সিডনী শুক্রবার, ১৯শে এপ্রিল ২০২৪, ৬ই বৈশাখ ১৪৩১

পর্ব চার: টুয়েলভ মাইল লেকে ভয়


প্রকাশিত:
২৫ মে ২০১৯ ০২:২৪

আপডেট:
৫ এপ্রিল ২০২০ ০৬:২২

আহসান হাবীব

এষা বলল এখানে ক্লেমসনে কোথায় নাকি একটা লেক আছে, সেও দেখেনি। আমরা যাব কিনা,  অবশ্যই যাব। এক বিকেলে নাকি দুপুরে? ঘড়ি এখনো কেনা হয় নি বলে সময়টা ধরতে পারছি না, রওনা হলাম। প্রথমে উঁচু গাছের জঙ্গল, তারপর কাঠের ব্রিজ, তারপর আবার কাঠের ব্রিজ, তারপর ফের উঁচু কাঠের ব্রিজ। দু-পাশে রেলিং, বিশাল উঁচু গাছের জঙ্গল চারিদিকে, কাঠের ব্রিজের নিচে পাথর তার উপর দিয়ে প্রবাহমান পানি। আস্তে আস্তে আমরা আরো গভীরে ঢুকছিলাম। যতই গভীরে ঢুকছিলাম কাঠের ব্রিজের নিচে পানির প্রবাহ ক্রমশই বাড়ছে। পার্কটার ফ্লেভার অনেকটা খাগড়াছড়ি বান্দরবানের সঙ্গে সুন্দর বনের কটকা এলাকার  ব্রিজ মিলালে যেমনটা হবে, অনেকটা সেইরকম। তবে এখানকার ব্রিজগুলো আরো চওড়া।

আমার একটু ভয় ভয় লাগছে। বললাম বাদ দাও আর  বেশি ভিতরে ঢুকে কাজ নেই। কিন্ত স্ত্রী আর কন্যার নাকি কেবল ভাল লাগতে শুরু করেছে, তারা আরো ভিতরে ঢুকবে। যতই গভীরে ঢুকছি জায়গাটা আরো জটিল হয়ে উঠছিল। ঘন গাছের ফাঁক দিয়ে তীর্যকভাবে সূর্যের আলো ঢুকে জায়গাটাকে আরো যেন রহস্যময় করে তুলছিল। এক সময় দেখি সর সর করে একটা সেইরকম গিরগিটি ,সম্ভবত জুরাসিক যুগের, প্রজেক্টের কার্টুনিস্ট মিতু ভালো বলতে পারবে, ব্রিজের নিচ দিয়ে ছুটে গেল। আমি ফের বললাম চল ফেরা যাক। তারা আমার কথা কানেই নিল না। আমরা ততক্ষনে উঁচু একটা কাঠের রেলিং দেয়া খোলা জায়গায় চলে এসেছি, চারিদিকে পানি পানি আর পানি।

আশে পাশে একটা মানুষ নেই, শুধু পাখির ডাক আর হু হু বাতাসের শব্দ। আমি ভাবছিলাম খোদা না করুন এখন যদি হুট করে এখানে কোথাও অস্ত্র হাতে কোনো সন্ত্রাসী বের হয়, বা সিরিয়াল কিলার, নেটফ্লিক্সের সিনেমায় যেমনটা দেখা যায়। বলতে বলতেই বিশাল দেহী দুই জনকে দেখা গেল, আগাগোড়া কালোড্রেস পরা তারা এগিয়ে আসছে আমাদের দিকে। আলো ছায়ায় বোঝা যাচ্ছে না তাদের মতি গতি। আমি ভাবলাম আমি শ্যাষ, পঞ্চম পর্ব বোধ হয় আর লেখা হল না।  মনে পড়ল ঢাকায় আয়ারল্যান্ড থেকে আসা আমাদের এ্যাকশন কার্টুনিস্ট আরিফ,যে কিনা আয়ারল্যান্ডে ফিল্ড পুলিশ ছিল ১২ বছর । 

আমাদের উন্মাদের কার্টুনিস্ট আর লেখকদের ফ্রি takewondo ট্রেনিং দেয়া শুরু করেছে তার মিরপুরের বাসার ছাদে।  আফসোস হল কেন যে শেষ মুহুর্তে ট্রেনিংটা নিয়ে এলাম না। ততক্ষনে বিশাল দেহি দুইজন এসে আমাদের সামনে থমকে দাড়াল।

ইংরেজীতে বলল, - ছবি তুলে দিব তোমাদের? 



ভাল করে তাকিয়ে দেখি দুজন পুলিশ! কোমরে পিস্তল ছাড়াও ব্যাটনসহ নানা জিনিষপত্র ঝুলছে,  কাঁধের কাছে ওয়াকিটকি,  জটিল ড্রেস। এষা হাসি মুখে ফোনটা এগিয়ে দিল। তারা বিভিন্ন এঙ্গেলে ছবি তুলে দিল আমাদের কয়েকটা। তারপর  'সুন্দর সময় কাটুক তোমাদের' বলে এগিয়ে গেল সামনের দিকে। তারা এই লেকের দায়িত্বে আছে। আমার জানে পানি ফিরে এল। অবশ্য লেকেও পানি কম ছিল না। বিশাল লেক নাম  'টুয়েলভ মাইল লেক'     

পূন: ফেরার পথে সেই মিনিয়েস্ট লাইব্রেরিতে 'উন্মাদ ব্রশিয়োর কমিকস' একটা রেখে এসেছি! ক্লেমসনবাসীকে 'উন্মাদ সচেতন' করতে!

 

লেখকঃ কার্টুনিস্ট/ সম্পাদক
উম্মাদ, স্যাটায়ার কার্টুন পত্রিকা


আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Developed with by
Top