সিডনী বুধবার, ২৪শে এপ্রিল ২০২৪, ১০ই বৈশাখ ১৪৩১

বর্ষশেষের নৈনি ধামাকা : ডঃ গৌতম সরকার


প্রকাশিত:
১৭ সেপ্টেম্বর ২০২০ ২১:৪৮

আপডেট:
১ অক্টোবর ২০২০ ২১:৩২

 

জোশিজির সাথে আগেরবার কুমায়ুন ভ্রমণের সময়ও ৩১শে ডিসেম্বর নৈনিতালে ছিলাম, কিন্তু সেবারে ছিলাম সুখতালে, ফলে সেবার বর্ষশেষের নৈনি-ধামাকার ট্রেলার দেখেছিলাম, পুরো মুভি নয়। সৌভাগ্যক্রমে এবারে জায়গা পেয়েছি তাল্লিতালে--KMVN রিসর্টের একদম ওপরের তলার প্রশস্ত ব্যালকনি নিয়ে এক বিশাল বড় ঘর। বারান্দা থেকে হাত বাড়ালেই নৈনি লেক, আর অন্ধকার রাতে অনন্ত আলোকসজ্জায় সাজানো নৈনি লেক রাজরাজেন্দ্রানীর মতো বিরাজমান এই শৈলশহরের বুক জুড়ে।
হোটেলে চটপট চেক ইন করতেই নিমন্ত্রণ পেলাম হোটেলের নিজস্ব ডিজে পার্টিতে...অস্বীকার করি সামর্থ্য কোথায়! কিন্তু তার আগে এই লেকসুন্দরীকে যে একবার প্রেমের পাকে জড়ানো দরকার... অন্তত একটা পাক ঘুরে না এলে রাত্রে ঘুম হবেনা, পরেরদিন সকালেও শরীর অনেক ব্যাপারে সাথ দেবেনা। তাই তড়িঘড়ি বেরিয়ে পড়লাম , লেক ঘিরে লোকজন জমতে শুরু করেছে; আমরাও মিশে গেলাম সেই জনছন্দে...শুরুটা ভালোই হলো, হালকা মেজাজে হাঁটা, আর থমকে থমকে ছবি তোলা -- বেশ কিছুটা পর , তখনো মল্লিতাল আসতে অনেকটা বাকি ...একটু অস্বস্তি বোধ হতে লাগলো, ক্রমে বুঝতে পারলাম মানুষের ভিড় ক্রমশঃ বাড়তে বাড়তে বিপদসীমার কাছাকাছি পৌঁছে গেছে, আর সবথেকে বড় কথা আমরা এখন আর নিজের ইচ্ছেয় চলছিনা, জনস্রোত যেদিকে বইছে আমরাও সেই স্রোতের অভিমুখে বয়ে চলেছি, তাই এখন ইচ্ছে করলেও ফেরার কোনো উপায় নেই। এই জনধারায় বইতে বইতে সহজেই মল্লিতালে পৌঁছে গেলাম। এখানে খুব ছোট্ট জায়গার মধ্যে মসজিদ, গির্জা আর নয়নাদেবীর মন্দির আছে। আমাদের খুব পছন্দের জায়গা, তিনটি ধর্মস্থল ঘুরে বৌকে চাউমিন-কফি খাইয়ে বহু পরিশ্রমে জনস্রোতের প্রতিকূলে নিরন্তর সংগ্রামে গায়ের জোর দেখিয়ে হোটেলে ফিরলাম প্রায় রাত দশটায়। তখন আমাদের হোটেলে একতিরিশের সেলিব্রেশন মধ্যগগনে, বনফায়ারের উষ্ণতায় মানুষের ধর্ম, ভাষা, কৃষ্টি, সংস্কৃতি গলতে শুরু করেছে, তারপর রঙিন পানীয়ের প্রভাবের ব্যাপারটা তো থেকেই যায়। বেশ অনেকটা সময় অচেনা-অজানা মানুষদের সাথে হাতে-হাত, পায়ে-পা মিলিয়ে নিবিড় অনুষঙ্গে অনেকটা কাটিয়ে কখন যেন পায়ে-পায়ে ২০১৬ এসে দরজায় কড়া নাড়লো । হঠাৎ করে লক্ষ লোকের আনন্দ-কলরোল আর আকাশ জুড়ে আলোর রোশনবাজির খেলা আমাদের চেতনায় ফেরালো।

আনন্দর সফেন স্রোতের গলন্ত লাভায় অনন্ত আপনজনের ভরা প্রেমের আলিঙ্গনে বাঁধা পড়লো আপামর ভারতবাসী-পৃথিবীবাসী। তারপর সময়ের নিগড়ে বনফায়ারের আগুন স্বাভাবিক নিয়মেই তার দাপট হারালো; আর সেই নিভু নিভু আলোর ম্লান লাল আলোর শিখায় রাতের খাওয়া শেষ করে ফিরে গেলাম একান্ত আশ্রয়ে। বন্ধুরা, যারা যাননি, এবং যারা গেছেন তাদের সবাইকে একান্ত অনুরোধ কাটিয়ে আসুন এই পার্বত্য সুন্দরী শহরে কোনো এক বর্ষ-শেষের সেই কাঙ্খিত রাতটা।

পরের সকালে উঠে দেখি ৩১ রাত্রের সেই স্বপ্ন আলোমালা নিভে গেছে ,আর সারা পূবাকাশে উদিত হওয়া শাশ্বত জ্যোতিষ্ক সব কিছুকে ম্লান করে দিয়ে আপন বিভায় ভাস্বর। তাড়াতাড়ি তৈরি হয়ে লেকের কাছে এসে দেখলাম কাছেদূরে একটিও জনমানব নেই। আগের রাত্রির জঙ্গম বর্ষ উদযাপনের উদ্দাম-উচ্ছাসের চিহ্ন চতুর্দিকে। খাবারের ঠোঙা, কাপড়ের টুকরো, ছেঁড়া চটি, প্লাস্টিকের থলি, ভাঙা বাক্স ইত্যাদি সারা লেক চত্বরে ছড়িয়ে। আমি অবশ্য লেকের দিকে গেলামনা। লেককে পিছনে ফেলে লম্বা লম্বা পা ফেলে বাজার এলাকার দিকে এগিয়ে গেলাম। প্রাত্যহিক ভ্রমণে শুধু প্রকৃতি দেখলেই তো চলবেনা, শরীরটার দিকেও নজর রাখতে হবে। শরীর যত ফিট রাখতে পারবো এই জীবনে তত বেশি পৃথিবীর অমৃত রূপসুধা পান করতে পারবো। এছাড়া আরেকটা ব্যাপার আছে, যেকোনো জায়গায় আমার সেখানকার বাজার এলাকা ঘুরে দেখতে ইচ্ছে হয়, বাজার হলো সেই এলাকার হৃদস্পন্দন। এখানে একবার না পৌঁছলে আপনি জায়গাটির সামাজিক, অর্থনৈতিক, লৌকিক, রাজনৈতিক জীবনের সম্যক আভাস পাবেননা। এই ব্যাপারটা মিস না করার জন্যে বাজারে ঘোরাটা আমার আইটিনেরারির বেশ ওপরদিকে রেখে দিই। কিন্তু এই সকালে স্থানীয় জীবনশৈলীর কোনো আঙ্গিকই চোখে পড়ার সুযোগ নেই কারণ গতকাল রাত্রের ধামাকাধার বর্ষশেষের ম্যায়ফিলের মন্তাজ পেরিয়ে নৈনিতাল এখনো ঘুম থেকে ওঠেনি। অনেকটা পথ পেরিয়ে গিয়েও একটা চায়ের দোকান চোখে পড়লোনা। গতবারে সময়াভাবে এদিকটায় আসার সুযোগ হয়নি, তাই আড়ে-বহরে নৈনিতালের বিস্তার জানা ছিলোনা।


বেশ বড় শহর, হাঁটছি তো হাঁটছি, শহরের কোনো শেষ দেখতে পেলামনা। কিন্তু প্রায় আধাঘন্টা হাঁটার পর বড়রাস্তার পাশে এক ধোঁয়া ওঠা চায়ের দোকানের সন্ধান পেলাম। আমি যে খুব চা-খোর তা কিন্তু একদম নই। যেমন যেদিন কলেজ থাকে আমি প্রথম কাপ চা খাই সকাল দশটার পর রবিদার দোকানে, আবার ছুটির দিন ব্রেকফাস্ট করার পর। কিন্তু বেড়াতে এসে- সে পাহাড়, সমুদ্র, জঙ্গল যাই হোকনা কেন , সকালের এই একক ভ্রমণে বেরিয়ে স্থানীয় বেকারির একটা বিস্কিটের সাথে গাঢ় দুধের চা খুব উপভোগ করি। তাই এখানেও দ্বিরুক্তি না করে শরীরচর্চা ভুলে সোজা দোকানে ঢুকে একটা বেঞ্চিতে অধিষ্ঠিত হলাম। দোকানী এবং দুয়েকজন খদ্দেরের চোখে তখনো শেষ রাতের ক্লান্তি , হয়তোবা আমারও মুখ চোখের একই অবস্থা। একটাই মঙ্গল, নিজের মুখ-চোখ নিজেকে দেখতে হয়না। গরম গরম চা খেয়ে শরীরকে গরম করে আরো কিছুটা পথ এগিয়ে গেলাম।

এখানে পথের বর্ণনা আলাদাভাবে কিছু নেই, পিচের রাস্তা আর দুদিকে কংক্রিটের জঙ্গল। এবার ফেরার পথ ধরতে হবে, ঘড়িতে দেখি সাতটা বেজে গেছে। হোটেলে ফিরতে পৌনে আটটা বাজলো, এখানেও কমপ্লিমেন্টারি ব্যবস্থা। বেশ এলাহি ব্যাপার, অনেক ভ্যারাইটি, আমি যদিও টোস্ট আর ওমলেটে স্থিত থাকলাম, আমার গিন্নি কিন্তু বেশ প্রসন্ন চিত্তে ঘুরে ঘুরে সবরকম খাবারের স্বাদ নিতে লাগলো। খাওয়া সেরে তৈরি হয়ে নিচে নামলাম। এই হোটেলে প্রতিদিন সবকিছু চেঞ্জ হয়-বেডশিট, পিলো কভার, ব্ল্যাঙ্কেট কভার ইত্যাদি, তারপরতো সারাঘর ও টয়লেট পরিষ্কার এবং টি-কফি-স্ন্যাকস এবং টয়লেট্রিস রিফিল করার ব্যাপার তো আছেই। তবে সেটা আপনাকে ফোনে জানাতে হবে বা বেরোনোর আগে কাউন্টারে চাবি জমা রেখে দিতে হবে। আমরা সেইমতো চাবি জমা রেখে নীচে মানে প্রায় আড়াইশো সিঁড়ি পেরিয়ে নীচে নামলাম।নীচে যথারীতি জোশীজি গাড়ি নিয়ে হাজির। ও একটা কথা কাল বলতে ভুলে গিয়েছিলাম, জোশীজির বাড়ি এই নৈনিতালে। কাল উনি আমাদের হোটেলে পৌঁছে গাড়ি নিয়ে বাড়ি ফিরে গিয়েছিলেন। আজ সকালে সময়মতো আবার হাজির। আজ আমরা শহরের কাছাকাছি কয়েকটা জায়গা ঘুরবো-কিলবারি (১৩ কিমি) আর প্যাংগট (১৫ কিমি)। দুটো জায়গাই পর্যটকরা আসে পাখি দেখতে।
আমি পক্ষী বিশারদ নই, তাই অবস্থানগত দিক থেকে কিলবারি আমাদের বেশি মোহিত করেছে। এখানে জোশীজি আমাদের ফরেস্ট রেস্ট হাউসের একেবারে ভিতরে নিয়ে গেলেন। কয়েকটা মাত্র ঘর নিয়ে একটা ইউনিট, দু-তিনটে বন্ধু-আত্মীয় পরিবার নিয়ে এই জায়গায় একটা-দুটো রাত কাটানো যেকোনো প্রকৃতি প্রেমিকের কাছে স্বর্গবাসের সামিল। কিন্তু আমাদের কয়েকঘন্টা কাটিয়ে, চৌকিদার ভাইয়ের সৌজন্যে কফি খেয়ে এবং রেস্টহাউসের অন্দরবাহির ঘুরে ফিরে আসতে হলো। ওখান থেকে দু-কিলোমিটার এগিয়ে প্যাংগট পৌঁছলাম।এই জায়গাটি অনেক বেশি জনবহুল। বেশ কয়েকটা হোটেল আছে পক্ষী প্রেমিকদের রাত কাটানোর জন্যে। কিলবারি এবং প্যাংগটে অনেক প্রজাতির পাখি দেখা যায়- রেড বিলড ব্লু ম্যাগপাই, ব্লু উইঙ্গড মিনলা, স্লেটি ব্যাকড ফর্কটেল, রুফাস বেলিড নিলটাভা, ইউরেশিয়ান জে, গ্রিন ব্যাকড টিট, ব্ল্যাক হেডেড জে, রুফাস বেলিস উডপেকার, ব্রাউন ফ্রন্টেড উডপেকার, গ্রে টিপাই, ব্ল্যাক ঈগল, ওরিয়েন্টাল টার্টল ডাভ, মেরুন ওরিওল, হিমালয়ান বুলবুল, গ্রে বুশচ্যাট ইত্যাদি।


বেশ কিছুটা সময় পক্ষীরাজ্যে কাটিয়ে ফিরে এলাম। ফিরে আজকের মতন জোশীজিকে ছেড়ে দিয়ে লেক বরাবর এগিয়ে এক বাঙালি হোটেলে দুপুরের খাবার সারলাম। আজ ইচ্ছে বিকেলটা নিজেদের মতো করে নৈনিতাল লেকের আশেপাশে কাটাবো। খেয়েদেয়ে যখন লেকের কাছে এলাম তখন দুপুর বিকেলে গড়িয়েছে। আমরা মাল্লিতাল থেকে একটা নৌকা নিয়ে প্রায় অস্তগামী সূর্যকে সাক্ষী রেখে তাল্লিতাল হয়ে আবার মাল্লিতালে ফিরলাম। ইচ্ছে আরেকবার নয়না দেবীর মন্দির দর্শন করবো। এই জায়গায় এসে মাল্লিতালের বিস্তার জুড়ে মন্দির-মসজিদ-গুরুদোয়ার তিনটি তীর্থস্থানেই যেতে ইচ্ছে করে। এগুলি দেখে লেকের উল্টো পাড়ের রাস্তা ধরে তাল্লিতালে ফিরলাম। যারা এই রাস্তায় গেছেন তারা দেখেছেন এই রাস্তার ওপরে এক হনুমানজির মন্দির আছে। অন্যপারের চিৎকার-চেঁচামেচির বিন্দুমাত্র রেশ এপারে এসে পৌঁছচ্ছেনা। এক অসীম শান্ত প্রেক্ষাপটে মন্দির চত্বরে বা মন্দিরের সামনে লেককে সামনে রেখে বেঞ্চিতে বসে সূর্যাস্ত আর সাথে অপরপারে ধীরে ধীরে জ্বলে ওঠা আলোজোনাকি দেখতে দেখতে কখন কালো ঘন আঁধার রাত আমাদের ঘিরে ধরেছে টের পাইনি। রাস্তার আলো স্থানে-অস্থানে আলো-আবছায়া সৃষ্টি করেছে, সেই আলোছায়ার বেড়াজাল ঠেলে হোটেলে ফিরলাম।

পরের সকালে নৈনিতালে আরেকটা সূর্যোদয়ের সাক্ষী হলাম। ভোর ভোর বেরিয়ে লেকের পাড় ধরে মাল্লিতালের দিকে হাঁটা লাগালাম। হাড় কনকনে ঠান্ডা, লেকের কালো জলতল থেকে উঠে আসা ধোঁয়ারঙা ঠান্ডা হাওয়া আর লেকের পাড়ের গাছগুলো থেকে ঝরে পড়া তরল কুয়াশা শীতের কামড় আরো বাড়িয়ে দিচ্ছে। আসলে সূর্য উঠে গেলেও বিভিন্ন অবগুণ্ঠনের কারণে রবিকিরণ এই রাস্তায় এসে পৌঁছতে পারছেনা৷ আমি অবশ্য তৈরি হয়েই বেরিয়েছি, আগাপাশতলা পশম কাপড়ে ঢেকে দ্রুত পদক্ষেপে মাল্লিতালের দিকে এগিয়ে চললাম, বেশ কিছুটা পথ জোর কদমে হাঁটায় শরীর একটু গরম হলো, আরাম বোধ করলাম।

মাল্লিতাল ছাড়িয়ে সামান্য কিছু এগিয়ে বাঁদিকে একটা হালকা চড়াই পথ উঠে গেছে, এটাও আরেকটু প্রসারিত পথে লেককে বেড়ি দিয়ে তাল্লিতাল ছাড়িয়ে অনেকটা দূরে বাস স্ট্যান্ডে গিয়ে পৌঁছেছে। বেশ কিছুটা ওপর থেকে পাখির চোখে লেককে দেখতে ভীষণ সুন্দর লাগে। এই পথ দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে ওপর থেকে দেখতে পাবেন লেক আর রাস্তার মাঝের অঞ্চলে বহু একর জুড়ে বিস্তৃত এখানকার একমাত্র ইউনিভার্সিটি। যদিও নামার উপায় নেই, খ্রীস্টমাসের ছুটিতে ইউনিভার্সিটি বন্ধ থাকার কারণে সবকটা গেটেই বড় বড় তালা ঝুলছে। তবে ওপরের রাস্তা থেকে অন্দরমহলের অনেকটাই দেখা যায়। আজও সকালে বেশ কয়েক কিলোমিটার প্রভাত ভ্রমণ সেরে এককাপ চা খেয়ে হোটেলে ফিরলাম।

স্নান করে তৈরি হয়ে ব্রেকফাস্ট সেরে নীচে নামলাম। আমাদের ঘরটা ছিল একদম ওপরতলায়, ওখান থেকে একদম নীচে লেকের কাছে পৌঁছতে প্রায় আড়াইশো সিঁড়ি নামতে হয়, ওঠার সময় কিভাবে উঠতাম সেটা আর বললামনা, আপনারা কল্পনা করে নিন।


আজও আমরা কাছাকাছি ঘুরবো। প্রথমে গেলাম সুখতালের কাছে ইকো কেভ গার্ডেনে, এখানে সাতটা প্রাণীর নামে সাতটা কেভস আছে, বেশ ভালো লাগে সেই আলো-আঁধারি সংকীর্ণ পথে রাস্তা খুঁজে কেভের মধ্যে দিয়ে পথ করে এগিয়ে যেতে। কিছুটা সময় বয়স ভুলে শৈশবে ফির পাওয়ার এক সুন্দর জায়গা।এখানে একটা মিউজিক্যাল ফাউন্টেনও আছে, সন্ধ্যেবেলা আলোর রঙিন নাচের সাথে সাথে জলের ওঠা নামা দেখতে খুব ভালো লাগবে, যদিও আমরা এযাত্রায় সেই আনন্দ দৃশ্য দেখতে পেলামনা। ওখান থেকে বেরিয়ে গাড়িতে আন্দাজ পাঁচ-ছ কিলোমিটার পেরিয়ে পৌঁছলাম হনুমানগড়। এখানে গাড়ি থেকে নেমে নির্জন পথে কয়েকশো মিটার পথ পায়ে হেঁটে পৌঁছলাম 'নিম করোরি বাবার সঙ্কটমোচন মন্দির'। এই মন্দিরের পরিবেশ অসম্ভব সুন্দর,কোথাও কোনো আওয়াজ নেই, পাহাড়ের একদম কিনারে আপনার ঘন্টা বাজানোর শব্দ পাহাড়, জঙ্গল ছাড়িয়ে সুদূরের জঙ্গলে লুকিয়ে থাকা ভূমিপুত্রদের গ্রামে গিয়ে রণিত হবে। এর পাশাপাশি আরো দুটি মন্দির আছে - শীতলা দেবীর মন্দির আর স্বামী (কি এক শাহির) মন্দির , মনে পড়ছেনা। সবগুলোই একটা পাহাড়ের বিস্তৃত কিনারা জুড়ে। ওখানে বেশ কিছুটা সময় কাটিয়ে পথে এক মেথডিস্ট চার্চ ঘুরে নৈনিতালে ফিরে এলাম।

বেলা হয়েছে, বেশ খিদে পেয়েছে। জোশীজি আমাদের গতকালের সেই বাঙালি হোটেলের সামনে ছেড়ে দিলেন। আমরা আজকের মত জোশীজিকে ছেড়ে দিলাম, আজ আমাদের একটা জায়গাই দেখা বাকি- গোবিন্দ বল্লভ হাই অল্টিটিউড জু। এখানে যেতে হলে লেকের পাশ থেকে লোকাল ট্যাক্সি নিয়ে যেতে হবে। তাই জোশীজিকে আটকে রাখার কোনো মানে হয়না। ইচ্ছে জু থেকে ফিরে নিজেদের মতো করে নৈনিতাল ঘুরবো। সেইমতো খেয়ে নিয়ে এখানকার চিড়িয়াখানা ঘুরে নিলাম, কতকটা দার্জিলিংয়ের চিড়িয়াখানার মতো তবে এর বিস্তার অনেক বেশি। ফিরে আবার সেই নৈনিলেকের প্রেক্ষাপটে সূর্য অস্ত গেল। কিছুটা লেকের পাশে কাটিয়ে , মন্দির-মসজিদ-গুরদোয়ারা ঘুরে, দুয়েকটা দোকানে ঢুঁ মেরে কুমায়ুন ভ্রমণ শেষ হলো। তবে একথা জোর গলায় বলতে পারি, এখানকার পাহাড় -প্রকৃতি-মানুষের ভালোবাসায় আমরা বারবার ফিরে আসবো।


গৌতম সরকার
অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর, যোগমায়া দেবী কলেজ, কলকাতা

 

এই লেখকের অন্যান্য লেখা



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Developed with by
Top