সিডনী বৃহঃস্পতিবার, ২৫শে এপ্রিল ২০২৪, ১২ই বৈশাখ ১৪৩১

ক্লেমসনে উন্মাদ অফিস


প্রকাশিত:
৪ জুন ২০১৯ ০৫:৪৭

আপডেট:
৫ এপ্রিল ২০২০ ২০:০৬

আহসান হাবীব

বাস স্ট্যান্ডে দাড়িয়েছিলাম আমরা। বাস স্ট্যান্ড থেকে একটু দূরে বেশ কয়েকটা গাঢ় সবুজ রঙের ডাস্টবিন পাশাপাশি দাঁড়িয়ে। হঠাৎ দেখি ডাস্টবিনগুলোর পাশে একটা বিশাল পিকআপ ভ্যান এসে দাঁড়াল। দুজন আমেরিকান তরুণ তরুণী নামল। দুজনের মুখেই সিগারেট। নেমেই তারা ডাস্টবিনের ঢাকনি খুলে ঘাটাঘাটি শুরু করল। দৃশ্যটা মানাচ্ছিল না। সুন্দর দুজন মানুষ ওয়েল ড্রেসড, তারা ডাস্টবিন ঘাটাঘাটি করছে। খুব শিগ্রী তারা ডাস্টবিনের ভিতর থেকে একটা শেলফ, একটা ওভেন টাইপের কিছু এবং আরো কি কি সব বের করে তাদের পিক আপে নিয়ে চলে গেল।

পরে আবিস্কার করলাম, সব ডাস্টবিনের আশে পাশেই সুন্দর সুন্দর জিনিষ পড়ে আছে। বিছানার তোষক, সোফা, টেবিল, চেয়ার, র‌্যাক, একটা ছোট টিভি দেখলাম। এক এক ডাস্টবিনের পাশে এক এক ধরনের জিনিষপত্র এবং সবই বেশ ভাল অবস্থায়। তখনই আইডিয়াটা মাথায় আসল। ক্লেমসনে উন্মাদ অফিসের  একটা ব্র্যাঞ্চ খুললে কেমন হয়? এষার বাসাটা বড় আছে। ওর কাছ থেকে একটা রুম সাবলেট নিয়ে অফিস। ফার্নিচারের চিন্তা নেই, এখানকার ডাস্টবিনের আশেপাশে সব ধরনের ফার্নিচারই পাওয়া যাবে (ঐ দিন তিনকোনা একটা টেবিল দেখে মনে হল এখনই ঘাড়ে করে রওনা হই)। ঐ সব ফার্নিচার দিয়ে একদিনেই অফিস সাজিয়ে ফেলা যাবে। আইডিয়াটা রীতাকে বলায় সে দুই চোখে ভস্ম করে ফেলার মত করে তাকাল (অনেকটা গেম অফ থ্রোনসের ড্রাগনের চোখের মত আরকি)! ফলে আপাতত এই অফিস প্রজেক্ট বাদ! 



এখানে আজ উইকেন্ড। ক্লেমসনের শেষ দাওয়াতটা গত কাল খেয়ে ফেলেছি  বিখ্যাত এক গায়িকার বাসায়, যিনি একসময় বিটিভির এনলিসটেড গায়িকা ছিলেন। এখন এখানে পিএইচডি করছেন, তার হাজব্যান্ড টিপু পস্ট-ডক করছেন, তাদের ছোট্ট মেয়ে মানহা দারুন ছবি আঁকে (আমাকে একটা পপআপ ভালুক এঁকে গিফট করেছে)। ওখানে গিয়ে তিথিকা-জাদিদ, অনি–মামুন, ব্যাক (BAC) প্রেসিডেন্ট ফারহান, ভূত বিশেষজ্ঞ সাগর সবার সঙ্গেই আবার এক বিরাট আড্ডা হল। অসাধারন গান শোনা হল। খালি গলায় যে এত সুন্দর গান হতে পারে আমার ধারনা ছিল না। বিটিভি এনলিস্টেড এই গায়িকার নাম কোবরা, সবাই তাকে কোবরা আপু নামেই ডাকে। অসাধারণ বাসা তাদের, বাসার বারান্দা থেকে হরিণ পর্যন্ত দেখা যায়। আর্টিস্টদের স্কেচবুকে আমরা সাধারনত এ ধরনের বাসার ছবি দেখি। 

পরদিন কিছু করার নেই। আমি একাই সাহস করে ঘুরতে বেরুলাম। প্রথমেই গেলাম সেই মিনি লাইব্রেরীতে। উন্মাদ এখনও আছে এবং জায়গা বদল হচ্ছে তার মানে কেউ না কেউ হাতে নিচ্ছে আবার রেখেও দিচ্ছে। দেখে ভাল লাগলো। বেরুবার সময় রীতা বলেছিল যদি সাহস করে ওয়ালমার্ট এর দিকে যেতে পারি তাহলে যেন চিড়ে আর কলা আনি। আমার সাহস নিয়ে সবারই, বিশেষ করে রীতার ব্যাপক সন্দেহ আছে। আমি বললাম ওয়ালমার্টে যাওয়া কোন ব্যাপার? কিন্তু বাইরে বের হয়ে বুঝলাম ওয়ালমার্টে যাওয়া বাসের রুটটা বুঝতে পারা আমার কর্ম নয়। ফলে চিড়ে কলা না পেলেও রাস্তার উপর একটা চিরে চ্যাপ্টা হওয়া বিশাল সাপ আবিস্কার করলাম। তার মানে এখানে বড় বড় সাপ আছে, থাকারই কথা। চারিদিকে এত জঙ্গল। এরা নিশ্চয়ই গভীর রাতে বের হয়। পথে এক আফ্রিকান আমেরিকান তার বিশাল কুকুর নিয়ে হেঁটে যাচ্ছিল।  আচমকা তার কুকুর আমার দিকে তাকিয়ে খামাখাই ঘাউ ঘাউ করে উঠল। আমি অবশ্য কামড় খাওয়ার জন্য (মতান্তরে কোটিপতি হওয়ার জন্য) প্রস্তুত ছিলাম। কিন্তু মালিকের ধমক খেয়ে কুকুর যেন মাটির সাথে মিশে গেল লজ্জায়। এখানকার বেশির ভাগ কুকুরই দেখলাম কুচকুচে কালো এবং মালিকের ধমক খেয়ে লজ্জিত হওয়ার জন্য সদা প্রস্তুত। 

আমার দেশের কুকুরদের কথা মনে পড়ল। দেশের সব কুকুর নাকি এখন গোলাপী রং ধারণ করেছে, ফেসবুকেই দেখলাম। কারণ ভ্যাক্সিন দেয়া হয়েছে কুকুরের গায়ে চিহ্ন রাখার জন্য, সম্ভবত সিটি কর্পোরেশনের এই রঙবাজী। মনে আছে আগে ভ্যাক্সিন দেয়া কুকুরের কান কেটে দেয়া হত। যাতে কান কাটা দেখে বোঝা যায় এই কুকুরকে ভ্যাক্সিন দেয়া হয়েছে। পরে এই অমানবিক আচরণ নিয়ে ফেসবুকে লেখালেখি হওয়ার কারণে এখন এই গোলাপী কুকুরের আধিক্য। আমেরিকান কুকুরের গল্প থাক বরং গোলাপী ইঁদুরের একটা গল্প শোনা যাক আজ- 


এক দেশে প্রচুর ইঁদুর। সবাই ইঁদুরের জ্বালায় অস্থির। তখন হঠাৎ সেই দেশে এসে হাজির হল হ্যামিলনের সেই বংশিওলা। তবে তার হাতে কোন বাঁশি নেই, কাঁধে একটা ঝোলা। সে এসে ঘোষণা দিল এই শহর ইঁদুর মুক্ত করে দিবে এক মুহুর্তে। বিনিময়ে তাকে দিতে হবে এক লক্ষ স্বর্ণমুদ্রা। সবাই রাজী হল, দেয়া হল তাকে এক লক্ষ স্বর্ণমুদ্রা। সে তার ঝোলা থেকে একটা গোলাপী ইঁদুর বের করে ছেড়ে দিল। মুহুর্তে সারা দেশের সব ইঁদুর ছুটে বের হয়ে ঐ গোলাপী ইঁদুরের পিছু নিল। গোলাপী ইঁদুর ছুটতে ছুটতে গিয়ে সমুদ্রে ঝাঁপিয়ে পড়ল; তার সঙ্গে সঙ্গে অন্যসব ইঁদুরও ঝাপিয়ে পড়ল সমুদ্রে। ব্যাস দেশ মুহুর্তে ইঁদুর মুক্ত!!      

গভীর রাতে ঐ বংশীওলার কাছে দেশের সুশীল সমাজ এল, ফিস ফিস করে বলল, “ইয়ে আপনার ঝোলায় কোন গোলাপী রাজনীতিবিদ আছে কি?” 

পুনঃ 

ফেসবুকে দেখলাম বালিশ দুর্নীতি নিয়ে তুমুল লেখালেখি চলছে! আমি এখন ডাস্টবিনের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় নজর রাখছি দুয়েকটা বালিশ যদি পাওয়া যায়!

পুনঃ পুনঃ 

ঐ বালিশ নিয়ে একটা জোক!

রুপপুর পারমানবিক কেন্দ্রের বালিশ নিয়ে আলোচনা হচ্ছে দুজনের মধ্যে। 

- যত যাই বলিস বালিশের দাম আমি বলব কমই ধরেছে। 

- কি বলছিস একটা বালিশ ৬, ০০০ টাকা আর বালিশ তুলতে ৭০০ টাকা... আর তুই বলছিস দাম কমই ধরেছে??

- আরে বাবা বালিশ তুলতে যদি হেলিকপ্টার কিনতে হত, তাহলে দাম কত হত বালিশের তা একবার  ভেবেছিস?

 

লেখকঃ কার্টুনিস্ট/ সম্পাদক
উম্মাদ, স্যাটায়ার কার্টুন পত্রিকা


আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Developed with by
Top