সিডনী শুক্রবার, ২৯শে মার্চ ২০২৪, ১৪ই চৈত্র ১৪৩০

পর্ব এক: ক্রিস্টোফার কলম্বাস ও আমি


প্রকাশিত:
১৮ মে ২০১৯ ০১:১৩

আপডেট:
৫ এপ্রিল ২০২০ ১৯:৫৫

আহসান হাবীব

ক্রিস্টোফার কলম্বাস আমেরিকায় প্রথম পা রাখেন ১৪৯২ সালে । আর প্রায় ৬০০ বছর পর আমি পা রাখি ২০১৯ সালের ৪ মে আমেরিকার হাটর্সফিল্ড জ্যাকসন আটলান্টা  ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্টে। তবে আমাদের দুজনের আমেরিকা ভ্রমণে মৌলিক কিছু মিল ছিল আবার পার্থক্যও ছিল।

তিনি গিয়েছিলেন জাহাজে আমি উড়ো জাহাজে; (এটা পার্থক্যের মধ্যে ফেলব না মিলের মধ্যে ফেলবো বুঝতে পারছি না, পাঠকের বিবেচনা।) আবার তার সঙ্গী ছিল তিন জাহাজ ভর্তি নাবিক, কম করে হলেও ৩০০ জন। আমার সঙ্গী মাত্র একজন, আমার স্ত্রী। কলম্বাস আমেরিকায় পা রেখেই কোনো প্রশ্নের মুখোমুখি হয়েছিলেন কিনা বলা মুশকিল। তবে আমাকে আটলান্টায় পা রেখেই ইমিগ্রেশন অফিসারের মুখোমুখি হতে হয়। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, ইমিগ্রেশনের পর সবার অবস্থা


এখানে কোথায় এসেছো?
- আমার মেয়ের কাছে। সে সাউথ ক্যারোলিনায় ক্লেমসন ইউনিভার্সিটিতে পড়ে। 
- কতদিন থাকবে?
- দুই মাস
- দু... ই ...মা... স?? অফিসারের নীল চোখ কপালে উঠে তার লাল চুলে আটকে গেল বলে মনে হল। তবে সে অস্কার পাওয়ার মতই অভিনেতা ।

 

মনে মনে বলি, ক্রিস্টোফার কলম্বাস ৬০০ বছর আগে আমেরিকা এসে ভিসা ছাড়াই ছিল ১১ বছর! আর আমিতো ... সে যাই হোক লাগেজ বেল্টে এসে দেখি এয়ারপোর্টের লোকজন সব লাগেজ আগে থেকেই বেল্ট থেকে নামিয়ে সুন্দর করে সাজিয়ে রেখেছে। আমি একটু হতাশ হলাম। কারণ প্লেনে আমার স্ত্রীর কাছে নানান ধমক খেতে খেতে এসেছি (আমার বোকামোর জন্য)। আমার ধারনা ছিল এখানে নিশ্চয়ই একটা দুটা লাগেজ হারানো যাবে (তিনটা গিফট ভর্তি লাগেজ আনা হয়েছে) তখন আমি এয়ারপোর্টে স্ত্রীর উপর চেঁচামেচি করব 'তখনই বলেছিলাম লাগেজে দু একটা চিহ্ন রাখো তা কথা শুনলে না।' সব ব্যাগেজ ট্রলিতে করে এনে বিশাল এয়ারপোর্ট থেকে বাইরে এসে আমরা দুজন একটা বেঞ্চে বসলাম। এয়ারপোর্টের  বাইরে বিশাল জায়গা, সেখানে সুন্দর বেঞ্চ পাতা।  আমার মেয়ে ফোনে জানিয়েছে সে আসছে, পথে। এখান থেকে আবার দু ঘন্টার ড্রাইভ। সে ফারহানের গাড়ীতে করে আসছে। ফারহান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিজিক্স ডিপার্টমেন্ট থেকে পাশ করা মেধাবী ছাত্র, এখানে পিএইচ ডি করছে। এখানকার বাঙালী কমিউনিটির প্রেসিডেন্ট। সে এখানকার যে কারও বিপদে আপদে ঝাপিয়ে পড়তে না পারলে তার ভালো লাগে না। আমার মেয়ে এষাও একাধিকবার তার সাহায্য পেয়েছে।

একটু পরেই ঘটল পৃথিবীর সেই সবচেয়ে সুন্দর দৃশ্যটি। আমার ছোট্ট মেয়ে এষা (যদিও এখন সে  তরুণী। ক্লেমসন ইউনিভাসির্টিতে গ্রাজুয়েট স্টুডেন্ট হিসেবে আছে দু বছর ধরে) রাস্তা পার হয়ে  ছুটে এসে তার মাকে জড়িয়ে ধরল। আহা আমার চোখে পানি এসে গেল! প্রায় এক বছর পর আমাদের দেখা। আমিও তাকে জড়িয়ে ধরে মনে মনে বললাম  'হে আমেরিকা আজ এই মুহুর্তে তোমাকে ক্ষমা করে দিলাম’। (এই আমেরিকায় সুস্থ্য হতে এসে ক্যান্সার আক্রান্ত আমার প্রিয় ভাই হূমাযূন আহমেদ জীবিত ফিরে যেতে পারে নি, আমি ভাবতাম আর যেখানেই যাই কখনো আমেরিকা যাব না!')      

যাই হোক ফারহানের চমৎকার গাড়িতে চড়ে আসতে আসতে দেখছিলাম চওড়া রাস্তার দু পাশে অজস্র গাছ। আমাদের বান্দরবনের মত। রাস্তায় কোন মানুষ নেই  (কারণ আমাদের মত ফুটপাত নেই, এমনি রাস্তায় হাঁটতে বের হলে পুলিশ পর্যন্ত ধরতে পারে!) শুধু গাড়ি ছুটছে। প্রচন্ড গতিতে,  স্পিড লিমিট ৬০/৭০। লেফট হ্যান্ড ড্রাইভ।  সব গাড়ি লেফট হ্যান্ড ড্রাইভ কেন? পরে এই প্রশ্ন করেছিলাম আটলান্টায় বসবাসকারী এক গাড়ি চালককে । এর কারণ হচ্ছে এখানকার সব রাস্তা আমাদের দেশের তুলনায় উল্টো ! আমাদের দেশে যেমন আমরা যাই বাম দিক দিয়ে ওরা ছুটে ডান দিক দিয়ে!!   

পথে জর্জিয়ায় ম্যাগডোনাল্ডসের চমৎকার একটা দোকানে গাড়ি থামানো হল, কফি আর ফ্রেঞ্চফ্রাই ব্রেক, আমাকে খরচ করতে দিল না ফারহান। নিজেই বিল দিল।  বাথরুমও সারল কেউ কেউ। আমেরিকার ম্যাগডোনাল্ডস, ফাস্টফুডের জোগান দেয়া ছাড়াও বিপদে বাথরুম সারার একটা স্টেশন বটে। আমি যখন দোকানের সৌন্দর্যে মুগ্ধ তখন জানলাম এটা নাকি এখানকার সবচেয়ে সস্তা আর বাজে দোকান। কি বলে এরা ...!

লেখকঃ কার্টুনিস্ট/ সম্পাদক
উম্মাদ, স্যাটায়ার কার্টুন পত্রিকা

এই লেখকের অন্যান্য লেখা



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Developed with by
Top