্যবহার পাওয়ার অধিক হকদার? নবীজি বললেন, ‘তোমার মা’। লোকটি বললো, তারপর কে? নবী (সা.) বললেন, ‘তোমার মা’। সে বললো, অতঃপর কে? এবারও নবীজি বললেন, ‘তোমার মা’। সে আবারো বললো, তারপর কে? নবীজি বললেন, ‘তোমার বাবা’। (বুখারি : ৫৯৭১)

পিতামাতাকে কষ্ট দেয়া এবং তাদের সঙ্গে মন্দ আচরণ করা থেকে রাসুল (সা.) কঠোরভাবে নিষেধ করেছেন। একবার রাসুল (সা.) সাহাবাদের বললেন, আমি কি তোমাদেরকে সবচেয়ে বড় কবিরা গুনাহগুলো সম্পর্কে বলবো না? সকলে বললেন, অবশ্যই বলুন। নবীজি বললেন, ‘আল্লাহর সঙ্গে শিরিক করা এবং পিতা-মাতার অবাধ্য হওয়া। তিনি হেলান দিয়ে বসেছিলেন। এবার সোজা হয়ে বসলেন এবং বললেন, শুনে রাখ! মিথ্যা সাক্ষ্য দেয়া; এ কথাটি তিনি বার বার বলতে থাকলেন। এমনকি সাহাবিগণ মনে মনে বলতে লাগলেন, আর যদি তিনি না বলতেন।’ (বুখারি : ২৬৫৪)

অপর হাদিসে এসেছে, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘পিতা-মাতাকে গালি দেয়া কাবিরা গুনাহ’। সহাবাগণ প্রশ্ন করলেন, হে আল্লাহর রাসূল! কেউ কি তার পিতা-মাতাকে গালি দিতে পারে? তিনি বললেন, ‘হ্যাঁ। কোনো ব্যক্তি অন্যের পিতাকে গালি দেয় প্রত্যত্তরে সেও তার পিতাকে গালি দেয়। কেউ বা অন্যের মাকে গালি দেয় জবাবে সেও তার মাকে গালি দেয়।’ (মুসলিম : ৯০)

একদা নবীজি (স.) বললেন, ধ্বংস হোক! ধ্বংস হোক! অতঃপর ধ্বংস হোক! জিজ্ঞাসা করা হলো, কার কথা বলছেন? নবীজি বললেন, ‘যে তার পিতা-মাতা উভয়কে অথবা কোনো একজনকে বার্ধক্যে পাওয়ার পরও জান্নাতে যেতে পারেনি।’ (মুসলিম : ২৫৫১)। এ জন্য জীবদ্দশায় সন্তানের উচিৎ যথাসম্ভব মা-বাবার খেদমত করে আল্লাহর পূর্ণ সন্তুষ্টি অর্জন করা।

শুধুমাত্র জীবদ্দশায় নয়, মৃত্যুর পরও সন্তানদের ওপর মাতা-পিতার হকের কথা বলেছেন রাসুল (সা.)। এ ব্যাপারে হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, এক সাহাবি এসে বললেন, হে আল্লাহর রাসুল! মা-বাবার মৃত্যুর পর তাদের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করার এমন কোনো উপায় আছে কি, যা আমি অনুসরণ করতে পারি? রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, ‘হ্যাঁ! চারটি উপায় আছে। ১. তাদের জন্য দোয়া ও ক্ষমা প্রার্থনা করা। ২. মৃত্যুর পর তাদের কৃত ওয়াদা পূরণ করা। ৩. তাদের বন্ধুবান্ধবদের সম্মান করা। এবং ৪. তাদের মাধ্যমে তোমাদের সঙ্গে যে আত্মীয়তার সম্পর্ক গড়ে উঠেছে, তা অক্ষুন্ন রাখা।’ (ইবনে মাজা :৩৬৬৪)

 


বিষয়:


আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Developed with by
Top